হালাল ফুড ও অন্যান্য কবিতা
হালাল ফুড
পোলট্রি ফার্মের গল্প—ফিডের সঙ্গে মিক্সড ভিটামিন সি। জল ও হাইড্রোলিক অ্যাসিড—বিজারিত পুষ্টি আমিশের অভাবপূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ। সমান্তরাল বাঁশ মুরগির খাঁচায় নিক্ষেপিত জিয়াতারের গিঁট। ঘোরপ্যাঁচে ইলেকট্রিক শক—ফেঁপে তুলছে অস্থিমজ্জা।
মাংসের দোকান—কর্তিত মাথা, পাঁজর ও রান। ঝালফ্রাইয়ে গন্ধ মাখছে স্টার কাবাব। জিহ্বার ডগায় কুকুরের লালা—ফুড হ্যাভেন, হুইজ পিপল ট্রিট ইউ! হাউ ফানি! ডিম হাতে পালিয়ে যাচ্ছে—অদেশীয় মুরগি। আর তুমি অসাধুপায়ে খুঁজছ হালাল ফুড।
কোথাও কেউ নাই
কে যেন মরেছে। অক্সিজেন পায়নি। লাশটা পড়ে আছে। হাসপাতালে। মেঝেতে। বেড জোটেনি। কেউ নাই নিকটাত্মীয়। আমরা টিভিতে দেখছি। মাস্কপরা সাংবাদিক বলছেন। চার পুত্র থাকলেও কেউ নিতে আসেনি। বিপাকে কর্তৃপক্ষ। অজ্ঞাত মানুষ। সাদা কাপড়—লম্বালম্বি শুয়ে আছেন। নির্জীব ও করুণ। মাছিরা বিলাপ করছে। নাক চেপে কেউ কেউ মর্গ ডিঙাচ্ছেন।
লাইভ নিউজ। বিজ্ঞাপন বিরতির ফাঁকে ফাঁকে আরো কিছু ছবি—অপরিচিত মুখ। অচেনা আপনজন। মূলত সম্পর্ক বিসর্জন—কেউ নেই। তারাও মানুষ! আমাদের দীর্ঘশ্বাস। শর্ট ফুটেজ—আগত শেষ বিচারের দিন! কেউ কারো নয়। কীই-বা আসে যায় সমাজ ও রাষ্ট্রের!
বাবার জায়নামাজ
সযতনে গুছিয়ে রেখেছি বাবার জায়নামাজ। নিপুণ বুননে লেগে আছে কপালের ঘাম ও অশ্রু। আলতো ছুঁয়ে দেখি বাবার শরীর রোদে পোড়া বৃষ্টি ভেজা ফসলি গা, আদরে ডাকে—গ্যাদা, আয় শুনে যা। বাবার আঙুল চেপে শুক্রবার আসে, হাটবার জুড়ে থাকে খুরমা কিংবা জিলাপির ঘ্রাণ। শৈশব ঘিরে বাবা হন মহাপুরুষ, কাঁধে চাপে আবাদি ধান—মান অভিমান ভুলিয়ে সাত পরীর কেচ্ছা শোনান।
বাবা বৃদ্ধ হলে আমরাও বাবা হই, হামাগুড়ি খায় ভবিষ্যৎ। স্মৃতিগুলো জমা রাখি বদ্ধ কবরে। বেলা-অবেলা ঘাম গন্ধে বাবা বাবা ঘ্রাণ ওঠে, পুরোনো অ্যালবাম খুলে দেখি অম্লান হাসি ফিকে হয়ে আছে। অদূরে দোলে জায়নামাজ, দু রাকাত নফলে কাঁদি— বাবা কখনো বলা হয়নি তোমাকে বড় বেশি ভালোবাসি।