জলিল চাচার কইতর

 

সাবেক আমলা আব্দুল জলিল খানের বাড়ির গেটে পৌঁছালে পাথুরে দৃষ্টির আদিবাসী দারোয়ান ঝুঁকে সেলাম জানাল। সুঠাম প্রহরীর হাতের কসরতে সিংহদ্বারটি খুলে গেল ঠিক বইয়ের পাতার মতো। গুলশানে পনেরো একর জায়গার ওপর মাঝারি আকারের দ্বিতল বাড়ি। কিছু পায়রা নিশঙ্কভাবে বিস্তৃত উঠোনের এদিক-ওদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কপোতছানার চিঁহি চিঁহি ডাকে দৃষ্টি ঊর্ধ্বমুখী করে দেখি জানালার কার্নিশ আর ছাদজুড়ে কয়েক ডজন কবুতরের খোপ। একটা বুড়ো কবুতর কোঁত করে পুরীষ ফেলে উড়ে গিয়ে ডালিমগাছে বসল। পাশেই অনিন্দ্যসুন্দর ফুলবাগান। জীবনে প্রথম কালো গোলাপ দেখলাম এই বাড়িতে। ঈশান কোণের ছোট্ট সবজির খেত পেরিয়ে ত্যাড়াবেড়া কাঁঠালগাছের আড়ালে সান্ত্রীর মতো দাঁড়িয়ে থাকা একটা সুদীর্ঘ তালগাছ দেখে আমি তাজ্জব বনে গেলাম। ঢাকা শহরে যে তালগাছও আছে, তা জানা ছিল না। আশপাশে কয়েকটা ফিঙ্গে, শালিক আর ঘুঘুও চোখে পড়ল। একটা রাঙাঠুটি টিয়া টুকটুক করে কামরাঙা ঠোকরাচ্ছে দেখে একজন কর্মচারী কঞ্চি নিয়ে সেদিকে এগোলে জলিল সাহেব কোমল স্বরে বললেন, থাক, থাক।

অবসরজীবী জলিল সাহেবের সাথে পরিচয় পত্রিকা অফিসে। এই সফল মানুষটির কথকতা শ্রুতলিখনের বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট পেয়েছি। আগে ছিলাম প্রদায়ক, এখন হলাম সহসম্পাদক। নতুন-পাওয়া পরিচয়পত্র সন্তর্পণে গলায় ঝুলিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে বারবার দেখি। প্রদায়ক হিসেবে দু-একটা লেখার জন্য যে পরিমাণ সম্মানী পেতাম, তা চা-সিগারেটেই চলে যেত। নতুন পদে নিয়মিত বেতন। তবে পরিমাণে যৎকিঞ্চিৎ। ভালো একটা টুইশনি এখনো চালিয়ে যাচ্ছি বলে স্বচ্ছন্দে দিন কেটে যাচ্ছে। মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলেও হলেই থাকতাম। বাসায় গিয়ে যেমন ছাত্র পড়াতে অস্বস্তি লাগত, তেমনি হলে থাকতেও চোর-চোর বোধ হতো। হলের হইচইও হয়ে গিয়েছিল অসহ্য। তবে পত্রিকায় লিখি শুনে সবাই একটু সমীহ করে। কঠিনপ্রাণ নেতারা পর্যন্ত হেসে হেসে কথা বলতেন। হলের ডাইনিংয়ে বিস্বাদ খাবার খেতে খেতে ভাবতাম, কবে যে একটা চাকরি পাব, একটা একাকী নির্জন কক্ষ ভাড়া করে নিজের মতো থাকব। বৃষ্টির দিনে ভরপেট খিচুড়ি খেয়ে মেঘদূতের পঙ্‌ক্তি ওল্টাতে ওল্টাতে অবেলায় ঘুমিয়ে পড়ব। পায়ের নিক্বণ আর চুড়ির শব্দে ঘুম ভেঙে দেখব কাঙ্ক্ষিত তরুণীর কম্পিত ভ্রুপল্লব! কিন্তু অধিকাংশ প্রেমিকার বিষয়বুদ্ধি টনটনে। বেকার প্রেমিক এড়িয়ে প্রতিষ্ঠিত পাত্রের গলায়ই বরমাল্য পরিয়ে দেয়। ভালোই হলো, এক সহপাঠীর সূত্রে মহাখালীতে একটা চিলেকোঠা বেশ সস্তায় ভাড়া পেয়ে গেছি। আমার নতুন বাসা থেকে জলিল সাহেবের আবাস পাথরছোড়া দূরত্বে। কাজের প্রয়োজনে এখানে আসতে আর বিশ্রী জ্যামে পড়তে হবে না

ভূতপূর্ব ডাকসাইটে আমলা জলিল সাহেব আমাদের পত্রিকাটিতে মাঝে মাঝে কলাম লিখেন। তাঁর হাতের লেখা এতটাই দুর্বোধ্য যে খসড়া কম্পোজ করতে গিয়ে আমাকে বেশ গলদঘর্মই হতে হয়। নিজের হিজিবিজি হস্তাক্ষর দেখে তিনিও বললেন, আসলেই আমার লেখা অপাঠ্য। রবীন্দ্রনাথসহ কয়েকজন ব্যতিক্রম ছাড়া লেখকদের অনেকেরই হস্তাক্ষর রীতিমত বিশ্রী। আবার বলেন, ব্রিটিশ মিউজিয়ামে দেখেছি, বিখ্যাত সব ইংরেজ লেখকের হাতের লেখা বা চিঠি সযত্নে সংরক্ষিত। এঁদের অনেকের লেখাই এতটা দুর্বোধ্য যেন মিসরের হায়ারোগ্লিফিক্স। চায়ের কাপে চুমুক শেষে তিনি শরীর কাঁপিয়ে হেসে আবার প্রশ্ন ছোড়েন, আমার লেখা কি কবি বায়রনের লেখার চেয়েও বিশ্রী? আমি ভদ্রতা করে বলি, আপনার কলাম বেশ পাঠকপ্রিয়, প্যাঁচালো বলে দু-একটা শব্দ পড়তে সমস্যা হয়এই যা। বয়স হলেও গৌর বর্ণের দীর্ঘ পুরুষটি অনেকের ভিড়ে আলাদা করে চোখে পড়েন। বছর-কয়েক আগ থেকে তার পারকিনসন রোগ ধরা পড়েছে, তাই একটু হাত কাঁপে। তিনি মাঝে মাঝে এসে সম্পাদকের চেম্বারে বসে লেখা জমা দিয়ে দেশ-বিদেশের গল্প করেন আর চা-কফি খান। ইংরেজিতে চৌকস। মায়ের ভাষা ছিল উর্দু। আরবিতে দক্ষ। বাংলাটাও বেশ কাব্যময়, কিন্তু ঝরঝরে। শেষে ঠিক হলো, তিনি তাঁর জীবনের কথা মুখে মুখে বলবেন আর আমি তা টুকে নেব। পরে পুরো লেখাটা দেখে তিনি সংশোধন করে দেবেন। সেমতে আমি ভদ্রলোককে নিয়ে মিটিং কক্ষে বসি। কিন্তু পত্রিকা অফিসে তাঁর মুড আসে না। শেষে খোদ সম্পাদক সাহেব নিদান দেন এভাবে, কলামিস্টের সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে তাঁর বাড়িতে গিয়ে লেখাটা শেষ করে নিলেই হবে। কোনো তাড়াহুড়া নেই।

নিঃসঙ্গ জলিল সাহেব আমাকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বাড়ি দেখান। দরজার কারুকাজখচিত খিলান ধরে আদর করেন। বুড়ো কামিনীর ঝাড়ের ছায়ায় বসে পরিবারের গল্প বলেন। তাঁর একমাত্র ছেলে আফতাব সপরিবারে ওয়াশিংটনপ্রবাসী। ছেলের কাছে বছরে একবার তিনি ঘুরতে যান, তবে সব সময় তিনি বিদেশে থাকতে একদম নারাজ। ছেলে-পুত্রবধূ-নাতি নাতনি এলে বাসায় আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়। প্রশাসনের সাবেক পদস্থ কর্মকর্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের স্নাতক। পরে ইতিহাস বিষয়ে মাস্টার্স করেছেন অক্সফোর্ডে। ইতিহাস, দর্শন আর সাহিত্যের খুঁটিনাটি তাঁর নখদর্পণে। কথায় কথায় শেকসপিয়র, ধর্মগ্রন্থ আর মার্ক্সের উদ্ধৃতি দিতে ভালোবাসেন। আমি রীতিমতো মুগ্ধ। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো কিছু ডিকটেশন দেন না। আমি বেশ মুশকিলে পড়লাম। আমার নড়বড়ে চাকরি বাঁচাতে হলেও তো কিছু একটা লেখা দরকার। শুনেছি, অনলাইনের দৌরাত্ম্যে ছাপানো সংবাদপত্রের কাটতি বেশ পড়তির দিকে। কিপটে মানবসম্পদ বিভাগ নাকি অপ্রয়োজনীয় সংবাদকর্মী ছাঁটাইয়ের রোডম্যাপ আঁকছে।

জলিল সাহেব একা থাকেন। তাঁর স্ত্রী মারা গেছেন এক দশক আগে। একটা আইবুড়ো কাকবন্ধ্যা মহিলা এই বাড়িতে থেকে ঝিয়ের কাজ করে। আরেকটা ঠিকা ঝি এসে বাড়িঘর নিয়মিত ধুয়ে-মুছে সাফ করে দেয়। মালী এসে বাগান পরিচর্যা করে। নার্স নিবেদিতা এসে চাচার প্রেশার-সুগার সব মেপে দেয়। চাচার সমসাময়িক বন্ধুদের অনেকেই গতায়ু হয়েছে। জীবিত বন্ধুরা নাকি সারা জীবন বদমাইশি করে বকধার্মিক হয়ে গেছে! কথায় কথায় বেদাতের ফতোয়া দেয়। এই নিয়ে চাচা বেশ উষ্মা প্রকাশ করে ঠাণ্ডা পানিতে চুমুক দিয়ে মৌলানা রুমির পঙ্‌ক্তিমালা বলে তবে শান্ত হন। তাই পুরোনো সহকর্মীদের সাথে তাঁর জমে না বলে চাণক্যের বরাতে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা দেন এভাবে:

উৎসবে ব্যসনে চৈব, দুর্ভিক্ষে, রাষ্ট্রবিপ্লবে
রাজদ্বারে, শ্মশানে চ, যস্তিষ্ঠতি স বান্ধব।

আরও বলেন, সহকর্মীরা আসলে কেউ বন্ধু নয়। সংস্কৃত ভাষা পুরো না জানার জন্য কপাল কুঁচকে আবার আফসোসও করেন। নিঃসঙ্গ মানুষটি সেদিনের মতো আলোচনার যবনিকা টেনে বললেন, ইয়াংম্যান, আমাকে তুমি চাচা ডেকো। তাতে আড্ডাটা জমবে ভালো। পরে ওই কথাবার্তাই তোমার মতো করে গুছিয়ে লিখে নিয়ো। প্রশ্ন ছুড়লেন, বলো তো, আড্ডার ইংরেজি প্রতিশব্দ কী? আমি আমতা আমতা করলে তিনিই জবাব দেন, আড্ডা একান্তই আমাদের উপমহাদেশীয় বিষয়, এর ঠিক ইংরেজি হয় না।

শেষে স্থির হলো, জলিল চাচা আড্ডার মতো করে নিজের জীবনের গল্প বলবেন। আমি রুটিন করে সপ্তাহে দুদিন তাঁর বাড়িতে যাওয়া শুরু করলাম। পড়ুয়া মানুষটির বইয়ের বিশাল সংগ্রহ। কাজকর্ম যা-ই হোক, এখানে বসে বসে সুগন্ধি কফিতে চুমুক দিয়ে দুষ্প্রাপ্য সব বই পড়তে আমার বেশ লাগে। নিয়মিত আসা-যাওয়ায় আমি বলতে গেলে চাচার পরিবারের সদস্যের মতো হয়ে গেছি। তার সাথে গল্প করার জন্য আমাকে সময়ে-অসময়ে ডেকে পাঠান। মাঝে মাঝে বিরক্ত হই। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিত্বে আলাদা একটা হিরণ্ময় জাদু আছে। পুরোনো কেয়ারটেকার আলম যার ভয়ে ঝি, নার্স, দারওয়ান, মালী তটস্থ, সে পর্যন্ত এখন আমাকে দেখে লম্বা সেলাম দেয়। একদিন জলিল চাচা আমাকে তাঁর ছেলে আফতাব সাহেবের সাথে পর্যন্ত ফোনে কথা বলিয়ে দেন। তাঁর মাঝ বয়সী পুত্র আমেরিকায় একটা কোম্পানির আর্থিক পরামর্শক। আফতাব ভাই নিজে যেচে আমার ফোন নম্বর চেয়ে নিলেন।

চাচার সাথে কয়েক সপ্তাহ কথা বলে একটু বিরতি দিই। পত্রিকার ঈদসংখ্যার জন্য তাঁর জবানিতে একটা খসড়া পরিমার্জনার জন্য গত কয়েক দিন গুলশানের বাসায় যাওয়া হয়নি। একদিন কেয়ারটেকারের ফোনে শুনলাম, জলিল সাহেবের প্রচণ্ড জ্বর, রক্তচাপও বেড়েছে। আবার আমেরিকা থেকে চাচার ছেলে আফতাব ভাইয়ের ফোনও পেলাম। তিনি কাঁদো কাঁদো হয়ে বললেন, আপনার ওপর অনেক ভরসা। বাবার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। চাচাকে একটা বিখ্যাত বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হলো। দুই দিন পর হাসপাতালে দেখতে গেলে তিনি হেসে বললেন, এযাত্রায় সেরে উঠব। ন্যাপথালিন আর ওষুধের গন্ধে গা গুলিয়ে আসে। চল, বাড়িতে গিয়ে বাগানে বসে আড্ডা দেই। বলা তো যায় না, কখন ঘাতক আজরাইল চলে আসে! এই ফাঁকে তোমাকে আমার জীবনের কথকতা বলে যাই। আবার রেগে বললেন, আলম একটা বাদাইম্যা। কইতরগুলোকে ঠিকমতো খাবার দিয়েছে কি না কে জানে। কয়েক দিনের মধ্যে সত্যিই তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেন। এক অপরাহ্ণে জলিল চাচাসহ তাঁর বাড়িতে পৌঁছলে নানান কিসিমের কবুতরের দল হুমড়ি খেয়ে উঠোনে জড়ো হলো। নেতা গোছের দু-একটা বাহারি পায়রা আবার উড়ে এসে উল্লাস করে চাচার কাঁধে-পিঠে পর্যন্ত বসে গেছে। কয়েকটা হল্লামুখর পোষা পাখি আমাদের পায়ে পায়ে ঘোরে। কিছু আমাদের মাথার ওপরে ধীরলয়ে উড়ে। চাচা এদের পিঠ ছুঁয়ে আদর করেন আর হাঁক দেন, আলম, আমার কইতরের জন্য ছোলা দে, গম দে। তিনি পরম মমতায় পক্ষিভোজনে হাত লাগান।

দজলিজে বসে নাশতা খেতে খেতে বললাম, চাচা, আপনার কবুতরপ্রীতি আমার মনে ধরেছে। এটা আপনার লেখায় আসবে। তিনি কদমফুল মার্কা উষ্কখুষ্ক দাড়ি চুলকিয়ে বলেন, আমার জন্ম মুর্শিদাবাদের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। আমার পাঁচ বছর বয়সে বাবা কলেরায় মারা যান। সত্যি বলতে কি, বাবার স্মৃতি বলতে আমার তেমন কিছুই মনে নেই। দাদা যত দিন জীবিত ছিলেন, আর্থিক সমস্যা হয়নি। হঠাৎ দাদাও মারা গেলে আর উত্তরাধিকারের সম্পত্তি না পেয়ে মা আর আমি একদম নিঃস্ব হয়ে যাই। তখন দাদার সম্পত্তিতে অনাথ নাতি সম্পত্তি পেত না। আমরা দাদার বাড়িতে একটা পুরোনো দালানে থাকতাম। সেই বাড়িতে মা কইতর পালতেন। মনে পড়ে, শিশুকালে মায়ের সাথে আমি পায়রাকে ভাত-ছোলা খাওয়াতাম। একসময় মায়ের বিয়ে হয়ে গেল এক বিপত্নীক কেরানির সাথে। আমি মায়ের নতুন স্বামীর কাছে কৃতজ্ঞ। মিতবাক আমার সৎবাবা আমাকে একটা কনভেন্ট স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। কলকাতার ছোট্ট বাড়িতে মা বেশির ভাগ সময় হেঁসেলে ব্যস্ত থাকতেন। সেখানেও মা কয়েকটা কইতর পুষতেন। এই ঘরে মায়ের কোনো সন্তান হয়নি। দেশভাগের সময় আমরা ঢাকায় এসে দুই কামরার ঘরে উঠি। নতুন বাবা ব্যবসায়ে বেশ সুবিধে করে একটা বাড়ি পর্যন্ত কিনে ফেলেন। মা এখানেও তার কবুতরপ্রেম অক্ষুণ্ণ রাখেন। বাবা এ জন্য মাকে আদর করে ডাকতেন কইতরি বেগম। জলিল চাচা পরিশীলিত বাংলায় কথা বলেন। কিন্তু কেন কবুতরকে গ্রাম্য ভাষায় কইতর ডাকেন, তা আজ অনুধাবন করলাম।

সেদিন কিছুটা ডিকটেশন নেওয়ার সময় হঠাৎ করে প্রসঙ্গ পাল্টে চাচা বললেন, তোমার সাথে এ এলাকার কোনো হুজুরের যোগাযোগ আছে? আমি বললাম, নিয়মিত জুমার নামাজে হাজির হই, একবারে শেষে কাতারে। দূর থেকে দেখেছি, ইমাম সাহেব মেহরাবে দাঁড়িয়ে দোজখের রোমহর্ষ বর্ণনা দেন, কিন্তু কখনো ভয়ে কথা বলা হয়নি। শুনেছি, এ অভিজাত এলাকায় কুলখানি, বিয়ে, আকিকা, খতনা, বিদেশ গমনএসব কারণে হুজুররা বেশ ব্যস্ত। অনেক আগ থেকে সুনির্দিষ্ট কারণ বলে দোয়ার সূচি ঠিক করে নিতে হয়। চাচা কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে বললেন, একদিন একটা এতিমখানায় মিলাদের ব্যবস্থা করো। আমার প্রয়াত স্ত্রী ও মা-বাবার জন্য দোয়া করবে। আর বিদেশ-বিভূঁইয়ে ছেলেটারও ঘোর বিপদ। শেষে ফিসফিস করে বললেন, তোমাকে তো বলেছি, বড় নাতনি আভা এবার হার্ভার্ডে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু সহজ-সরল মেয়েটাকে এক দশাসই কালা আদমি জাদু করেছে। বউমার কাছে সেদিন এই দুসংবাদ শুনেই আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। নিগ্রোটার আছর থেকে ফুলের পাপড়ির মতো নাতনিটাকে বাঁচাতে শিগগির দোয়ার আয়োজন করো।

 জলিল চাচার নাতনির নামধাম টুকে নিয়ে আমি হাজির হলাম এক বিখ্যাত মাদ্রাসা ও এতিমখানায়। কাঠের দেরাজের ওপর কয়েকটা ভারী পুস্তক, একটা ছাপানো রশিদ আর এক জোড়া বেত সামনে নিয়ে হুজুর কী যেন আরবি নকশা আঁকিবুঁকি করছেন। সালাম দিলে হুজুর মুচকি হেসে দুহাত বাড়িয়ে সম্ভাষণ জানালেন। মুখে বলতে লজ্জা পাওয়ায় সুনির্দিষ্ট কারণ লিখে মিলাদের এন্তেজামের অনুরোধ করলে হুজুর প্রথমে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। প্রায় সাথে সাথেই তিনি খাসি, কালোজিরে চাল, মসলাপাতি, খিলিপান, এমনকি গ্যাসবিলের হিসাব দিলেন। শেষে থুতু দিয়ে টাকা গুনে নিয়ে একটা রশিদ আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন। আগামী কয়েক মাসের জুমার দিন খালি নেই জানিয়ে মুখে একটা পান পুরলেন। চারদিকে জর্দার সুবাস ছড়িয়ে পড়ল। এক ছোকরা ছেলে এসে শাদা তশতরিতে কিছু বাদাম-কিসমিস রেখে গেল। বহু মিনতি করে দুই দিন পরে বাদ জোহর দোয়া আর তবারক বিতরণের সূচি নির্ধারণ করতে সক্ষম হলাম। দোয়ার নির্দিষ্ট দিনে আমি আর চাচা এতিমখানায় গিয়ে দেখি, মস্তক-মুণ্ডিত হুজুর একটা আরাম কেদারায় শুয়ে নিমীলিত চোখে দিবানিদ্রায় আচ্ছন্ন। এক খাদেম বলল, এখানকার পরিভাষায় এটি কয়লুল্লা। পাশে টিস্যু পেপারে লালচে টুথপিক। পরিষ্কার দেয়ালে ঝুলন্ত তসবি আর কয়েকটা জালের টুপি। চারদিকে আতর-লোবানের গন্ধ। কেমন যেন মাথা ধরে আসে। আমি সালাম দিলে হুজুর চোখ মেলে বললেন, বসেন, বসেন, দোয়া হয়ে গেছে। আপনারা আসতে দেরি হওয়ায় খাওয়াও শেষ, আলহামদুলিল্লাহ। সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ সুরা আসরে সময়ের শপথ করে মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন। আপনারা যেহেতু এসেছেন, ইনশা আল্লাহ আবার দোয়া হবে। চাচা একটু অপ্রস্তুত হলেও চুপ রইলেন। হুজুর পাশের কক্ষে গিয়ে জোরে জোরে গড়গড়াসহ অজু করে এসে আমাদেরকে নিয়ে সংক্ষিপ্ত মিলাদ পড়ে স্পষ্ট কিন্তু আবেগঘন মোনাজাত করলেন। জলিল চাচা কেঁদে কেঁদে বলেন, আমিন, আমিন। চাচার অশ্রুবিন্দু টলমল করছে দেখে হুজুর মোনাজাত শেষে আংটিশোভিত হাতে টিস্যু পেপার এগিয়ে দিলেন। সবুজ গামছাওলা ছোকরা খাদেম এসে লম্বা সালাম দিয়ে এক ফাঁকে আমাদের গাড়িতে দশ-বারো প্যাকেট বিরিয়ানি পুরে দিয়েছে। ব্যস্ত মোদাররেস এখন সোনালি পাড়ের কালচে আলখাল্লা চাপিয়ে মেহেদিরঙা দাড়িতে আয়েশ করে চিরুনি চালিয়ে টিভিতে টক শো আছে বলে আমাদেরকে এগিয়ে দিয়ে সামনের দিকে গেলেন। মিহি আতরের মিষ্টি গন্ধের রেশ হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। ফিরতি-পথে চাচা এই ত্বরিতকর্মা হুজুরের ব্যবস্থাপনার তারিফ করেছেন দেখে আমি আশ্বস্ত হলাম।

বাড়িতে পৌঁছতেই ছেলের বউয়ের ফোন পেয়ে চাচা বলেন, শুকরিয়া, অই দৈত্যটার হাত থেকে নাতনিটা রক্ষা পেয়েছে। আজকে তাদের ব্রেক আপ হয়েছে। চাচা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে কবুতরকে মুঠোভরে পোলট্রি ফিড ছিটিয়ে দেন। আদেশ পেয়ে আলম পক্ষিকুলকে এক মোড়ক বিরিয়ানিও পরিবেশন করল। আনন্দমগ্ন কপোতের দল হুটোপুটি করে খাবার খায় আর চাচা খুশিতে ঝলমল করেন। অনন্য চঞ্চুভঙ্গি আর ব্যতিক্রমী ছন্দের হাঁটাচলার জন্য একটা সুন্দরী কবুতরকে তিনি নরম গলায় ডাকেন, শিলা, শিলা। লাজুক হেসে বললেন, তার প্রয়াত স্ত্রীর নাম শিলা। চাচা আর আমি বাগানে বসে মিলাদের তবারক খেতে বসলাম। ম-ম সৌরভে চারদিক আমোদিত। রান্না আসলে বেশ উপাদেয় হয়েছে। প্রতিবেশীর উঁচু দেয়ালের ওপাশ থেকে কয়েকটা কুকুর বিরিয়ানির গন্ধে মুহুর্মুহু ডাক দেয়ঘেউ, ঘেউ। পাতে লেবুর রস দিতে দিতে চাচা বললেন, পাশের বাড়িতে সাতটি কুকুর আর কয়েকজন কাজের লোকসহ এক ভদ্রমহিলা থাকেন। মন্ত্রী হওয়ার কথা ছিল তাঁর, কিন্তু কী একটা গণ্ডগোলে এবার আর কেবিনেটে স্থান হয়নি। বাড়িতে সারা দিন লোক আসে বলে পুত্রবধূ ঝগড়া করে সপরিবারে বারিধারার ভিন্ন ফ্ল্যাটে চলে গেছে। চাচা নিচুস্বরে বললেন, প্রায় রাতেই ঘুম ভেঙে শুনি, কুকুরগুলো প্রলম্বিত স্বরে কাঁদে। এরা অনেক কিছু আগে থেকে টের পায়। ওই মহিলা মনে হয় বেশি দিন বাঁচবে না। এরপর মিষ্টিপান মুখে দিয়ে তিনি কোরআন, বাইবেল আর তৌরাতের উদ্ধৃতি দিয়ে সাত গুহাচারি মানুষ আর তাদের সঙ্গী কুকুরের আলোচনা করেন। তিনি একসময় তুরস্কে রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তখন সেই আসহাবে কাহাফের গুহা দেখেছেন বলেও জানালেন।

 কিছুদিন পর জলিল চাচা এক রাতে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। কেয়ারটেকার আলমের ফোন পেয়ে ত্বরিত এসে অজ্ঞান চাচাকে দেখে খারাপই লাগল। একদম মরমর অবস্থা। আমার কাছে রোগীর গুরুতর অবস্থার কথা নিশ্চিত হয়ে ছেলে আফতাব ভাই দেশে এসেছেন। সাথে লুনা ভাবি আর ত্রয়োদশ বর্ষীয় ছেলে রুমি। এই দম্পতির হার্ভার্ড পড়ুয়া সাবেক কৃষ্ণাঙ্গপ্রেমী কন্যার পড়াশোনার একদম বিরাম নেই। সে আসতে পারেনি। আফতাব ভাই মাত্র পনেরো দিনের ছুটি নিয়ে এসেছেন। প্রথম কয়দিন যমে-মানুষে টানাটানি। সপ্তাহ খানেক পরে চাচাজানের সংজ্ঞা ফিরলে আফতাব ভাই কেঁদে ফেলেন। নার্স নিবেদিতা বেশ উষ্মা নিয়েই আমাকে বলল, একদম সেরে উঠবে। বুড়ার প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড এনলার্জ হয়েছে! কয়দিন বাসায় ছিলাম, কী যে উৎপাত। প্রবাসী পুত্রের ছুটি ফুরিয়ে যায়, কিন্তু বুড়ো আর মরে না। অধৈর্য হয়ে লুনা ভাবি কয়েক দিন বাপের বাড়িতে ঘুরে এসে আফতাব ভাইয়ের সাথে গজগজ করেন, আমরা আর কয়দিন থাকব? রুমির ছুটি শেষ, স্কুল খুলে যাবে। তোমারও তো কাজ আছে, নাকি? আফতাব ভাই চাপা গলায় ভাবিকে নিরস্ত করেন।

শ্রুতলিখনের ফাঁকে চাচা একদিন আমাকে বললেন, লুনা এমনিতে খুব একটা দেশে আসতে চান না। এবারে তার দেশে আসার কারণ হলো, আমি মারা গেলে এই বাড়ি বিক্রি করে দেবে। এর আগে অনেকবার আকারে-ইঙ্গিতে বলা হয়েছে, এই বাড়ি ভেঙে অনেকগুলো ফ্ল্যাট করতে। কিন্তু জলিল চাচা রাজি হননি। একদিন লুনা ভাবির গোপন দৌত্য আর বেনামিতে এক দালাল এসে বাড়ি কেনার প্রস্তাব দিলে চাচা প্রশ্ন করলেন, এই বাড়ি ভাঙলে আমার কইতরেরা কই যাবে? সুবেশ এজেন্ট ছেলেটা বেশ শুদ্ধ ভাষায় কী যেন বলতে যাচ্ছিল। সাবেক ডিসি চাচাজান বেশ খেপে গিয়ে হঠাৎ করে বললেন, বাসায় এখনো পুরান আমলের মোষের বোলের খড়ম আছে। আর যদি তোমাকে কখনো এই এলাকায় দেখি, খড়মপেটা করব। ভুলে যেয়ো না আমি দীর্ঘদিন ডিসট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট ছিলাম। ইদানীং তিনি প্রায়ই মেজাজ হারিয়ে ফেলেন।

চাচা প্রায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ছেলে আফতাবও সপরিবারে আবার ওয়াশিংটন ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চাচা তাঁর সাবেক সহকর্মী সচিবকে ফোন করে পুত্র ও তাঁর পরিবারের জন্য জন্য ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের ব্যবস্থা করেছেন। এক ভোরে চাচার কথামতো আমিও বিদায়ী যাত্রীদের সাথে এয়ারপোর্টে গেলাম। রুমি হেসে বাই বললে আফতাব ভাই আমাকে বিদায়ী আলিঙ্গন করলেন। চেক ইনের জন্য ব্যাগ, টিকিট আর পাসপোর্ট আনসারকে দেব, এমন সময় কেয়ারটেকারের পরপর ফোনকল পেয়ে ভাবলাম, তারা কি কিছু ফেলে এসেছে? আমি ফোন রিসিভ করতেই আলম কেঁদে বলল, স্যার গো, সাহেব মইরা গেছে। বাসায় অবস্থানরত নার্সও মৃত্যু নিশ্চিত করে ফোনে কথা বলল। আমি আফতাব ভাইকে সংবাদটা দিলে তিনি পাথরের মতো নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। লুনা ভাবি কেঁদেকেটে স্বামীকে জড়িয়ে ধরলেন। আমি এগিয়ে গিয়ে ফ্লাইটের টিকিট পরিবর্তনের জন্য লাইনে দাঁড়ালাম। বিশাল টিভির ব্রেকিং নিউজে চোখ আটকে গেলসাবেক সচিব ও সাবেক রাষ্ট্রদূত আব্দুল জলিল খান নিজ বাসগৃহে মৃত্যুবরণ করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শোক প্রকাশ করেছেন।

এয়ারপোর্টে থেকে আমরা যখন বাড়িতে ফিরেছি, তখন জলিল চাচা শুধুই একটা লাশ। তিনি আর কোনো আমলা নন, কলামিস্ট নন, কারও বাবা নন, কারও দাদা নন। চোখে সুরমা লাগানো সেই হুজুরের নির্দেশনায় আরেক ম্যাড়ম্যাড়ে হুজুর এসে মুর্দা গোসল করিয়ে কাফনের কাপড় পরিয়ে দিয়েছে। কয়েকটা পাগড়ি পরিহিত দশ-বারোজন বাচ্চা ছেলে দহলিজে বসে দ্রুতলয়ে কোরআন তেলাওয়াত করেছে। মরহুম চাচা মুর্শিদাবাদের লোক বলে এ দেশে তাদের আত্মীয়স্বজন কম। বিকেলের দিকে কিছু পুরোনো সহকর্মী আর সরকারি লোকজন এসে লাশের কাছে কয়েকটা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছে। সারা বাড়ি নিস্তব্ধ। শুধু পাশের বাড়ির কুকুরগুলো করুণ স্বরে মাঝে মাঝে একটানা বিলাপ করে যাচ্ছে। আশ্চর্য, চাচার পোষা কইতরের দল ছাদে জড়ো হয়ে একদম নিঃশব্দ হয়ে গেছে। একসময় কী মনে করে যেন আফতাব ভাই আমাকে নিয়ে ছাদে উঠে মৃতের অতিপ্রিয় পাখিদেরকে ছোলা-গম ছিটিয়ে দিলেন। শোকার্ত কবুতরের দল এসব ছুঁয়েও দেখল না।

বাদ আসর জানাজা শেষে বনানী গোরস্তানে দাফন শেষে বাসায় ফেরার পথে জলিল চাচার নাতি রুমি আঙুল দেখিয়ে ইয়াঙ্কি উচ্চারণে বলল, পাপা, ওই তো, ওয়েস্টিন হোটেল। আমার খুব বুফে খেতে ইচ্ছে করছে। তুমি না কথা দিয়েছিলে, যখনই আমরা এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় আসব, প্রতিবারই বুফে খাওয়াবে। আফতাব ভাই আমার কাঁধে মাথা রেখে এই প্রথম ডুকরে কেঁদে উঠলেন।

কয়দিন পর গুলশান আজাদ মসজিদে কূলখানিতে হাজির হলে আফতাব ভাইয়ের বাড়িতে নিয়ে গেলেন। লুনা ভাবির মুখ বেশ ঝলমলে। প্রিয়ংবদা হয়ে বললেন, ভাই, আপনাদের পত্রিকাতে একটা বিজ্ঞাপন দিতে হবে এভাবেগুলশান ১৪ নং রোডে পনেরো কাঠার একখানা নিষ্কণ্টক বাড়ি সাফ কবলা বিক্রি হবে। দাম আলোচনাসাপেক্ষ। ফ্লাইটের টিকিটও আরও মাস খানেক পিছিয়ে দেন। জায়গাজমি বেচতে কিছু সময় তো লাগবে। দেখবেন তো, র‍্যাকসুদ্ধ বইগুলোও বেচতে পারেন কি না। আফতাব ভাইও আমাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিজনেস কার্ড দিয়ে বললেন, যদি কখনো ওয়াশিংটনে আসেন আপনাকে সব ঘুরিয়ে দেখাব। ভাবি হেসে যোগ করলেন, কোন লেখক যেন বলেছেন, যে ম্যাগ্নোলিয়া-সুশোভিত বসন্তের ওয়াশিংটন দেখেনি, সে দুর্ভাগা। আমি ঢোক গিলে লক্ষ করলাম, সদ্য প্রয়াত জলিল চাচার এ বাড়িতে শোকের চিহ্নমাত্র নেই। উঠোনের গোলাপবনে একটা জ্বলজ্বলে চোখের স্বাস্থ্যবান বিড়াল শিকার ধরার পাঁয়তারায় ওত পেতে আছে। এক পাশে পড়ে আছে কয়েকটা ঝরা পালক, ফুলের পাপড়ি আর হলদে পাতা। নরম বাতাসের ছোঁয়া লাগে চাচার প্রিয় কামিনী ঝাড়ে। সবুজ টিয়ে উড়ে এসে তীক্ষ্ণ ঠোঁটে কামরাঙা কামড়ায়। বাইরের রাস্তায় চলমান যানের বিকট হর্ন বেজে ওঠে। চাচা হয়তো এই পরিবেশ দেখে রুমির কোনো আধ্যাত্মিক বয়েত আওড়াতেন। আফতাব ভাইয়ের কার্ড, বিজ্ঞাপনের খসড়া আর ফ্লাইটের টিকিট হাতে নিয়ে বাসা থেকে বের হবার পথে কেয়ারটেকারকে দেখে বললাম, আলম, চাচার কবুতরগুলির যত্ন নিয়ো। আলম বলল, স্যার গো, সবগুলা কইতর তো সাহেবের দাফনের দিনই উইড়া গেছে।