আমার ছিন্নপত্র ও অন্যান্য কবিতা
নৈঃশব্দ্যের তর্ক
ওই ভেতরশ্মশান জেগে উঠতে পারে
চোখের ভেতর বরফের দেশ
হাতের উপর হাত ধমনীবিহীন
সব দরজার কড়া মরচের গান
ঘুমন্ত তসবিহ’র প্রার্থনা
শুকনো চুম্বনের লালা
পদচিহ্নে গত রাতের বৃষ্টি
অজ্ঞাতের ভিড়ে তুমি কুয়াশাসরোবর
বাসায় ফেরা পাখির ডানায় সূর্যাস্তের আলো
চোয়ালে কান্নার রেখা না ধুতে পারা সমুদ্রঢেউ
কবরগুলি প্রশংসিত যতিচিহ্ন
কাবুলে বাবরের সমাধি
ফুল নেই
নারীরা অন্য যমুনায়
কারো পাত্র ভরা মদমল্লার
অদূরে একটি গরিব কুকুর
পাথরের নিচে তৃষিত বিলাস
পাতাহীন ডালে ঝুলছে বরফ
যদির সংঘাত
যদি আজ কড়া নাড়া আসে
কী বলবে তুমি?
আজ রাতে যদি বৃষ্টি হয়
কৃষকেরা মাঠে যাবে কাল।
তোড়াটা এখানে রাখা ঠিক হয়নি
যদি পড়ে যায়।
যদি বাংলাদেশ স্বাধীন না হতো
কী করতো উকুনের দল?
আমি যদি না ঘুমাই
তুমি কি আমাকে মনে করবে অর্থহীন?
এমত অঞ্চলে বাতাস-নিশান একমুখি,
অতিকথনের দেশে
যদি ফিরে না আসে বিবেকের শিক্ষক?
যদির লণ্ঠনে
তুমি দেখ রাত্রির আকাশ।
যদিগুলো পড়ে না ধর্মপুস্তক।
আমার ছিন্নপত্র
গত কাল বাড়ির ছাদে, তখন সকাল,
আমি শেষ মাঘের রোদ উদযাপন করছিলাম।
কানে আসলো শিশু বেড়ালের কান্না।
তুমি জানো, সকালের ছাদে,
সূর্যের আনন্দস্পর্ধায়
যতক্ষণ বসি, কিছু পড়াশোনা করি।
ওই কান্নার শব্দ,
কান্নার আগে কোনো বিশেষণ অতি অসভ্যতা হবে,
আমার পড়ার পল্লিতে বজ্রবিদ্যুত।
ছাদকৃষিতে ফলজ গাছের সাথে
আছে ক্যাকটাস, মাধবীলতা
আর রজনীগন্ধার দিন।
সকালে চড়ুই, শালিক
ডালে ডালে পোকা খোঁজে, খায়।
দিনের কণ্ঠে ডাকে।
বেড়ালের কান্না আর পাখির
ক্ষুধার্ত ডাকের মিশ্র ধ্বনিতে
‘সভ্যতার সংকট’ পাঠ
নতুন সংকটে বিব্রত।
পরশু সন্ধ্যায় যখন ছাদ থেকে নামি
শিশু বেড়ালকে দেখেনি।
বোধ হয় কোনো মাটিভরা ড্রামের নিচে
তেলাপোকা ধরতে গিয়েছিল
আর তখনি আমি ছাদের দরজা বন্ধ করি।
রজনীগন্ধার ড্রামের নিচে সারারাত ছিল বেড়াল-শাবক।
ক্ষুধা আর হিমের তাণ্ডবে কাবু। ভীত চোখ।
আমি নরম কাঁধ ধরে ঘরে আনলাম।
ঠাণ্ডা লোম। আমার ধমনি বেয়ে ওঠে শীত।
যূথী দিল উষ্ণ দুধ। সাথে গলা ভাত।
বেশি খেতে পারেনি। কাঁপছিল।
আমাদের দেখছিল। চোখে ঘৃণা।
‘নিউমোনিয়া হলো নাকি?’
দরজার বাইরে মা বেড়াল ডাকছে।
কাঁদছে। ‘তুই কই। আয়।’
দরজা খুলতেই মা বেড়াল ভয়ে
দশ সিঁড়ি দূরে চলে যায়। ডাকে আর কাঁদে।
আমি তার সন্তানকে সিঁড়িতে রেখে দরজা বন্ধ ক’রে
দরজার আই হোলে চোখ রাখি।
মা’র বুকের উষ্ণতায় হাসছে শিশু বেড়াল।
বিকালে বইছিল শীতের বাতাস।
শাবক ওঠেনি আর মানুষের ছাদে।
কবিতাগুলো সুখপাঠ্য। সংকেতগুলো অনেক দূরবর্তী বিষয়ের সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে একটা কুয়াশা তৈরী করে। আমি কি সে পথ চিনি অথবা চিনি না ধরণের দ্বন্দ্বে ফেলে দেয়। বলবো না, অস্পষ্ট। তবে এক পাঠে তারে চিনতে যে পারিনি তা খুবই স্পষ্ট। অন্য সময়ের জন্য তুলে রাখলাম। লেখকের প্রতি অভিনন্দন। ছোট ছোট বাক্যে তিনি অধিক কথা ধরে রেখেছেন।
আহমদ ময়েজ
এপ্রিল ২০, ২০২১ ০৫:৩৬