হাশেম এন্টারপ্রাইজ ও অন্যান্য কবিতা

 

অপ্রকাশিত আবর্জনা  

মুমূর্ষু স্বজনের পাশে স্যালাইনের স্ট্যান্ড হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি 
চার-পাঁচটি অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপির ব্যথিত মর্মর। 
যার স্ট্যান্ড হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তিনারো আছে দশবারোটি অপ্রকাশিত আবর্জনা।
ইনাদের হাত নেই। বিগ নাম্বার নেই তাদের অপ্রচল মোবাইলে। 
ইনারা হসপিটালের ফ্লোরে পড়ে থেকে নাই হয়ে যান। 

বাঁচিয়ে রেখে যান কবিতা। বাংলা কবিতা।

 

যজ্ঞ

এই যে লাখো লাখো পা
জল জঙ্গল পাহাড় বনভূমি ছেড়ে 
জননীর আধফোটা ভাত ও ঝুল, সন্ততির অস্ফুট 
ভেজা ভেজা এ্যাঁ ওয়্যাঁ ফেলে
চাকাকে অস্বীকার করে 
আদিগতিতে এগিয়ে আসছে 
মধ্যম আয়ের বাংলাদেশের দিকে—
শিল্প কারখানা সভ্যতা গণতন্ত্রবুঝনেদারেরা, 
আপনারা কি এইসব পায়ের ওজন বোঝেন? 
গৃহে গৃহে মৌ মুনিয়া পিয়াসাদের
তৈরি করার আগে বা পরে
এইসব পায়ের দিকে চোখপাত করেছেন? 
মা ও বাবার নামে, পূর্ববংশের নামে নত হয়েছেন এইসব পায়ের তলে?

হন নি। হবেনও না।
জানা কথা, জগতে প্রাণ বধ করেই যজ্ঞ করেন ধনবানেরা!


হাশেম এন্টারপ্রাইজ

আমি মদন রোডের হাশেম এন্টারপ্রাইজ। 
গণেশের ঢালু জমিন জানে
জানে হাঁসকুড়ি জানে জয়পাশা 
জানে বয়রালা ও বান্নিতলা, হাশেমের নাম।


আমার তখন ব্রিজ ছিল না। ইট সুরকি পিচ ছিল না।
আমার চাকার ধুলায় আন্ধা হয় নাই এমন কোনো বটের বাপ ছিল না, পথের দুধারায়...


ছিল শুধু পা, বারমাসি সচল পা...
তাদের কোটি কোটি পদচ্ছাপের উপর দিয়ে 
গভীর রাতে তীব্র হর্ন বাজিয়ে চলে যায় 

সুদূরের নাইট বাস!


ছেব্রা উঠে গেলে

তোর এই কাব্য, মামুন, তুইই পড়িছ। 
পড়তে পড়তে, মুখে ছেব্রা উঠে গেলে 
নিজ হাতে মুছে ফেলিছ।

প্রশ্রয়ে প্রশ্রয়ে যারা তোকে টিকিয়ে রেখেছে, 
তাদের সামনে বা পিছনে এখনো তুই থরোথরো। আমি জানি। 
তাদেরকে ধরে রাখিস।

সমুখে আগালে পথের সংখ্যা বাড়ে, ঠিক। 
কিন্তু পিছনের যত যত কত পথ মুছে গেছে 
তার সংখ্যাও মনে রাখিস, মামুন।