
শৃঙ্খল রেখা ও অন্যান্য কবিতা
শৃঙ্খল রেখা
যত ধুয়ে রাখো মেঘ স্মৃতি বৃষ্টিতে
ততো ধুলো জমে জলসাঘরে—পুরোনো ফার্নিচারে
বালি পাথর আর হৃদযন্ত্র
এক কড়াইয়ে জ্বাল হলে
যে মায়া হরিণ ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় হারিয়ে যায়
তার পিছে যতো আঁকো শ্লেট দাগ
তা তো মুছবেই...
যে শৃঙ্খল পরেছো গলায় তা
লোহা সোনা প্লাটিনাম যা-ই হোক
শৃঙ্খল তো শৃঙ্খলই—
ঘুম ও রাত
যদি ঘুম হয় ভালো, না হয়
তাও ভালো—ছাদে চলে যাবে
ছাদে মধ্যরাতে তারার বিচলন দেখবে
স্বাতী উত্তর ফাল্গুনি কিভাবে
সরে সরে যাচ্ছে অনুরাধার দিকে—
আর দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তোমার পা
কিভাবে শক্ত শেকড় হয়ে যাচ্ছে
প্রেম বিয়ে সংসার কিভাবে
ঢালাই জমাট কংক্রিট...দেখবে—
যদি ঘুম হয়, আর যদি না-ই হয়!
দিন ও লাশ
যত হাঁটে—ততো দূরে যায়—
পেছনে শুধুই পড়ে থাকে নিহত দিনের লাশ
অসংবৃত এলোমেলো লাশের স্তূপ
চুইয়ে পড়া রক্ত কালো জমাট
যেন হেরে যাওয়া সৈনিকের মরদেহ
তারপর গ্রীষ্ম বনে আসে বর্ষা, কাঁপে জলবন
নতুন নতুন ঋতু ঋতুময়তা
প্রেমপ্রীতি দাদরা কাহারবা দিন আসে
এসেই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, উড়োপুল থেকে
ঝরে পড়া পানি ফোঁটা যেভাবে
ভেঙে আরো ক্ষুদ্র বিন্দু—
সেভাবেই অদৃশ্য হয় দিন লাশ
অণুতে পরমাণুতে
শুধু স্মৃতিতে লেগে থাকে কালচে রক্তময়তা—
করোনা বিনাশ
ডিপফ্রিজ থেকে আস্ত রেলগাড়ি নামিয়ে আনলে
এক অন্য জীবনের হুক খুলে যায়...
যেখানে শহুরে মেঘ রেফ্রিজারেটর
থেকে বেরিয়ে আসে, এইভাবে
এক শহর থেকে অন্য কোনো শহরে
চলে যায় উড়োমেঘ
পথে পথে পড়ে থাকে জীবনের
হুক, বোতাম আর
বিস্রস্ত বসন প্রাকারের সেলফি
গাছ ও মানুষ
গাছেরও প্রেমিকা থাকে, সেই প্রেম পর্ব চলে
কিছুটা অলক্ষ্যে...মাটির ভেতর দিয়ে
শেকড়ে বাঁকড়ে অন্ধকারে অদৃশ্য টানেল বরাবর
তুমুল সঙ্গম শেষে ফুল ফল সবুজ প্রশ্বাস
ঘর বাঁধে অসুস্থ দুনিয়ায়
গাছ একা একা দাঁড়িয়ে থাকেন পথ পাশে
ফ্ল্যাটের টবের মধ্যে ছাদে কার্নিশে ব্যালকনিতে
অথবা নিষণ্ন হাইওয়ের পাশে একা
কিন্তু গাছ কখনোই একা নয়, গাছের সমাজে
বরং মানুষ একা বড্ড একাকী
ভেতরে ভেতরে