সুগন্ধবিলাস ও অন্যান্য কবিতা

 

কবি ও রাজনীতি

থোকা থোকা জল, হাওয়ার বিরহ
বালিকার টেপা পুতুলের বিয়া
সবই রাজনীতি নিয়া
কবি কবিতা সঙ্গমের রীতি
কড়ায়-গণ্ডায় ধরা রাজনীতি
কেউ দ্যাখে, কেউ ঊষর কানা
ফেলে ফেলে কুড়ায় জীবনখানা
লালমোরগ, টেক্কাতুরুপ, মুদ্রা, ধুলো
ঠিক করতে হবে
তোমার রাজনীতি কোনগুলো
হয়তো মেঘ হলেও বৃষ্টি হলো না
হয়তো পাতা কুড়ানি, পক্ষী কেউ
গাছতলায় এলো না
তবুও ডালে ডালে হাওয়ার নড়া
বন্ধ থাকবে না
রাজনীতির গহিন ফেরারী গয়না
তোমার খাঁচায় পোষা জাল ময়না


শ্রমিক

আমি সেই ফুল-পত্তর শ্রমিক
যার ঘ্রাণ ছড়ায় প্রেমিক
মাড়-ভাত নিরামিষে
সিনার রক্ত মিশে
তৈরি হয় জীবন
সেই জীবনের মাতৃভাষা
শ্রেণি
শ্রেণির মাতৃভাষাসংগ্রাম
সংগ্রামের মাতৃভাষামানুষ
আমি সেই মানুষ, যার মাতৃভাষাক্ষুধা

ক্ষুধাই মানুষের মৃত্যুসঙ্গী
জীবনের রঙ করা টিয়াপাখি


হানা

ঘুরেফিরে সেই তারা
যারা বলেতাদের শরীরে রক্ত
আর আমার শিরায় গাছের
ছাল-বাকল বইছে
চলনে আমি শিষ্টাচার টপকানো জঙলা

ঘুরেফিরে সেই তারা
যারা বলেনদীর পোড়া
মাছ আমার দুইচোখ
আর আমি বৈয়ামে ভরা
মৌন গমের বিস্কুট

নাগালে আসার আগেই শত্রু
হয়ে মুখে মুখে গলে যাই

ঘুরেফিরে সেই তারা
যাদের সত্যানন্দের চাবুক এসে
লাগে আমার বিহ্বল বিলে
যার সংক্রামক, মিথ্যা
উপাসনার চেয়ে আন্তরিক

ঘুরেফিরে সেই তারা
যারা প্রচুর শিক্ষা নিয়ে হয়ে গেছে
দুর্দান্ত বেবি পোষক

আমার বুনো ঘুমে হানা
দেয়াই তাদের ইবাদত

 

সুগন্ধবিলাস

আগর গাছের দুঃখ থেকে সুগন্ধি হয়
তারে গায়ে মেখে তুমি সুখ পুরাও
দুঃখেরও তো পচন থাকে, উৎসে

তাকে টেনে নিয়ে ধরে রাখতে হয়
যেমন ঠনঠনে ডাল ধরে রাখে লালপলাশ
পাঁজরে বনাঞ্চল নিয়ে হাঁটে বানরের ঝাক

তারা কেউই বিলাসী নয়, অভিলাষী
নিজস্ব আলোয় চুপচাপ পিতৃত্ব
কতটা জেনেছো সুপ্ত অন্তর
কয়টা রুপেছো আগর নিজের ভেতর!

পুষ্প শুঁকে পুলক পাও
পুষ্প ফোটার অতসী সংগ্রাম দেখো না
এতে তোমার ফুল ছেঁড়ার অসুখ বাড়ে

 

দুঃখসরোবর

আমার রচিত গালে আমার কবর
দীর্ঘ নিমজ্জনে আমরা দুই বন্ধুবর
নিম গাছের ফলিত ছোট ছোট ফল
মূলত নির্ঘুম স্বল্পায়ু ঋতুর কৌশল

যে শরীর আমি রচনা করে চলছি
ঘর-দোর ছাড়া ডাহুকের ভেতর
লগ্নের পর লগ্ন নারী মৌনতা যম
অমাজলে গিলে খেয়েছি পরস্পর

আমার রচিত গালে আমার কবর
গহিন ভরে খেলছে বালক পাথর
কোথাও হয়নি দেখা রূহের কবুতর
ভ্রমণ শেষে কে শোবে কার ভেতর

আমার রচিত গালে আমার কবর
মৃত্যুর পর পার হবো দুঃখসরোবর

 

বর্ষা দেখা

পাউরুটিতে বর্ষা লেগে গিয়ে
গাঙের দিকে ছুটতে থাকলো

ক্ষুধায় চুষে গাঙই খেয়ে নিলাম
আমাকেও পাউরুটি মনে হচ্ছে

কেউ এসে পাউরুটি খেয়ে নিলো
আমি তাকেও খেয়ে নিলাম

পাউরুটি চেপে বর্ষা দূর করলাম
কেউ গাঙ নিয়ে সরে পড়লো

আমি ঘুমের মধ্যে এসব দেখলাম!