পশুপালক ও অন্যান্য কবিতা

 

পশুপালক

আমরা প্রত্যেকেই পশুপালক
কেউ কেউ মেষ চরাচ্ছি, কেউ কেউ ছাগল
কেউ কেউ মহিষের পিঠে চেপে বসে আছি
কেউ কেউ ষাঁড়ের শিং ধরে দুলে যাচ্ছি
অনবরত দুলছি

বিরাট মাঠের এপ্রান্ত ওপ্রান্ত জুড়ে
আমাদের পশুগুলি চরে বেড়াচ্ছে
আমরা সিংহাসন বানিয়ে নিয়েছি
আমরা রাখালিয়া বন্ধুর গান শিখে নিয়েছি
আমাদের কারও কারও হাতে পৌরাণিক বাঁশি
সুর ছড়িয়ে পড়ছে বহুদূর

কাহিনি আর উপকাহিনির ভেতর
কল্পনা আর বাস্তব ছুটোছুটি করছে
বিশ্বাস আর অবিশ্বাস ঘুমিয়ে পড়ছে ছায়ায়
বৈধ আর অবৈধ নামের ধারণারা
বারবার কেন সংঘাতে যেতে চায়?

যে যার পশুগুলি ফিরে আসুক ঘরে
চলো বিশ্রামে যাই
আজ রাত্রি যদি বা শান্ত না থাকে
ঝড়-বৃষ্টি আর বজ্রবিদ্যুতে যদি বা যুদ্ধ
ঘোষণা হয়!

 

গ্রন্থের নাম প্রত্যয়নামা

এই প্রত্যয়নামা কাউকে দেখাবো না
নিজের কাছে রেখেছি সারাবেলা
এই নরকে যদিও কেউ বন্ধু হবে না
খেলতে হবে নিজের সঙ্গে খেলা।

যে আকাশে ছিল সূর্য-তারা
মরচে পড়া শকুন দলে দলে
যুগের নাবিক ভ্রান্ত দিশাহারা
উড়ুক্কু লাশ এখন ভেসে চলে।

বিজ্ঞাপনে বাজতে থাকে বাঁচা
বিমূঢ় বসন্তে নষ্ট স্বর
যদিও সভ্যতা এখন খাঁচা
মনে-মনে সবাই স্বনির্ভর।

এই দাঁড়ালাম, এই বিষাদে পুড়ে
পুষেছি অদ্ভুত হাহাকার
ঘর বেঁধেও মন রাখিনি ঘরে
অশ্রুবিহীন অশ্রুজন্মে কান্না অনিবার।

যুদ্ধ ছিল, বাজতো অনেক বাঁশি
কলঙ্ক ধুয়ে মানুষ হতে চেয়ে
জ্যোৎস্নাবনে কুড়িয়েছিলাম হাসি
ফিরেছিলাম ওকে রক্ত দিয়ে।

তারপরেও গল্পগুলো অল্প বৃষ্টি পেয়ে
শাখা-প্রশাখায় ফুল ফোটালো
ফুলে ফুলে সময় সঞ্চারিণী গেল মধু খেয়ে
রংবেরঙের কামনাগুলি বক্ষে লুটালো।

শেষ বিকেলে গ্রন্থ হল ধূসর প্রচ্ছদে
গ্রন্থের নাম প্রত্যয়নামা কুরুক্ষেত্র মাঠে
অনেক ঝড়, কাহিনিও লেখা হল সংকেতে
কাহিনিরা মায়াবদ্ধ ভ্রান্তির গাণ্ডীবে….

 

কৃষক

ধান শুকোচ্ছি
ধান শুকোলে 
তবে চাল 
চালে চালে ভাত 

বিবেকের বৃক্ষতলে 
বসেছি কৃষক 
আবেগের পাখি নামছে 
ঝাঁক ঝাঁক 


বিতর্কের রোদ এসে 
শুকিয়ে দিক ধান।

নিঃস্ব সংসারে 
বিষণ্ন গাই 
দুধ দেয় না 
শুধু চিৎকার করে তার অস্পষ্ট বাছুর 

সন্ধ্যা নামলেই ভয় 
অনুগতা বউটিও কচ্ছপ হয়ে যায় 

কে কার আলো? 
কোথাও আলো নেই
বর্ষা এসে দুয়ারে দাঁড়ায় 

 

আয়নার সম্মুখে 

বিশ্বাসের ভাঙা আয়নায় 
উদাসীন মুখ দ্যাখে 
চোখের তারায় জ্বলে রাত
বিপন্ন অসুখগুলি কিলবিল জলে 
পরস্পর আর্তধ্বনি তোলে

পাঠশালা খুলে যায় এখানে 
চেতনার মাঠ জুড়ে অবিরাম ঝড় 
ভাঙা প্রহরের পাখি ওড়ে 
একটা যুগ আর একটা যুগের ঘাড়ে চেপে যায় 

কোথাও কোথাও দার্শনিক জ্বর 
তুলাদণ্ডে ওজন হয় মানবিক মাংস 
আর বিভ্রান্ত স্বজন আলো জ্বেলে দ্যাখে অসুন্দর 

পোড়া সংসারে জাতীয় পতাকা ওড়ে 
বিদ্বেষে মুখ লুকায় দেশ...