আমাদের অন্ধত্ব ও অন্যান্য কবিতা
আমাদের অন্ধত্ব
১
সাইরেন বাজাতে বাজাতে
একটা পাগলা এম্বুলেন্স ছুটছে—
যেন কামানের গোলা ছুড়ছে
অদৃশ্যে কেউ একজন
আতঙ্কে বাগান থেকে ফুলগুলো ঝরে পড়ছে
আমার ভয় লাগছে,... কেন?
তবে কি কাউকে না বলে
চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়বো!
না না
ঘুম মৃত্যুর যমজ ভ্রাতা...
আহা! কতদিন ধরে
আলো আর রৌদ্র থেকে দূরে আছি
দরজা বন্ধ রাখো
জানালার পর্দাটা সরিয়ে দাও
আলো চাই
রৌদ্র আসুক
২
লাশটার ভেতরে ছিল
একটা মরা লোক
আর লোকটার মধ্যে
একটা জ্যান্ত লাশ
মরা লোক আর জ্যান্ত লাশ
কে কার আপন—
তখন অদূরে জ্বলছে চিতা
পুড়তে পুড়তে চিতা ভষ্মে
পাওয়া গেলো এক জোড়া খুলি
যা কিন্তু পোড়েনি
না পোড়ার রহস্য কী
এই নিয়ে তর্কে লিপ্ত হলো
চাকরিহীন চারজন প্রহরী
তর্ক করতে করতে
ওরা বেশ ভয়াবহ ঝগড়া শুরু করে
ঝগড়া করতে করতে
একসময় পরস্পর
পরস্পরকে খুন করে
তারপর
একসঙ্গে কবরে ঘুমিয়ে পড়ে ।
৩
পাখি উড়ে যাচ্ছে
আর গরুটা তাকিয়ে দেখছে;
কিন্তু মানুষ দেখতে পাচ্ছে না...
কেন?
মানুষ কী করে দেখবে—
তার এক চোখ তো
নজরদারিতে আটকে আছে;
অন্য চোখ ছোঁ মেরে
পাখিটা নিয়ে গেছে।
মানুষ এখন অন্ধ
মানুষ এখন আর মানুষ দেখে না ।
ভালোবাসা ছোট নদী
১
তুমি চলে গেলে
ফুল ফুটল—ফুলের মতন
চাঁদ উঠল—চাঁদের মতন
কিন্তু কাকটা—কাকটা কেন
হঠাৎ কোকিল—
কোকিল হয়ে ডাকছে!
২
কোকিল তোমাকে ডাকি
সাড়া দাও—কু হু
ও কাক তোমাকে ডাকি
সাড়া দিলে—কা কা
বিড়াল তোমাকে ডাকি
সাড়া পাই—মেঁও;
কুকুর তোমাকে ডাকি
সাড়া আসে—ঘেউ
মানুষ তোমাকে ডাকি
সাড়া কই—সাড়া নাই
সাড়া নেই, সাড়া নেই, সাড়া...
মানুষের সাড়া নাই;
মানুষের সাড়া কেন নেই?
৩
যে জামা লাগে না গায়ে
তা পরতে গেলে ছিঁড়ে যায়;
যে কবিতা লাগে না মনে
তা পড়লে মনেই থাকে না।
বাঘ শিকারে বনে যাবো
ভালোবাসা বাঘের বাচ্চা
ও মাধবী দরজা খোলো
খট... খট... খট... খট...
মনের বনে বাঘের বাচ্চা
ডাক দিয়েছে
আমার কিন্তু ভয় লাগছে
হাত কাঁপছে পা কাঁপছে
বুকটা কেন এমন কাঁপছে
তুমি আমায় রক্ষা করো
দয়া করে দরজা খোলো
হাতটা ধরো
ওম মারে মা!
বাচ্চাটা কী বাঘ হয়েছে
বাঘের মতো ডাক দিচ্ছে—
হালুম হুলুম হালুম...
এবার বুঝি ধরা খেলুম
ও মাধবী ও ময়ূরী
কোথায় এখন
কোথায় গেলে
বাঘটা জোরে তাড়া করছে
মনের বনে বাঘ নেমেছে
দরজা খোলো
খট... খট... খট... খট...
এবার একটু রক্ষা করো
হাতটা ধরো
হাতটা যদি ধরে রাখো
আমরা দু’জন
ফাগুন মাসের আগুন নিয়ে
বাঘ শিকারে বনে যাবো।
অপরাহ্ণে তুমি
যৌবনে পাওনি যাকে বার্ধক্যে নতুন করে যদি
তাকে ভুলে পেয়ে যাও দয়া করে ফিরিয়ে দিও না;
দুরন্ত প্রেমের টানে হয়তো বা সান্নিধ্যে না-পাও
অদৃশ্য সুখের মধ্যে দূরে থেকে স্বর্গীয় প্রশান্তি
অবশ্যই পাবে তুমি—যৌবনে যে প্রাপ্তি লাভ তাতে
রয়েছে ব্যাপক স্বার্থ লোভ আর বাসনার জ্বালা
ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়া সংসারের জটিল হিসাব
করতে করতে বেলা গেল—খেলা শেষ, আহা!
জীবনের সর্ব রস সুধা পানে নিস্তেজ কামনা।
তারপর কফিনের ঢাকনা খুলে চির নিরুদ্দেশ;
নিয়তি যখন এই তার চেয়ে বরং এসো না
চলতি পথে কোনো এক আবেগী মুহূর্তে যদি ফের
দুজনের দেখা মিলে টুকটাক জন্মে ভালোবাসা
তাহলে দু’জনে মিলে দু’দিন্যা বাসর ঘর কেন
চিরস্থায়ী স্বর্গলোকে তৈরি করি প্রেমের বাগান।
প্রিয় কবি কবিতা পড়ে আনন্দ পেলাম। নতুন আসাদ মান্নান এখানে উঠে এসেছে। আরো নতুন চিন্তার বান ডাকুক। কবিতার শব্দগুলো কথ্য ভূমির হোক আরো।
মাহবুব হাসান
সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১ ২২:১৫