বেদনা-পুরাণ

 

আমার গ্রাম জোড়া পুকুর পাতিহাঁস
টালির চালা দখিনা হাওয়া উদাসীন
এখন দেখি পুঁজির চাপে হাঁসফাঁস
জলের দামে রক্ত বেচে প্রতিদিন।
বাঁশবাগানে মাথার ’পর চাঁদ ছিল
বুনোফুলের রাত্রিজাগা আশ্বাসে
পা বাড়ালাম যদিও সেটি ফাঁদ ছিল
ডেভেলপার জুড়লো বসে চারপাশে।

গতর বেচে চাষীর মেয়ে ভীরুপায়
দাওয়ায় বসে নেশায় মজে বাপ-ছেলে
আমার গ্রাম গ্রাম থাকে না নিরুপায়
পরীর টাকা আসলে হাতে কেউ ফেলে?
মানুষ নয় গ্রামের মাটি দরকারী
তাকিয়ে দেখি আকাশ ছুঁয়ে ওঠে বাড়ি।

 

রুপালি রঙ জ্যোৎস্না কি না ঘরে ঘরে
খড়ের চালে ঢেউটিনের দিন আসে
আমার গাছে কোথায় কলি থরে থরে
গ্রামের মেয়ে ফেরাবে দিন উচ্ছ্বাসে!
রক্তে লাল পোশাক কেনে তারা, কারা?
রক্ত শুষে মেদ বাড়ায় দেশী পোকা
আমার মেয়ে পেটের দায়ে ঘরছাড়া
রক্তে ফোটে ডলার ফুল থোকা থোকা।

লজ্জা পাবে সাহেব-সুবো দায় কার
নিবারণের দায় নিয়েছে জেদী মেয়ে
স্বদেশ জোড়া স্বপ্ন বোনে বার বার
সেলাইকলে চাকা ঘোরায় একঘেয়ে
দেশের ঋণ বাবার দেনা শোধ হবে
আমার মেয়ে একাই নামে বিপ্লবে।

 

সিঁথির মতো উঠছে পথ ঘাস ছুঁয়ে
পাহাড়ী কাঁখে মাচান ঘর জড়সড়
খেলছে জুয়া জীবন যেন তাস ছুঁয়ে
চাঁদের মুখে আঁধার নামে বড়সড়।
বেদনা জমে বোবা পাথর কত কাল
নামেনি নদী অই দুচোখে তার মা-র
জ্বলছে ঘৃণা সবার চোখে কী মশাল
গুলি ঝাঁঝরা দেহটি চিনু মারমার।

এদিকে কারা, কারা ওদিকে দেয়ালের
বারুদ ঝড়ে পাহাড় কাঁপে মতলবে
উঠুক সুর বিভেদহীন খেয়ালের
মাচানবাসী বলির পাঁঠা কেন হবে?
উঠে দাঁড়াও মা-ছেলে সব জুমচাষী
সাহসী ঠোঁটে ফুটুক ফুল সেই হাসি।

 

[প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে]

ইতিহাসের তুলিতে আঁকা সেই দিন
তাকিয়েছিল কী বিস্ময়ে এ পৃথিবী
ছিল না ঘুম তারকাদের চোখে চোখে
দুবাহু মেলেছিল নদীরা উল্লাসে।
অদৃশ্য শিকল কেটে আঁধারের
মেয়েরা দেখে অচেনা মুখ সূর্যের
‘না হোক মেয়ে’ লাঞ্ছনার দিন শেষ
মায়েরা হাসে বিপ্লবের গৌরবে।

খোঁপায় ফুল গুঁজে পাহাড় জেগে ওঠে
যৌবনের নদীতে ভরা উচ্ছ্বাস
গুটিয়ে নেয় শ্বেতশত্রু তার থাবা
জিম্মি মন সহসা নাচে আনন্দে।
যুদ্ধ শেষ নয়, সামনে ভয়াবহ
রক্ত নাচে কর্ণফুলী সুর তুলে