আমাদের নাম ইতিহাসে উঠে গেছে
ভূমিকা
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস [১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩-৪ জানুয়ারি ১৯৯৭] নিজের কথা লিখেছিলেন এইভাবে, ‘আমার সময়ের দেওয়ালের ভেতর আমি শুধু হাঁসফাঁস করি। এভাবে বাঁচা মুশকিল। তাই কোনো বড় কিছু করার জন্যে নয়, এমনি বাঁচার তাগিদে, নিশ্বাস নেওয়ার জন্যে পায়ের পাতায় ভর দিয়ে দেওয়ালের ওপারটা দেখার চেষ্টা করি।...আমার জন্মমৃত্যুর বাইরে বিশাল ও অনন্ত সময়।...কতোসব জানোয়ারের মার খেয়ে, কতো জানোয়ারকে মেরে, বৃষ্টিতে ধুয়ে, রোদে পুড়ে এতোটা পথ পেরিয়ে আটকে পড়েছি এখানে এসে। এখানে আমার ওপর পাথরের মতো চেপে বসতে চাইছে অতিকায় কোনো জীব।...হয়তো কে জানে, ভবিষ্যতের সময় আমার এই টুটাফাটা, পঙ্গু ও রুগ্ন সময়কে সেই ইতর জীবটির সঙ্গে লড়াই করার সময় বলে শনাক্ত করবে। সেই ভরসাতেই বাঁচি। তোতলা কলম নিয়েও তাই একটু-আধটু লিখতে চেষ্টা করি!’ অকালমৃত্যুর আগের ১৭ বছরে ইলিয়াস বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দুটি উপন্যাস নিয়ে আসেন আমাদের জন্য। তার আগে বেশ কয়টি অসাধারণ গল্প ও প্রবন্ধ লিখেছেন। মৃত্যুর আগের ১৩ বছরে অসাধারণ সংগঠক হিসেবেও সক্রিয় ছিলেন।
মৃত্যুর পাঁচ মাস আগে মহাশ্বেতা দেবীর [১৯২৬-২০১৬] কাছে লেখা এক চিঠিতে তিনি নিজের ভবিষ্যতের উপন্যাসের পরিকল্পনা সম্পর্কে যা লিখেছিলেন, তার থেকে একটা বড় উদ্ধৃতি এখানে দেওয়া প্রয়োজন বোধ করি। তিনি লিখেছিলেন, ‘...এই উপন্যাসের লোকজন যেখানে বাস করে ওই জায়গাটি আপনার চেনা, ‘‘এককড়ির সাধ’’-এর নায়কের বাড়িও সেখানেই। মহাস্থান আমার বাড়ি বগুড়া থেকে মাত্র ছয় মাইল। ছেলেবেলা থেকেই প্রাচীন পুন্ড্রনগরীর বিশাল ধ্বংসাবশেষের প্রায় সবটাই আমি চষে বেড়াচ্ছি, বেশির ভাগ সময় একা, মাঝে মাঝে বন্ধুদের সঙ্গে। বগুড়া শহরের উত্তরে সুবিল বলে একটা জায়গা আছে, পুন্ড্রনগরীর শুরু বলতে গেলে সেখান থেকেই। তারপর গোকুল, সেখানে বিশাল একটি বৌদ্ধবিহারের ধ্বংসস্তূপ, গোকুল পেরিয়ে মহাস্থান। ওখানে এখন একটা মিউজিয়াম, মিউজিয়ামের সামনে দিয়ে আরো মাইল ছয়েক গেলে শিবগঞ্জ, সেটাও কিন্তু প্রাচীন পুন্ড্রনগরীর অংশ। আপনার এককড়ি করতোয়ার জলে মহাস্থানের ভাঙাচোরা প্রাসাদের লাল ইটের ছায়ায় দেখেছিলেন, মনে আছে? আমার উপন্যাসের লোকজন বাস করে সেই করতোয়ার তীরে। তবে এ লাল ছায়া কতোবার যে কায়া পেয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। সেই দিব্যোক আর ভীমের কৈবর্ত বিদ্রোহের আমল থেকে মজনু শাহের ফকির বিদ্রোহ এবং শেষ পর্যন্ত ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে অজস্র মানুষের রক্তের করতোয়া ভেসে গেছে। এমনকি, শুনেছি যে, বৌদ্ধদের অহিংসা ধর্ম প্রচারের সময় এখানে কয়েক হাজার জৈন সন্ন্যাসীকে হত্যা করা হয়েছে।...’
‘আমি অবশ্য থাকতে চাই ১৯৭১-এর যুদ্ধের মধ্যে। কিন্তু তাহলে কি জায়গাটিকে ইজ্জত করা হবে? তাই বড়ো বিপাকে পড়েছি। উপন্যাস লেখার আগে আমি মেলা নোট-টোট নিই।...কিন্তু একবার লিখতে শুরু করলে সব ওলটপালট হয়ে যায়, চরিত্ররা বাহাদুর হয়ে ওঠে, আমার শাসন মানতে চায় না। আর একটা মুশকিল হয়েছে। লেখার সময়, মানে লিখতে লিখতে ওই জায়গাটায় আমাকে বারবার যেতে হবে। আরো মানুষের মুখের গল্প শুনতে হবে। কিন্তু এই মার্চে ক্যানসারের উৎপাত থেকে রেহাই দিতে ডাক্তারের আমার ডান পায়ের গোটাটাই কেটে ফেলেছেন। এখন ক্রাচে ভর করে হাঁটি। কিন্তু এভাবে কি ওখানকার উচুঁ-নিচু জায়গাটা পেরুতে পারবো? বলতে কি, ওখানে যাবার জন্যেই আমি প্রাণপণে ক্রাচে হাঁটা রপ্ত করার চেষ্টা করছি। মাস দুয়েক পর বগুড়া যাবো, তখন মহাস্থানে গিয়ে দেখবো কতটা হাঁটা যায়।’
মহাশ্বেতা দেবী তাঁর মাস্টার সাব উৎসর্গ করেছিলেন ইলিয়াসকে। এই প্রসঙ্গে মহাশ্বেতা লিখেছিলেন, ‘ইতিহাসকে তো আমি গণবৃত্তে দাঁড়িয়েই দেখি। রাজবৃত্তের ইতিহাস লেখেন ঐতিহাসিক। আমি খুঁজি নাম নেই, ঠিকানা নেই, সেই সব মানুষকে। যারা শোষণ সহ্য করতে করতে একদিন বিদ্রোহ করে। হয়তো জেতে না, মরেও যায়। তাদের সমাধি বা শ্মশানে কোনো স্তম্ভ বা ফলক থাকে না। তবু ভারতের ইতিহাসে বারবার দেখি, কোনো পরাজয়, জয়ের চেয়ে অনেক মহান হয়ে ওঠে। সে ১১ শতকে বাংলার কৈবর্তবিদ্রোহ হোক, বা ১৮৫৭-৫৮-এর মহাবিদ্রোহ, ১৮ শতাব্দীর সাঁওতাল-মুণ্ডা কৃষক বিদ্রোহ হোক, বা এই শতকে ভারতীয় নৌ-বিদ্রোহ।...মাস্টার সাবের কাহিনিতে লোকবৃত্তের ভূমিকা আনতে চেয়েছি। জাতপাতের বিদ্বেষ আজও জীবন্ত, সে জন্যই গাথাগুলি লিখেছি।...এমন এক মানুষের কাহিনিই আখতারুজ্জামানকে ঊৎসর্গ করা যেত। বাংলাদেশের মহান মুত্তিযুদ্ধ যে ঘটে, তার পিছনে ঢাকা শহরে ও সুদূর গ্রামে গরিবরা কী ভূমিকা পালন করে, তাই নিয়েই তিনি লেখেন ‘চিলেকোঠার সেপাই’। এ এক নতুন বাংলা ভাষা, শহরের ধুলো কাদা মবিল আবর্জনা, হঠাৎ ধনীর বর্বর অসভ্যতা আস্তাকুঁড়ের মানুষদের বারুদ হয়ে ওঠার ভাষা। শহরের নিচুতলার সমাজের মানুষের বাংলা ভাষা এমন ইজ্জত পায়নি সাহিত্যে। যেমন দেখার চোখ, তেমনি স্বচ্ছ ও কঠিন রাজনীতিক বিশ্বাস, তেমনি ধারালো হিউমার।’
লেখায় ও জীবনে সব ধরনের মানুষই ছিল ইলিয়াসের মনোযোগের ক্ষেত্র। সব মানুষই বাস করে একই শারীরতাত্ত্বিক কাঠামোর মধ্যে। কিন্তু সামাজিক ঐতিহাসিক কারণে এর মধ্যেই ঘটে বহু বিভাজন: শ্রেণি, লিঙ্গ, জাতপাত, জাতি, ভাষা, ধর্ম, বর্ণ...; বৈচিত্র্য অস্বীকৃত হয়, মহিমান্বিত হয় বৈষম্য। সম্পত্তির ব্যক্তিমালিকানা, বৈষয়িক লোভ, দখল, ক্ষমতা সর্বোপরি মানুষ ও প্রকৃতি বিদ্বেষী মতাদর্শ একই চেহারার মানুষের মধ্যে যোজন যোজন ফারাক তৈরি করে। কেউ কেউ শাসন, দখল, বিত্ত আর নির্মমতায় অমানুষ হয়; বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তার জগৎ থেকে উৎপাটিত হয়ে, বঞ্চিত প্রতারিত হয়ে দলিত আর দমিত থাকে। নিপীড়নের নানা ব্যবস্থা বৈধতা দিতে গড়ে ওঠে রাষ্ট্রের নানা প্রতিষ্ঠান আইন-কানুন, সাহিত্য-সংস্কৃতি। ইলিয়াস তাঁর শিল্পসৃষ্টিতে এই বৈপরীত্য অনুসন্ধান করেন নিজে নির্মোহ থেকে, সন্ধান করেন মানুষের ভেতর মানুষকে।
‘আমি ও আমার সময়’ বলতে গিয়ে তিনি লিখেছিলেন, ‘কৈশোর পার হচ্ছি তখন, সদ্য কলেজে ঢুকেছি, ওই যে সেনাবাহিনীর থাবার নিচে পড়লাম, সারাটা যৌবনকাল চলে গেল তারই সাঁড়াশির ভেতর, আজও তা থেকে রেহাই মিলল না। মার্শাল ল’র জগদ্দল পাথরে চাপা পড়ে যে কিশোর পরিণত হলো যুবকে, যৌবনকাল পার করে দিয়ে আজ যে পক্বকেশ প্রৌঢ়, তার বৃদ্ধি কি আর পাঁচটা দেশের মানুষের মতো হতে পারে?’
নিজ গণ্ডির মধ্যবিত্ত ব্যক্তি অনুসন্ধান করতে গিয়ে ইলিয়াসের লেখক ও চিন্তাজীবনের শুরু। কিন্তু তার মধ্য দিয়েই তিনি এই জগতের বন্দিশালা অতিক্রম করেছেন। ধারণা করি, ৬০ দশকে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে মানুষের লড়াই, কৃষক আন্দোলন, শ্রমিক আন্দোলন, সর্বোপরি ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের তাপ ইলিয়াসকে, গভীর শীতলতায় আটকে যাবার হাত থেকে রক্ষা করেছিল। পরিবর্তিত হয়েছে তাঁর ইতিহাস-জীবন-দর্শন সম্পর্কিত চিন্তার কাঠামো। মধ্যবিত্তের আত্মপ্রবঞ্চনায় ভরা চরিত্র বিশ্লেষণ করেছেন তিনি, কিন্তু তার মধ্যে আটকে থাকেননি। দৃষ্টি ও চিন্তাশক্তি প্রসারিত হয়েছে, সমাজের জালের মুখোমুখি হয়েছেন, ইতিহাস তাঁকে খুলে দিয়েছে অজানা জগৎ। মানুষের মধ্যে দেখেছেন বহু মানুষ, সন্ধান পেয়েছেন মানুষের অসীম শক্তি ও সৃজনশীলতার বিশাল সমুদ্র। মানুষের সেই উষ্ণতা ইলিয়াসকে, সামনে ও পেছনে, বহুদূর তাকানোর শক্তি দান করে। এই শক্তির সন্ধান আমরা পাই তাঁর পরবর্তী অসাধারণ সব গল্প ও উপন্যাসে।
চিলেকোঠার সেপাই উপন্যাসে চেংটু নিহত হয়, মিছিল, সভা-সমাবেশ দখল হয়ে যায়, হাড্ডি খিজির বুকে গুলি খায়। কিন্তু এখানেই তো জগৎ শেষ হয় না। চেংটু, খিজির থেকে যায় কোথাও না কোথাও। খোয়াবনামায় ব্রিটিশদের হাতে গুলি খাওয়া মুন্সী যেভাবে পাকুড়গাছে গিয়ে বসে, তার মরণ হয় না। তেভাগা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়, কিন্তু তমিজ তার ডাকেই অনির্দিষ্ট পথে পা বাড়ায়। ভবিষ্যতের দায়িত্ব নিয়ে শক্ত মাটির ওপর দাঁড়ায় তমিজ ফুলজানের মেয়ে সখিনা। সামরিক শাসন ভেঙে বুকে গুলি নিয়ে হাড্ডি খিজির যখন রাস্তায়, তখন দৃশ্য-অদৃশ্য অসংখ্য মানুষের মিছিল মুক্তির এক প্রবল মানবিক স্রোত তৈরি করে। বহু রকম শৃঙ্খলের মধ্যেও অতীত থেকে ভবিষ্যতে প্রবাহিত মানুষের চৈতন্য অনুসন্ধান করতে করতেই ইলিয়াস নতুন নতুন প্রান্তরে হাজির হচ্ছিলেন। এভাবেই বাস্তবতার ভেতর পরাবাস্তব, চেতনের মধ্যে অচেতন, জাগরণের মধ্যে স্বপ্ন, বর্তমানের ভেতর অতীত মানুষকে এক থেকে অসংখ্য রূপে হাজির করতে থাকে তাঁর লেখায়।
ইলিয়াস-মহাশ্বেতার আলোচনায় বিভিন্ন মিথ প্রসঙ্গ ঘুরেফিরে এসেছে। ইলিয়াসের লেখাতেও আমাদের জনপদে নানাভাবে ছড়িয়ে থাকা মিথ ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। চরিত্রকে জুতসইভাবে ধরতে গিয়ে বর্তমান বা চোখে দেখা বাস্তবতাই যথেষ্ট হচ্ছিল না। ইলিয়াসের দৃষ্টিতে, মানুষের ভেতর পরম্পরার শক্তি আর তার অচেতন না বুঝলে চরিত্রটি অধরাই থেকে যায়। সে জন্য ইলিয়াস প্রকরণে নতুন নতুন সৃষ্টিশীল কাজে হাত দেন। খোয়াবনামায় ইলিয়াস যেভাবে পোক্ত হাতে মিথ ব্যবহার করেছেন সে সম্পর্কে আরেক শক্তিমান কথাশিল্পী শওকত আলী বলেন, ইলিয়াসের আবিষ্কার করা ‘মিথ কেবল অতীতের জিনিস নয়- তা বর্তমানেও এসে পড়ে....[ইলিয়াস] দেখান যে মানুষের বিদ্রোহের আর লড়াইয়ের স্মৃতি থেকে যায় তার অবচেতনার পরতে পরতে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এবং তা বেরিয়ে আসে কখনো মন্ত্র বা গানের শোলোক হয়ে, কখনো আঁকিবুকি টানা নক্সার ভেতর দিয়ে, আবার কখনো বা স্বপ্ন ব্যাখ্যার মধ্য দিয়ে।... মিথের অমন ব্যবহার সমগ্র বাংলা সাহিত্যে আর দেখা যায় না।...গত তিন/চার দশক ধরে হিস্পানি সাহিত্যে মিথ সৃজনশীলতার উপাদান এবং কৌশল হয়ে উঠেছে। আফ্রিকান সাহিত্যও সেই উদ্যোগের এখন অন্যতম শরিক। এক্ষেত্রে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে আমাদের স্মরণ না করে উপায় থাকবে না।’
১৯৯৬ সালে ইলিয়াসের পায়ে ক্যানসার ধরা পড়ে, এর কারণে তাঁর পা কাটা পড়ে। ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় এক সাহিত্য সম্মেলনে এসেছিলেন ইলিয়াসের প্রিয় লেখক মহাশ্বেতা দেবী এবং কেরালার আরেক শক্তিমান লেখক আনন্দ। দুজনের সঙ্গেই সে সময়ে ইলিয়াসের কথা হয়। মহাশ্বেতা দেবী ঢাকায় অবস্থানকালে বেশ কয়দিন ইলিয়াসের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন, তাঁদের কথা, কবিতা, গান ঢেকে দিয়েছিল ইলিয়াসের শরীর যন্ত্রণা। সে সময়ই ইলিয়াস উদ্যোগ নেন তাঁর সম্পাদিত সাহিত্য পত্রিকা তৃণমূল-এর জন্য মহাশ্বেতা দেবীর সাক্ষাৎকার নেবেন। ১৯৯৬ সালেই ইলিয়াস আজিমপুর কলোনিতে আসেন, সেখানেই এই কথাবার্তা হয়। তাঁদের কথোপকথনে ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছিল মানুষ ও সময়, জাতি, ভাষা, লেখার বিষয় ও প্রকরণ নিয়ে নানা দিক, যার একটা অংশ রেকর্ড হয়। আলোচনায় আরও যোগ দিয়েছিলেন বদরুদ্দীন উমর, কাজী ইকবাল ও চৌধুরী মুফাদ আহমদ। তারিখ ছিল ১৭ ডিসেম্বর ১৯৯৬ সাল। এর কয়েক দিন পর ৪ জানুয়ারি ১৯৯৭ সালের ভোরে ইলিয়াস মৃত্যুবরণ করেন।
পরে এই কথোপকথনের অনুলিখন করেন তাসলিমা আখতার। ২০০১ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত বাঙলাদেশ লেখক শিবিরের সাহিত্য পত্রিকা তৃণমূল ৪র্থ সংখ্যায় এই কথোপকথন প্রথম প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকা সম্পাদনার ভার তখন ছিল আমার ওপর। তবে পত্রিকাটির উদ্যোক্তা, সংগঠক ও প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস।
৮ জুন ২০২১
[কথোপকথনের প্রথম পর্ব]
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস: ঢাকার তৃণমূল নামে একটি পত্রিকার পক্ষ থেকে আমরা ভারতবর্ষের বিশিষ্ট লেখিকা শ্রীমতী মহাশ্বেতা দেবীর একটি ছোট্ট সাক্ষাৎকার গ্রহণ করব। আমি আখতারুজ্জামান ইলিয়াস পরম সৌভাগ্যবান, সাক্ষাৎকার গ্রহণের মূল দায়িত্বটি আমার ওপরই দেয়া হয়েছে। একটি সাক্ষাৎকার মানে একদিনের কথা নয়। যখন মহাশ্বেতা দেবী কথা বলবেন তখন কোন কোন কথায় তাঁকে যথেষ্ট সময় দিয়ে, অস্বস্তির মধ্যে না ফেলে, অথবা ফেলতেও হতে পারে- কিছু কিছু প্রশ্ন এখানে যাঁরা আছেন তাঁরা করবেন। এখানে আছেন আমাদের কাজী ইকবাল, নাইম হাসান ও গৌরাঙ্গ মণ্ডল। আমি আশা করছি, আরো অনেকে আমাদের সঙ্গে যোগ দেবেন। তো মহাশ্বেতাদি, আমরা প্রশ্ন, আলোচনা শুরু করতে পারি?
মহাশ্বেতা দেবী: নিশ্চয়ই।
ইলিয়াস: আপনাকে কিন্তু আমি জানি বহুকাল থেকে, আপনার অন্য ধরনের উপন্যাসের জন্যে। যেমন যমুনা গীতি এসব উপন্যাসের জন্য। তো তারপর কিছুদিন পরেই, বেশ কিছুদিন পরে আপনাকে আমরা নতুনভাবে লাভ করলাম। আপনাকে আমরা প্রথম পেলাম যে- যিনি আদিবাসীদের নিয়ে সম্পূর্ণ উপন্যাস বাংলা ভাষায় লিখেছেন। আপনি যাদের কথা লিখছেন, যে বীরদের কথা, তাঁদের কথা বিক্ষিপ্তভাবে আমরা কোথাও কোথাও পড়েছি, এমনকি আনন্দবাজার পত্রিকার খুব পুরোনো সংখ্যায় রেজাউল করিম যিনি বঙ্কিমচন্দ্রের পক্ষে ছিলেন, তাঁরও কিন্তু সাঁওতাল বিদ্রোহের ওপর লেখা ছিল। অন্যদের তো ছিলই। কিন্তু সাঁওতালদের নিয়ে কিংবা আদিবাসীদের নিয়ে সম্পূর্ণ উপন্যাস লেখা একেবারেই আলাদা কথা। কারণ, আমরা যেইটুকুন জানি, আমিও একটু একটু উপন্যাস লেখার চেষ্টা করি, উপন্যাসে কিন্তু দিদি ফাঁকি দেয়া যায় না।
দেবী: নাহ্, দেয়া যায় না।
ইলিয়াস: এখানে আমি একটি অপ্রিয় কথা বলব কি?
দেবী: হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।
ইলিয়াস: যেমন ধরুন, আমাদের কবি বলেছেন ‘জীবন দেবতা’, তারপর ‘সীমার মাঝে অসীম’, আছে না এসব! এসবের পেছনে নিশ্চয়ই কারও কোনো উপলব্ধি আছে। তাই না? কিন্তু উপন্যাসে এসব কোনো প্রসঙ্গ আসেনি। আমরা কিন্তু উপন্যাসে আধ্যাত্মিক সংকটও দেখেছি। যেমন জার্মান ঔপন্যাসিক হারমান হেসের মধ্যে দেখেছি, কাজানজাকিসের উপন্যাসে আছে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসে আমরা আধ্যাত্মিক সংকট লক্ষ করিনি। তার মানে বোঝা যায়, জিনিসটার বোধ হয় আরও ভেতরে যাওয়া উচিত ছিল। মহাশ্বেতা দেবী যেটা করেছেন—যে সমস্যাগুলো নিয়ে এসেছেন উপন্যাসে, সেগুলো তিনি একেবারে ভেতর থেকে অনুভব করে, দেখে, তারপর লিখেছেন। এখন আমার যেটা কথা সেটা হলো—আপনার ওদের নিয়ে লিখে, আপনি ওঁদের সঙ্গে আমাদের যেভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, এমনকি আমাদের কারও কারও মনে একটু অপরাধবোধেরও সৃষ্টি করেছেন; আমাদের মধ্যে অস্বস্তির সৃষ্টি করেছেন, আমাদের মধ্যে কাঁটা ঢুকিয়ে দিয়েছেন। এগুলো আমি মনে করি আপনার সবচেয়ে বড় অর্জন যে আমাদের উপন্যাসের তৃপ্তি না দিয়ে আপনি আমাদের খোঁচা দিয়েছেন। এবং সে খোঁচাটা আমরা এখন একটু একটু করে ভোগ করছি। কিন্ত আমাদের চামড়াটা একটু বেশি মোটা তো [হাসি] সে জন্যে সেই খোঁচা বোধ করতে দেরি হয়। এগুলো আপনার কাছে যথেষ্ট মনে হয়নি উপন্যাসে লেখা? আপনি তাদের মধ্যে কাজ করতে যাচ্ছেন কেন? আমি সাধারণ প্রশ্ন করছি আমি কিন্তু চ্যালেঞ্জ করছি না।
দেবী: না না, ঠিকই আছে।
ইলিয়াস: Just জানা আরকি!
দেবী: আমি যখন উপন্যাস লিখেছিলাম, সে মজার ব্যাপার আছে, তাহলে জীবনের অনেক কথা বলতে হয়।
ইলিয়াস: হ্যাঁ, বলুন। আমাদের অনেক সময় আছে।
দেবী: আসলে আমি, আরেকটু পেছনে ফিরে যাই?
ইলিয়াস: হ্যাঁ হ্যাঁ...
দেবী: আমার বিয়ে হয় কুড়ি পরে একুশে, দ্বিজেন ভট্টাচার্য্যের সাথে। গণনাট্য সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ও আদি অভিনেতা, নাট্যকার, গীতিকার, গায়ক। তখন, তার আগে ১৮ বছর বয়সে আসে ৫০-এর মহামন্বন্তর...[ইলিয়াস: আমাদের মধ্যে এখন এসে পড়েছেন জনাব বদরুদ্দীন উমর। তিনিও আমাদের সঙ্গে যোগ দেবেন।] ৫০-এর মহামন্বন্তর আসে। তখনই আমি যেটুকু দুর্ভিক্ষের জন্য কাজ করি। তার ফলে আমার কমিউনিস্ট পার্টির পরিচালিত আন্দোলনের সাথে সেটুকু যোগাযোগ হয়। তারপর জীবনের বেশ কিছু পর্ব অন্যভাবে যায়। এখন ৬০ থেকে শুরু হয় কি ৬২ থেকে, তারপর ৭৫ সাল পর্যন্ত যে কারণেই হোক, আমি পালামৌ জেলায় বারবার যাই। এবং Incidentally জানতে পারি, ঘটনাবলির মধ্য দিয়ে যা দেখতাম, Bonded Labour System-এর কথা জানতে পারি এবং তখন আমার আগ্রহ Bonded Labour-এ। তার Statistics গ্রহণ করা, তারপর নানা রকম হেনতেন এসব করতে করতে গ্রামে গ্রামে ঘোরা; প্রায় পালামৌ জেলাই পায়ে হেঁটে ঘোরা হয়ে গেল। তার লড়াই অন্যদিকে লিখেটিখে সেসব অন্যভাবে চলল। সেই সময় আমি রাঁচি, মুণ্ডা, বিরসা, ওরাং—ওদের খুব কাছে থেকে দেখি। এবং ফিরে আসার পর কোনো একটা সময় ৬৬/৬৭ সালে শান্তি চৌধুরী মারা গেছেন। ছবি করতেন। উনি বললেন যে, বিরসার ওপর একটা ডকুমেন্টারি করবেন বলে সুরেস সিং-এর Duster and Hanging-টা আমাকে পড়তে দিলেন। কুমার সুরেস সিং-এর এই বইটা, পরে, আমার অনুরোধে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস এটাকে অনেক রিভাইস করে-টরে Birsa Munda and His Rebellion নামে ছাপাল। তখন দেখি সুরেশ যেসব গান-টান ব্যবহার করেছে, এসব আমি অনেক দিন আগে থেকেই সংগ্রহ করছি। করতে করতে করতে আবার বিরসা কান্ট্রিতে ফিরে গেলাম। সত্যি কথা বলতে কি, রাঁচির মুণ্ডাদের সঙ্গে আমার জীবনে জীবন যোগ করা যতটা না হয়েছে, তারচেয়ে আমি একটা Bonded Labour অনুসন্ধান করছি। মুণ্ডাদের মধ্যে Bonded Labour হয় না। ওঁরাওদের মধ্যে যাচ্ছি। ওদের মধ্যে Bonded Labour হয় না। অন্যান্য জায়গায় হয়, তা এইভাবে একটা গুরুত্ব না থাকলে আমি বিরসা মুণ্ডা লিখতে পারতাম না, লিখা প্রয়োজন মনে হয়েছিল।
আমার ব্যক্তিজীবন সে রকম, আমি বহু বছর আগেই, বলা যেতে পারে, ১৯৬০ থেকে আমি মনের ভেতরের মনের চারদিকে একটা প্রতিরোধের দেয়াল করে রেখেছি। যার ভেতরে কাউকে ঢুকতে দেইনি। কোনো ঘটনাতেই ঢুকতে দেইনি। তাহলে আমি ছিন্নভিন্ন হয়ে যাব। এটা রেখেই কিন্তু আমি সব কাজ করে গেছি। এটার মধ্যে থেকেই লিখতে হবে।
মহাশ্বেতা দেবী © তাসলিমা আখতার
সমস্ত বঞ্চনাটা দেখেছিলাম, সবকিছুই দেখেছিলাম আর অরণ্যের অধিকার লিখে মনে হলো এটা সম্পূর্ণ হলো না। Caste and Class না বলে আমি বলব, Tribe and Caste, অবশ্যই Class; একসঙ্গে মিলিয়ে একটা জায়গায় আনা। যা হচ্ছিল, যা চোখে দেখেছিলাম সেইটা আনার জন্যে চোট্টিমুণ্ডা লেখা কিন্তু ইতিহাসের এই ধারাবাহিকতাটা রেখেছিলাম। কেননা বিরসা মুণ্ডার সে তীর—সেটাই ধানি মুণ্ডা বহন করছিল—সেটাই চোট্টিমুণ্ডাতে দিয়ে যায় ইতিহাসের ধারাবাহিকতা। এই লিখতে লিখতে একটা সময় আসে নকশাল আন্দোলন, এলো গেলো, তারপরে আমি যখন..., তখন আমাকে সব জায়গাতেই ডাকে। আমি সিংভূমে গেছি, ঝাড়খণ্ড আন্দোলনের প্রথম Stage-এ। ৭০-এর দশকে গেছি। বহু হেঁটেছি, বহু কিছু করেছি। পালামৌ সম্পর্কে এটা বলা দরকার হবে যে, এরপরে কিন্তু Bonded Labour নিয়ে প্রচুর আন্দোলন করা, তাদের সংগঠিত করা, প্রথম Bonded Labour করা; তার পরের বছর অগ্নিবেশকে ওখানে নিয়ে যাই। এবং তার আগের বছরই শহরের ভেতর যারা কোনো দিন ঢোকেনি, আমরা সেই Bonded Labour হাজার হাজার ঢুকিয়ে দেই। তারা নিজের জীবন নিয়ে নিজেরা নাটক করে দেখায়। গান্ধী ময়দানে এবং হাজার হাজার এই যে ‘বন্ধুয়া প্রথা নেহি চলেগা, যো বোহেগা ওহি খায়েগা’ ‘যো বোহেগা ওহি কাটেগা, বন্দুয়া প্রথা বন্দ করে’ এসব বলে শ্লোগান দিতে দিতে ডিসি কোর্ট ঘেরাও করে ট্রাকের ওপর [ওখানে Tribe discrict, কাজেই Deputy Commissioner হয়] লাফিয়ে ওঠে অনেক চেঁচামেচি করে-টরে। তখন, ওদের সংগঠন যখন গঠন করা হলো তারপর অগ্নিবেশ সেটাকে নিখিল ভারত বন্দুয়া মোর্চার সাথে সংযুক্ত করে। তাতে খুব কাজ হয়নি। কেননা তার পরে পরে ৭৬/৭৭ পালামৌ চলে এলো, কৃষ্ণা সিং-এর পেছনে নকশাল আন্দোলন চলে এলো। নকশাল আন্দোলন যখন চলে এলো, তখন এদের অবস্থা একটা হলো, আরেকটা মজার জিনিস হলো—ডালটানগঞ্জ থেকে অমৃতসর পর্যন্ত একটা রেললাইন হয়। অর্থাৎ ওরা ওই কাজ না করলেও পারে, ওরা অন্য জায়গায় কাজের জন্য চলে যেতে লাগল, উপরন্তু আমাদের এই মিছিল এবং এই বিক্ষোভ সমাবেশের পর ওরা বলল যে, এটা ঠিক হবে কি না? আমি বললাম, এটাই ঠিক হবে। ডিসিকে দিয়ে আমরা বলিয়েছিলাম, ৭৬ সালে এই প্রথা বিলুপ্ত করা হয়েছে। বলল, হ্যাঁ। আমি বললাম, এই প্রথা তোমার এখানে এত বেশি চলে যে এখন এটা চিহ্নিত as a Bonded Labour district এবং Above Fourty Thousand এবং ও বলল, হ্যাঁ! আমি বললাম, ওরা যদি আর না করে তবে তোমরা আইনগত কিছু করতে পারো? তখন চুপ করে আছে। আমি বললাম, আইনি কিছু করতে পারো? বলল, না। এইটুকুনের ওপর ভিত্তি করে ওরা দলে দলে Bonded Labour খাটা ছেড়ে দিয়ে অসম্ভব কষ্ট করেছিল। কেউ কেউ ফিরেও গিয়েছিল। নকশাল আন্দোলন চলে আসার পরে তার চাপে, কৃষ্ণা সিংকে যদিও মেরে ফেলে, কিন্তু নকশাল আন্দোলন নানাভাবে ওখানে চলতেই থাকে। যার ফলে ওদের জঙ্গল থেকে মহুয়া নেবার অধিকার, তারপর নিজেদের জমি ধরে রাখার অধিকার এবং কিছু কিছু জায়গায় বিক্ষোভ প্রতিবাদ প্রবল হতে থাকে। কাজেই আজকের পালামৌ আর সেই পালামৌ নেই। যেটা দেখেছিলাম যে, দুই মণ ধান গরমকালে বলদকে দিয়ে পাঠাবে না হাটে, একটা Bonded Labour-এর কাঁধে চাপিয়ে দিয়েছে গরুর গাড়ির জোয়াল। বলদ মরে গেলে দুই হাজার টাকা নষ্ট। একটা মানুষ মরে গেলে অত ক্ষতি নেই। সেই জোয়ালটা চাপা পড়ে তার একদিকের কাঁধ বেঁকে যায়। এইগুলোর পরে তখনো আমি হাতেকলমে যে অত কাজ করছি, তা না। কিন্তু যখন সিংভূমে ডাক পড়ল, ঝাড়খণ্ড আন্দোলনে গুলি Firing হলো, ৭৯-এ Firing হলো ১১ জনের death Iv admit করল। ক্ষতিপূরণ দিল। কিন্তু ১১ জন মরেনি... তখন ওখানে গিয়ে investigate করতে করতে উনিশটা নাম বের হলো। উনিশটা নাম EPW-তে ছাপিয়ে দিয়ে ইত্যাদি ইত্যাদি করে তারপরে যথেষ্ট... তখনকার আন্দোলনটা অন্য রকম ছিল। মেয়েদের একটা আলাদা জঙ্গল বাঁচাও আন্দোলনও ছিল। মেয়েরা প্রচুর তীর-ধনুক নিয়ে লড়ত। তারপর সারেন্ডার ফরেস্টের ওপরে যেখানে ‘কোন’ বিদ্রোহ হয়েছিল, সেখানে বটগাছের ওপরে মাচান করে জিনিসপত্র রাখে, কেননা হাতি আসে। ধানটান ওখানে রাখে। ওখানে দেখি বিশ্ব ব্যাংকের Finance করা টিউবওয়েল, একটু একটু ঝাঁকালেই জল পড়ে। কোনো দিন ছিল না। আমি বললাম, এটা কী করে এখানে এলো? ওরা বলল, firing-এর পর কিছুদিন চুপচাপ ছিল। তারপর ওরা করে দিয়েছে। সব জায়গাতেই আমি যেটা ওদের বলতাম, তোমাদের কী অধিকার আছে সেগুলো জানো। জলে অধিকার, বিদ্যুৎ অধিকার। ওরা নিজেরাই চাইত-টাইত এ রকম হেচড়-পেচড় করতে করতে ৭৯-এ তো অরণ্যের অধিকার আকাদেমি পুরস্কার পেল। তখন পশ্চিম বাংলার তিনটে ট্রাইবাল জেলা ঝাড়গ্রাম মহকুমা, মেদিনীপুরের, আর বাঁকুড়ার অনেকটা আর পুরুলিয়ার এদিকটা। হাটে-বাজারে ঢোল-ডগর দিয়ে ওরা বলল, আমরা পুরস্কার পেয়েছি। আমাদের নাম ইতিহাসে উঠে গেছে। কাজেই এখন আর হাট চলতে পারে না এবং তারা সব অনেক অনেক। চিঠি নিয়ে প্রতিনিধিদল আমার কাছে আসে। কাজেই, আমি এই পুরস্কারটা, আমার বাবা মারা গিয়েছিলেন, আমি নিতে দিল্লি যাইনি। ওরা এসে দিয়েছিলেন, মুণ্ডারাও সেখানে অনেকে এসেছিল। কাজেই মুণ্ডাদের সঙ্গে যুক্ত হলাম। মুণ্ডাদের মধ্যে, আমি খেড়িয়াদের মধ্যে, যে ধরনের কাজ করি, সে রকম কাজ করার ছিল না। কিন্তু ওদের সংগঠিত করা দরকার ছিল। সেটা আমি সব সময় বিশ্বাস করি ওরা নিজেরাই সংগঠিত হোক। ন্যূনতম কতগুলো কাজের ভিত্তিতে ওরা নিজেরাই সংগঠিত হোক। ওদেরকে রাজনৈতিক শক্তি বলে মনে করা হতো। সেটা সব সময় মিথ্যাও হয়নি। তাই... মুণ্ডা গেল,...অঞ্চলের দিকে মুণ্ডা ওঁরাও সব আর মাঝামাঝি তো, সব চলছেই ইটা-ভাটার শ্রমিক, সেসব investigate করে লেখাটেখা concrete কাজের মধ্যে আমি বেশি বলব যে, Criminal tribe এই শব্দের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষিত হলো। মেদিনীপুরের লোধাদের নিয়ে, ১৮৭১ সালে ব্রিটিশ সরকার ভারতজুড়ে, যতটা Forest tribe, যত ছোট ছোট যারা Cultivation করে না, তাদের Criminal tribe বলে ঘোষণা করে। গোটা ভারতবর্ষে এরা আছে। দিল্লিতে ১টা খুন হলেই সানসি tribe যেখানে থাকে, সানসি কলোনিতে, ওখান থেকে ওদের ধরে নিয়ে আসে। আর চুরি-ডাকাতি হলেই ওরা বাওলিয়া Tribe ধরে। এটা হলো দিল্লির কথা। আমার পশ্চিমবঙ্গে মেদিনীপুরে আছে লোধা শবর, পুরুলিয়াতে আছে খেড়িয়া শবর। লোধাদের মধ্যে আমি অনেক দিন কাজ করি। ওদের যা কাগজে প্রতিশ্রুতি, গভর্নমেন্ট যা দিচ্ছে, তা দেবে না কেন? কি প্রতিশ্রুতি? গভর্নমেন্ট কি দিচ্ছে? এগুলো নিজের খরচে হাজার হাজার ছাপিয়ে প্রচার করতাম। আরেকটা জিনিস প্রচার করতাম একটা Proforma বের করতাম—ঘর কিসের তৈরি, পরিবারের সদস্য কজন? কী আছে, কী নাই, জমি আছে নাকি নাই, জমি থাকলে সেটা কী ধরনের জমি, জমির আয় কী? না পাট্টা না বর্গা না মরুভূমির জমি? স্কুলে যায় নাকি? কোনো সাহায্য পায় নাকি হেনতেন ইত্যাদি। এগুলো করতে গ্রামবাংলার প্রকৃত ছবিটা উঠে আসতে লাগল। এবং এগুলো দিয়ে দিয়ে সরকারকে অনেকে আক্রমণ করি। আমার পত্রিকার ‘লোধা সংখ্যা’ করেছি, ‘মুণ্ডা সংখ্যা’ করেছি। তেমনি প্রয়োজনীয় ‘মুসলিম সমাজ ভাবনা’ও করেছি। ‘বন্ধ কলকারখানা সংখ্যা’ করেছি। এ রকম অনেক সংখ্যা করেছি। ‘ওঁরাও জাতিসংখ্যা’ করেছি। এখন খেরিয়ার, এই লোধাদের সঙ্গে কাজ করবার সময় আমার সঙ্গে Political friction এড়িয়ে, সরাসরি Confrontation হচ্ছে না, কিন্তু লড়াই চলছে,ধারাবাহিক লড়াই চলছে। এ চলছেই। আর বিহারে একদিকের সিংভূমের বিহারে, ইত্যাদি করতে করতে করতে করতে ওড়িশ্যার কেউনঝড় আদিবাসী অঞ্চলে, করতে করতে যখন লুধাতে এলাম তখন লুধারা আমাকে বলল—আমি দশ বছর কাজ করার পর আমাকে বলে, ‘আপনি এলে শুনছি আপনার কিছু হবে না, কিন্তু আমাদের উপর অত্যাচার আসবে’। আমি তখনই বুঝলাম লোধা মেয়েরা আগে তীর-ধনুক নিয়ে লড়ত-টড়ত, লোধারা ভয় পেয়ে গেছে। আমি বললাম, ‘আমি আর যাব না।’ লোধারা আজও আমার কাছে আসে তাদের প্রত্যেকটা প্রয়োজনে আসে। সাধ্যমতো প্রতিকারের চেষ্টা করি। কিন্তু লোধা বেল্টে আমি আর ঢুকি না। আর লোধাদেরকে সাঁওতালরাও মারত। Criminal Tribe, তার জন্যই ৮৬ সালে একবার গিয়েছিলাম Tribal Unity Forum গঠন করতে। পশ্চিমবঙ্গে ৩৮টা Identified গোষ্ঠী আছে। শেষ কর্মক্ষেত্র, দেখলাম পুরুলিয়ায় খেড়িয়া শবর। যারা লোধা থেকে সংখ্যায় কম, অন্য tribe-এর সঙ্গে থাকে না, দলে দলে পাহাড় ডুমরীতে থাকে, জমি নেই এবং Criminal tribe বলে। যেমন ৭৭-৭৯-এর মধ্যে মেদিনীপুরে, বামফ্রন্ট পাওয়ারে আসার পর ৩৭ জন লোধাকে হত্যা করা হয়, ৮২ সালে ৬ জনকে। এই ৬ জনের পর... লুকিয়ে যেতে হয়, ভেতরে ঢুকতে হয়। Investigating report লিখতে হয়, প্রচুর লড়াই করতে হয়, ওদের নিয়ে আসতে হয় কলকাতায়। আন্দোলন হেনতেন করার পর কিছু কিছু লোধা কাজ করে। কিছু কিছু লোধা development cell activated হল, ওদের পার্টি সংগঠনের মধ্যে ঢোকাচ্ছিল ইত্যাদি। খেড়িয়াদের মধ্যে যখন কাজ করতে আরম্ভ করি, একেবারে শুরুতেই করি, registry করে। তখনই ঠিক করেছিলাম এফসি আর নেব না। এফসিআর নিয়ে কাজ করাতে আমার খুব বিশ্বাস ও আগ্রহ ছিল না। কারণ এফসিআর funded অনেক সংগঠন দেখেছি পশ্চিমবঙ্গে। অন্যত্রও দেখেছি, পশ্চিমবঙ্গেও দেখেছি, খুব একটা মনে হয়নি যে ওরকমভাবে কাজ করতে পারব। কিন্তু এই কাজ করতে গিয়ে, তখন তাদের জীবনে জীবন অনেক দিন ধরেই যুক্ত ছিলাম, আরও বেশি করে যুক্ত হতে হয়েছে। উপন্যাস লেখা এবং একই সঙ্গে লিখতেও হয়েছে। লেখার প্রয়োজন থাকে, কিন্তু লেখার জন্যে একটা দূরত্ব খুব সাহায্য করে। যেমন কৈবর্ত্য খণ্ড বা বেনেবৌ বা ব্যাধখণ্ড ইত্যাদি লেখার সময় একটা দূরত্ব এতে কাজ করেছে।
ইলিয়াস: এত সময়ের দূরত্বই অনেক।
দেবী: সময়ের দূরত্ব, কিন্তু সেটা হচ্ছে ইতিহাসকে এভাবে দেখানো...চিরকালই এইটে ছিল, শোষক এবং শোষিত সবটাই তার ইতিহাস।
ইলিয়াস: আপনি যে দূরত্বের কথা বলছেন এটা নিশ্চয়ই ঠিক। তো শবরদের সঙ্গে আপনার যে যোগাযোগটা ঘটেছে, সেটা তো খুবই অন্তরঙ্গ তাই না? এদের নিয়ে কি উপন্যাস লেখা সম্ভব?
দেবী: একেবারেই সম্ভব না।
ইলিয়াস: ধরুন ৪/৫ বছর পর?
দেবী: কোনো দিন যদি সেই পরিপ্রেক্ষিত পাই, তবে আমি গল্প লিখেছি কিছু কিছু।
ইলিয়াস: হ্যাঁ, গল্প লিখেছেন।
দেবী: কিছু কিছু গল্প লিখেছি, আর এবার আমার বর্তিকার সংখ্যাটাও হবে ‘খেড়িয়া শবর সংখ্যা’ কিছু তথ্য-উপাত্তসহ। আমি তো বিশ্বাস করি ওদের দিয়ে কথা বলানোতে। কাজেই ওদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কী কী আচার প্রথা পালন করে, তার ভেতর থেকেই আর্ধেকটা বেরিয়ে আসে। কী বক্তব্য, কী ব্যাপার, ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন কোনো দিন লিখব নাকি জানি না। তবে ‘টেরর...’ নামে যে উপন্যাস লিখেছি সেটা আমার সমস্ত tribal অভিজ্ঞতার abstract বলা যেতে পারে। তার মধ্যে সব Tribal অভিজ্ঞতাটাই বলা হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতাটাই আমি নতুন করে দেখেছি, পরশু রাজশাহী থেকে বদলগাছি, পাহাড়পুর থেকে অনতিদূরে মাধবপুর গ্রামে সেখানে সাঁওতাল, মুণ্ডা, ওঁরাও, মিজ, মাহালি সবাই থাকে। সে অসম্ভব অবস্থা! রাস্তা থেকে দেড় মাইল দুর, তারা ধানখেত থেকে মাটি তুলে মাটির রাস্তা করেছে। ঘরের দেয়াল-টেয়াল মোটামুটি পরিষ্কার, চাল একেবারে গলে পড়ছে, দুটো মজাপুকুর আছে, তাতেই তারা স্নান করে, কাপড় কাচে, বাসন মাজে, আরেকটা লর্ড ক্লাইভের সময় ছিল না কিন্তু ওই ধরনেরই একটা ভারতবর্ষের একটা প্রথম টিউবওয়েল বসানো আছে। তার যেমন চেহারা তেমন আকৃতি।
ইলিয়াস: বহু প্রাচীনকালের টিউবওয়েল...
দেবী: প্রাচীন টিউবওয়েল রয়েছে। শিক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। স্বাস্থ্যের কোনো ব্যবস্থা নেই। জীবিকার কোনো ব্যবস্থা নেই। এখানে ভূমি সংস্কারের বালাই নেই—কাজেই ওরা যে বলে, অতক্ষণ আমি ছিলাম না। জমি মনে হয়, অপরের জমি চষে কিছুটা তো কারও কারও গৃহসংলগ্ন খানিকটা থাকতে পারে। সবজি-টবজি করে এই রকম। কাজেই একই রকম অবস্থা। মানে আনন্দ পাবার কিছু নাই।
ইলিয়াস: না, আনন্দ পাবার কিছু নাই।
দেবী: তবে লেখার প্রয়োজন আছে। ইতিহাসে এদের স্থাপন করার জন্য, যেটা মুণ্ডাদের বেলায় হয়েছিল। আর সাঁওতাল বিদ্রোহ নিয়ে দুটো উপন্যাস ‘শালগিরার ডাকে’ যেটা বাবা তিলকা মাঝির ১৭৮৫ থেকে ১৭৯০ সালের উপন্যাস। সেটাতে আছে সিধুকানুর ডাকে। কিন্তু ক্রমশই যেটা মনে হচ্ছে সেদিনও বোধ হয় আলোচনা করছিলাম...উমর সাহেব রয়েছেন এই যে আদিবাসী বিদ্রোহগুলো হয়েছে, সশস্ত্র বিদ্রোহ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে। সেগুলো ইতিহাসের কোথাও স্বাধীনতার লড়াই হিসাবে স্থান পায়নি। তাদের একটা আলাদা করে রাখা হয়েছে। আর তাদের যে বিতাড়িত করা হয়, বিদ্রোহের পরে উচ্ছেদ, তারপরে তাদের 18th Century-তে Bengal Presidency-তে আনা হয়। আসামেও নেয়া হয়। ওই জঙ্গল হাসিল করো, চা-বাগানের জন্য জমি বানাও। জঙ্গল হাসিল করো, কৃষি ভূমি বাড়াও। Plantation-এ নিয়ে যাওয়া। এবং জঙ্গল হাসিল করা অবস্থায় বলা হতো, তোমাদের যতটা পারবে নিজেরা জমি ভোগ করো। একেকটা সময় ছিল, পুরোনো দলিল-দস্তাবেজে পাওয়া যায়, এই ৮০ বছর আগে একেকজন ৮০ বিঘা, ১০০ বিঘা করে, জমি ভোগ দখল করেছে। এই যে নকশাল বাড়ি জায়গা ওখানেও তাই ছিল। কিন্তু চা-বাগানে সব চলে গেল। তেভাগা আন্দোলনের মূলে ছিল যা, তা যেমন আমরা জানি, ওই বহু জায়গায় যেমন বলেছিলাম, Extreme জায়গায় নিয়ে গিয়েছে, তেভাগা আন্দোলনের সময় তো অনেক জিনিস মিলেছিল। যারা তেভাগা করছে বর্গাচাষি পাবে তাদের সঙ্গে। ক্ষেতমজুরদের কিছুই পাওয়ার কথা না। বহু ক্ষেতমজুর শামিল হয়েছিল। আর এই যে চা-বাগানের হাসিল করা আদিবাসীরা তারাও সব শামিল হয়েছিল।
ইলিয়াস: তেভাগা হলে তো ক্ষেতমজুরদের কিছু হতো না। ক্ষেতমজুররাও শামিল হয়েছিল কেন?
দেবী: হয়েছিল কারণ এটা একটা শ্রেণির লড়াই। তারা সঙ্গে এসেছিল, এটা হতেই হতো। সে জন্যই স্বাভাবিক [ইলিয়াস: হ্যাঁ, এটাই...] ভাবেই, শ্রেণিবিভাজন ছাড়া তো সমাজ নয়। নকশাল আন্দোলনের মূলে একেবারে নকশাল বাড়ি অঞ্চলটা, যা ওদের জমির লড়াই। জমি থেকে উচ্ছেদ, তার বিরুদ্ধে লড়াই।
ইলিয়াস: তাহলে, নকশাল আন্দোলনে কি তেভাগা আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বলতে চান আপনি?
দেবী: আমি বলছি Continuation, যত কৃষক অভ্যুত্থান এ ধরনের বিদ্রোহ পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে গ্রথিত। আরও অনেক আছে। সব নাম করে লাভ নেই। কাজেই আমার অত দূরে না গিয়ে, তেভাগা থেকে নকশাল আন্দোলন এবং তারপর...এ রকম বড় একটা গ্রথিত করে উপন্যাস লেখা...।
বদরুদ্দীন উমর: এটা তো আমার সাথে একবার কলকাতাতে কথা হয়েছিল যে, একটা এ ধরনের লিখবেন। সেটা আরও ১০/১২ বছর আগে।
দেবী: হ্যাঁ, হয়েছিল। সেটাই আমি বলব। বহুদিন ধরে কোনো সময় পাই না। এই সমিতির চাপ আছে। ৯৫-৯৬ সালে আমি কোনো টেবিলে বসতে পারিনি।
ইলিয়াস: না, উমর ভাই যেটা বললেন যে কত ১০/১২ বছর আগে, না? ঠিক আছে, আপনি না হয় আরও ১০/১২ বছর সময় নিন। কিন্তু আমার যেটা মনে হয়, আপনি যেটা বলছেন যে, কিছু দূরত্বের দরকার, ঠিক আছে। দূরত্বটা দরকার। দূরত্বটা যে সব সময়ে একেবারে শারীরিকভাবে হতে হবে তা না, [দেবী: না না।] আপনি একজন লোকের সাথে মিশতে মিশতেও কিন্তু তাকে, তার সম্পর্কে বোঝা সম্ভব। তাই না?
দেবী: আমি শারীরিক বলছি না, আমি মানসিক দূরত্ব বলছি। মানসিক দূরত্বটা কেমন, ওরা যতটা স্বাবলম্বী হচ্ছে ততটা যা হচ্ছে না? আমার হয়তো অতটা ওদের মধ্যে যাওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না। ওরা নিজেরাই যদি থানা ঘেরাও করে, আর পুলিশকে মরাইল দেব বলে, তাহলে আমার অতটা দরকার পড়ছে না।
ইলিয়াস: আচ্ছা, এই গল্পটা আপনি আগেই করবেন না; কারণ, এ গল্পটা আমরা শুনব। পুলিশের গল্পটা আরকি। না, শোনা হচ্ছে না যেটা, যেটা আপনি বললেন, আমারও মনে হয় ধরেন, আরো দুচার বছর পরে তখন ওদের সাথে মিশেও লেখা সম্ভব।
দেবী: হয়তো পারব।
ইলিয়াস: কারণ, যারা মধ্যবিত্ত নিয়ে লেখে, মধ্যবিত্ত নিয়ে যারা উপন্যাস লেখি তারা যে সব সময় খারাপ লিখছে. তা তো না। তারা তো ভেতর থেকেই লিখছে। তাই না?
দেবী: সে তো নিশ্চয়ই।
মুফাদ: দূরত্বটা জরুরি কেন?
ইলিয়াস: জরুরি তো বটেই।
দেবী: আমাদের তো একেকজন লেখকের Process একেক রকম তো।
ইলিয়াস: না না, ঔপন্যাসিকদের অবশ্যই দূরত্ব প্রয়োজন।
দেবী: আর আমার ব্যক্তিজীবন সে রকম, আমি বহু বছর আগেই, বলা যেতে পারে, ১৯৬০ থেকে আমি মনের ভেতরের মনের চারদিকে একটা প্রতিরোধের দেয়াল করে রেখেছি। যার ভেতরে কাউকে ঢুকতে দেইনি। কোনো ঘটনাতেই ঢুকতে দেইনি। তাহলে আমি ছিন্নভিন্ন হয়ে যাব। এটা রেখেই কিন্তু আমি সব কাজ করে গেছি। এটার মধ্যে থেকেই লিখতে হবে।
পড়ুন ► কথোপকথনের দ্বিতীয় পর্ব ► প্রচলিত লোকগল্প আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে!
পড়ুন ► কথোপকথনের তৃতীয় পর্ব ► শব্দ তো ভদ্রলোকের সব সভ্যতা ভেঙে দেয়
অসাধারণ। ভূমিকা থেকে কথপোকথন পুরোটাই চমৎকার। দ্বিতীয় পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
বোকাসোকা
জুলাই ০৫, ২০২১ ১৮:১৬
দু'জনই প্রিয় লেখক। পড়ে খুব ভালো লাগলো। আগামীর জন্য প্রতীক্ষায় রইলাম।
সজল কুমার দত্ত
জুলাই ০৬, ২০২১ ১১:১০
খুব ভাল লাগল
সানজিদা বানু
জুলাই ০৫, ২০২১ ১২:৩৮