দুশমন ও অন্যান্য কবিতা

 

মহাধীবরের কাল

মহাধীবরেরা এখনো ভীষণ ব্যস্ত গভীর সমুদ্রে
লাল লাক্ষা আর স্বর্ণকোরালের
       প্রমত্ত পাছড়া-পাছড়িতে জলতল দোলে
                    ওদের ইস্পাতনির্মিত অর্ণবপোত তাই
                                     ভেড়েনি কিনারে

ব্রাহ্মণ চণ্ডাল চামার ও শূদ্রে
চলে কোলাহল কোমলে ও রুদ্রে
                              ঘাটে-ঘাটে

একটু অপেক্ষা করো সূর্যটা নামুক পাটে
আমি যাবো সকলের শেষে
               শ্রীচৈতন্যের ধরনে ডুব দেবো হেসে...

 

মানুষের মৃত্যু হলে 

আকাশের নক্ষত্রসকল, মাটির সবুজদূর্বা গ্রীবা
                              আষাঢ়ের স্নিগ্ধ বৃষ্টি
বিলের নরম কোলে জমা হওয়া পরিষ্কার জল
                              বিকশিত পদ্ম
ফুলের ভেতরে সৌরভের রূপ ধরে বসে থাকা মহাকাল
                               দূর সড়কের বিস্তীর্ণ আঁধার

অন্নে আমার অরুচি 
মধুময় গানের লহরে বিষণ্ণ আমার শ্রুতি
         মানুষ যে আনন্দে আসে না আর মানুষের কাছে
                           মানুষের মৃত্যু হলে মানুষ থাকে না আর

                                             আমি কাঁদছি একাকী...

 

তর্জনী

শত্রু রুখে দেয়া
      হায়েনা খেদানো ওই তর্জনী আমাকে ডাকে:
               ভুল পথে যাচ্ছ হে সন্তান, ফেরাও তোমার খেয়া
                       দুর্বিপাকে পিতারা যেমন 
                               সন্তানেরে বুকের চাতালে রাখে

ওই তর্জনী বর্জন করেছিল দুঃশাসন
        পুতুল নাচের মেলা থেকে
                    সরিয়েছিল নির্বোধ বিস্মরণ

বিধুর বাঙালিপ্রাণ
      ওই তর্জনী হেলনে পেলো ঝকঝকে আসমান

তর্জনীটা বিশ্বাসের দূত, বহুদূর দেয় পাল্লা:
             এদেশকে মুক্ত করে ছাড়বো, ইনশাল্লাহ

আগামীর দিকে চোখ রাখি বারবার
                 দেখি সীমান্তে ও অন্তরিক্ষে
                           জলে ও জঙ্গলে
                                   তর্জনীটা শৌর্যের সম্ভার

তন্দ্রালস চংক্রমণে ক্ষান্তি দিয়ে তাই 
                          পুড়াই আতশবাজি
                                আমি সার্বভৌমত্বের কাজি...

 

কল্যাণমিতা

কথা দিয়ে যারা রাখে নাই
তারা মানুষের সাথে নাই

কথা রাখা মানুষ জাতির পিতা
বাংলাদেশের কল্যাণমিতা

তাঁর ওয়াদা উড়ছে আকাশে পতাকা হয়ে
সমতলে-অরণ্যে অবিরাম মান লয়ে

মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের এ বিধান আল্লা’র
কীর্তির এ মহান স্বীকৃতি ঊর্ধ্বেই নিতে হবে মাল্লার

মতভেদ-দলীয়তা ছিল-আছে দুনিয়ায়
এই দেশেও আছে তা, লোকে কেন চমকায়

স্বার্থের প্রয়োজনে ভাই-ভাই করে কাড়াকাড়ি
পিতার চরণে আসে তবু সকলেই তাড়াতাড়ি

প্রয়াত পিতার স্মৃতি জীবিত পিতার চেয়ে
মায়া জাগা বড় সুন্দর অতি—চোখের ধারায় নেয়ে

এক হয়ে করি তবে তাঁরই বন্দনা
ব্যক্তিত্বের আলাদা-আলাদা ছায়া মন্দ না ...

 

দুশমন

ওদের নিজস্ব ঘর নেই 
         ওদের নিজস্ব স্বর নেই
                 ওরা পরিযায়ী তাই ওরা গতরে মাংসল 

ওরা কারো বশে নেই
         ঘরে এসে বসে যায়
                 ওরা বলে, মেহমান
                                 পুণ্যের প্রমাণ

ওরা মুখ মুছে হাত পাতে
         গেরস্তের দান চায়
                ওরা চলে যায় হাসতে-হাসতে 
                     হায়েনা যেমন দাঁত করে লাল উল্লাসে লাফায় ...