অতীন্দ্রিয় আলোর ভেতর ও অন্যান্য কবিতা
অতীন্দ্রিয় আলোর ভেতর
আলোর পুকুরে দেখি পাখিদের মরাল সাঁতার
আকন্দ ফুলের কাছে ধরা পড়া বর্ষা কাঁচুমাচু;
বনভূমে স্পষ্ট ঘ্রাণময় হাওয়া, যেন লম্ফমাণ চিতা,
তেমন ঘোষণা নেই তবু পরী মাটিতে নেমেছে,
হেলেঞ্চা শাকের বনে দ্যুতিময় আলোর ফরাশ
ফর্সামুখ নিয়ে নিয়ে ঘোরে আর জাগায় বাবুই,
মেঘলোক মন্দ্রিত সুই, স্বর্ণের তন্তু দিয়ে বোনে
ঈশ্বরের নিজ গৃহ, আমি তাতে কী করে থাকি?
উপরন্তু উদ্ধারও প্রয়োজন, পথে পথে হাঁটি বাস্তুহীন...
কবর রয়েছে নিচে
কহাত উপরে তার সন্তোষময় চলাফেরা
স্বস্তি নিযে স্ফূর্তিময় জরিপে নেমেছে
বিকেলে পকেট ভর্তি নীলনগ্ন নারীদের ছবি
বায়ুমণ্ডলের পেটের ভেতর গর্জে লাফিয়ে পড়ে
তার যন্ত্রযান
চুল কেটে চলে পনিরের মতো হাওয়া
কহাত উপরে খুব বায়বীয়, তবু তার
উচ্চাকাঙ্ক্ষী ঝাঁপ
মণ্ডলীয় গ্রীবামুখী সুখে
রয়েছে পায়ের কাছে গুটানো মরণে
কবরের তাজা কিছু খাপ।
অবিনীত উত্তরের পাশে
অবিনীত উত্তরের পাশে পাশে হাঁটি
অবিনীত উত্তরের ঘরে গিয়ে শুই,
তোমার মালঞ্চ খুলে পাইনি দোপাটি
সংখ্যার বাগানে এসে শুধু এক দুই।
দুর্লভ প্রশ্নদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরি
দুর্লভ শুশ্রূষার অবিমিশ্র খাটে,
বিজিত পাখার নিচে কৌতুকেই উড়ি
আমার প্রত্যুত্তর পাবে অন্য হাটে।
স্রোতকে ঘোরাতে গিয়ে
যাকে ভালবাসি তার আপ্ত ডাকনামসহ পুরো খেয়ে ফেলি
উপরের তপ্ত ফোলা ঠোঁটখানি, নতমুখ অনন্ত বাখানি।
তৃপ্ত তার পিঠখানি ঈর্ষাময়, আলোরই বর্শা ফিরে আসে
ঘোরলাগা বর্ষা চোখে ভিজে ভিজে রুদ্ধরাত পথের রৈবতে
যখন পেরুতে গেছি শীর্ণ সাঁকো অবসাদে ভেঙে পড়ে।
পথের প্রান্তে দেখি ঘূর্ণি ঘোরাতে গিয়ে উড়ে যায় মাঠ,
প্রতিতুল্য মেঘস্তরে জলের জাজিম, তুল্য পারস্য গালিচা
পুরনো বস্তুর ঘ্রাণে কস্তুরিত যুবতীর কণ্ঠা জুড়ে ঢালা
অদেখা দেশের আলো অতিপ্রাণ পাখিদের কণ্ঠ নিয়ে ডাকে
যাকে ভালবাসি তার ভঙ্গুর কাঠামো জুড়ে স্বর্ণপ্রভ নদী
স্রোতকে ঘোরাতে গিয়ে বিব্রত, পড়িমরি ডুবন্ত নিজেই।
নিঃশ্বাস পাক খেতে খেতে
ট্রেন ছেড়ে গেল অনিঃশেষ স্টেশনে...
নিঃশ্বাস পাক খেতে খেতে মাঠ থেকে ব্রিজে—
অনতিদূরের বন চিত্রার্পিত, সঙ্গে যেতে চায়
বনস্থল থেকে আসে অর্থবহ বৃক্ষের নির্যাস
যেতে চায় তারাও, রোদ গড়িয়ে যায় গৃহস্থ সংসারে।
স্থবির, ট্রেনের হুইসেল তার অন্তরাত্মা বাঁধে
আর উড়িয়ে নিয়ে যায় পলাতক হাওয়ায়।
থেকে গেল অযুত নিযুত কাল প্রোথিত প্রতিবেশে
চেনামুখ দেখে দেখে ক্লান্ত চোখ সঙ্গে যেতে চায়।
সহস্র পাখি মুখে তুলে নিয়ে যায় আস্ত এক মাঠ
শীর্ষ ব্রিজে অতঃপর ট্রেন থেকে অনন্ত পেছনে
মধ্যরাতে জেগে যায়, ক্ষীণ শব্দধ্বনি সূঙ্ক্ষতর কাঁদে।
একবিন্দু পৃথিবীকে ছুঁয়ে
একদা ছুঁয়েছি বলে আজ এত দীর্ঘ দূরে আছো?
একবিন্দু পৃথিবীকে ছুঁয়ে দূরাগত নক্ষত্রের আলো
পাড়ি দেয় অন্য পরিধি, কাল কী কী স্টেশন পাব?
হৈ চৈ বাধাব সারারাত অতীন্দ্রিয় স্টেশনের কোলে
ঘুমবন্দী নিয়ে যেও দেহের কফিন, খুব ঘুম যাব।
একদা ছুঁয়েছি বলে আজ এত দীর্ঘ দূরে আছ?
স্বর্ণখণ্ড আঙ্গুলেরা ছুঁয়েছিল প্রতিমার পিঠ,
প্রতিমারা প্রতিভার কাছে একবার উড়ে এসে
চলে গেছে বাস্তবিক দূরে, ঐশ্বর্য নগরে;
তাদের মাধুর্য নিয়ে তোলপাড় কবিতা বানাব
বিপন্ন রাত্রির পাশে নিয়ে যেও ব্যথিত বাগান।