আপোস

 

‘কিরে, বেডা ধরতে গেছস?

বাসার সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় বাক্যগুলো মিতার কানে আছড়ে পড়ে। দরজায় বাবার অগ্নিমূর্তি। চোখ দিয়ে আগুন ঠিকরে বের হচ্ছে। বাক্যটি কী শুনল মিতা ঠিকভাবে এখনো বুঝে উঠতে পারছে না। কী করবে বুঝতে পারে না মিতা। ধাক্কাটা সামলে নিল। বিবাহিত মেয়ের প্রতি বাবার এ কেমন আচরণ! মাত্র তো সন্ধ্যা। কী এমন দেরি হয়েছে! ঘড়ির দিকে চোখ গেল। সাতটা বাজতে এখনো কয়েক মিনিট বাকি। সে ফিরে পাঁচটায়। আজকে সাতটা। তার মানে দু ঘণ্টা লেট। এতেই বাবা এমন একটি মন্তব্য করে বসল! এ মুহূর্তে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। বাবা রেগে গেলে ভাষাটা পাল্টে যায়। চেহারা পাল্টে যায়। চোখের রং পাল্টে যায়।

কিরে, কথা কস না ক্যা?

অফিসে মিটিং ছিল বাবা। তাই দেরি হয়েছে। আর মিটিং-এ মোবাইল অন রাখা যায় না!

নিশ্চয়ই বাবা মোবাইল অব পেয়েছে। না হয় তিনি এত রেগে ওঠেন না। যদিও তার চেহারাটা বেশ গাম্ভীর্যে ভরা। রাগী রাগী। দরজার ফোকর দিয়ে মিতা কোনোরকমে নিজেকে গলিয়ে রুমে এসে ঢোকে। তানিও আসে পেছন পেছন। নানার এমন অশ্রাব্য গালি শুনে মেয়েটি কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। কেমন ফ্যাল ফ্যাল করে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে আসে মিতার মা। এখন শুরু হবে পুলিশি জেরা। শুধু কি তাই, কত কৈফিয়ত যে দিতে হবে, কে জানে! হয়তো জিজ্ঞেস করবে শাওনকে নিয়ে কোনো কফিশফে গেছিটেছি কি না। আসলে এসব কিছু না। মা হয়তো জিজ্ঞেস করতে চায়, কারও সঙ্গে শুয়ে এসেছিস কি না! সরাসরি এ প্রশ্নটি করলেও ভালো হতো। বাঁচা যেত। কিন্তু বাবা যেন সরাসরি সেদিকেই ইঙ্গিত করলেন। বাক্যটা এখনো মাথায় বনবন করে ঘুরছে। বাবার ধারণা, সে পুরুষ ধরার জন্য এতক্ষণ বাইরে ছিল। বাবা নিজের মেয়েকে বারবনিতা বানিয়ে দিচ্ছেন! প্রশ্নের যে নমুনা, তা তো এই বিষয়টিকেই ইঙ্গিত করে। স্বামী সংসর্গ থেকে দূরে আছে বলে বাবার ধারণা এমন হলো! কী যে করবে মিতা কে জানে! কত আর মেজাজ ধরে রাখা যায়। আস্তে আস্তে তার চারপাশ কেমন বিতৃষ্ণায় ভরে উঠছে।

মা এবার মুখ খুললেন।
‘কী ব্যাপার, এত দেরি হলো কেন?’
‘মিটিং ছিল।’
‘মোবাইলের সুইচ অফ কেন?’
‘চার্জ নেই। বাসায় একটা ফোন করে জানানো যেত না?’
‘সময় পাইনি!’
‘চেহারাটা কেমন কেমন মনে হচ্ছে যে?’
‘কেমন মনে হচ্ছে?’
‘চোর চোর মনে হচ্ছে! কিছু লুকোচ্ছ না তো?’
‘কী লুকাবো?’
‘এই যে দেরি হলো কেন?’
‘অফিসে দেরি তো হতেই পারে!’
‘আজকে এত দেরি কেন?’
‘বললাম তো মিটিং ছিল।’
‘নাকি শাওনের সাথে নতুন কোনো জায়গায় চা-কফি খেতে গিয়েছ?’
‘কোনো দিন কি গিয়েছি?’
‘যাওনি বলেই তো ভয়।’
‘কিসের এত ভয় তোমাদের?’
‘গলা উঁচিয়ে কথা বলো না। তোমার বাবা এমনিতে রেগে আগুন হয়ে আছে। সাড়ে সর্বনাশের চূড়ান্ত করে ছাড়বে।’
‘বাকি কি কিছু রেখেছ?’
‘আদিত্য যে হারে বদনাম রটাচ্ছে, তাতে তো আমাদের মুখে চুনকালি শীঘ্রই পড়বে মনে হচ্ছে। কত করে বললাম, হয় এসপার নয় ওসপার করো। তা কে শোনে, কার কথা! মানুষের জীবন তো আর দুটো নয়, একটাই। মনে রেখো। ইচ্ছে করলেই ভুল সংশোধন করার সময় পাবে না। সময় চলে যাচ্ছে।’
‘এই, এত কথা বলছ কেন ওর সাথে? কিসের এত কথা! চাকরি করে আসছে, নাকি ফুটানি করে আসছে, একটু জিজ্ঞেস করো।’
ভেতরের রুমে কী হচ্ছে—বাপটা কান পেতে আছে। মিতার কথা শুনে এখন গরমি দিচ্ছে। মিতার বুক ফেটে কান্না আসে, চিৎকার আসে কিন্তু দিতে পারে না। তানি ওর মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। চোখ দুটো ভেজা ভেজা। এতটুকু মেয়েও বুঝতে পারে, সবাই মিলে ওর মাকে বকাঝকা দিচ্ছে। নিশ্চয়ই ওর ছোট্ট বুকটাতে হাজারো প্রশ্ন ভিড় করছে। একটু ফুরসত পেলেই মনে হয় প্রশ্ন করতে শুরু করবে।
‘রুমটা সাবলেট দিলেও তো এত দিন অনেক টাকা পাওয়া যেত!’
বেমক্কা এ কথা মায়ের মুখ থেকে বেরিয়ে যাবে তা কল্পনাতীত। মিতা চেয়ে থাকে মায়ের মুখের দিকে। মনে হয় পৃথিবীতে মায়ের মতো বড় শত্রু আর কেউ নেই। কী বলল, মা এটা!
‘বলো, কত ভাড়া দিতে হবে দিয়ে দেব আমি!’
‘বাহ্, কী তেজ মেয়ের, বাসার ভাড়া দিবে! কিরে চাকরি কইরা কত টাকা বেতন পাস? খুব টাকার গরম অইছে না? কত টাকা ভাড়া দিবিরে, কত টাকা ভাড়া দিবি তুই?’
বাবার কথা ভেসে আসে অন্য রুম থেকে। মা ঠাডাপড়া তালগাছের মতো জ্বলতে থাকে তার দিকে তাকিয়ে।
‘আমি কখনোই টাকার গরম দেখাই না।’
‘না বাপু, এমন করলে হবে না। আমার বাসায় এসব চলবে না। চাকরি থেকে কোথাও যাওয়াটাওয়া চলবে না। সোজা বাসায় ফিরতে হবে।’
মিতার চোখ গড়িয়ে নোনাজল নামে। হাতের চেটোয় মুছে নিয়ে বলে, ‘তোমাদের এতই যখন সন্দেহ, তখন শাওন স্যারকে ফোন করেই জানো না।’
‘আমি কালকেই শাওনকে ডাকব।’ এই বলে মা বেরিয়ে গেলেন।
তানি এসে মাকে জড়িয়ে ধরল। কিছুক্ষণ পর মুখটা তুলে প্রশ্ন করল, ‘নানা, নানু তোমাকে এভাবে বকছে কেন মা? তুমি কি দুষ্টুমি করেছ?’

কী বলবে মিতা। তাকিয়ে রইল মেয়ের দিকে। হ্যাঁ বললে নিজের ঘাড়ে দোষ টানা হয় আর না বললে মা-বাবাকে দোষী করা হয়। একটা সংকটের মুখে মিতা ফ্যালফ্যাল করে তানির দিকে তাকিয়ে রইল।

 

দুই

রাস্তা থেকে যেন রোদের কুয়াশা উড়ছে। আকাশ থেকে আগুন বৃষ্টি হচ্ছে। ঝিম ঝিম করছে মাথাটা। অফিসের জানালায় মুখটা রেখে আদিত্যর কথা ভাবছিল মিতা। প্রেমের দিনগুলো কী দুর্দান্ত ছিল। মিতা যখন জাতপাতের কথা তুলত, তখন সে আলগোছে এড়িয়ে যেত সেসব। কীভাবে যে মিতাকে কবজা করেছিল আজ আর তা মনে পড়ে না। জানালা দিয়ে ওদের বাড়ির ছাদ দেখা যেত। প্রতিদিন ওখানে উঠেই মিতার দৃষ্টি আকর্ষণ করত। কী যে দর্শন ছিল কথায়। আর বলিষ্ঠ দেহের মধ্যে ছিল অদ্ভুত আকুতি। মিতাকে কাছে টানার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকত। কখনো কখনো সন্ধ্যায় লুকিয়ে ওদের বাড়ির সিঁড়ির রুমে এসে মোবাইলে মিসকলড দিত। অন্ধকার সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলেই কী যে ঝড় বয়ে যেত, তা আর মিতা ভাবতে পারে না। বুকে পিষে ফেলতে চাইত আদিত্য। ওর বুনো স্বভাবটা ভালো লেগেছিল। তাকে ছোঁয়ার কী যে আকুলতা! এখন এসবের আর কিছুই মেলে না। গাঁজা ভাং আরও কী কী যেন এখন নিত্যসঙ্গী। কে জানে আড়ালেআবডালে আর কী সব গিলছে!

‘কী মিতা, কী ভাবছ?’
ভাবনার সুতো কেটে গেল। ঝড়ের বেগে ঢুকলেন শাওন স্যার। কাঁধের ব্যাগটা নামিয়ে রাখতে রাখতে কথাটা ছুড়ে দিলেন মিতার দিকে। মিতা চোখ তুলে মিষ্টি করে হাসল।
‘কই স্যার, তেমন কিছু ভাবছি না।’
‘না ভাবলে ঠিকাছে। না হয় ভাবতে ভাবতেই শেষ হয়ে যাবে একদিন।’

শাওন স্যার হাসলেন। হেসে হেসে তিনি ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করলেন।

স্যারের মনটা খুব ভালো। অফিসে একমাত্র ভরসার জায়গা শাওন স্যার। অনেক কিছু শেয়ার করা যায়। পরিবারের দুঃখকষ্টের কাহিনি সব কথাই সে শাওন স্যারকে বলে। শাওন স্যার হাসিঠাট্টায় ভরিয়ে রাখতে চায়। কাজের জন্য শাওন স্যারের সঙ্গে বসতে হয়। কিন্তু কখনো সুযোগ নেননি। অথচ পুরোনো পরিচয়ের পথ ধরে তিনি সহজেই সুযোগ নিতে পারতেন। তবে মিতার শরীরের প্রতি শাওন স্যারের যে নজর আছে, সেটা মিতা জানে। এটার জন্য মিতা শাওনকে দোষও দেয় না। আর শাওনও তেমনি ভদ্রলোক, অনুমতি ছাড়া শরীরে হাত দেবে না।

একই ডিপার্টমেন্ট থেকে পাস করেছে। তারপর চাকরিও এক জায়গায়। মিতা শাওনকে বোঝে সেই কলেজ লাইফ থেকেই। অদ্ভুত এক ভালোবাসায় জড়িয়ে গিয়েছিল শাওনের সঙ্গে। সে গল্প কেউ জানে না। সুযোগ দু-একবার এসেছিল। দুজন কাছাকাছিও এসেছে। কিন্তু কী কারণে যেন ওটা হয়নি। মিতার তেমন আপত্তি ছিল না। কিন্তু শাওনের পৌরুষে মনে হয় সায় দিচ্ছিল না। নিজের সঙ্গে শাওন বোঝাপড়া করে উঠতে পারেনি। সে অনেক স্বপ্নের কথা বলেছিল মিতাকে। কী কী করবে মিতাকে পেলে সব। কবিতার মতো কথা বলত তখন শাওন। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে দুজনের কথা হতো। ওদিকে তখন পাড়ায় আদিত্য বেশ লাইন দিচ্ছে। বড়লোক বাবার ছোট ছেলে। মার পছন্দ হয়ে গেল আর মিতাও শাওনের কবিত্বময় প্রেমকে পাত্তা দিল না।

এখন মাঝেমধ্যে খুব ইচ্ছে করে শাওনের সঙ্গে বেড শেয়ার করতে। কিন্তু সাহস হয় না মিতার। যদি শাওনের ভালোবাসার মুগ্ধ দৃষ্টিটুকু হারিয়ে যায়! কিংবা মিতাকে খারাপ ভাবে। তাই আর মিতা ওপথে হাঁটে না। কিন্তু শাওনও দু-একবার ইঙ্গিত দিয়েছে। মিতা শুধু হেসেছে। শাওন মনে হয় সুযোগের অপেক্ষায় আছে। পৃথিবীর সবাই কি সুযোগের অপেক্ষায় থাকে? কেউ কেউ আগেই তো জোর করে নিতে চায়। মাঝেমধ্যে মাথাটা খারাপ হয়ে যায় মিতার। নিজেকে বোঝানো দায়। আদিত্যের প্রতীক্ষায় থেকে সে শেষ হয়ে যাচ্ছে। মেয়েটার কথা ভেবে কোনো কূল করতে পারে না। না হয় কবে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিত। মেয়েটার করুণ মুখ মনে হলে আর কিছুই ভালো লাগে না। মেয়েটা বাবা পাবে কোথায়। ওর নরম কচি মনটা বাবার স্নেহের জন্য কেমন আকুল হয়ে থাকে।

মনে হয়েছিল শাওনের সঙ্গে আর দেখা হবে না। কিন্তু ভাগ্য যে আবার শাওনের সঙ্গে এভাবে এনে ফেলবে, তা জানা ছিল না। শাওন পুরোনো দিনের কথা আর জানতে চায়নি। তবে এখনো সে যে মনে মনে মিতাকে ভালোবাসে, তা সে টের পায়। এ চাকরি তো শাওনের প্রচেষ্টায়ই হয়েছে। যখন শ্বশুরবাড়ি থেকে এসে একেবারে ভেঙে পড়েছিল, তখন একদিন শাওনের সঙ্গে দেখা। সেদিন সঙ্গে মা-ও ছিলেন। শাওনকে সব খুলে বলতেই শাওন বলল, তাহলে এভাবে বসে না থেকে কিছু একটা করো। মিতা শাওনকে অনুরোধ করেছিল। ওর জন্য যেন চেষ্টা করে। মাও খুব করে অনুরোধ করলেন। শাওন আন্তরিকভাবেই বলল, সে চেষ্টা করবে। একদিন শাওন নিজেই খবর দিল, তার অফিসে লোক নেবে। তারপর আবেদন করল শাওনের অফিসে। শাওন নিজেই ছুটোছুটি করল। সে শুধু পরীক্ষাটা দিল। ভাইভার দিন তাকে দেখে শাওন চোখ ফেরাতে পারছিল না। বলল, তোমার হবেই। খুব লাগছে। অতুলনীয়। যেখানে যতটুকু আছে একেবারে পরিপাটি। রমণী আর কাকে বলে!

শাওনের কথাটা বুকের ভেতর এমন একটা তরঙ্গের সূচনা করেছিল যে তার শরীরজুড়ে অদ্ভুত একটা শিহরণ বয়ে যাচ্ছিল। শাওনের চোখ কী চাইছিলতা মিতা টের পেয়েছে। জানান দিয়েছে চোখের ভাষায়। নীরব ভাষায় শুধু যেন বলেছে, আমি এখনো আপনার আছি। হ্যাঁ, মিতা কখনো শাওনকে তুমি বলতে পারেনি। সেই থেকেই আপনি আপনি। আপনি আর কখনো তুমি হয়নি! বোর্ডে যারা ছিল তারা এককথায় মিতাকে পছন্দ করে ফেলল। চটপটে বুদ্ধিমতী এমনই একজন দরকার। যে কথাবার্তায় সবাইকে ইমপ্রেস করতে পারবে। তারপর যোগদানপত্র পেল হাতে। বিশ্বাস হচ্ছিল না। খড়কুটোর মতো ভেসে যেতে যেতে তখন এই চাকরিটাই মিতাকে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে সাহায্য করল। বেতনটা বেশ হ্যান্ডসাম। এর বেশি কিছু বলার নেই। মনে মনে শাওন স্যারকে কত যে ধন্যবাদ জানাল, তার আর হিসাব নেই। তবে একটা পরিকল্পনা এঁটেছিল সে। চাকরির পয়সায় শাওন স্যারকে কিছু একটা কিনে দেবে। কী দেবে তা ভাবতে ভাবতেই সময় গড়িয়ে গেল। এখন পর্যন্ত বের করতে পারল না কিছু। একদিন কফি শপে নিয়ে গেছে। কফি খাইয়েছে। এর বেশি কিছু নয়। মনটা ভরেনি মিতার। একটা শার্ট কিনতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু শাওন কী রং পছন্দ করে, তা সে ভেবে কুলিয়ে উঠতে পারল না বলে আর কেনা হলো না।

প্রতিদিন কাজের ভিড়ে শাওন ছায়ার মতো মিতাকে আগলে রাখছে। মিতাও যতটুকু পারে শাওনকে সাহায্য করে। দুজনের নিজেদের ব্যক্তিগত বিষয় এমনকি বিছানার খবরটুকু পর্যন্ত শেয়ার করে। মিতার অতৃপ্তির কথা অকপটে শাওনের সঙ্গে শেয়ার করেছে। শাওন আফসোস করেছে। এমন জায়গায় নিজে হলে কী করত, সেটাও হাসতে হাসতে বলে ফেলেছে। কিন্তু মিতাকে দখল করার চেষ্টা করেনি। তবে এখনো যে মিতার প্রতি গভীর টান রয়েছে, সেটা মিতা বোঝে। মিতার শরীরটার জন্যই যেন এখনো শাওন হা-পিত্যেশ করে। মিতার কাছে ব্যাপারটি এমনই মনে হয়। আবার মন বলে, শুধু তো শরীর নয়! শাওন তো তাকে ভালোও বাসে। না হয় সব জায়গায় এমন করে আগলে রাখে কেন। টুকটাক রাগ করে না তা নয়! সেটা কাজের জন্যই হয়! এতে মিতা আরও ঝুঁকে পড়ে তার দিকে। তার মেয়েটিকে নিজের মেয়ের মতোই দেখে। কত কিছু কিনে দেয়। মিতার কেমন কেমন জানি লাগে তখন। শাওন স্যারকে নিষেধও করতে পারে না। শাওনের সঙ্গে এত ঋণে জড়ানো কি ঠিক হচ্ছে, মনে মনে অনেক ভেবেছে সে।

তার ইচ্ছে হয় একবার সব দাম চুকিয়ে দিতে। কিন্তু সে সুযোগ কোনো দিন আসেনি। আবার শাওন যখন বলে তখন সাড়া না দিয়ে কেবল হেসে একটু দূরে সরে যায়। এই বিষয়টিও তাকে কেমন জানি নিজের কাছে অচেনা করে তোলে।

 

তিন

জাতপাতের ব্যাপার বলেই আদিত্যের বাবা-মা মিতাকে মানতে পারছিল না। কিন্তু যা হবার তাই হয়েছে। আদিত্য রেজিস্ট্রি করে নিয়েছে। এখন না মেনে উপায় নেই। কিন্তু প্রতিদিনের তির্যক কথার বান মিতাকে এমন রক্তাক্ত করতে লাগল যে মাঝেমধ্যে মনে হলো বিষ পেলে তাই ঢক-ঢক করে খেয়ে বসত। তার মানসিক সংকট হুমকির মুখে পতিত হতে হতে একটু রেহাই মিলেছিল যখন তানি পেটে এল। আদিত্যের মাদকাসক্তি ব্যাপারটা টের পেয়ে কাউকেই বলতে পারছিল না। বিয়েটা একরকমের জোর করেই হয়েছিল আদিত্যের সঙ্গে। মা-ই শুধু সাপোর্ট দিয়েছে। বাবা একরকমের না-ই করে দিয়েছিল। মা ইনিয়েবিনিয়ে বাবাকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। বিয়ের ছমাস না যেতেই আদিত্যের চড়থাপ্পড় এসে মিতাকে আঘাত করেছে। মা-বাবার চোখ থেকে আর কত সে লুকিয়ে রাখবে। বাবা ঠিকই বুঝে গিয়েছিল। তারপর পুরো কাহিনি খুলে বলতেই হয়েছে। কেন মিতার ওপর এমন অত্যাচার।

আদিত্যদের টাকাপয়সার অভাব নেই। কিন্তু শিক্ষার অভাবটা খুব রয়েছে। যেটুকু শিক্ষা পেলে মেয়েমানুষের গায়ে হাত তুলতে হয় না, সেটা এখনো কেউ রপ্ত করেনি। আদিত্যের মা বোঝে, মেয়ে মানুষকে বাগে রাখতে হলে মাঝেমধ্যে দুচার ঘা বসাতে হয়। না হয় মেয়ে মানুষ আর মেয়ে মানুষ থাকে না। সে নাকি পাজির পা ঝাড়া হয়ে ওঠে। এই সংসারের পুরুষগুলোর মনমানসিকতা আর কেমন হবে! কথায় কথায় ওরা তার বাবাকেই দুষত। বাবা নাকি লেখাপড়া শিখিয়ে মুখরা বানিয়েছে। সভ্যতাভব্যতা নাকি এতে দূরে সরে গেছে। যা আছে কেবল সৌন্দর্যটুকুই। ওটুকু না থাকলে নাকি কুকুরও পুছত না। কী যে মুখের ভাষার ছিরিতা মিতা কাউকে বোঝাতে পারবে না। তবে একবার বাবা-মাকে শুনিয়েছিল। ফোনে বাবা-মা দুজনেই সে ভাষা শুনে স্তব্ধ। বাবা বলেছিল এক্ষুনি চলে আয়। এমন চামারের ঘরে মেয়েকে আমি রাখব না। কিন্তু মিতা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। কেন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না মিতা? ডিভোর্স দিয়ে কেউ কেউ তো নতুন জীবন শুরু করছে, তার কী সমস্যা? মা-বাবা দুজনেই তার ওপর খুব রেগে আছে। এখন ঝুট-ঝামেলা হলেই বাবা বলেন, ওর ঝামেলা ওকেই বুঝতে বলো। আমাকে যেন এসব না বলে।

 

চার

প্রথম রাতেই সন্দেহ হয়েছিল মিতার। আদিত্যের ঝড় আচমকা থেমে গেল। বুঝতে পারেনি মিতা। তারপর যখন ওয়াশরুম থেকে ঘুরে এসে মন খারাপ করে পড়ে রইল। তখন মিতা অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু আদিত্য ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ল। মূল ব্যাপারটি আদিত্য কিছুতেই স্বীকার করছিল না। মিতা জোর করে সমস্যা শুনে বলল, ধুত, ভয় পাচ্ছ কেন? এটা কোনো ব্যাপারই না। ভালোবাসা থাকলে আর কী চাই বলো? আমি অপেক্ষা করব। সব ঠিক হয়ে যাবে।

তারপর মিতাই তাকে সবল বানিয়ে ছিল। এতে যতটুকু লাভ হয়েছে, তা হলো মিতা মা হতে পেরেছে। আর তেমন কিছু পেয়েছে কি না মিতাকে মনে করে দেখতে হবে। কিন্তু তারপরেও কেন মিতার কোনো অভিযোগ নেই? না, মিতার আদিত্যকেই চাই। ওর ভালোবাসার জন্যই কাঙালের মতো পথ চেয়ে থাকা। এত মান-অপমানের পরেও মিতা ওকেই চায়। শ্বশুরটাও ওকে বেশ আপন করে নিয়েছিল। কিন্তু মা আর ননদিনী আর নন্দাই মিলে সারাক্ষণ মিতা আর মিতাদের বাড়ির দোষগুলো চিরুনি দিয়ে টেনে বের করে এনে বিচার করতে বসত। ব্যবসা থেকে ফিরে এলে আদিত্যর সঙ্গে লেগে যেত। আদিত্যের মাথা গরম হয়ে উঠত। সবকিছু ভোলার জন্য আদিত্য গাঁজা আর কী কী যেন খেত। মিতা সবলভাবে বাধা দিতে গেলেই রক্তাক্ত হতো। সবাই যেন চাইত আদিত্য আস্তে আস্তে নেশায় ডুবে গেলে ওর অংশের ভাগটুকুও গ্রাস করা যাবে। সম্পত্তি তো আর কম নয়। তারপরও অন্যদের লালচ আদিত্যের অংশের দিকে।

তানি হবার সময় তো মিতা মারাই যেত। আদিত্য নেই, কেউ নেই। মাকে খবর দেবে সেই মানুষটিও নেই। কী যে দুর্যোগ। কিন্তু কীভাবে যেন বাড়ির ঝি-টি টের পেয়েছিল, তারপর শাশুড়ি-ননদ মিলে গাড়ি ডেকে হাসপাতালে ফেলে দিয়ে এল। কাজের ঝি মনে হয় মাকে খবর দিয়েছিল। সেই খবর পেয়ে মা-বাবা দুজনেই ছুটতে ছুটতে হাসপাতালে এসে হাজির। যা করার, তারপর মা-ই করেছিল। বাবা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে। আদিত্য নাকি পরে এসেছে। তারপর ভোরের দিকে তানি জন্ম নিয়েছে। তানিকে বুকে নিয়ে আদিত্যর সেকি কান্না। দেখে মিতার এমন মায়া হলো চোখ আর বাঁধ মানল না। নিজেও কাঁদল। সে স্মৃতিটুকু কোনোদিন ভুলতে পারবে না। ভাবল, আদিত্য বুঝি পাল্টে গেল। হুম, সত্যি আদিত্য পাল্টে গেল। আর এটাও ওর মা-বোন-নন্দাই সহ্য করতে পারল না। ওদের চক্রান্ত আরও বেড়ে গেল। আদিত্যকে ওরা পাগল বানিয়ে তুলতে প্রতিনিয়ত সর্বস্ব নিয়োগ করল। তানির যখন পাঁচ বছর, তখন আবার আদিত্য ফিরে গেল ওর পুরোনো জীবনে। আবারও লুকিয়ে লুকিয়ে নেশা করা। আবারও মিতার কাছ থেকে দূরে সরে থাকা। আর কথায় কথায় গায়ে হাত তোলা। বাবা-মা এর কিছুই জানত না। কিন্তু একই শহরে বসবাস করে খবর চাপা থাকে না। মা-বাবা শুনে তাকে ওই বাড়ি থেকে নিয়ে এল। বাবা ডিভোর্সের সব কাগজপত্র তৈরি করতে লাগলেন। অমন পশুর কাছে তিনি মেয়েকে রাখবেন না। কিন্তু ডিভোর্স দিতে বেঁকে বসল মিতা। তানির কী হবে? ওর না নতুন জীবন হবে, সংসার হবে, কিন্তু তানি? তানি তো একা হয়ে যাবে। বাবা ছাড়া এ সংসারে ওর পরিচয় কী হবে? মেয়ে তো তরতর করে বড় হবে। তারপর একদিন বিয়ে দিতে হবে। বাবার পরিচয় ছাড়া এ সংসারে মেয়েদের বিয়ে হয় কি!

ভেবে ভেবে মিতা সাড়া হয়ে যায়। কিছুক্ষণ আগে স্নান সেরেছে। টেবিলে মা ভাত ঢাকা দিয়ে রেখেছে। ইচ্ছে করলেই দুটো মুখে পুরে দিতে পারে। তারপর কিছুই হয়নি ভান করে শুয়ে পড়তে পারে। তানি ঘুমিয়ে গেছে। মেয়ের নিষ্পাপ মুখখানির দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর জানালার শাটার সরিয়ে দূরে নদীর বুকে জ্বলে থাকা বাতিগুলো দেখতে লাগল। মিতা যেন এভাবে হাজার রাত ধরে নিঃসঙ্গ। রাতের জানালায় দাঁড়িয়ে সে দূরের নদীর দিকে তাকিয়ে আছে।

 

পাঁচ

‘স্যার, আমার চাকরিটা থাকবে তো!’
মিতার আশংকাভরা চোখের দিকে তাকাতে পারল না শাওন। কারণ, মিতার অসহায়ত্ব তার কোনো দিন ভালো লাগেনি। বুকের ভেতর একটি গোপন ভালোবাসা সব সময় লুকিয়ে তাকে যে সুখ আর শক্তি জোগায়, সেটা যেন মিতারই মুখ। তাই মিতাকে শাওন বরাবরই এগিয়ে রাখতে চায়।
‘কী হল স্যার, আপনি কথা বলছেন না কেন?’
‘কী বলব সেটাই ভাবছি। আমি ভেবে ভেবে সারা হয়ে যাচ্ছি বুঝলে! কী করবে, কী করা উচিত তোমার এখন! ভেবে পাচ্ছি না।’
‘স্যার আপনি আমার শেষ ভরসা।’
‘প্রথম কে শুনি?’
চোখ দুটো কৌতূহলে নেচে উঠল শাওনের।
‘সে তো এখন অনেক দূরে স্যার। এখন এই মুহূর্তে আপনিই প্রথম, আপনি শেষ।’
শাওন যেন কোনো শান্তির রাজ্যে হারিয়ে গেল। ইশ, কী যে ভালো লাগছে তার! মেয়েরা ঠেলায় পড়লে এমন কথাই বলে। শাওনের ভেতরে একরকমের অনুভব তৈরি হয়ে উঠল। ভাবল মিতা কিছুটা সেলফিশ টাইপ। নিজেরটাই বোঝে। আবার নিজের মনকে শাওন বোঝাল, না এমন ভাবাটা বুঝি ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু শাওন বুঝল মিতা এখন বিপদে পড়েছে, তাই তার গদগদ ভাব। আর যখন সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে তখন সে আবারও শাওনকে এমন গুরুত্ব দেবে না। তার চেয়ে এমন সমস্যা থাকুক, মিতা যেন তার কাছাকাছি থাকে। এখন ইচ্ছে করলেই যেন মিতার আঙুলটা ধরা যায়। বিকেলে লিফটে নামতে নামতে মিতার কোমরটা জড়িয়ে ধরল শাওন। মিতা যেন কিছুই হয়নি এমন আচরণ করল। শাওন বলল, ‘চলো, বাসায় চলো। তোমার বৌদি মায়ের বাসায় গেছে।’
মিতা হাসল। হাসিটা কান্নার মতো মনে হলো শাওনের।
বলল, ‘যাব কোনো একদিন। মাথার ওপর থেকে বোঝাটা নামুক। আপনাকে আর ঘোরাব না। আর কত? দেনা বাড়তে বাড়তে তো অনেক হয়েছে তাই না স্যার।’
শাওন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল মিতার দিকে। মিতা এসব কী বলল! এ মুহূর্তে মিতাকে বুঝতে পারছে না সে। মনটা খারাপ হয়ে উঠছে শাওনের। মাথায় চিন্তার ঝড় বইছে। একটু আগেই তো মনে হয়েছে মিতার এসবে কোনো আপত্তি নেই। আবার মিতা এসব কেন বলছে?
মনে হয় ব্যাপারটা টের পেল মিতা।
‘কী ভাবছেন স্যার?’
‘কিছু না।’
‘স্যার, আপনি যেভাবেই হোক এমডি স্যারের সাথে আমার সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিন। আমি জানি আপনি চাইলে পারবেন। এভাবে সাসপেনশনে থাকলে আমি মরে যাব। বাসাতেও কিছু বলতে পারছি না। এত চাপ আমি নিতে পারছি না। সবকিছু শুনলে বাবা আমাকে বাসা থেকে বের করে দেবে।’
শাওনকে আর কিছু না বলে একটা ট্যাক্সিতে চলে গেল মিতা। সন্ধ্যার আলো-ছায়ায় দাঁড়িয়ে রইল শাওন। মাথায় রাজ্যের ভাবনা।

 

ছয়

‘আপনার সঙ্গে কে এসেছেন?’
এমডি স্যারের এমন প্রশ্নে মিতা ঘাবড়ে গেল। আমতা আমতা করে বলল,
‘মানে স্যার?’
‘নিশ্চয়ই আপনি বাসায় একা আসেননি?’
‘স্যার, আমি তো বাসা চিনতাম না। তাই...’
‘তাই সঙ্গে শাওন সাহেবকে নিয়ে এসেছেন, তাই না?’
‘জি স্যার। আপনি...’
‘আমি কী করে জানলাম? দেখুন মিতা ম্যাডাম আমার চোখ কিন্তু তিনটা।’
মিতা একটু থতমত খেল। চোখ তিনটা!
‘একটা চোখ সব সময় আপনাদের ওপর ন্যস্ত থাকে। আর সেখানে আমি বুঝে যাই মিসেস মিতা শাওনকে কী চোখে দেখে। তবে এটা কোনো ব্যাপার নয়!’
‘স্যার, শাওন স্যারের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। উনি আমার ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই। সেই থেকে জানাশোনা, ব্যস! আর কিছু নয়!’
কথাটা বলতে গিয়ে কোথায় যেন বাধল মিতার। এত বড় ডাহা মিথ্যা কথাটা সে বলতে পারল? কিন্তু এমন অবস্থায় মুখ দিয়ে ফস করে বেরিয়ে গেছে। এখন কীই-বা করার আছে। কিন্তু তারপরেও কোথায় যেন ওর বাজল।
‘এই অভিজ্ঞ চোখে ভুল দেখে না মিতা।’
মিতা একটু কেঁপে উঠল। বস তাকে শুধু মিতা নামে ডাকছে।
‘তবে শাওন যখন আপনাকে নিয়ে এসেছে ,তখন একটা কিছু তো করতেই হবে আপনার জন্য, তাই না?’
উঠে গিয়ে বস একটা গ্লাসে তরল ঢেলে নিলেন। খুব ভদ্রভাবে দু-এক চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
‘মিতা নেবেন নাকি অল্প?’
‘নো স্যার ইটস ওকে। অভ্যাস নেই।’
‘অভ্যাস নেই বললেই হয় নাকি! জীবনে কত কিছুর অভ্যাস করতে হয়।’
এবার গ্লাসটা ভরে নিয়ে বস মিতার গা ঘেঁষে বসলেন। ভুর ভুর করে সুগন্ধে মিতার শরীরে একটা চনমনে ভাব এনে দিল। শাওন স্যারের কথা মনে পড়ল, ‘মিতা, বস মানে ইয়েস, ওকে?’

তার মানে কী? মিতা কত কিছু ভাবল। তার মাথায় কত ভাবনা এলোমেলো হয়ে জট পাকিয়ে এল। কিন্তু তার ফুরসত ঠিকমতো না পেতেই মিতা দেখল, একটা ঝাঁঝাল জিনিস বস তার ঠোঁটে চেপে ধরেছে। মনে মনে বলল মিতা, ইয়েস বস, ইয়েস বস। মিতা ঢোঁক গিলল। গলায় ঝাঁঝাল ভাবটা লাগল। আরেকবার, আরেকবার। বস নিজের গ্লাস থেকেই মিতাকে খাইয়ে দিলেন।

এবার মিতা না না করল। কিন্তু ততক্ষণে মিতা আবিষ্কার করেছে, সে বসের গায়ের সাথে লেপ্টে আছে। বহুদিন পর শরীরটা কেমন আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠছে। বস তার হাতের শিল্পতা নিখুঁতভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন। মিতা বুঝতেও পারল না কী হতে চলেছে। নিজের সঙ্গে নিজের শরীরটাই বেঈমানি করছে। এক জোড়া পুরুষালি গোঁফে ঢাকা পড়ল মিতার চিকন সরু ঠোঁট। মিতা মনে মনে, ইয়েস বস, ইয়েস বস করতে লাগল। শাওনের চেহারাটা মনে পড়ল। একটা ভিলেন হয়ে মিটিমিটি হাসছে দূরে দাঁড়িয়ে। হ্যান্ডসাম মুখের আড়ালে একটা দালালের চেহারা যেন শাওন। শাওনের খেলাটা বুঝে গিয়েছে মিতা। সেও দেখিয়ে দেবে শাওনকে। তার পর। বসকে সবকিছুই বলা হলো। বস সবকিছুই শুনলেন।

নির্দ্বিধায় মিতা আপোস করে নিয়েছে বসের সঙ্গে। বস খুশিতে গদগদ হয়ে একেবারে নিচে পর্যন্ত নেমে এলেন। বস নিজের গাড়িতে তুলে দিলেন মিতাকে। পথে দাঁড়িয়ে ছিল শাওন। কিন্তু বসের গাড়ি শাওনের সামনে ব্রেক কষল না। গাড়ির ভেতর মিতার অপরিচিত চেহারাটা চোখে পড়ল একবার। মিতা আলোকিত হয়ে ফুটে আছে। জ্বলজ্বল করছে অবয়ব। চোখের কী তীক্ষ্ণ ধার! সে দৃষ্টিই যেন একবার শাওনের ওপর এসে পড়ল। গাড়ি মিতাকে নিয়ে জনবহুল রাস্তায় হারিয়ে গেল।

শাওন সেদিকেই তাকিয়ে রইল কিছু সময়।