নির্বাণ ও অন্যান্য কবিতা

 

একা

আসার জন্যই আমার এই কাতরতা
যেমন করে শমে পৌঁছনোর জন্য
সরোদিয়া স্পর্শ করে যায় বাদীবিবাদী-স্বর,
আঙুলকে ছোটাছুটি করায়
কোমল আর কড়ির পাওয়া-না-পাওয়ার দূরত্বে

আজ রাতে যমুনা প্রবেশ করেছে আমার ভেতর
টের পাচ্ছি তার তারল্য, আর স্তব্ধ বিস্তার,
ওই দ্যাখো, কলরব করছে জলের সপাট তান;

কীভাবে বুঝি, এইসব হৃদয়ের নালা
সবেগে ধাবিত তোমার নারাজ সম্মতির শস্যক্ষেত্রে
যেখানে সন্ধ্যার প্রতীকতা নতুন ভাঙাগড়ার দায় নিয়ে
হাজির হয়ে যায় তোমারই রাত্রিময়তায়!

ভাবো, মিশ্র পিলুর অসহ কোমলতা
যা তোমার অসম্ভব উদ্বেলতার কাছে এসে আজ
অশ্রুস্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে

একা, এবং কীর্তিহীন!


কাল ও তুমি

সন্ধ্যার নদীকূল ভালো, অবলোপী
দেখা যায় জলের বিষাদ
একটি খঞ্জনা পাখি এইমাত্র উড়ে গেল
মনে তার বিস্ময় অপার
বধিরেরা এইপথে আনমনে বয়ে চলে বেদনার ভার

তোমার বসন্তকুঞ্জ হয়েছে যে ঋদ্ধ, এইবার
ফুলে-ফলে কোরকের ছলে
কিন্তু জেনো হিমবতী ঋতু অনুবর্তী
একটি ছায়ার মতো বিস্তারিত, মৃত্যুর কৌশলে

যে-সব পুষ্পকলি ফোটালে, কী আশায় আশায়
কালের বন্দনাগীত স্তব্ধ হলে
সে-কোন অজানা থেকে ভেসে আসা নিশ্চিহ্নের দান
গ্রহণ করতে হলো নিয়তির বরে
জন্মনক্ষত্রের দিকে ছুটে গেল একটি প্রলয়
প্রবল প্রচণ্ড খেলাচ্ছলে!
 
তবু থাকো প্রীতি নিয়ে, প্রেমনদী বেয়ে দিন যাক
আশ্চর্য দিনের পরমায়ু তোমাকে অস্থির করে করে
ভিড়বে আমার কাছে আজ
    
পেছনেই পড়ে থাক মরণের রক্তচক্ষু, শূন্যগর্ভ মাঠ!


নির্বাণ

এ ভুবন কারণসম্মত নয়, আজ
তাকে দাও নিখিলের ভার
আমার সমস্ত বোধ, অহো উদ্বোধিত
সেই নিক মোরে, আজ আমি হই তার

তবে কি আকাশে হাসে তারা
পৃথিবী বাজায় আত্মসুর
সবকিছু ঠিকঠাক হলে হবে-না কিছুই
যদি না সে গড়ে অন্তঃপুর!

সম্পর্ক তো নয় কারণসম্মত
অনৈতিক সৌন্দর্যই প্রাণ
যদি হয় সুর পরিণত, তবে এই রাতে
হোক দুজনের পরিনির্বাণ!


মৃত্যু

মৃত্যুর পর কেউ আর
হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলমান
বা অন্য কিছু থাকে না,
থাকে না ধর্মীয় বা অধর্মীয়,
কিন্তু হয়ে যায় আধ্যাত্মিক।
কেননা মৃত্যুতে ব্যক্তি
বস্তু থেকে ভাবে রূপান্তরিত হয়
কায়া তখন ছায়া হয়ে যায়,
হয় কালরূপ,
সে তার আগের সব পরিচিতিকে বাতিল করে
অনন্ত হয়, আর অপার্থিব থেকে পার্থিবকে
শাসাতে থাকে


চুমোর নৌকা

রুশ রমণীর ঠোঁটে চুমো এঁকে দিই
নদী তবে হ্রদ ছুঁতে চায়
নেভা থেকে বৈকালের দিকে আজ
আমার চুমোর নৌকা, একা, বয়ে যায়!


দুঃখগাছের নিচে

দুঃখগাছের নিচে বসে  
আমি একা
সুখপাতা বিকিকিনি করি
একে একে সব পাতা কেনাবেচা হলে
একপাতা দুঃখ কিনে ঘরে ফিরি আমি
একদিন ফলবে যে দুঃখগাছের ফল
যে ফলের রস খেয়ে আমি পাব ভিতা নোভা,
নতুন জীবন!

আমি জানি, সুখ অতি সংগোপনে গলে গলে
দুঃখ হয়ে যায়, আর দুঃখরা গভীরভাবে
জীবনের সুখ হয়ে ওঠে, ... জীবনের গভীর ছায়ায়


ফুলগাছ

ফুলগাছ, অপুষ্পক,
কখনো  ফোটেনি  ফুল
শুধুই বিভাব নিয়ে, অপেক্ষায়,
কোনোদিন হয়তো ফুটবে ফুল
কোনো-এক ভুলে
আকুলে আদরে,
তা না-হলে, জীবন যে
হারাবে অতলে!