রোববার, হাটবার ও অন্যান্য কবিতা

 

রোববার, হাটবার

প্রতি রোববার হাট বসে ছায়া সুনিবিড় তেঁতুল তলায়
বিকালেই শুরু হয় বাজার জমতে না জমতে
সবাই বাজারে আসে 
তাদেরে কেনার নেশায় পায়
তারা সবকিছু কিনে
এমন কি ছাইও কিনে
কিনে তারা গরুর ভুঁড়ি পর্যন্ত
রাত যত গভীর হয়
হাটুরেরা বাড়ি ফিরে
তখন নিশা প্রায়
তাদেরে ছাড়ি পালায়
আশে পাশের জঙ্গলে
আর ভাঙা হাট
কাচের আয়নার মতো চুরমার ছড়ায়ে ছিটায়ে 
পড়ে অন্ধকারে
সাতদিন ধরি 
সেই ছিন্নভিন্ন হাট জড়ো হয়!

আবার রোববার আসে
সশরীরে হাট আসে
লোকজন 
ফের নিশায় পড়ি
কিনতেই কিনতেই থাকে
যতক্ষণ হাট
ছিন্নভিন্ন কাচের মতন
রাত গভীরে
অন্ধকারে ছড়ায়ে ঝিটায়ে না পড়ে!

 

ওর নাম জাহাঙ্গীর ছিল

ছোটকালে আমার একটা ছোট ভাই ছিল।
ওর একটা জাহাঙ্গীর নাম ছিল। ওরে আমি ভাজা ছোলা
মুখে তুলি খাওয়াইতাম। ওর নাল পড়ত।
ও আমার ছোটকালে একদিনে থামে, একবার মারা যায়।
ফলে কেন আমি কোথাও দেখতি
পাই না। উঠানে আমি খুঁজি ওরে না পাই, না।
আমাদের পুকুর পাড়ে খুঁজলেও কি পাইতাম!

কিছুলোক আমার আব্বা ফুপারা ওরে
কোথাও না-কোথা সরায়ে রাখছে আপাতত।
যেন কিছু চিলের ছোঁগুলি আমার ভিতর
একটা আরশির মধ্যে দেখি
ফলে আমি দৌড়াইতে থাকি নদীর কিনারে
যায়ে দেখি নদী তীরহীন অলরেডি
বস্তুর তেমন ক্ষয় নাই ভাইরে আমি
ঢেউয়ের দিকেই তাকাই
দেখি ওরে পাই কি না!
একটা জাহাঙ্গীর ছিল আমার ভাই, আমি বিলাপের মইধ্যে
আমি ওরে তখনও পাই না। সময় আগের মতো রহে না
আমার মনে একটা ছোট ভাই
ছিল সেই ওকে বিকাল পর্যন্ত খুঁজি।
বার বার ডাক পড়তেছিল ওর
আমার ভিতর। আমি কাউরেই কিছু বলি না।
আমার মাকে কোথাও দেখি না আঁচলের অন্তরালে।
তারা সবে কন গেল!
আমি বাড়ি থাকি রাস্তায় যাই
দেখি সবাই চুপচাপ
আমারে কিছুই কহে না
তাদের চুপচাপের মধ্যে 
খুঁজতি থাকি ওরে। তারা ওকে যেন
রাখি আসছে বাড়ি থাকি অন্য কোথাও
তারা যেন ঘুমের মধ্যে অতিরিক্ত হিসাবে
স্বপ্নরে সহ্য করতেছিল না যেন!
ওদের ব্যাখ্যার জন্য আমি অপেক্ষা করতেছি কেন?
এরা ওকে না হয় আমিই ওকে পুরোটাই দেখেটেখে রাখতাম!

আমি গোরস্থানে যাই না। মরা ওরে রাখি আমি
সত্যিকার জাহাঙ্গীরকে
খুঁজতে বার হই। কাঁঠাল তলায়।
আরও কোথাও খুঁজতে থাকি
কেন ওরে আর
ছোলা খাওয়াতে চাইয়ে ওরে আর খুঁজি পাইতেছিলাম না!
আমি ছোলা মোর মুখে দিই ওর মতো হইতে চাই
দেখি আমি জাহাঙ্গীর হই কি না!
চিরন্তনভাবে ওরা আমারে কিছুই কয় না।
ওরা কেন নখ কাটতেছে যেন নখ দেহ নয়!
মওত বিষয়ে 
গোপনীয় দেয়ালগুলা ভাঙায়ে
তারা কিছু আমারে বলে না!
জাহাঙ্গীর ডাক দিই, জানলার কাছে যাই,
আয়না আসে শত শত আমার সামনে যেন
আমি তাদের ভিতরে ঢুকি না!

 

শীতের ছোট কবিতা

পেনসিলের শিষটা শেষ হওয়ার আগেই আমি নোট নিতে চাইছিলাম এইসবের!
সোমবারই আমারে গলাধাক্কা দিই
মঙ্গলবারে ফেলাইছিল
আমি মানকচুগাছ সমূলে কাটছিলাম মঙ্গলবারেই
আমি সময়ের ঘাড়ে দোষ চাপাই নাই
শেষতক আমি সোমবার
আমি সোমবার আমি তার ভিতর জন্ম নিছিলাম!
তবু সে রাখে না তার রহমের ভিতর
চাদরের তলে!
আমি গেছিলাম শীতকালের মধ্যে মধ্যে 
তখন আমি দেশে ফিরি 
এই শীত তখন বিদেশে চলিয়া যায়
ঋতুর রঙ বদলে আমারও হাত আছে!
তবু আগাই আমি!
শীতের মাঠেরে দাবড়াই ধরার লাগি
দেখি নীল রঙ কুয়াশা
তাগের পূর্ব-প্রস্তুতি রয়
অবোধ্য কিছু দিবার
সূর্যের আলো ভিড়ে কম যথা
সংকেত তৈয়ার হয় 
কম কম অন্ধকারে 
যেন ভাষার ভিতর
সেগুলা কিন্তুক
শেষমেশ সংকেত হবার আকুলতা দেখায়
তাতে কি কোনো
পয়দা হবে 
কুয়াশার নাতির নাতনিরা
বহুকাল কত চেষ্টা করি আসছে
প্রায় আহত রোদের ঘিরান শুকার তাগিদে!
আমি কথা শুনতি পাই কুয়ার ধারের কুয়াশা যারা
তাদের ও তাদের পড়শির!
তখনও বলি যে আমি যদি থাকি কভু
এই কোনো রূপে কোনো আকারের তাঁবেদারি রূপে
তবে আছি শুধু শীতে
তার সাথে না থাকলেও থাকা যায়
অনেক কিছুর মতো
রাতের মধ্যে ট্রেন ভাগাভাগি হয়
কুয়াশা আর অন্ধকার ঘোরের মধ্যে 
তুমি কার?
তখনো এই সওয়াল জাগা থাকে
বুঝা যায়
প্রশ্ন করা কঠিন হয় না
কনকনে শীতেও
প্রশ্ন
করা লোকটারে আমি চিনি এই শীতেও সে মরে নাই!
ওম যেন প্রাথমিক লেপ 
তোমার মুখের ভিতর গ্রীষ্মকাল এবং পারদ। 
তোমার ভিতর না ঢুকলে
শীতের শিশিরগুলা
দলে দলে হ্যান্ডস আপ হই
বার হই আসতে চায় না
অনেক কিচিরমিচির
অতীতের কাছে ছিল!
আমি টিভিটা চালাই
বিকালবেলা যাতে ঘরের নিরিবিলি ভাবটা উধাও যায়
সবাই একটা ব্যাংকার জীবন গোপন করে!
সবাই তো কিছু না কিছু জমায়
শীতের নিজের স্মৃতির মতো!
কোনো কিছুর প্রমাণ হাজির করতে ভালোই লাগে না!
ঝরাপাতা মচমচ না করলেও তারে কেমনে ঝরাপাতা বলি
দু-নদীর সঙ্গমস্থলে রঙ বদলায় পানি
এই কথা ছোটদের সামনে বলতে গিয়া আব্বা
জিভ কামড়াই কয়
মোহনায়! 
এই সেই ছোটবেলা
যেইখানে সেক্স শব্দটা বহু পরে ঢোকে
পরে মিলন শব্দটাও শুনছিলাম
শীতকালে 
পরে হয়তো আমাদের বুঝতে হইছিল
স্বয়ংসম্পন্ন কেহই না
ফের গাছ হওনের ডরে বীজের ভিতর আসি নাই
রঙধনুঝাড়ে আটকাই গিয়া আরও রঙে 
সব মন কেন সঙ্গম প্রত্যাশী!

শীতকাল চলি যায়
ঘটনাবলি অনন্তে উলতে গিয়া
উলটি পড়ি কয়
এসবের
উৎস কনে, জহির
তোমার ভিতর
প্রশ্ন ও নাই
উত্তরের অপেক্ষাও নাই!

শীতকাল, আবাল জহিরের মতো
তোমারও গহন কোনো বীজ নাই?

 

আমার আরো কাক 

কিছু কাক মারা গেলে ফিরি আসে
সাদা কাক হই পৃথিবীতে—তারা সারাদিন রোদে মিশি ঘুমায়।
আর শরীরের ভিতর, তাদের
স্বপ্নের ভিতর ভরে কমলালেবুর মতো গোলগাল 
অন্ধকার, জাগে সন্ধ্যা মিহি ঠোঁটে    
ছাড়ে, সেই অন্ধকার, আমি শুধু খেয়ালে রাখি সব সময় 
একই রয় বাড়েও না কমেও না, তাদের সংখ্যা,
আমি রায়ের বাজার এলাকাতে আপাতত 
ত্রিশ বছরের জরিপে খেয়ালে রাখছি,
জিনিশটা, আলামত আর যত, গোপন রাখতে চাইছি—
শুধু তুমার অন্তরে একটু শান্ত নৈশ
ওই সাদা অদৃশ্য কাকদের 
আপন একটা ইচ্ছা মতো তারা বাসা বানতে
গিয়া কোন হেদায়েতে কেমনে কেমনে নীড় বান্ধি ফেলছে!
অথচ কত নিমগাছ পত্রশোভিত ডাল নিরিবিলি ছিল এইদিকে!

কমিন জহির, নীড়ও চিনলা না
বাসাও চিনলা না!