আপেলের বাবা ও অন্যান্য কবিতা
আপেলের বাবা
আমার বাবার অনেক পায়রা আছে। পাখি শ্রেণির হাঁস আর মুরগির কলরবে সারাক্ষণ মুখরিত থাকে পাড়া। তারা সত্যপথ-বিচ্যুত না হয়ে প্রত্যহ ডিম দেয়। আছে—বিচিত্র ভাগের ভূমি। শস্যের আবির্ভাবে দিনরাত বাবার চোখ-মুখ চিকচিক করে। নিত্যদিন আমরা শস্যজাত রুটি, ডিম ও ভাত খাই।
এভাবেই উত্তরোত্তর প্রোটিনের জন্য গরু ও ছাগল, পুকুরকেন্দ্রিক হরেক মৎস্য—বলতে গেলে আনাজপাতিতে ভরপুর এক স্বউৎপাদিত খাদ্যভাণ্ডারের ন্যায্য মালিক উনি। আমার ছোট চাচা ভেংচি কেটে বলে—যুদ্ধ লাগলে তোদের তো সমস্যা নাই রে! আমি বাসি হাসি হেসে বলি—হয়তো নাই!
তবে, ইদানীং বাবাকে মাঝেমাঝেই ব্যথিত দেখায়। হরেক ফুল, ফল, ফসলের আদিখ্যেতায় আনন্দের উজানে গভীর একটা বেদনা লক্ষ করি আমি। প্রশ্ন করলে কিছুই বলেন না। মাদকদ্রব্যের মতো কী জানি গোপন করে। মা’কে জিজ্ঞেস করলে বলে—সারা রাত শুধু আপেল আপেল বলে বিড়বিড় করে।
আপেল আমার ছোট ভাই। মাধ্যমিকে নিউটনের সূত্র বোঝাতে গিয়ে বাবার কড়া এক থাপ্পড়ে চোট পেয়ে ঘটে মাথায় রক্তক্ষরণ। তিন দিন পর হাসপাতালে আপেলের মৃত্যু হয়।
বাবা আমার অভিজাত প্রশাসক। আলস্যের স্রোতে গা না ভাসিয়ে সেই বাইশ বছর আগে হরিপুর হাট থেকে চৌদ্দ কিলো দূর—তালেব মুন্সির নার্সারি থেকে আপেলের চারা এনে লাগিয়েছিলেন। সে এখন বৃক্ষ। বছর বছর গতরে বড় আর মোটাতাজা হয়। কিন্তু চরম বুদ্ধিহীনতায় ফলের অনৈতিকতা প্রদর্শন করে। ধরি ধরি করেও ফল আর ধরে না। বাবার দুঃখ, ক্ষোভ, রাগ-মেশানো চিটমিটে জ্বালা কিছুতেই সামনে না এগিয়ে চোখের জল মুহূর্তে দাড়িতে লেগে দাড়ি দিয়ে শেষ হয়।
বাইনারি ফরেস্ট
সানগ্লাসে চোখ ঢেকে এসেছি নিঃসঙ্গ মানুষ
কার্যত তোমার সঙ্গ পেতে—তা’বলে ভেবো-না অন্ধ আমাকে!
শোনা যায়, সাচ্চা পাপীতে পরিণত হবার পর-ই
নরক দর্শনের যোগ্য হয়ে ওঠে লোকে।
মনে রেখো, যমুনা বইবে চিরকালই যৌবনের গা ঘেঁষে।
অধ্যায় থেকে অধ্যায়ে ঢুকতে যেটুকু সময়, তাকে সঙ্গী করে
ঢুকে পড়ো আপন আবাসে, কথা বলো চাষের চরিত্র নিয়ে।
বলো—কতটা ভয় পাও ফরেস্ট অফিসারকে?
ডোম-চাঁড়ালের দল পাকদণ্ডী বেয়ে যতই নেমে আসে
চিৎকার করো তুমি—অস্থির অববাহিকা জুড়ে সেই ধ্বনি
পালাও, পালাও প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসে প্রতিটি মেষপালকের কানে।
পাশা খেলায় জয় পরাজয় অনিশ্চিত জেনেও
কি কাণ্ড দেখো—সতীরা পালাচ্ছে সংবিধানকে আঁকড়ে ধরে
বিধবারা বাইসাইকেলে বাড়ির পথে।
বনের বারামখানা বায়োলজিতে ভরপুর। এ কথা মিথ্যে নয়,
তোমার প্রতিটি নড়াচড়া, আলিঙ্গনের অস্তিত্ব মেপে রুট লেবেলের প্রাণ
যে যার দিশা থেকে আজও ছায়ার মতো নড়ে-চড়ে।
তাহলে, উপসংহারে জানার ইচ্ছে পোষণ করি—
কত কাল আগে মরে গেছে রাগ!
অথচ আজও সারা গায়ে কী করে ধারণ করো সেই গন্ধ
যেন আস্ত একটি বাঘ!
জাম্পকাট
অনেকগুলো ভুল
তাকে ঘিরেই ঘূর্ণায়মান বিচিত্র সব ফুল।
জেগেও শব্দহীন
কাঞ্চা বাঁশে ঘুণ ধরেছে সুরের কাছে ঋণ।
নদীর মধ্যে যদি
পাল ছিঁড়ে যায়, হাল ভাঙে তো জলেই সমাধি।
ঘুঙুর বাজে পায়ে
অর্থ কেবল ডাইনে চলে মাতাল চলে বায়ে।
মাটির তৈরি বাটি
ধরলে পুরুষ ফাটল ধরে নারীর কাছে খাঁটি।
ক্ষমার কাছে এসে
গোলাপ দিয়ে জমাও আলাপ সামান্য হোক কেশে।
আলোকদীপ্ত পথ
কবির কাছে কাব্য ফোটে পাঠক তোলে মত।
প্রিয় কবির চমৎকার কবিতাগুলি।
চন্দনকৃষ্ণ পাল
অক্টোবর ০৩, ২০২১ ২৩:৪২
প্রথম দুইটা কবিতা খুবই ভালো লেগেছে। আপনার কবিতায় পড়ার নানান ধরনের উপাদন থাকে। জীবনের বিচিত্র পথে আপনার কবিতার প্রবেশ আছে
শফিক সেলিম
অক্টোবর ০৩, ২০২১ ২৩:২৩
ভালো লাগলো তিনটাই। বাইনারি ফরেস্ট সবথেকে সেরা। শুভ কামনা।
রনি বর্মন
অক্টোবর ০৩, ২০২১ ২৩:৪৮
অসাধারণ তিনটি কবিতা। প্রতিদিনই কবির কবিতা থেকে শিক্ষা নিচ্ছি।
এনাম রাজু
অক্টোবর ০৩, ২০২১ ২১:৫৬