প্রচলিত লোকগল্প আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে!
কথোপকথনের প্রথম পর্ব ► আমাদের নাম ইতিহাসে উঠে গেছে [ভূমিকা: আনু মুহাম্মদ]
কথোপকথনের দ্বিতীয় পর্ব ► প্রচলিত লোকগল্প আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে!
কথোপকথনের তৃতীয় পর্ব ► শব্দ তো ভদ্রলোকের সব সভ্যতা ভেঙে দেয়
ইলিয়াস: আচ্ছা, দিদি শোনেন, আপনার উপন্যাস পড়ে, লেখা পড়ে, আমার মনে হয় আপনি যে শবরদের সাথে কাজ করছেন, এটা নিশ্চয়ই শবরদের জন্যেই করছেন।
দেবী: হ্যাঁ।
ইলিয়াস: কিন্তু যদি আমি বলি যে আপনি মধ্যবিত্ত যে পরিবেশ, সেখান থেকে খানিকটা মুক্তির জন্য ওখানে যাচ্ছেন। আচ্ছা, এটা কি ঠিক হবে?
দেবী: নাহ্! আমি তো এদের মধ্যে অনেক দিন আগেই চলে গেছি। সেটা শবর ছিল না, অন্য কেউ ছিল।
ইলিয়াস: অন্য কেউ ছিল।
দেবী: অন্য কেউ ছিল।
ইলিয়াস: আচ্ছা, যেখানেই যান আরকি।
দেবী: আর ক্রমশই দেখছি আমি, অনেক টাকা নিয়ে না স্বেচ্ছাসেবা না রাজনীতি, একদিক থেকে মানুষ ফেল করেছে। পশ্চিমবঙ্গে কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন নেই। আন্দোলনের ক্ষেত্র আছে, আন্দোলন নেই। এখন যাদের, মধ্যবিত্ত গিয়েই যদি আন্দোলন করে তারা করবে হয়তো, একদিন সরে আসবে। আমরা বারবার যা দেখলাম। নাম বলব না, তেভাগার একজন তখনকার দিনের কৃতী একজন নেতা। তাঁর কাছে যখন তেভাগার জন্যে, তেভাগার জন্য বিশেষ সাক্ষাৎকার নিতে যাওয়া হলো, তিনি এখন দিল্লিতে থাকেন। প্রত্যেকটা দ্বিতীয় শব্দ হলো ইংরেজি, চোস্ত ইংরেজি। উনি যে একসময় এসব জায়গায় কৃষিক্ষেত্রে ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে একই ঘরে থাকতেন... সমস্তটাই ইংরেজি। কাজেই কিছু করার নেই। এই দিয়ে তো হবে বলে মনে হয় না। এখন দূরত্ব কথা নয়। লিখব, লেখার প্রয়োজন আছে। আর মধ্যবিত্ত জীবন যদি বলো, আমার নিজেরে দেখে দেখে আমার আশপাশে দেখেছি, লেখকদের যে পরিণাম দেখেছি, তাতে আমি নিজে একটা পথ বেছে নিয়েছি, স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়। এবং একটা দিক দেখেছি, অনেকে প্রয়োজন অনুভব করেছেন, এরপরে এদের নিয়ে লেখা উচিত। অনেকে ভালোও লিখেছেন। সাধন চট্টোপাধ্যায় বলো, অভিজিৎ সেন তো বটেই, জয়ন্ত জোয়ার্দ্দার একসময়, সৈকত এ রকম বহুজন বহু সময় চেষ্টা করছেন, চেষ্টা করে চলেছেন, নানাভাবে করে চলেছেন, যদি কিছু হয় ভালো, নিজেরা লিখতে শিখে যত দিন না ওরা তত দিনে। এর বাইরেও সাহিত্যের কথা তো থাকেই তার শৈলী, তার উপস্থাপনা, তার জন্য অসম্ভব পরিশ্রম করা। এক একটা সময় নিয়ে লিখতে গেলে, এগারো শতক বা ১৫ শতক তখন তার মধ্যে ফিরে যেতে হয়। পড়াশোনা করতে হয়। চর্চা করতে হয়। এ সমস্ত তো আছেই।
ইলিয়াস: আপনি আমাদেরকে শবরদের কথা শোনালেন আজকে। আপনার থাকতে গিয়ে কি মনে হচ্ছে, মধ্যবিত্তদের সঙ্গে ওদের প্রধান পার্থক্য?
দেবী: মধ্যবিত্তদের প্রতি আমার আসলে কোনো বিরাগ নেই। আমি শুধু দেখছি! আমি অনেক দিন থেকেই দেখছি। বর্তিকা পত্রিকা করার সময় যেটা বলেছিলাম, আমি তো কোনো রাজনৈতিক তত্ত্ব পড়িনি। যেটা লিখেছিলাম, যেভাবে লেখা হয়, সেভাবে তারা কথা বলে না। ও, এখানে আরেকটা মজার সাহিত্য দৃষ্টিকোণ আসছে। বোধ হয়, ২২ বছর আগে ন্যাশনাল বুক ট্রাস্টকে আমি একটা বড় পেপার দিয়েছিলাম যে, যখন থেকে বাংলা ভাষাকে ভীষণ পরিশীলিত, ভদ্রলোকের, পশ্চিমবঙ্গের ভাষায় এভাবে লিখতে হবে। আমরা যে কথা বলছি—কতগুলো ভাঙা বাক্য, কতগুলো জায়গায় বাদ পড়ছে, কীভাবে কথা বলি আমরা! তারপরে, চাষি, কামার-কুমোর, জেলে বা এ রকম ধরনের লোক মানে অসংগঠিত ক্ষেত্রে, যেসমস্ত শ্রমিক আছে, যারা মেহনতি মানুষ, সংগঠিত ক্ষেত্রেও যারা আছে তারা যে কাজ করে, তাদের নিজেদের কাজের অনুষঙ্গ প্রসঙ্গে সম্পূর্ণ অন্য শব্দভাণ্ডার ব্যবহার করে। সেটা আগেও তাই করত, এখনো তা-ই করে। নতুন করে আমরা তার কিছু আভাস পাই। এই বিশাল জীবিত-জীবন্ত ভাষাটাকে সাহিত্য থেকে ব্রাত্য করে রাখা হলো। সাহিত্য মানে অত্যন্ত পরিশীলিত, ব্যাকরণগত শুদ্ধ, এ রকম সাজানো সাজানো শব্দ। এটাও আমার ভেঙে দিতে ইচ্ছে হয়েছিল। এটা আমার ঠিক ঠিক মনে হয়নি। ওই ভাষাকে তুলে আনার ইচ্ছে ছিল। মনে হয়েছে, এটা দিয়ে বাংলা সাহিত্য খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ইলিয়াস: এটা অবশ্য আমারও সব সময় মনে হয়।
দেবী: এটা ঔপন্যাসিকের কথা।
ইলিয়াস: এবং এটা ঔপন্যাসিকের পক্ষে...
দেবী: প্রাবন্ধিকের কথা না। বদরুদ্দীন উমরের লেখা যাঁরা পড়বেন, যাঁরা পড়ে বোঝেন, তাঁরা সেই মানসিকতাসম্পন্ন, সেই শিক্ষা-দীক্ষা, সেই স্তর তাঁর প্রয়োজন আছে। গল্প উপন্যাসে এত সাজানো কথা, এত পেলব গদ্য অমুক তমুক...
ইলিয়াস: না দিদি, গল্পে উপন্যাসে তো দরকার হয়ই, প্রবন্ধেও কিন্তু এটা দরকার হয়।
দেবী: প্রবন্ধ তো সকলের কাছে যেতে পারে না...
ইলিয়াস: যেমন বদরুদ্দীন উমরের যে ভাষা, সে ভাষা কিন্তু অনেক বেশি প্রাঞ্জল। সেই ভাষা কিন্তু বদরুদ্দীন উমর যখন ধরুন কৃষক বিদ্রোহ নিয়ে লিখছেন, তখন কিন্তু তাঁর ভাষা যেটা হবে, তিনি যখন মৌলবাদের বিরুদ্ধে লিখছেন তখন তাঁর ভাষার একটু পার্থক্য হবেই। বদরুদ্দীন উমরের আগে যেটা সমস্যা ছিল, আমাদের দেশে মানে বাংলাদেশে যে খুব সোজা কথাগুলো বেশ কঠিন করে বলা হতো, জটিল করে বলা হতো।
দেবী: তারপর উনি সেটা সহজ করেছেন।
ইলিয়াস: হ্যাঁ, এ রকম যেটা অনেক সহজ করেছেন। বিশেষ করে ষাটের দশকে বদরুদ্দীন উমরের যে ভূমিকা, সেটা আমার মনে হয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শুধু আমাদের জন্য নয়, বদরুদ্দীন উমরের জন্যেও।
উমর: ওটা এখন থাক। আামি যে ভাষার কথা বলছি, আমি আপনাকে একটা বই দিয়েছি, আপনি সব ফেলে যাবেন না, কিছু নিয়ে যাবেন। ওই যেটা সেদিন অফিসে দিয়েছি, তার মধ্যে ‘মুক্তি কোন্ পথে’ বলে একটি ছোট্ট বই আছে। এটি আমি শ্রমিকদের জন্যে মূলত লিখেছি এবং কৃষক অঞ্চলেও যারা কাজ করে কিংবা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এবং আমি ইচ্ছা করে ওইটার ভাষা অনেক চিন্তা করে এমনভাবে দিয়েছি। যাতে একদম ভেঙে ভেঙে, ওর চেয়ে সহজ মানে আমি তো আর পারব না।
দেবী: একটা বিশেষ সংখ্যা বার করে আপনার কাছ থেকে ঋণ স্বীকার করে ওটা আমি পুরো বর্তিকায় রিপ্রিন্ট করে দেব।
উমর: আপনি বলছেন, ওটা আপনি দেখেছেন?
দেবী: আমি কোনো জিনিসই এখনো পুরো খুলে দেখার সময় পাইনি...
উমর: সেটা আপনি দেখবেন, ওটাতে আমি একটা হ্যান্ডবুকের মতো করেছি, যাতে ওটা পড়ে মানে আসল ব্যাপারটা কী এটা যাতে, যেকোনো একজন প্রথম যে এসেছে সে বোঝে।
দেবী: চলে যাবে, গ্রামে গ্রামে চলে যাবে। আমরা তো এগুলো করি কী...বড় বড় হরফে ছাপিয়ে গ্রামে গ্রামে প্রচার করি। আর বদরুদ্দীন উমর, আপনি বললেন না, আপনার বই নিয়ে যাচ্ছি কি না? আপনি একমাত্র লেখক এ বাংলা, ও বাংলার যার যত বই যখন পেয়েছি, যা আপনি দিয়েছেন, যা কিনেছি সব বই সুসজ্জিত আছে।
ইলিয়াস: শুধু সুসজ্জিত থাকবে না, সুপঠিতও থাকবে [হাসি]।
দেবী: সেগুলো সুসজ্জিত সুপঠিত, সেই জন্য সেগুলোকে সাবধান করা হয়েছে।
কাজী ইকবাল: এই কাজটি প্রথম নীহার রঞ্জনের ‘ছোটদের অর্থনীতি’, ‘ছোটদের রাজনীতি’ এটাও কিন্তু খুব আমাদের অনুপ্রাণিত করে। আমরা যখন প্রথম প্রথম এ বইটা পড়ি।
ইলিয়াস: তারপর দেবী প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ‘জানবার কথা’...
দেবী: না না, সেগুলো তো ঠিকই আছে।
ইলিয়াস: না না, উমর সাহেবের লেখা ওরকম না কিন্তু। তুমি যেমন বলছ, তা না।
উমর: আমি একটা টোটাল জিনিসকে ধরবার চেষ্টা করেছি...
ইলিয়াস: হ্যাঁ, একটা টোটাল জিনিসকে ধরবার চেষ্টা ওটা, Some sort of general knowledge...
দেবী: বদরুদ্দীন উমরের সমস্তটাই।
ইলিয়াস: না না, উমর ভাইয়েরটা তা নয়। উনি টোটালিটিটা ধরে ফেলেছেন। ওঁকে এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি উসকানি দিয়েছিলেন আসহাবউদ্দীন সাহেব। আমাদের অধ্যাপক আসহাবউদ্দীন আহমদ ছিলেন, উনি বারবার বলতেন যে, আপনি সোজা করে লেখেন। ওনার কথা একটু কিছু বলি, হ্যাঁ? উনি ছিলেন, মানে এসবের ব্যাপারে ওঁর একটা প্রাণের যোগ ছিল।
উমর: জীবনের যোগ ছিল।
ইলিয়াস: বলা উচিত তাঁর সম্পর্কে।
উমর: গ্রামাঞ্চলে মানুষের সাথে তাঁর এ রকম একটা ঘনিষ্ঠ পরিচয় চলছিল। তার থেকেই উনি আমাকে বলেছেন যে, দেখুন... আমি তো কমিউনিস্ট পার্টিতে দীর্ঘদিন এসেছি। অনেক বড় বড় সব ইয়েদেরকে বলেছি যে একটা লিখুন, তো কেউ লেখেননি। এবং আমিও যে মনে করেছিলাম অনেক দিন থেকে লিখব কিন্তু উনার প্রথম তাগাদা এবং বইটা লেখার মধ্যেও বেশ কিছু সময় গেছে। যে জন্য একবার খুব ক্ষিপ্ত হয়ে উনি আমাকে একটা চিঠিও দিয়েছিলেন। তারপর আমি অবশেষে এটা লিখলাম। এবং যখন লিখলাম, তখন উনি খুব খুশি হয়েছেন। আমাকে একটা চিঠি দিয়ে বলেন যে, দেখুন... আমি যা ভেবেছিলাম, তার চেয়ে এটা বেশি কাজে লাগবে।
ইলিয়াস: ...সহজ হয়েছে।
দেবী: বদরুদ্দীন উমর সাহেব সবদিক দিয়েই ব্যতিক্রম! আর তো আমি দেখিনি। কাজেই বলার কিছু নেই। কাজেই উনি এতে আসেন না।
উমর: যাক, অন্য কথা বলি! আপনি যা বলছিলেন সেটা বলুন।
ইলিয়াস: যাক যে প্রসঙ্গে বদরুদ্দীন উমর এসেছিলেন ভাষা প্রসঙ্গে, তাই না, মানে উপন্যাসের ভাষা এবং আমি বলছিলাম যে, শুধু উপন্যাস নয়, প্রবন্ধের ভাষাতেও তা আসতে পারে।
দেবী: না, আমি বলছি, প্রবন্ধের ভাষা তবু যারা পড়ছেন সহজ করে লেখা যেটা, সহজ মানুষের কাছে পৌঁছাব, সাধারণ পাঠকের কাছে, ওঁর অন্যান্য লেখা যেগুলো আছে, সেগুলো যার দায়বোধের ধারণা আছে, যে শ্রেণিসংগ্রামটা বোঝে, তার সেটাই যে সবকিছুর মূলে ইত্যাদি যারা বোঝে, তাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব। আমি কিন্তু ওই ধরনের প্রবন্ধের কথা তা-ও বুঝতে পারি। কিন্তু যখন সেটা গল্প উপন্যাসে আসছে বাংলা ভাষা আর সাহিত্য প্রবন্ধ পড়লেই তুমি বুঝতে পারবে কি দরিদ্র হয়ে গেছে, কি রক্তশূন্য, কি ইনেন কথাটাই সবচাইতে এখানে প্রয়োগ করা যায়। একটা কথা, ও, কেউ বিদেশি কেউ হয় অমুক নয় তমুক...কেউ উল্লেখ না করে কেউ কিছু লিখতে পারে না বাংলাতে। উপন্যাসেও আমি অনেক সময় প্রবন্ধের কাঠিন্য এনেছি। অনেক এনেছি।
ইলিয়াস: অনেক সময় দরকারও হয়েছে।
দেবী: প্রয়োজন হয়েছে, জিনিসটার প্রয়োজন হয়েছে...
ইলিয়াস: কমলকুমার মজুমদারের আমার মনে হয় দরকার হয়েছে।
দেবী: তাঁর প্রয়োজন হয়েছিল। তিনি অন্য রকম লিখছিলেন।
ইলিয়াস: না, এটা তো ঠিকই উপন্যাসের সমস্যাটা অনেক বেশি আত্মিকধর্মী, যার জন্যে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বাঙালা ভাষা’ প্রবন্ধটা আছে যেটা আমাদের অহরহ পড়াতে হয়। এই বাঙালা ভাষা প্রবন্ধে মূল সমস্যাটা বলা হয়েছে যে, আমরা কোন ভাষায় লিখব? সাধুরীতি না চলিত রীতি, কী শব্দ ব্যবহার করব? এখন এই ধরনের প্রবন্ধ কিন্তু বিদ্যাসাগরকে লিখতে হয়নি, তাই না? বিদ্যাসাগর তো আমাদের ভাষার অনেক বড় স্থপতি। কিন্তু এ সমস্যাটা মোকাবেলা করতে হলো বঙ্কিমচন্দ্রকে... কারণ, তিনি উপন্যাস লিখলেন। তাই না?
উপন্যাসের সমস্যাটা অনেক বেশি আত্মিকধর্মী, যার জন্যে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বাঙালা ভাষা’ প্রবন্ধটা আছে যেটা আমাদের অহরহ পড়াতে হয়। এই বাঙালা ভাষা প্রবন্ধে মূল সমস্যাটা বলা হয়েছে যে, আমরা কোন ভাষায় লিখব? সাধুরীতি না চলিত রীতি, কী শব্দ ব্যবহার করব?
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস [১৯৮৯] © ছবি: কবিবন্ধু ওমর শামস
দেবী: হ্যাঁ, উপন্যাস লিখলেন। তবে উনিশ শতকের যে গদ্য, যাঁরা পড়েছেন সকলেই স্বীকার করবেন, এই ধরুন রাজনারায়ণ বসু, শিবনাথ শাস্ত্রী, অন্য লোকরা তাঁরা একটা সহজবোধ্য গদ্য লিখতেন, বোঝা যেত, অনেক সহজও ছিল, গদ্যটা একেবারেই অন্য রকম... কেননা তাঁদের একটা রুট ছিল গ্রামে।
উমর: দেওয়ান কার্তিকেয় চন্দ্র... এতটা সুন্দর...
দেবী: হ্যাঁ, অসামান্য। বাস্তবে সেদিক থেকে আপনি তখনকার বাংলার স্টিফনেস অস্বীকার করে, মহারাজা প্রতাপাদিত্য জীবনচরিত, কৃষ্ণচন্দ্র রায় জীবনচরিত... এগুলো যদি পড়েন, তখনকার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ বার করেছিল, Highly interesting, Highly interesting। এমনকি কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য্য যে উপন্যাস লিখেছিলেন, এটা দুরাকাঙ্খের বৃথা ভ্রমণ, তা-ও পড়লে অনেক দূর এগোয়। কিন্তু সমস্যাটা আরও পরে এলো, যখন যাদের নিয়ে যা যা লেখা হচ্ছে বাংলা সাহিত্য থেকে একটা বিরাট জীবন্ত ভাষা ব্রাত্য হয়ে গেল। জীবন্ত ভাষা [Living language] ব্রাত্য হয়ে যাওয়ার পরে শহরেরও একটা জীবন্ত ভাষা আছে। আর সম্প্রতি আমি ‘রামানুজের’ অনুবাদ করেছি। তাতে বোঝা যাচ্ছে যে, গল্পকে বলতে হবে। কারণ, গল্পরা হিংস্র। সে জন্য লোকগল্পে প্রসঙ্গে বলেছে...এক গৌড় জমিদার, সে চারটে গল্প জানত। সে একটাও বলতে রাজি না। তার চাকরের খুব ইচ্ছে সে কিছু জানে না, রাত্রে গল্প শুনবে। মুনিব যাচ্ছে জামাই বাড়ি, ও তার সঙ্গে যাচ্ছে। যে, ও গল্পটা বলবে। মাঝখানে এক জায়গায় আশ্রয় নিল। খাইয়ে-দাইয়ে মনিব যখন শুলো, বলল, গল্প বলো। সে বলল না, ঘুমিয়ে গেল। চাকরটা মনের দুঃখে জেগে একা। তখন চারটে গল্পই তার পেট থেকে বেরিয়ে এসেছে। বেরিয়ে এসে বলছে, আমাদের যদি বলা না হয়, আমরা তাহলে এ বুড়োর নাতি, তার নাতি, তার নাতি, আমরা পরের দিকে পৌঁছব কী করে? আবার একজন বলছে, ‘তা আমাদের তো তখন চেহারা বেশভূষাও বদলে যাবে!’ বলল ‘যাক, But we must be told thus we live. ঠিক আছে, ও যখন যাবে, ওকে আমি এইভাবে মারব।’
দ্বিতীয় গল্প বলছে, এইভাবে মারব, তৃতীয় গল্প তাই বলছে, চতুর্থ গল্প তাই বলছে। ভৃত্যটি সব শুনে এর মনিবকে চারটে বিপদ থেকেই বাঁচাল। বাঁচাবার ফলে ও একটা পাথর হয়ে গেল। তখন মনিবের যে কন্যা, সে পাথরের কাছে বসে শোনে, তার খুব দুঃখ হয়েছে। আমার বাড়িতে এসেছিল তার তো এই হয়ে গেল। মনিবের কিছু হয়নি, মনিব ফিরে গিয়ে আরেকটা চাকর রাখল। তখন শুনছে, গল্পরা বলছে, ‘এত আমরা একেবারে হেরে গেলাম। সেই ছেলেটা সবই শুনেছিল, সবই জানত, একে না বাঁচালে তো আর উপায় নেই।’ তো কী করে বাঁচাবে! বলল, যদি মনিবের মেয়ে তার শিশুপুত্রটিকে এ পাথরে আছড়ে মারে...বাচ্চাটা মরবে না, বেঁচে যেতেও পারে, তাহলে ও বেঁচে উঠবে। ও তা-ই করল। বাচ্চাটা কিন্তু আর বাঁচল না। এ লোকটি জীবিত হলো। জীবিত হয়েও ও গিয়ে দেখে, মনিবের বাড়িতে কোনো ঠাঁই নেই। ও তখন মনিবের বাড়ির সামনেই বিরাট একটা মাঠে সবাইকে ডেকে এই গল্পগুলো বলতে লাগল। এবং বলল, তোমরা যত লোক জানো এ গল্পগুলো ছড়াতে থাকো। কেননা গল্পে আমি দেখেছি তাদের চেহারা, তারা ভীষণ হিংস্র, তারা ভীষণ সশস্ত্র, তারা ভীষণ, কী বলব ভীষণ জেদ আছে ওদের, তারা ক্ষুব্ধ, এই করতে করতে করতে ওই গল্প ছড়াল। মানে, ওটাকে উনি টেনে এনেছেন গ্রাফিতি পর্যন্ত। শহরের দেয়ালে যে গ্রাফিতি...that also oral tradition বা কোনো কিছু এই পর্যন্ত। রাস্তায় ঘাটে সার্কাস, ম্যাজিক, জাদুকর জাদু দেখায়, কিছু করে না করে, সাপুড়ে সাপ দেখায়, তাদের কথা এসবই প্রথার ধারাবাহিকতা। খুব ভালো বই। খুব মজার বই। অনেক ভালো গল্প আছে। এবং এতে দেখা যায়, বাস্তবে ভারত কী ছিল! এক ভাই। এক রাজার ছেলে তার দুই বোন। যেমন হয় রাজার ছেলে। বোনরা অন্দরমহলে থাকে, ও দেখেনি। ও নদীর জলে চান করতে গিয়ে দেখল সোনার চুল, রুপার চুল। সোনার চুল আর রুপার চুল যে মেয়ের, তাকে বিয়ে করবে। সব মেয়েকে প্যারেড করানো হলো, সে মেয়ে নেই। তখন দেখে, নিজেদেরই প্রাসাদ অলিন্দে বসে দুটো ও রকম মেয়ে। তখন বলে, আমি ওদের বিয়ে করব। ওর মা বলে, সর্বনাশ কথা! ওরা তো তোমার বোন। রাজার ছেলে জীবনে তো বোনদের দেখেনি। এইখানেই বিয়ে করতে চায়। যখন বোনদের বিয়ে করবে ঠিক হলো, বাবা-মা শেষ পর্যন্ত রাজি হলো। ছেলে তো...। ওরা তখন পুকুরপাড়ে গিয়ে একটা গাছে উঠে বসল। তখন বাবা এসে বলছে, নেমে এসো। বিয়ের লগ্ন হয়ে গেছে। ওরা বলল, এত দিন বাবা বলেছি... এখন কি শ্বশুর বলব? মা বলছে নেমে এসো, এখন বিয়ের লগ্ন হয়ে গেছে... এত দিন মা বলেছি এখন কি শাশুড়ি বলব? দাদা যখন এসে বলেছে তখন বলছে ‘তুমি কাছে এসো না, কাছে এসো না। এত দিন দাদা বলেছি, এখন কি স্বামী বলব?’ সেই গাছটা অনেক দূর উঠে যায়, The tree saved them-এ রকম। এই ধরনের ব্যাপার যা অনেক ছিল। এ সমস্ত জিনিসই এই লোকগল্পের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসে। তো সমাজকে বারবার বিশ্লেষণ করা, আর গল্পগুলো যে ভাষায় বলা, সেগুলো অতি সহজ, স্থানীয় ভাষার ব্যবহার করা। খুবই সুন্দর।
ইলিয়াস: না, আমাদের এই যে, যেটাকে আপনি Oral tradition বলেন আরকি... ‘ফোক’ সেটা কিন্তু অন্তত কথাসাহিত্যে ব্যবহৃত হয়নি। কবিতায় কিছু কিছু হয়েছে। গানে তো... আর যেটা মুশকিল হয়েছে কী, যখন আমরা ‘ফোক’ বলি তখন আমরা গানে সরাসরি ফোকটা শুনি। মানে কোনো লোকসংগীত ইত্যাদি শুনি। সেটা তো খুব দরকার। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তো এটা দরকার, সেটাকে আধুনিক কবিতায় ব্যবহার করা। যেমন ধরেন, আপনি গল্প লিখছেন সেখানে মুখে মুখে প্রচলিত যে গল্পগুলো আপনি বললেন, এ রকম গল্প আমাদের দেশে, বাংলাদেশেও প্রচুর ছড়িয়ে আছে। আমি নিজে দেখেছি হাজার হাজার দেখেছি, প্রতিটি গ্রামে ছড়িয়ে আছে, একেকটা দ্বীপে ছড়িয়ে আছে। এইগুলো একেবারেই ব্যবহার করা হয় না। তার কারণ যেটা আমার মনে হয় উনিশ শতকের তথাকথিত বাবু-সংস্কৃতি, তাই না?
দেবী: না, সেটা করা হয়নি।
ইলিয়াস: সেটাই আমাদের জনমানুষকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।
দেবী: না, সেটা করা হয়নি। আরেকটা জিনিস হচ্ছে, এখন তো প্রচলিত লোকগল্প সম্পর্কে আমি বহুকাল আগে, যখন, ‘ঝাঁসির রানী’ আমার প্রথম বই, তখন যে ওদের কাছ থেকে, মাঠে বসে শীত পোহাতে পোহাতে, পাত্থর মিটঠিছে ফৌজ বানাইয়ে কাঠ সে কাটোয়া, পাহাড় উঠাকে ঘোড়া বানাইয়ি চলি গোয়া গোয়া। রানির কথা বলছে। কিছুই যখন ছিল না তার পাথর থেকেই.. . কাঠ থেকে তলোয়ার... কাঠ তুলে নিল, ঘোড়া হয়ে গেল, ওপর দিয়ে চলে গেল। সেদিন থেকে আমি ওটা প্রচুর ব্যবহার করেছিলাম ওই বইয়ে। প্রচুর প্রচলিত লোকগল্প সংগ্রহ করেছিলাম। এবং সেটা যে ইতিহাসের একটা মূল আকর, অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, লোকে যে ফোকের মধ্যেই এই লোকশ্রুতির মধ্যেই টিকিয়ে রাখে। এই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কেও বলেছিলাম। ঢাকা থেকে বা শিক্ষিত স্তরটা থেকে অনেক গল্প, কবিতা, অনেক কিছু পাওয়া গেছে। কিন্তু অন্য যারা গ্রাম বাংলাদেশের মানুষ, তারা যারা প্রাণ দিয়েছে, যা করেছে, তাদের কাছেই যাওয়া হয়েছে খুব কম। তাদের কথা লেখা হয়েছে খুব কম। তাদের কাছে সংগ্রহ করলে হয়তো, মুক্তিযুদ্ধ কী ছিল... তার একটা সাংঘাতিক ইয়ে পাওয়া যাবে। সবই তো প্রচলিত লোকগল্প।
উমর: এখানে যেমন ধরুন যে হোমারের ইলিয়ড [যে সংস্করণ আমরা পাই], এটা তো আর কেউ বসে বসে লেখেনি তো। শত শত বছরের আরও বেশি [দেবী: রামায়ণ, মহাভারত...] সময়ের প্রাচীন লোকগল্প। এখনকার দিনের প্রচলিত লোকগল্পের সমস্যা হচ্ছে যে, এই প্রথাটা তো ভেঙেও যাচ্ছে। যেমন ধরুন, ওটা মুখে মুখে শত শত বছর ধরে চলে আসছে। এখন কিন্তু সেটা খুব কমই পাওয়া যাবে। নানা রকম উপদ্রবের কারণে। রেডিও বলেন, টেলিভিশন বলেন, সিনেমা বলেন...
ইলিয়াস: গ্রামের যে উন্নয়ন তার...
উমর: এটার ফলে, যাত্রা ধ্বংস হয়ে গেছে, সবকিছুই ধ্বংস হয়ে গেছে। এই যে এখানে, এটার যে একটা ভাঙন, তার ফলে প্রচলিত লোকগল্প তো এইভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
দেবী: তাহলে এখানে কী হয়েছে, আমি জানি না! আমি কিন্তু বহুদিন মুর্শিদাবাদের আলতাফের গানে বড় জলপ্লাবন, তারপর স্বাধীনতার আন্দোলন, মুর্শিদাবাদের একটা তেভাগা আন্দোলন হয়েছিল, সেগুলো সমস্তই আমরা আলতাফের গানে শুনেছি। ওইভাবেই ওটা বেঁচে থেকেছে। আর পুরুলিয়া জেলা যেখানে আমি কাজ করি, পশ্চিমবঙ্গের দরিদ্রতম জেলা, খুব অনাবিষ্কৃত এলাকা।
আমদের ব্রতকথা, লোককথা—সবই ওরাল ট্র্যাডিশন, রূপকথাও তাই। কিন্তু পুরুলিয়া জেলাতে আমি এ রকম প্রচুর অনাবিষ্কৃত খনির খোঁজ পেয়েছি। অনেকগুলো তুলে ধরেছি, সংগ্রহ করেছি, বর্তিকার সংখ্যার পর সংখ্যা পড়লে দেখা যাবে যে কী পরিমাণ মুখে মুখে প্রচলিত লোকগল্প লিপিবদ্ধ করা আছে। কাজেই এটা ভীষণ প্রয়োজন। আমরা প্রচলিত লোকগল্পকে বাদ দিয়েছি, আমরা প্রাত্যহিক জীবন্ত ভাষাকে বাদ দিয়েছি, কাজেই সাহিত্যে সংকটটা একদিক থেকে আসেনি, সাহিত্যের সংকট নানা দিক থেকেই আসছে।
ইলিয়াস: না, আরেকটা ব্যাপার, যেটা উমর সাহেব বলছেন প্রচলিত লোকগল্প আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে...
উমর: যেটা আপনি আপনার ‘খোয়াবনামা’য় তো খানিকটা ব্যবহার করেছেন।
ইলিয়াস: না, আপনি যেটা বলেছেন এটাও আবার ঠিক যে, এটা নষ্টও হয়ে যাচ্ছে। তো সে জন্য আমার মনে হয় লেখকদের দায়িত্ব আরও বেশি...
দেবী: এখনই সংগ্রহ করা...
ইলিয়াস: শুধু সংগ্রহ নয়, দিদি, আমার মনে হয় যে ব্যবহার করা।
দেবী: সংগ্রহ করো ব্যবহার করো।
ইলিয়াস: সংগ্রহ করা ব্যবহার করা, তাই না ব্যাপারটা? আমি ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি খানিকটা। তো আমার মনে হয়, এভাবেই এটা টিকে থাক। যদি মনে করি যে সব শেষ হয়ে যাবে, প্রচলিত লোককথা...তা যদি শেষ হয়েও যায় অন্তত আমাদের লেখায় জিনিসটা কোনো না কোনোভাবে টিকে থাকতে পারে।
দেবী: সেইভাবে থাকতে পারে সেইটে মনে করেই হয়তো...
ইলিয়াস: তাহলে আমার মনে হয় বেশি খরারহম থাকবে।
দেবী: আমি আমার লেখায় লোককথা প্রচুর ব্যবহার করি, করেছি, চোট্টিমুণ্ডাতে তো আছেই, প্রচুর আছে, সবই তো জানেন আপনারা... ‘কি হলো রে জান, পলাশীর ময়দানে, মা বাপ হারালো, পরাণ।’ তেলেঙ্গা বিবিরা এই করছে সেই করছে এই সবগুলো গানে কিছু টিকে আছে, সবটা টিকে থাকতে পারে না। আরেকটা হচ্ছে বৃদ্ধেরা তো মরে যাচ্ছে। কে ধরে রাখবে? মরে যাচ্ছে, স্থানান্তরী হয়ে যাচ্ছে।... রেনু রেনু হয়ে যাচ্ছে, ধুলো হয়ে যাচ্ছে, বাতাসে উড়ে যাচ্ছে, বিরসার একটা গানে যা আছে, এখন সেই বাতাসের উড়ন্ত ধূলিকণা তুলে এনে একটা দেশ কী করে রচনা করবে?
ইলিয়াস: এইটা একটা সমস্যা সাংঘাতিক, যেখানেই যাই...
দেবী: এটা কিন্তু সাহিত্যের...জীবনের...অনেক বড় বড় সংকট এর থেকে উদ্ভূত। একদিক থেকে হয়েছে, হবে। কাজেই এখনো যদি না পারা যায়, সচেতন বা মনস্ক হয়ে আমরা এগুলোকে না করি, তাহলে খারাপ।
ইলিয়াস: আপনার শবরদের সঙ্গে যে কাজ করার অভিজ্ঞতা, আপনি খুব গল্পের মতো করেই বলুন আর কী কেমন। কারণ, আমরা বারবার শুনছি তিনি তো শবরদের সঙ্গে কাজ করেন। উচা উচা পারাবাতে...আমরা চর্যাপদ পড়ার পর আমার মনে হয়েছে, শবররা আবার ফিরে এসেছে। কিন্তু শবরদের সঙ্গে তো দিদি কাজ করছেন।
দেবী: না না, শবর মানে তো ব্যাধ, কাজেই সারা ভারতবর্ষেরই উপকূল থেকে আরম্ভ করে এখানে পর্যন্ত তাদের নাম পাল্টে, এখানে তারা মাইগ্র্যান্ট হয়ে এসেছেন। আমি জানি না, পার্বত্যদের মধ্যেও যেসব উপজাতি আছে। শবর বা hunter এই ধরনের ইয়ে থাকতে পারে।
ইলিয়াস: আপনি যে শবরদের সাথে কাজ করছেন?
দেবী: এরাও শবর, লোধারাও শবর...
ইলিয়াস: এরা কি শবর বলছিলেন?
দেবী: এর হলো খেড়িয়া শবর। খেড়িয়া নামে তিনটে গ্রুপ আছে... দুধকিয়া, ঢোলকিয়া, পাহাড়িয়া। এরা পাহাড়িয়া শবর। সব পাহাড়কেই এরা পূজা করে। সব পাহাড়ই এদের কাছে পরাজিত। কাজেই এরা পাহাড়িয়া শবর। এদের মধ্যে আমি যখন যাই যেটা আমাকে আকর্ষণ করে, সেটা হচ্ছে যে এদের মধ্যে বার্টার সিস্টেম চলে।
ইলিয়াস: এখনো?
দেবী: এটা দেখে আমি, আমার বিস্ময়কর একটা আঘাত লেগেছিল। আমি বললাম, এই যে চুকা গাছের ফল, এটা খাস। ওই লাল, ও গুলো খাস। আর পাতাটা তো ওরা সবই শাকের সাথে খেয়ে নেয়। তো ডাঁটাগুলো শুকোলে জ্বালানি করে। ফলে বীজগুলোর কী হয়? একজন মা-ও তো ছিল অপর গোত্রের, সে বলল, ‘এগুলো আমরা কুচিয়ে ফেটে ভাজা করে খাই’। ও ভীষণ অদ্ভুত সুন্দর হেসে শিশুকে বোঝানোর মতোন বলল, ‘মা, এগুলোকে আমরা পুড়ে তেল করি’। তেল তৈরি করে ওরা সেটাকে কুচা বাজারে নিয়ে যায়, ১১ মাইল দূরে পাহাড়ি গ্রামে। ওই তেলটা দেয় যারা কবিরাজি ওষুধ বাকল কিনতে আসে তাদের কাছে। পাশেই মুদির দোকান এবং সেই কবিরাজি ওষুধ বাকল যে কেনে, সেও খুব বুদ্ধিমান। সেই নুন, কোরোসিন, নিত্যদ্রব্য নিয়ে রেখে দেয়। ওরা তার বদলে নুন আর কেরোসিন তেল আসে। ওই বার্টার সিস্টেম।
ইলিয়াস: এখনো চলছে?
দেবী: এখনো চলছে। শবর জাতির মধ্যে বার্টার System widely practiced। এটা তো তেল তৈরি করে, তা ছাড়াও ওরা এই ওষুধ বাকল লতাপাতা যা পেল, এত জঙ্গল কাটা করার পর তা ওরাই পারে নিয়ে আসে। মধু আনে। শিমুলতুলো কুড়িয়ে আনে। গাছের বীজ আনে। আরও অনেক কিছু আনে এ রকম। তো সেগুলোর বদলে ওরা ওদের কাছে যা প্রয়োজনীয় জিনিস সেগুলো নিয়ে নেয়। পয়সার লেনদেন শবররা ৫০ বছর আগেও করেনি। ২৫ বছর আগেও তেমন করেনি। এটার বদলে ওটা এসব করছে।
ইলিয়াস: পশ্চিম বাংলারই একটা অংশ না?
দেবী: হ্যাঁ, পুরুলিয়া জেলাতে। পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে গরিব জেলা পুরুলিয়া। আর পুরুলিয়ার সবচেয়ে গরিব হচ্ছে শবর।
উমর: ওখানে যারা মজুর, তাদেরকে কীভাবে তাদের মজুরি দেওয়া হয়?
দেবী: মজুরের দামটা সরকারের যেটা প্রতিশ্রুতি, মজুরি সেটা এখন...। পুরুলিয়াতে বছরে একবারই ধান হয়। তিন মাসে। আর সকলে যে বড় জমির মালিকানা... পশ্চিমবঙ্গে তো বড় জোত সব ভেঙে গেছে।
উমর: তার মানে, এগুলো সব একফসলের জায়গা?
দেবী: একফসলের জাযগা, একদম একফসলি কিন্তু, একফসলি এলাকাকে যে দো-ফসলি ত্রি-ফসলি করা যায়, Irrigation less cultivation করে এটা একমাত্র শবররাই নিরীক্ষা করে দেখাল। যাদের জমি আছে তাদের দিয়ে আমি সে কাজ করাতে পারি না। কেননা ওদের যে দৃঢ় সংস্কার। ওরা বলল, না, আপনি যা বলছেন তা হয়, চিনাবাদাম চাষ হয় শরতের দিনে শীতের দিনে, কিন্তু সেটা করলে নাকি, পরের বছর ধান হবে না। এসব সংস্কারে ভদ্র সমাজই পড়ল। আর এরা এসব বংশপরম্পরায় করে না। বা যেসব Tribe খুব মূলধারার কাছে থেকে, তাদের অনেক কিছু নিজেদের ঘাড়ে নিয়ে বসে আছে, এরা তার মধ্যেও নেই। এরা তো অন্য গোত্র থেকেও দূরে। যে জন্য বললাম, ওরা যখন ওদের দিয়ে মাছ চাষ করবে তার জন্য বাঁধ কাটে, ওখানে পুকুরকে বাঁধ বলে, বড় বাঁধ কাটা হলো, মাছের পোনা চাষ করবার ছোট চারটি করা হলো ইত্যাদি। কৃষি সেচ পাম্প অনেক জায়গাতেই বসানো হয়েছে এবং কৃষি সেচ পাম্প যেটা, সেটাকে পরিচালনা করবার জন্য শবর ছেলেদেরকেই আমরা রাঁচী থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে এনেছি। তারাই এগুলো অপারেট করে। জমির উর্বরতার পরীক্ষা ওরা করে। পানি সেচন প্রক্রিয়া ওরা করে। জলের লেয়ার কোথায় পাওয়া যাবে? ওরা করে। যা যা হয়েছে ওরা নিজেরাই সেটা অপারেট করতে পারে। যাহোক, তখন শোনা গেল যে প্রথম বর্ষায় যে মাছ আসে, সেই মাছ ধরে বাঁচানো পাপ। এটা জেলারই বিরোধী। ওখানেও, বাঁকুড়াতেও। কারণ হচ্ছে সে মাছ বাঁচে না! ফলে পরবর্তী মাছগুলোও বাঁচে না। শবররা সহাস্য মুখে গিয়ে সেই মাছই ধরল। প্রথম মাছ ধরল নদী থেকে। ধড়াৎ ধড়াৎ ধরল, এনে ধরে পুকুরে ফেলল। এবং সেই মাছ বাঁচল। তার পোনা বড় হলো।
ইলিয়াস: সংস্কারটা ভেঙে গেল?
দেবী: এবং কিছুটা! আমি যে বারবার বলি হাতেকলমে কাজ, হাতেকলমে কাজ করার ফলে একটা সংস্কার ভাঙল। একটা বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠিত হলো, ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক দূর কাজ করা গেল। অনেকটা মুক্ত হয়ে গেল। অনেকগুলো শিকল খুলে গেল। এখন এই রকমই ওরা বারবার করে যেতে লাগল। যখন পরিপূর্ণ সূর্যগ্রহণ হচ্ছিল। সুর্যকে ওরা বলে বেড়া। এখন বেড়া ডুবা বা বেড়া নিভান এটা তো কত বংশপরম্পরা পড়ে আবার দেখা যাবে! কাজেই ওরা সবাই চাল-ডাল হাঁড়ি নিয়ে মাঠে চলে গিয়েছিল। ওদের গ্রাম দেবতা মানে গড়াম, গাছ। একটা গাছকে ওরা গ্রাম দেবতা করে, তাকে সাধারণত গড়াম বলে। সে সাঁওতালরা বলে, মুণ্ডারা বলে সবাই বলে। শালগাছ সব জায়গায় পাওয়া যায় না, ওরা অন্যান্য গাছকেও গরাম করছে। তো সেখানে ওরা তা দেখল। দেখার পর ওখানে খুব ভালো করে খিচুড়ি-টিচুড়ি রান্না করল, খেল, সব পরিষ্কার করে মার্জনা করে দিল জায়গাটা। আর সূর্য ছিল না আকাশ কালো হয়ে গিয়েছিল তার স্মারকস্বরূপ কালোপাথর আগেই জোগাড় করে রেখেছিল। কালো পাথর নিয়ে গরামের ওখানে ভক্তিসহকারে স্থাপন করল। তো, এইটা একটা ফলকচিহ্ন রেখে দিল যে, আমরা একটা বেড়া ডুবা দেখেছিলাম। পরে আমাদের নাতি-নাতনিরা বুঝতে পারবে। কাজেই সূর্যগ্রহণ কী, দেখলে কী হয়, খোলা চোখে দেখলে কী হয় না হয়...ওরা নিঃশব্দে কাজটা করে চলে গেল।
ইলিয়াস: মানে সূর্যগ্রহণের যে কুসংস্কার, সেটা আর থাকছে না।
দেবী: অত তর্কবিতর্কে গেলই না। ওরা এটা করে দেখাল। করে যে যার ঘরে ফিরে গেল। খুব যে বীরত্বের কাজ করেছে, তা-ও মনে করল না।
ইলিয়াস: স্বাভাবিক কাজ করেছে।
দেবী: খুবই স্বাভাবিকভাবে এটা করেছে। ওদের যখন ধাত্রীবিদ্যার প্রশিক্ষণ দিলাম, নিরক্ষর শবর মেয়ে। কিন্তু এদের ডাক্তার আর নার্সিং...নিজেরা নিজেদের জামাকাপড় সেদ্ধ করে রাখবে, পরিষ্কার থাকবে, তীরের ফলা দিয়ে বা ঝিনুক দিয়ে বা বাঁশের চাঁচ দিয়ে নাড়ি কাটবে না, নতুন ব্লেড দিয়ে কাটবে, সেটাকে শোধন করে নিয়ে জলে ফুটিয়ে নিয়ে, অমুক করে তমুক করে সব শেখানো হলো। করে ওদের মেডিকেল কিডব্যাগ ইস্যু করা হলো। বলা হলো, যা ফুরিয়ে যাবে তা তোমরা নিজেরা রোজগার করে ওর থেকে সেটাকে আবার কিনে নেবে। তারপরের কথা হচ্ছে, যে শিশুকে তুমি প্রসব করাবে তার ট্রিটমেন্ট ইত্যাদি ইত্যাদি তার দায়িত্বও তোমার। এক বছর পরে গিয়ে আমি ওদের জিজ্ঞেস করলাম, এর থেকে কী লাভ হলো? ওরা প্রথম কথাই বলল... মা, ডাইনি চলে গেছে। নিরক্ষর শবর বলল, ডাইনি চলে গেছে। সাঁওতালরা ডাইনি বলে, ডাইনিকে হত্যা করে। তার পেছনে সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক কারণ। ওর জমিজমা, গরু বাছুর—এসব নেবে বলে। এটা সম্পূর্ণ আর্থিক কারণ। শবরদের ডাইনি বিশ্বাস আছে, যেমন মধ্যবিত্ত সমাজেও আছে প্রচুর। পাথর-টাথর বিশ্বাস, ডাইনি বিশ্বাসও আছে, নজর লাগা, বাণ লাগা ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু ডাইনি হত্যা নেই। বলল, ডাইনি চলে গেছে। আমি বললাম, কোথায় গেল? বলল কোথায় যাবে...তারা গ্রামেই আছে। তারা এখন সব মাসি, পিসি, দিদিমা, ঠাকুমা হয়ে গেছে। বৃদ্ধাদেরই বলল হয়তো। এখন হয়েছে কি, যেসব মেয়ে কাজ করতে যায় মাঠে, তারা বাচ্চাদের ওদের কাছেই রেখে যায়। ওরা বাচ্চাদের দেখে, ওরা তার জন্য খেতে দেয়, নিজেরা গতরে খাটে। আসার সময় বাচ্চাকে নিয়ে চলে আসে। এভাবে শান্তভাবে কাজের ভেতর দিয়ে দিয়ে, এই জিনিসগুলো আসছে। কাজেই শবররা এক অদ্ভুত জাতি।
ইলিয়াস: সরলও তো খুব। কিন্তু সবাই না...
দেবী: সরলতা না, এখনো খুব দুনিয়ার নিচের সারিতে আছে। ওদের কাছে, যেমন অদ্ভুত কথা বললাম না ‘বিরসা মুণ্ডা’ অনুবাদ করছে হো ভাষায়। তারপরে এসে বলে, ‘শোষণ’ শব্দের কী উল্লেখ করব? আমি বললাম, তার মানে? হো, সাঁওতাল, মুণ্ডারি এসব ভাষায় tribal language-এ ‘শোষণ’ শব্দের কোনো প্রতিশব্দ নেই। কেননা ওরা শোষণ জিনিসটা জানত না। প্রতিহিংসার কোনো প্রতিশব্দ নেই। আমি প্রসস্তিকে জিজ্ঞেস করলাম, তোর কাকাকে যখন কেটে দিয়েছিল? ও বললো, সে দোষ করেছিল তার মাথাটা কেটে দেওয়া হলো। এতে প্রতিহিংসার কী আছে? সে ওই শিল্প এলাকায় নিয়ে যাবে বলে চার-পাঁচটা ছেলেমেয়েকে নিয়ে গিয়ে, ওখানে বেচে দিয়ে টাউটের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল। একবার কেন দু-দুবার ধরা পড়ে। তো মাথাটা কেটে দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রতিহিংসার কী আছে? তখন আমি বললাম, শোষণই বসাও, হিন্দিতে তোমরা যা বলো নাগরী হরফে শোষণ শব্দ বসাও। এগুলো কিন্তু অনুসন্ধানী অভিজ্ঞতা মানুষের। যখন আমি জানতে পারি, যারা সারা জীবন শোষিত তাদের ভাষায় শোষণ শব্দ নেই, সুদ শব্দ নেই, ধার দিতে পারো সুদ হতে পারে না। আমি তোমায় টাকা ধার দিয়েছি, তুমি আমার চাষের সময় গতরে খেটে তুলে দাও। অতিরিক্ত আদায় নাই, তোমাকে আমি ৩০ দিয়েছিলাম ৩০, তার বেশি আর হবে না। ওরা এখন পঞ্চায়েতের মাধ্যমে কাজ পাচ্ছে। আপনি যে জিজ্ঞেস করলেন, পুরুলিয়া জেলাতে চাষ কম হয় খেত মজুরিতে, সরকারঘোষিত মজুরি সবাই পায় না, কেউই পায় না, কোনো অঞ্চলেই পায় না, সেখানে ওরা টাকা ১৫ করে পায়, নারী-পুরুষ সমান।
ইলিয়াস: সরকারিটা কত?
দেবী: বর্ধমান-টর্ধমান বা ছাড়গ্রাম-টারগ্রাম যেখানে আন্দোলন আছে, সেখানে ভালো পায়।
উমর: কুড়ি টাকা আর ২ কেজি চাল।
দেবী: এরা ১৫ টাকা ১২ টাকা, তার সঙ্গে খানিকটা মুড়ি-টুরি পায়। তার বেশি না। ওখানে তো উদ্বৃত্ত মজুরি... চাষবাস...। পুরুলিয়া একমাত্র জেলা যেখানে আপনি ১০ মাইল ১৫ মাইল দেখবেন প্রান্তর! কোনো জনমানুষ বাড়িও নেই আর কোনো শস্যক্ষেত্রও নেই। রুক্ষ প্রান্তর এই রকম দক্ষিণ পুরুলিয়া যেটা ট্রাইবাল পুরুলিয়া। এখন এটা হয়, এ রকম হয়, তবে এটা সত্যি যে পশ্চিমবঙ্গে দুর্ভিক্ষ হবে না। পশ্চিমবঙ্গে আরেকটা জিনিস বন্ধ হয়েছে আজ থেকে ১০-১৫ বছর। আরও বেশি হতে পারে, ১৫ বছর তো বটেই। শহরের দিকে মাইগ্রেশনটা একদম চলে গেছে।
ইলিয়াস: ও আচ্ছা...
দেবী: কেননা পঞ্চায়েতের মাধ্যমে ধরুন ১০০ টাকায় ১০০ পয়সার কাজ না হোক, ৪০ পয়সা, ৫০ পয়সা, ৬০ পয়সার কাজ হচ্ছে। কাজেই সকলেই কিছু না কিছু কাজ পাচ্ছে। এইভাবে শহরের দিকে মাইগ্রেশনটা চলে যাচ্ছে। এগুলো হয়েছে। এটা ঘটনা।
ইলিয়াস: আপনি শবরদের সম্পর্কে যেসব অভিজ্ঞতা আরকি, সেটা নিয়ে আপনি গল্পের মতো একটু বলবেন? সেটা শুধু সিরিয়াস আলোচনা... আমার মনে হয় গোটা ব্যাপারটাই নিয়ে আসা ভালো।
দেবী: শবরদের নিয়ে অভিজ্ঞতার তো কোনো শেষ নেই।
ইলিয়াস: যেমন তাদের মৃতদেহ, প্রথা, তার অভিজ্ঞতা, তারপর সরলতা...
দেবী: একবার আমাকে খুব হাঁটাল, ২০/২২ মাইল হাঁটলাম। ২০/২২ মাইল হাঁটা সোজা কথা নয়। এখন নয়, বছর দশেক আগে। আমি বললাম, তোরা কি আমাকে হাঁটিয়ে মেরে ফেলবি? ওরা বলল, না মা, খুব বড় পাথর দিব অর্থাৎ ওরা সমাধিই দেয়। সমাধি দেওয়া সব অস্ট্রিক গোত্রদেরই নিয়ম। সমাধি দিয়ে তারপর একটা পাথর দিয়ে চিহ্ন দেয়। ওরা বলল, বড় পাথর দেব। আমি বললাম, চারদিকেই একটু বড় পাথর দিস। ওরা বলল, না এ রকম পাথরই দেব কিন্তু অ-নে-ক কষ্ট করে অ-নে-ক দূওওওওর থেকে আনব।
ইলিয়াস: [হাসি] আপনার মরতে কোনো আপত্তি থাকা উচিত না।
দেবী: এরপর আমি বললাম, তা-ই করিস। কিন্তু তাহলে তার ওপর একটা গাছ লাগিয়ে দিস। ওরা বলল, গাছ লাগালে কী হবে? আমি বললাম, গাছের মধ্যে আমি বেঁচে থাকব। একটা ভালো গাছ দিস, নিমগাছ দিস একটা। এখন ওরা সমাধিতে খুব গাছ লাগাচ্ছে।
ইলিয়াস: প্রত্যেক সমাধিতেই?
দেবী: একটি করে নিমগাছ লাগাচ্ছে।
[নোট: কথোপকথনের তৃতীয় পর্ব আসছে ১৭ জুলাই ২০২১।]
শবর নৃগোষ্ঠি সম্পর্কে নতুন অনেক তথ্য পেলাম। ধন্যবাদ সংশ্লিষ্ট সবাইকে।
মাসুদ পারভেজ
জুলাই ১০, ২০২১ ১০:২১
যখন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস আর মহাশ্বেতা দেবীর কথোপকথন পড়ছিলাম, যেন নিঃস্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। কত গুরুত্বপূর্ণ কথা অথচ আমাদের তেমন করে জানাই হলোনা। বিশেষত ভাষা ও বদরুদ্দিন উমরের শ্রেনী সংগ্রাম, কমলকুমার প্রসংগ, বঙ্কিমচন্দ্র। সাধুবাদ ও শুভ কামনা তর্ক বাংলার জন্য
শাখাওয়াত বকুল
জুলাই ১০, ২০২১ ০২:২৬