ভাওয়াল গড়ের ঐতিহ্য ভ্রমণ
‘ভাওয়াল গড়ের ঐতিহ্য ভ্রমণ’—আচমকা শুনতে কেমন যেন ঠেকছে! সেখানে বিশাল উদ্ভিদরাজি ছাড়া দেখবারই-বা কী আছে! এখনকার ভাওয়াল গড়ের কথা বলছি না। কয়েক শ বছর আগে যে অঞ্চলকে ভাওয়াল গড় বলা হতো, সেই অঞ্চলের ঐতিহ্য ভ্রমণে কী কী দেখেছি সে গল্পই আজ করব। এই অঞ্চলের বর্তমান নাম, সুপ্রাচীন ইতিহাসের কথা অল্প করে বলেই ভ্রমণ শুরু করব। ঢাকার অদূরে হবার কারণে বার কয়েক যাওয়া হয়েছে এই অঞ্চলের হেরিটেজ দেখবার জন্য! সেই সব দিনের ভ্রমণ এক জায়গায় জড়ো করেই আজকের ভ্রমণগদ্য।
ইতিহাসবিদদের মতে—প্রাচীনকালে ডবাক, ডাকুরাই, দাস, চণ্ডাল এবং চেদি রাজ্যের মধ্যেই ছিল বর্তমান গাজীপুর জেলা। ব্রিটিশ আমলে এ এলাকা শুধু ভাওয়াল গড় নামে পরিচিত ছিল। বর্তমান গাজীপুর জেলার রয়েছে নিজস্ব সুপ্রাচীন ও গৌরবময় ইতিহাস।
সভ্যতার প্রাচীন ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, কোনো ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে গড়ে উঠেছে মানবসভ্যতা, কৃষ্টি তথা এক-একটি জনপদ। কোনো জনপদের জনগোষ্ঠী বা জাতির কৃষ্টি, সংস্কৃতি নিয়ে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠার নামই সভ্যতা। মিসর, ব্যাবিলন, মহেঞ্জোদারো, হরপ্পা, মায়া হলো প্রাচীন সভ্যতার এক-একটি প্রকৃষ্ট উদাহারণ। ভাওয়াল এলাকায় এ রকম সভ্যতার সন্ধান পাওয়া না গেলেও এখানে উন্নত জনপদ গড়ে উঠেছিল যে নদীর তীরবর্তী এলাকায়—জানা যায় সে নদীর নাম ছিল লবলং। হারিয়ে যাওয়া এ নদীকে অনেকে বলে থাকেন লবন্দ্র নদী। বর্তমানে একটি সরু ধারা ছাড়া এ নদীর কোনো অস্তিত্ব নেই। পরে এ নদীর নাম পরিবর্তন হয়ে হয় কহরদরিয়া। তবে শোনা যায়, এই কহর দরিয়ার কারণে টঙ্গীতে লোককাহিনির বিবি সোনা ভানের পিতার রাজত্ব ভরান রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ভরান রাজ্যের বাইরে ছিল প্রাচীন আমলের পাল, চেদি দাস এবং ভাওয়াল জমিদারি এলাকা। এ এলাকার নাম যে ভাওয়াল, এ কথা প্রথম পাওয়া যায় আইন-ই-আকবর গ্রন্থে।
শের শাহ্ বাংলাকে ১৯টি সরকার এবং ৩২টি মহাল অর্থাৎ পরগনায় ভাগ করেন। চেদি রাজ্যগুলোকে নিয়ে যে পরগনা সৃষ্টি করেন, তার নামকরণ করেন ভাহওয়াল খাঁ গাজীর নামে। ভাহওয়াল পরগনা পরে লোকমুখে ভাওয়াল পরগনা হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে ভাওয়াল নামের অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়। টলেমি গ্রিক ভাষায় ভাওয়ালকে লিখেছেন আন্তি ভোল রূপে। বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভূ-আল শব্দের বিকৃত রূপ হচ্ছে ভাওয়াল। আইন-ই-আকবর গ্রন্থের সূত্র ধরে গাজী পরিবারের শাসক ভাওয়াল গাজীর নাম থেকে পরগনার নাম হয়েছে ভাওয়াল পরগনা।
ভাওয়াল পরগনা
ভাওয়াল পরগনা প্রাচীন বাংলার একটি সমৃদ্ধ জনপদ। ইতিহাসবিদ সৈয়দ মোহাম্মাদ তৈফুর ‘গ্লিম্পসেস অব ওল্ড ঢাকা’তে উল্লেখ করেছেন, ‘গাজীদের সুবর্ণ যুগে ভাওয়াল এর উত্তর সীমা ময়মনসিংহ এর গড় জরিপা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।’ ইতিহাসবিদ এবং প্রত্নতত্ত্ব অধ্যাপক নলিনী কান্তও একই মত পোষণ করেছেন। মোগল আমলে ১৬০৮ সালে ঢাকায় বাংলার রাজধানী প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সময়ে ভাওয়ালের জমিদার ছিলেন বাহাদুর গাজী।
সামন্ত রাজাদের শাসনের পর ভাওয়াল পরগনা এলাকায় গাজী বংশের শাসনের যুগ শুরু হয়। গাজী বংশের শাসনের সূচনা করেছিলেন পলুন শাহ গাজী। আগেই বলেছি, বর্তমান গাজীপুর জেলা সে সময় ছোট ছোট রাজ্যে বিভক্ত ছিল। এগুলোকে বলা হতো চেদি রাজ্য। এ সকল এলাকায় তখন ছোট ছোট অথচ স্বাধীন সামন্ত রাজাদের উদ্ভব ঘটে। রাজারা ছিলেন পাল বংশীয় এবং ধর্মমতে বৌদ্ধ। পাল বংশের পর আসে সেন বংশ। কালক্রমে এই এলাকায় মুসলমানদের প্রবেশ ঘটে।
ইতিহাসবিদদের মতে—প্রাচীনকালে ডবাক, ডাকুরাই, দাস, চণ্ডাল এবং চেদি রাজ্যের মধ্যেই ছিল বর্তমান গাজীপুর জেলা। ব্রিটিশ আমলে এ এলাকা শুধু ভাওয়াল গড় নামে পরিচিত ছিল। বর্তমান গাজীপুর জেলার রয়েছে নিজস্ব সুপ্রাচীন ও গৌরবময় ইতিহাস
চতুর্দশ শতাব্দীতে অধিবাসী পল্লুন শাহের পূর্বপুরুষ ছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের লোক। তারা ভাগ্যের অন্বেষণে চলে আসেন ভারতে। পল্লুন শাহ গাজীর বড় ছেলে কারফরমা গাজী এবং ছোট ছেলে কাইউম গাজী, কাইউম খাঁ গাজীর ছেলে ভাহওয়াল খাঁ গাজী দিল্লির বাদশাহ তুঘলকের কাছ থেকে পিতার সূত্র ধরে জায়গির লাভ করেন। পরে দিল্লিতে নতুন শাসক হিসেবে আসেন শেরশাহ [১৪৭২-১৫৪৫]। শেরশাহ জীবিতকালে ভারতকে ৪৭টি এবং বঙ্গ দেশকে ১৯টি সরকারে বিভক্ত করেন। ১৯টি সরকার আবার ৩২টি মহালে বিভক্ত করা হয়েছিল। এ সকল মহাল বা পরগনার মধ্যে একটি পরগনার নামকরণ করা হয় ভাহওয়াল পরগনা ভাহওয়াল গাজীর নামে। ফরিদ আহামেদ লিখিত গাজীপুর জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য গ্রন্থে পাওয়া যায় গাজী বংশের শেষ জমিদার ছিলেন দৌলত গাজী, যিনি ১৭৩৬ সালে হজ করতে গিয়ে আর ভাওয়ালে ফিরে আসেননি।
গাজী বংশের শেষ জমিদার দৌলত গাজীর কাছ থেকে গোটা জমিদারি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ছিনিয়ে নেন রায় পরিবারের পূর্বপুরুষ বিক্রমপুরের কুশধব্জ চক্রবর্তীর ছেলে বলরাম রায় ১৭৩৮ সালে এবং ভাওয়ালে রায় পরিবারের জমিদারির সূত্রপাত ঘটান।
ভাওয়াল রায় পরিবারের বিখ্যাত রাজা কালী নারায়ণ রায় চৌধুরী ১৮৫৭ সালে জমিদারি পরিচালনা শুরু করেন। বর্তমান গাজীপুর জেলার রাজবাড়িটির নির্মাণকাজ শেষ করেন রাজা কালী নারায়ণ রায় চৌধুরী। প্রায় ১৫ একর জমির ওপর মূল প্রাসাদ বিদ্যমান। বিশাল এই রাজপ্রাসাদে রয়েছে ছোট-বড় ৩৬০টি কক্ষ। ভাওয়াল জমিদারের রাজবাড়ি বর্তমানে বাংলাদেশের মধ্যে প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ। বর্তমানে গাজীপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ছিল ম্যানেজারের অফিস, রাণী বিলাসমণি বালক উচ্চবিদ্যালয় ছিল দেওয়ানখানা।
কালী নারায়ণ রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পর ১৮৭৮ সালে ভাওয়াল জমিদারি পরিচালনায় আসেন রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী। রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর আগ্রহে বর্তমান বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম চলচ্চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় গাজীপুরে। ১৯০১ সালে ঢাকার নলগোলা বাসায় তিনি পরলোকগমন করেন। মৃত্যুর সময় তিনি তিন পুত্র ও দুই কন্যা রেখে যান।
ভাওয়াল সন্ন্যাস হিসেবে খ্যাত মেজ কুমার রমেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী দার্জিলিং ভ্রমণকালে ১৯০৯ সালে তাঁর মৃত্যুর ঘটনা এবং এক যুগ সন্ন্যাস বেশে নিরুদ্দেশ থেকে গাজীপুরে ফিরে আসার কারণে ঐতিহাসিক ভাওয়াল মামলার উদ্ভবে আলোড়ন সৃষ্টি হয় দেশে-বিদেশে। ১৯৩০ সালের ২৪ এপ্রিল ভাওয়াল জমিদারির এক-তৃতীয়াংশ মালিকানা দাবি করে সন্ন্যাসী তথা রমেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ঢাকার সাব-জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় মোট সাক্ষীর সংখ্যা ছিল ১৫৪৮। আদালতে প্রায় ২০০০ ছবি ও দলিল উপস্থাপন করা হয়। ঘন টাইপ করা ৫২৫ পৃষ্ঠার ছিল এ মামলার রায়। এ ঐতিহাসিক মামলায় জয় লাভ করে ভাওয়াল জমিদারিতে তাঁর দাবি প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৬ সালে কলকাতার নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।
গাজীপুর মহকুমা
দেশ বিভাগের পর গাজীপুর জয়দেবপুর নামে পরিচিত ছিল। ভাওয়ালের জমিদার জয়দেব নারায়ণ রায় চৌধুরী এ এলাকায় নিজ বাসগৃহ নির্মাণ করেন এবং নিজের নামানুসারে এই অঞ্চলের নাম দেন জয়দেবপুর। মহকুমা গঠনের সময় জয়দেবপুর পরিবর্তন করে গাজীপুর রাখা হয় ১৯৭৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর। তবে পাকিস্তান আমলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের সাংগঠনিক মহকুমা হিসেবে ভাওয়াল গড় নাম ব্যবহার করত, যেমন—ভাওয়াল গড় আওয়ামী লীগ, ভাওয়াল গড় ন্যাপ, ভাওয়াল গড় কম্যুনিস্ট পার্টি ইত্যাদি।
গাজীপুর জেলা
১৯৮২ সালে দেশের সকল মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরকার। ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ গাজীপুর জেলার উদ্বোধন করা হয়। এ তো গেল ইতিহাসের খুদে তথ্য। আপনি ঐতিহ্য ভ্রমণে গেলে কী কী দেখবেন গাজীপুরে। এত অসংখ্য স্থাপনা রয়েছে গাজীপুরে, ভাবছি ভ্রমণ কোথা থেকে শুরু করলে ভালো হয়। অল্প করে শুরুতেই জমিদার বাড়ির কথা বলেছি।
ভাওয়াল রাজবাড়ি ও শ্মশানেশ্বরী
গাজীপুরে ভাওয়াল রাজবাড়ি কতটুকু এলাকা নিয়ে বিস্তৃত ছিল, তা এ সময়ে এসে নির্ণয় করা কষ্টকর। অর্থাৎ দেখতে পাবার মতো টিকে রয়েছে, রাজবাড়ি ও শ্মশানঘাটটি। রাজবাড়ি এখন ব্যবহৃত হচ্ছে জেলা প্রশাসকের অফিস হিসেবে। পুরোটা নয়, কিছু কিছু অংশ পরিত্যক্ত এবং বেশ অনাদরেই রয়েছে।
ভাওয়াল জমিদার পরিবার জমিদারির একেবারে কেন্দ্রে অবস্থিত জয়দেবপুর গ্রামে বাস করতেন। তাদের বাড়ির নাম ছিল রাজবাড়ি আর সড়কটিকে বলা হতো রাজবাড়ি সড়ক। রাজবাড়িতে প্রবেশ করতে গেলে প্রথমেই পড়ত বড় দালান। এই দালানে অবশ্য রাজপরিবারের কোনো লোকজন বসবাস করতেন না। বড় দালানে থাকতেন রাজবাড়ির অতিথিরা। রাজবাড়ির অতিথি হয়ে যাঁরা জঙ্গলে শিকার করতে আসতেন, তাঁরা এই বড় দালানে উঠতেন। তাঁদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা ছিল এই বড় দালানে।
কিছু পরিবর্তন দেখা গিয়েছিল ১৯০২ সালের পর থেকে। এই সময় মি. মেয়্যার রাজ এস্টেটের ম্যানেজার নিযুক্ত হয়ে জয়দেবপুর রাজবাড়িতে উঠেছিলেন। তিনি বড় দালানটিকে তাঁর নিজের বাসস্থান হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেছিলেন। বড় দালানের পেছনেই ছিল ‘নাটমন্দির’। এই নাটমন্দিরের দু’পাশেই ছিল ঝুল বারান্দা। এই ঝুল বারান্দা ছিল নাটমন্দির ঘিরে দুপাশের দালানে। এই দোতলা বাড়ির ঝুল বারান্দা থেকে রাজপরিবারের মহিলারা নাটমন্দিরে অনুষ্ঠিত যাত্রা, থিয়েটার প্রভৃতি অনুষ্ঠান দেখতেন। গান-বাজনা হলে এখানে বসেই তাঁরা শুনতেন। বাড়ির একটি ঘরকে ব্যবহার করা হতো ঠাকুরঘর হিসেবে। ঠাকুরঘরটিতে প্রতিষ্ঠিত ছিল জগদ্ধাত্রীর মূর্তি [বিগ্রহ]। জগদ্ধাত্রী পূজা উপলক্ষে প্রতিবছর নাটমন্দিরে গান-বাজনার আসর বসত। এ ছাড়া প্রতিবছর নাটমন্দিরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হতো। একাধিক উৎসব উদ্যাপন করা হতো জয়দেবপুর রাজবাড়িতে। ভাওয়াল এস্টেটের প্রজারা রাজবাড়ির উৎসবগুলোতে যোগদান করতেন। উত্তর দিকের বাড়ির দোতলার একটি ঘর ছিল রাজবাড়ির সদর বৈঠকখানা। যদিও বইয়ের বর্ণনার সাথে মিলিয়ে দেখতে গেলে বর্তমানের রাজবাড়ির কোনো মিলই খুঁজে পাওয়া যাবে না। আপনাকে কেবল কল্পনা করে নিতে হবে।
এই বাড়ির পেছনের দিকে ছিল রাজবাড়ির অন্দরমহল। অন্দরমহলটিকে বলা হতো পুরানো বাড়ি। পুরানো বাড়ির পশ্চিম দিকের অংশটিকে বলা হতো পশ্চিমাখণ্ড। রাজবাড়ির পেছনের দিকে খোলা অংশে ছিল একটি বাগান। পূর্ব দিকে চিলাই নদ। পশ্চিম দিকে ছিল একটি বড় দিঘি। রাজবাড়ির মেয়েরা মাধব বাড়ির পাশ দিয়ে পশ্চিমের দিঘিটিতে যাতায়াত করতেন।
‘মাধব বাড়িতে’ ছিল ‘রাধামাধবের’ মূর্তি। ‘রাধা মাধবের’ মূর্তিটি ছিল পাথরের। মাধব বাড়ির পেছনে ছিল রাজবিলাস। রাজা কালী নারায়ণের মৃত্যুর পর রাজপরিবারের লোকজন সাধারণত বাস করতেন রাজাবিলাসে। জয়দেবপুর বাজবাড়িতে ছিল ডাক্তারখানা, খাজাঞ্চিখানা, ফরাসখানা, বাবুর্চিখানা প্রভৃতি। রাজবাড়ির ইউরোপিয়ান অতিথিদের জন্য ছিল একজন অহিন্দু পাচক।
রাজবাড়ির চৌহদ্দির মধ্যেই ছিল পোলো খেলার ময়দান। ১৯২১ সালের ১৫ মে যখন বিতর্কিত সন্ন্যাসীটি জয়দেবপুরে এসেছিলেন, তখন এই পোলো ময়দানেই একটি বিরাট সভার আয়োজন করা হয়েছিল। বহু মানুষ জমায়েত হয়েছিল পোলো খেলার ময়দানে। এ ছাড়া রাজবাড়িতে ছিল ‘দেওয়ান খানা’। রাজবাড়ির কাছেই ছিল এম-ভি স্কুল। পরে অবশ্য স্কুলটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছিল ‘রাণী বিলাসমণি স্কুল’। স্কুলটির বোর্ডিং হাউসটি ছিল স্কুলবাড়ির দক্ষিণ দিকে। রাজবাড়ির সন্নিকটে রেললাইনের পাশে প্রতি সপ্তাহের সোম ও শুক্রবার হাট বসত। রাজবাড়ির চত্বরে ছিল ঘোড়াশালা এবং হাতিশালা।
হাতির কথা এখনো স্মরণ করিয়ে দেয় রাজবাড়ি চত্বরে থাকা নাগালিঙ্গম গাছ। পিলখানার পাশাপাশি ছিল মাহুতদের থাকবার ব্যবস্থা। মেজোকুমার রমেন্দ্র নারায়ণ যখন ১৯০৯ সালে দার্জিলিং ভ্রমণে গিয়েছিলেন, সেই সময় রাজবাড়ির হাতিশালে ছিল ১৩টি হাতি।
প্রতিটি হাতির আলাদা নাম ছিল। ঢাকার বুড়িগঙ্গার পাশে নলগোলায় ভাওয়ালরাজের একটি বাড়ি ছিল। আমি গিয়েছিলাম দেখতে, কয়েকটি দেয়াল ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। জানা যায়, কুমারেরা ঢাকায় এলে নলগোলার বাড়িটিতে উঠতেন। রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণের মৃত্যুর পর কুমাররা খুব ঘন ঘন ঢাকার নলগোলার বাড়িতে যাতায়াত করতেন। ভাওয়াল রাজের ‘মতিয়া’ নামে একটি লঞ্চ ছিল। বুড়িগঙ্গায় বাঁধা থাকত লঞ্চটি। ঢাকায় এলে কুমাররা এই ‘মতিয়া’ নামক লঞ্চে করে ঘুরে ফিরে বেড়াতেন। এ ছাড়া ভাওয়ালরাজের ছিল একাধিক নৌকা।
ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছে ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী। যতবার যাই ততবারই দেখি পূর্বের থেকে মলিনতর হচ্ছে এই প্রত্নস্থল। যদিও সেখানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের বোর্ড ঝুলছে। পাশের চিলাই নদ যেমন শুকিয়ে যাচ্ছে, তেমনি রাজবাড়ির এই সমাধি স্থানও শ্রী হারাচ্ছে।
জানা যায়, ভাওয়ালের জমিদার জয়দেব নারায়ণের দৌহিত্র লোক নারায়ণ রায় বাংলা ১২৫০ থেকে ১২৬০ সালের মধ্যে গড়ে তোলেন এই ভাওয়াল রাজশ্মশান। তবে ঐতিহাসিকদের মতে, মূল শ্মশানের কাজে হাত দিয়েছিলেন রাজা কীর্তি নারায়ণ রায়।
রাজপরিবারের কোনো লোকের মৃত্যু হলে তার মৃতদেহ দাহ করা হতো চিলাই নদের পাশে, নির্দিষ্ট শ্মশানে। চিলাই নদে স্নানের জন্য রাজপরিবারের লোকজন ব্যবহার করতেন একটি নির্দিষ্ট স্নানের ঘাট। এই স্নানের ঘাটটির নাম ছিল ‘শিকদার’ ঘাট।
প্রথম ভারতীয় নাইট, কে. জি. গুপ্তের সমাধি...!!
মনে আছে সেদিনের কথা, দুপুরের গরমটা কেমন জানি অসহ্য লাগছিল। সিএনজি থেকে কাওরাইদ বাজারে নেমে ভীষণ পিপাসা জেগেছিল। ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে কাওরাইদ বাজার পর্যন্ত যেতে কিছু ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল।
যাক সে কথা, কাওরাইদ বাজারে ছিলাম। সেখানে একটি দোকানে বসে পানি খাচ্ছি আর চারদিকে দেখছি আর ভাবছি কাকে জিজ্ঞেস করব স্যার কে. জি. গুপ্তের সমাধির বিষয়ে। সামনে বসা লোকটিকে জিজ্ঞেস করলাম। উনি সাথে সাথে বলে উঠলেন, ‘আপনার পেছনের বাউন্ডারির ভিতরেই রয়েছে। কিন্তু আপনার পরিচয় কী? কেন খুঁজছেন সমাধি’। আমি সংক্ষেপে আমার উদ্দেশ্য ও বিধেয় বর্ণনা করলাম। উনি উপযাজক হয়ে পথ দেখালেন, ‘আসুন, আমি নিয়ে যাচ্ছি’। যেতে যেতে ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপা, আপনি কোন ধর্মের?’। এই প্রশ্ন আমার জন্য নতুন নয়। আমি এখন উচ্ছ্বাসের সাথেই যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিই।
ভিতরে গিয়ে খুশিতে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।
শুধু স্যার কে জি গুপ্তের সমাধি নয়, এখানে তো পুরো একটি সমাধিক্ষেত্র। আমি দেখতে গিয়েছিলাম শুধু কে. জি. গুপ্তের সমাধি। এখানে যে একটি সিমেট্রি আছে সেটি আমার জানা ছিল না। সমাধিক্ষেত্রটি ব্রাহ্মসমাজের একটি সমাধিভূমি। যেখানে কে জি গুপ্ত ছাড়াও রয়েছেন ব্রাহ্মসমাজের আরও নানা মনীষীর সমাধি।
স্যার কে. জি. গুপ্ত কে ছিলেন?
স্যার কে. জি. গুপ্ত ছিলেন প্রথম ভারতীয় নাইট ও ষষ্ঠ আইসিএস অফিসার, এবং কাওরাইদের গুপ্ত এস্টেট জমিদারির উত্তর পুরুষ। কৃষ্ণগোবিন্দের শিক্ষাজীবন শুরু হয় ঢাকার পোগোজ স্কুলে। পরে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৮৬৭ সালে প্রবেশিকা এবং ১৮৬৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এফ.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। একই বছর তিনি উচ্চ শিক্ষার্থে ব্রিটেন যান। তিনি লিংকন্স ইন থেকে বার-অ্যাট-ল’ সম্পন্ন করেন। ১৮৭১ সালে তিনি আইসিএস [Indian Civil Service] উত্তীর্ণ হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।
ভারতে ব্রিটিশ প্রশাসনে যোগদানের মাধ্যমে কে. জি. গুপ্ত কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি দীর্ঘ কর্মজীবনে মহকুমা প্রশাসক, জেলা প্রশাসক, আবগারি কমিশনার, বিভাগীয় কমিশনার, বোর্ড অব রেভিনিউর সদস্যসহ সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ব্রিটিশ-ভারতে ভাইসরয়ের ইন্ডিয়ান কাউন্সিলের সদস্য মনোনীত করে। তিনি ছিলেন এ পদে প্রথম ভারতীয়।
১৮৬৯ সালে তিনি ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন। ১৩০০ বঙ্গাব্দে তিনি নিজ জমিদারি এস্টেট কাওরাইদে ব্রাহ্মমন্দির নির্মাণ করেন। ১৮৭১ সালে ঢাকায় রামমোহন রায় লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি এবং তাঁর পিতা কালীনারায়ণ গুপ্ত ছিলেন ঢাকা ও ময়মনসিংহে ব্রাহ্মসমাজের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। তিনি ১৯১৯ সালে নিজ এলাকা পাঁচদোনাতে ‘স্যার কে. জি. গুপ্ত উচ্চ বিদ্যালয়’ এবং কাওরাইদে ‘কালীনারায়ণ গুপ্ত উচ্চ বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন।
কে. জি. গুপ্ত তাঁর কর্মকান্ডের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ‘কে.সি.এস.আই’ [Knight Commander of the Star of India] উপাধিতে ভূষিত হন। তিনি ছিলেন এ উপাধি প্রাপ্ত প্রথম ভারতীয়। ১৯২৬ সালের ২৯ মার্চ স্যার কে. জি. গুপ্তর মৃত্যু হয়। তাঁর নামানুসারে ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে ‘কে. জি. গুপ্ত লেন’।
এই সমাধিভূমিতে আরও রয়েছে কে. জি. গুপ্তের পত্নী, বাবা জমিদার কালী নারায়ণ, পবিত্র কোরানের অনুবাদক ভাই গিরীশ চন্দ্র সেনের বোন অতুল প্রাসাদ সেনের সমাধি।
এখানে একটি ব্রাহ্মমন্দিরও রয়েছে। যদিও বহুদিন সংস্কার করা হয় না। কিছুটা জীর্ণ। কথা হলো এখানকার ব্রাহ্মসমাজের প্রতিনিধি ঝর্না আপার সাথে। কথায় কথায় জানলাম ঢাকার ব্রাহ্মসমাজের বর্তমান প্রতিনিধি রণবীর দাদার বোন উনি। আমার ট্রাভেল ডকুমেন্টারি হরিপ্রভা তাকেদা করতে গিয়ে রণবীর দাদার অনেক সাহায্য নিয়েছি।
সিমেট্রি দেখবার পর সারা দিনের ক্লান্তি ভুলে গিয়েছিলাম। স্থানীয় লোকজন, ঝর্না আপা সবাই খুব সাহায্য করেছে। অথচ কারও সাথেই যোগাযোগ করে যাইনি। যে ভদ্রলোক প্রথম পথ দেখিয়েছিলেন, উনার নাম মামুন।
দুপুরে রণবীর দাদার চাপাচাপিতে ঝর্না আপার আতিথেয়তা গ্রহণ করতে হয়েছে। ৬৪ জেলার কোনায় কোনায় এ রকম কত শত ঝর্না আপা, মামুন ভাই আর রণবীর দাদার সাহায্য ও আতিথেয়তা নিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই।
আমাকে ভ্রমণের সময় যখন কেউ জিজ্ঞেস করে, ‘আপা, আপনার দেশের বাড়ি কোথায়’। আমার বলতে ইচ্ছা করে, পুরো বাংলাদেশ আমার বাড়ি। এ রকমই তো হবার কথা, তাই না?
রাজা যশোপালের রাজধানী
সেবার গিয়েছিলাম গাজীপুরে ২০১৪ সালে আবিষ্কৃত দশম শতকের পাল রাজা যশোপালের রাজধানীর ধ্বংসাবশেষ দেখতে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর যশোপাল রাজার প্রাচীন ভিটা অনুসন্ধানে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছিল। গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলাধীন বোয়ালিয়া ও চাপার ইউনিয়নের ডাকুরাইল মৌজায় পাল বংশীয় রাজা যশোপালের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক বড়ইবাড়ি প্রত্নস্থলটি ঢোল সমুদ্র গ্রামে অবস্থিত।
খননকালে পাল আমলের একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ ও নানা পুরাকীর্তি বেরিয়ে এসেছে। রাজা যশোপালের ভিটার পাশের স্থানীয়দের সাথে কথা বলি, তারা বলেন, এটি যশোপালের বসতভিটা হলেও বর্তমানে তাদের স্মৃতিচিহ্ন বিলীন হতে বসেছিল। খনন করা হলে ইমারতের ধ্বংসাবশেষ ও পুরোনো কিছু নিদর্শন পাওয়া যায়।
দৈনিক পত্রপত্রিকায় পড়েছিলাম, খননের মাধ্যমে প্রাপ্ত ধ্বংসাবশেষ দশম শতাব্দীর পাল রাজা যশোপালের সমসাময়িক কোনো কীর্তি বলেই প্রতীয়মান হয়। মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ ছাড়াও এখানে পাওয়া গেছে প্রাচীন দেয়াল, বিভিন্ন টেরাকোটা, পোড়ামাটির ফলকচিত্র।
পাল বংশের রাজারা বৌদ্ধধর্মাবলম্বী হলেও এঁদের মন্ত্রী এবং আমাত্যদের অনেকেই হিন্দুধর্মাবলম্বী ছিলেন। ঢোল সমুদ্র বড়ইবাড়ি প্রত্নস্থানটি বৌদ্ধ র্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না অথবা হিন্দুদের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো কীর্তি রয়েছে কি না, সেটি নির্ণয় হয়নি এখনো।
মুসলিম শাসন পূর্ব সময়ে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় পাল [৮৫৫-৯৮৫ খ্রি.] ও সেন [৯৮৬-১২০৩ খ্রি.] বংশীয় রাজাদের দ্বারা শাসিত ছিল। ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদী ও ধলেশ্বরী নদীর উত্তরে এ বংশের শেষ তিনজন রাজার রাজধানী ছিল। তালিবাবাদ পরগনার মাধবপুরে যশোপালের, ধ্বংসাবশেষ এসব এলাকায় এখনো প্রচুর পরিমাণ বিদ্যমান বলে মনে করা হয়।
রাজা যশোপালের পূর্বসূরি রাজা নারায়ণ পাল ৯৩০ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং দশম খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত রাজ্য পরিচালনা করেন। তাঁর পরগনাও তালিবাবাদ বর্তমান কালিয়াকৈর উপজেলা ও আশপাশের এলাকাজুড়ে অবস্থিত ছিল।
এখন অবশ্য পুরো প্রত্নস্থলটি ঢেকে দেওয়া আছে। স্থানীয়দের কাছে কিছু পোড়ামাটির ফলক রয়ে গেছে। তারই দু-একটি নমুনা দেখেছি হাতে নিয়ে। অবশ্য অনেক অনুরোধের পর দেখাতে রাজি হয়েছে একজন।
ঈশা খাঁর সমাধি
বেশ কয়েকবার গাজীপুর জেলা ভ্রমণ করলেও ঈশা খাঁর সমাধি দেখা হয়ে ওঠেনি। ২০২০ সালের হেরিটেজ ভ্রমণের ইতি টেনেছি কালীগঞ্জের কয়েকটি স্থান দিয়ে।
বাংলার বারো ভুঁইয়াদের মাঝে ঈশা খাঁ বেশ সমাদৃত, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। ঈশা খাঁর রাজধানী ছিল সোনারগাঁ। তিনি ছিলেন কিশোরগঞ্জ, গাজীপুরসহ ২২ পরগনার শাসক। মোগলদের সাথে কয়েকবার তিনি যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন। ইতিহাস বলছে, সেই যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তায় তিনি কিশোরগঞ্জের এগারসিন্দুর ও গাজীপুরের বক্তারপুরে দুটি দুর্গ নির্মাণ করেন।
ধারণা করা হয়, শেষ জীবনে তিনি অসুস্থ হয়ে বক্তারপুরে অবস্থান নেন এবং মৃত্যুবরণ করেন। ইতিহাসে কোথাও তাঁর সমাধিস্থলের উল্লেখ নেই। ২০১৭ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর তথ্য উপাত্ত জড়ো করে এই সমাধির সন্ধান পায় এবং খননের মাধ্যমে সেটি নিশ্চিত করে। এমনটাই আমি জেনেছি পত্রপত্রিকা থেকে। তবে বুঝিনি সমাধিতে কেন মাজার লেখা। এলাকার লোকজনও সেটিকে মাজার বলে। অটোরিকশাচালককে আমি যখন বলছিলাম ঈশা খাঁর কবরে যাব, সে আমাকে শুধরে দিয়ে বলল মাজার।
গাজীপুর থেকে ২০২০ সালে খুব আফসোস নিয়ে ফিরেছিলাম। ঈসা খাঁর সমাধির তখনকার অবস্থা দেখে। ২০২১ সালে পত্রিকা, টিভিতে দেখলাম সমাধি চত্বরটি সংস্কার করা হয়েছে। ছবিতে দেখে দৃষ্টিনন্দন লাগছিল। ২০২২ সালের মার্চ মাসে গিয়েছিলাম গাজীপুর ভ্রমণে ভিন্ন কাজে। নতুন সমাধি আমার দেখা হয়নি। নিশ্চয়ই যাব দেখতে।
সাকাশ্বর স্তম্ভ/অশোক স্তম্ভ/মাধব স্তম্ভ
বহুদিন থেকেই শুনছিলাম গাজীপুর কালিয়াকৈরের সাকাশ্বর গ্রামের এই স্তম্ভের কথা। অনেকে এটিকে অশোক স্তম্ভ বলছেন।
তবে এটি সত্যিই অশোক স্তম্ভ কি না, এই নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। স্থানীয়ভাবে একে মাধব মূর্তি বলা হয়। আর স্তম্ভটি যেখানে রাখা হয়েছে, বর্তমানে সেটিকে স্থানীয়রা বলছে মাধব মন্দির।
এই মাধব মন্দির দেখভালের দায়িত্বে আছেন শ্রী অনিল দাস। বংশপরম্পরায় এই স্তম্ভের দেখভাল করছে অনিল দাসের পরিবার। অনিল দাসের কথা অনুসারে কালিয়াকৈরের মৌচাক ইউনিয়নে মাধব চালা গ্রামে এই স্তম্ভের দেখা মেলে। তারপর স্তম্ভটিকে সাকাশ্বর গ্রামে স্থানান্তর করা হয়।
অনিল দাস আমাকে দেখালেন, এই স্তম্ভের চারদিকে শ্রীকৃষ্ণের প্রতিমূর্তি অংকিত রয়েছে। খুব খেয়াল করলে আবছা একটি অবয়ব দেখা যায়। অংকিত শ্রীকৃষ্ণের প্রতিমূর্তির জন্যই একে মাধবমূর্তি বা মাধবস্তম্ভ বলা হয়। তবে অনিল দাস এই পাথরের বয়স সম্পর্কে কিছু জানেন না।
অনেক ইতিহাসবিদ বলছেন, এই অঞ্চলে সম্রাট অশোক কর্তৃক স্থাপিত ধর্মরাজিকা স্তম্ভ এটি। আবার কেউ কেউ এটিকে বিষ্ণুস্তম্ভ বলছেন। যতীন মোহন রায় এটিকে জয়স্তম্ভ বলছেন। তবে তিনি বলেছেন, এই স্তম্ভের সাথে অশোকস্তম্ভের মিল রয়েছে। কারণ, বৌদ্ধধর্ম প্রচারে সম্রাট অশোক কর্তৃক স্থাপিত ৮৪০০০ ধর্মরাজিকা স্তম্ভের নানা আকার ও গঠন রয়েছে। আর কালিয়াকৈরের এই অঞ্চলে বৌদ্ধধর্ম ও সংস্কৃতির প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায়।
তবে সুখকর বিষয়, এই স্তম্ভের প্রাচীনত্ব নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই! প্রাচীন বাংলার নানা সমৃদ্ধ প্রত্নস্থল প্রতিনিয়ত আমাকে অনুপ্রাণিত করে। মৃত্যু অবধি এই পথচলা চলতে থাকুক, বিধাতার কাছে এইটুকুই চাওয়া।
শ্রীফলতলী জমিদার এস্টেট
শ্রীফলতলী একটি নাম, একটি এলাকা, একটি জনপদ, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিনির্মাণের অন্যতম কেন্দ্রভূমি। গল্প বলছি, গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার শ্রীফলতলী গ্রামের শ্রীফলতলী জমিদার এস্টেট নিয়ে।
জাতীয় ও আঞ্চলিক ইতিহাসে কালিয়াকৈর অবস্থানগত দিক থেকে অত্যন্ত গৌরবময়।
প্রাচীন সমৃদ্ধ জনপদ ডবাক ও ভাওয়ালকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আজকের কালিয়াকৈর। মনে করা হয়, এখানে সভ্যতার ছোঁয়া লাগে মৌর্য সম্রাট অশোক শাসনের বহু আগে। এখানে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে সম্রাট অশোকের শাসন কার্যকর ছিল। তার প্রমাণ সাকাশ্বর স্তম্ভ। মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পা সভ্যতা বিলুপ্তির পর এখানে গড়ে ওঠে লবলং সভ্যতা। যার কেন্দ্রভূমি ছিল সপ্তম ও অষ্টম শতকের পাল রাজা যশোপালের রাজধানী ডবাক বা ঢোলসমুদ্র। সম্প্রতি খনন করে যশোপালের রাজধানীর ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে কালিয়াকৈরে।
এককথায় লবলং সভ্যতা, মৌর্যশাসন ও পালরাজাদের পীঠস্থান ছিল এই কালিয়াকৈর। কালিয়াকৈরে একসময় গড়ে ওঠে তালিবাবাদ পরগনা। এই পরগনার ৯ শতাংশ মালিকানা নিয়ে গড়ে ওঠে শ্রীফলতলী জমিদার এস্টেট। গাজীপুরের পশ্চিম প্রান্তজুড়ে ছিল তালিবাবাদ পরগনা।
ত্রয়োদশ শতাব্দীতে তুর্কি সুলতান সুলায়মান দ্য গ্রেট চারজন গাজীকে ধর্ম প্রচার করার জন্য ভারতবর্ষে প্রেরণ করেন। তাঁরা হলেন তালিব গাজী, সেলিম গাজী, কাশেম গাজী ও ফজল গাজী। তালিব গাজীর বংশধর হলেন শ্রীফলতলীর জমিদার। তালিব গাজীর নামেই নামকরণ হয় তালিবাবাদ পরগনা।
ওপরের ইতিহাসগুলো আমাকে বলছিলেন শ্রীফলতলী এস্টেটের বর্তমান কর্ণধার সৈয়দ আফজাল হোসেন আপেল।
শ্রীফলতলী জমিদার বাড়ি এখন দু’ভাগে বিভক্ত। একটিকে বলা হয় পূর্ব তরফ, অপরটি পশ্চিম তরফ। পশ্চিম তরফ নিয়ন্ত্রণ করছেন সৈয়দ মুফাখখার হোসেন চৌধুরীর বংশধর।
আগ্রহ থেকেই জানতে চেয়েছি শ্রীফলতলী নামকরণ কেন হলো গ্রামটির। শ্রীফল শব্দের অর্থ সুন্দর। এই অঞ্চলে সুন্দর ফল বলতে বেল ফলকে বোঝায়। কারণ, এখানে প্রচুর বেলের গাছ রয়েছে বহু আগ থেকেই। সুতরাং শ্রীফলতলী অর্থ দাঁড়ায় বেলতলী।
জমিদার বাড়ির অনেক স্মৃতি রয়েছে দেখবার মতো। বিশেষ করে জনাব আপেলের সংগ্রহ। এত বড় ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা আমি বাংলাদেশে আর দেখিনি। জনাব আপেলের সাথে প্রায় পুরো দিন আলাপচারিতার একটি খুবই সংক্ষিপ্ত বিবরণ এখানে লিখেছি।
বাংলাদেশের প্রথম ডাকটিকিট
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়েছিল, সেই সরকার, তাদের রাষ্ট্রীয় কাজে চিঠিপত্র লেনদেনে ব্যবহার করছিলেন পাকিস্তানের নামাঙ্কিত ডাকটিকিট। ঢাকা জিপিওর কয়েকজন অফিসার যাঁরা পালিয়ে এসে মুজিবনগর সরকারের সাথে যুক্ত হতে পেরেছিলেন, তাঁদের কাছে থাকা ডাকটিকিটগুলোকেই নতুন করে ছেপে আবার ব্যবহার করা শুরু হয়। মুজিবনগর সরকারের চারদিকে অনেক দায়িত্ব, নতুন করে ডাকটিকিট ডিজাইন করে, তা ছেপে ব্যবহার করার কাজটি ছিল অনেক কঠিন। তাই রাবার স্ট্যাম্প দিয়ে সেই ডাকটিকিটের ওপর বাংলাদেশ লেখাটি ছাপ দিয়েই কাজ চালানো হতো।
এই জমিদার বাড়ির জাদুঘর দেখে আমি অভিভূত। কী নেই এ জাদুঘরে—মোগল সময়ের মুদ্রা, সম্রাট আকবরের সময়ের ব্যবহৃত মুদ্রা, জমিদার বাড়ির নানা জিনিস, আসবাব, বাসন, অনেক ছোট ছোট ঐতিহাসিক সংগ্রহ। পুরো জাদুঘর দেখতে আমার ৪/৫ ঘণ্টা সময় লেগেছে। খুব ইচ্ছে করছিল প্রতিটি জিনিসের ছবি তুলতে, ধরে দেখতে। তা সম্ভব হয়নি সময়ের স্বল্পতায়। এই জাদুঘরের সংগ্রাহক শ্রীফলতলী জমিদার বাড়ির উত্তরাধিকার সৈয়দ আফজাল হোসেন [আপেল]। স্থানীয়রা তাঁকে জনাব আপেল বলেই ডাকেন। তিনি আমাকে পুরো জাদুঘর ঘুরে দেখিয়েছেন।
৩০০ বছরের পুরানো হযরত নবী শাহ্ (র.)-এর দরগা
গাজীপুরের, কালীগঞ্জের নাগরী ইউনিয়নের উলুখোলা বাজারের কাছে, বিরতুল গ্রামে হযরত নবী শাহ্ (র.) দরগা অবস্থিত।
জানা যায়, প্রায় তিন শ বছর পূর্বে তিনি চারটি পাথর নিয়ে এসে আসেন। পাথরগুলো এখনো এখানে সংরক্ষিত রয়েছে, যার একটিতে রয়েছে তাঁর হাতের ছাপ, একটিতে পায়ের ছাপ। আরেকটি পাথরের ওজন প্রায় ৪০/৫০ কেজি, অন্য পাথরটি ছোট। মূলত ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যেই তাঁর আগমন এই অঞ্চলে। স্থানীয়দের মাঝে নানা ধরনের গল্প প্রচলিত রয়েছে এই দরগা নিয়ে।
আমার সাথে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা মো. বকুলের সাথে, তিনি বলেন, ‘অনেক আগে এই মাটি ফুঁড়ে এই পাথরগুলো বের হয়েছে। কেউ আনে নাই। তাই আমরা পাথরকে সম্মান করি।’ আল্লাহর দান এগুলা। এখানে কোনো খাদেম নাই। আমরা সবাই মিলে দেখাশোনা করি। দরগার সামনে লেখা আছে, মহিলাদের প্রবেশ নিষেধ, যেখানে নবী শাহ এর সমাধি রয়েছে। মহিলারা কেন যাবে না, আমি বুঝি না। তিনি কি ইসলাম শুধু পুরুষদের জন্য প্রচার করতেন? মহিলারা তার আশীর্বাদ নিতে পারবে না? তবে চত্বরে প্রবেশ করা যায়।
জমিদার আমলের রাজকাচারি
গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় উলুখোলা ইউনিয়নের বাজারে রয়েছে মাটির তৈরি একটি রাজকাচারি। বাজারের মাঝে মাটির এই জমিদার কাচারি দেখে বিশ্বাসই হবে না, এটি কখনো রাজকাচারি ছিল। তবে এলাকার মুরব্বি আর বাজারের লোক সবাই জানে, এটি ছিল জমিদার কাচারি। শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে খাদ্যগুদামের পাশে রয়েছে জমিদারি আমলের রাজকাচারি, যা আজও ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভূমি অফিস, এর পাশে নতুন করে করা হয়েছে। একটি ঘরই টিকে আছে, যেটি আর ব্যবহার হচ্ছে না। একটি ঘরই এখন রয়েছে। মাটির আস্তর অনেক জায়গায় ক্ষয়ে গেছে। জানি না এভাবে আর কত দিন টিকে থাকবে। এই ঘর দেখে আমার আধুনিক সময়ের দিনাজপুর জেলার দ্বীপশিখা মাটির স্কুলের কথা মনে পড়ল। সেই আগের পদ্ধতি ব্যবহার করে বিদেশিরা আমাদের দেশে মাটি দিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করে পুরস্কার পাচ্ছে আর আমরা আমাদের ঐতিহ্য সংরক্ষণ পর্যন্ত করছি না।
নাগরী গ্রামে বড়দিনের উৎসব
গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা একটি ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থান। সেখানকার সেন্ট নিকোলাস চার্চের কথা আমরা সবাই জানি। স্থানীয়ভাবে সেটিকে নাগরী গির্জাও বলা হয়।
নাগরী গ্রামের বিরাট একটি অংশজুড়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বাস। সেই পুরো গ্রামের জনপদ দীর্ঘদিন থেকে নিজেরাই একে অন্যের সাথে পালন করে আসছে বড়দিনের উৎসব। এই উৎসবে শামিল হয়েছিলাম এক বন্ধু মারফত। দারুণ উপভোগ করেছি নাগরী গ্রামের বড়দিন।
পর্তুগিজ স্থাপত্য নিদর্শনে তৈরি দর্শনীয় সেন্ট নিকোলাস টলেন্টিনো চার্চ ও সাধু আন্তুনির গির্জা নগরীকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে। বিশেষভাবে যারা বাঙালি খ্রিস্টানদের জীবনযাপন, আর্থসামাজিক অবস্থা, ধর্মীয় আচার-আচরণসহ তাদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, তাদের জন্য এটি হতে পারে এক আদর্শ স্থান।
নাগরী গির্জা
আঠারো শতকের প্রথম তৃতীয় দশকে পর্তুগিজ পাদ্রি ম্যানুয়েল দা আসসুম্পসাউ নাগরী সেন্ট নিকোলাস গির্জায় বসে রচনা করেন বাংলা ভাষার এক দ্বিভাষিক অভিধান ও খন্ডিত ব্যাকরণ। ধারণা করা হয়, এটাই ছিল প্রথম প্রকাশিত বাংলা ভাষার অভিধান। বাংলা ভাষার প্রথম গদ্য সাহিত্যও রচিত হয় এই গির্জায় বসে। আধুনিক কালে কালীগঞ্জের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যিকদের মধ্যে আবু জাফর শামসুদ্দীন অন্যতম।
শাহ পালোয়ান গাজীর মাজার
ইতিহাস খ্যাত ভাওয়াল পরগনার পত্তনকারী গাজী বংশের প্রতিষ্ঠাতা এই শাহ পালোয়ান গাজী; যিনি শাহ পালোয়ান খান নামে পরিচিত ছিলেন। তিনিই গাজী বংশের প্রতিষ্ঠাতা বলে ধারণা করা হয়। চৌড়া শাহ কারফরমা আওলিয়া দরগার পূর্ব পাশে কাজী বাড়ির পাশে তাঁর মাজার রয়েছে।
রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ পাইলট স্কুল
ব্রিটিশ আমলে কালীগঞ্জে জয়দেবপুরের জমিদার রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন, যা আজও ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এ স্কুলে প্রাচীন আমলের লাল ইটের একটি দ্বিতলবিশিষ্ট সুরম্য ইমারত রয়েছে।
চৌড়া
চৌড়ার পূর্ব নাম ছিল টেরা, অপভ্রংশ হয়ে হয়েছে চৌড়া। কালীগঞ্জের কাছে শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত চৌড়া গ্রামে ইসলাম ধর্মের প্রচারক শাহ কারপরমা (রা.) প্রথম আস্তানা ফেলেন। পরে ভাওয়ালের গাজী বংশীয় শাসকেরা চৌড়াকে ভাওয়ালের রাজধানী করে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। এখনো মাটির নিচে চাপা পড়া ধ্বংসাবশেষ ছাড়াও একটি বিশাল (গাজীদের নির্মিত) দিঘি রয়েছে, ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত মসজিদ রয়েছে দিঘির পাড়ে। এ ছাড়া অবহেলিত অবস্থায় পতিত দুটি প্রাচীন কবরকে পালোয়ান খাঁ গাজী ও কাইয়ুম খাঁ গাজীর কবর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
বালীগাঁও
উপজেলা সদরের সন্নিকটে বালীগাঁও গ্রামের একটি ধ্বংসস্তূপকে স্থানীয় জনসাধারণ বাহাদুর গাজী কর্তৃক নির্মিত মসজিদের ধবংসাবশেষ বলে মনে করেন। জানা যায়, ধবংসস্তূপের নিকটবর্তী একটি বাড়িতে ধবংসপ্রাপ্ত মসজিদটির একটি শিলালিপি রক্ষিত আছে, যাতে বাহাদুর গাজী কর্তৃক মসজিদ নির্মাণের কথা লিপিবদ্ধ রয়েছে। এ ছাড়া এটি ছিল একটি সমৃদ্ধ শিল্প ও কৃষি উৎপাদন কেন্দ্র। এই অঞ্চলগুলোতে দেখবার মতো কিছু নেই। ইতিহাসে রয়েছে কিন্তু প্রমাণ করার জন্য স্থাপনা নেই। এই স্থানগুলোর কথা রয়েছে কেবল বইয়ের পাতায়। কালীগঞ্জের বক্তাপুর ইউনিয়নে কোষাখালী নামক স্থানের কোষাখালী খালে ফজল গাজী ও বাহাদুর গাজীর রণতরী রাখা হতো। বাহাদুর গাজীর ২০০ কোষা বা হালকা রণতরী ছিল। পোতাশ্রয় হিসেবে ব্যবহৃত এই খাল আজও বর্তমান।
সহায়ক
১ রাজা ভাওয়াল সন্ন্যাস ও ভাওয়াল পরগনা, জয়নাল হোসেন, অ্যাডর্ন পাবলিকেশন, ২০০৯।
২ বাংলাদেশের জেলা-উপজেলার নামকরণ ও ঐতিহ্য, মোহাম্মাদ নুরুজ্জামান, মাওলা ব্রাদর্স, ২০০৭।
৩ বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ, আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া, দিব্য প্রকাশ, ২০১১ ।
৪ বাংলাদেশ জেলা গেজেটিয়ার বৃহত্তর ঢাকা, সম্পাদনা— ড. শেখ মাকসুদ আলী।
৫ Glimpses of Old Dhaka by Syed Muhammed Taifoor, 1952 .