আফসোসের বাচ্চা হয়া জন্মাইছি ও অন্যান্য কবিতা

 

মিথ্যা কবিতা কেমনে কেমনে সত্য হয়া যায়

তুমি যখন মরতেছিলা তোমার শ্বাসকষ্ট হইতেছিল। আমি আমার ডান হাতে এক প্লেট মৃত্যু নিয়া অপেক্ষা করতেছিলাম। তুমি শ্বাসকষ্ট নিয়া মরতেছিলা। তোমার স্মৃতিগুলা তোমার অতীতগুলা তোমারে ফালাইয়া কেমনে নাই হয়া যাইবো, এই চিন্তায় তোমার স্মৃতিগুলা অতীতগুলা ভালোবাসা আর প্রেমগুলা, আফসোসে গড়াগড়ি খাওয়া সময়গুলা পাগলা হইতেছিলো। আমি তোমার শ্বাসকষ্ট সামলাইতে পারতেছিলাম না। কখন তোমার শ্বাসকষ্ট শেষ হইবো এই চিন্তায় ডান হাতের উপর এক প্লেট মৃত্যু নিয়া অপেক্ষায় ছিলাম। আর বাম হাত দিয়া আমার ঝাপসা হইতে থাকা চোখ ক্লিয়ার করার চেষ্টা করতেছিলাম। তুমি তাকায়া আছো। অথচ আমার হাতে ধইরা রাখা প্লেটের উপর টগবগাইন্যা মৃত্যুগুলারে তুমি দেখতে পাইতেছিলা না। হঠাৎ মনে হইল মরার সময় অন্তত এক চুমুক চুমু তোমার প্রাপ্য। আমি তোমার দিকে আগায়া দাঁড়াইলাম। দেখলাম তোমার ঠোঁটের কোণাকাঞ্চি দিয়া ফেনা উইঠা আসতেছে। গন্ধওয়ালা সেই ফেনার ভিতর থাইকা একটা ফোসফোসাইন্যা মৃত্যু ছোট্ট একটা কৃমির রূপ ধইরা আমার দিকে তাকায়া আছে। আমি হাত থাইকা মৃত্যুর প্লেটটা ফালায় দিয়া দৌড়াইয়া দরজার দিকে গেলাম। দেখলাম, দিগন্ত থাইকা আকাশটা নাইমা আইসা দরজা আগলাইয়া রাখছে। দরজা পার হইতে পারতেছি না। তারপর যখন তুমি মইরা গেলা, আমি তোমার কাছ থাইকা নিজেরে দূরে নিয়া যাইতে চেষ্টা করলাম। আকাশের ভিতর দিয়া, আকাশ কাইটা কাইটা পথ বানাইতে বানাইতে হাঁটতেছিলাম। কতদিন ধইরা হাঁটতেছিলাম, জানি না। কেননা আমার ভিত্রে তখন একটাই ইচ্ছা টগবগাইতেছিল, কেমনে তোমার কাছ থাইকা, তোমার মইরা যাওয়া চোখের কাছ থাইকা, নিজেরে লুকায় ফেলবো।

 

ধৈর্য ধরো, মইরা নাই হয়া যাও...

লিপিচিহ্নগুলো কথা বলতেছে। বাতাসে পাইবার লাগছি সেক্স। মাথালম্বা গাছটার হাত ধইরা হাঁটতেছি। ল্যান্ডস্কেপের ভিত্রে উঁচানিচা জমিনগুলা নাচতেছে, কাঁপতেছে, ফুলগুলা একজন আরেকজনরে লাগাইতেছে। ধর্মবইতে এইগুলারে বেহেশত বলা হইতেছে। ফুলগুলার বগলে বগলে থাইকো, মইরা পইচা যাওনের কাম নাই। ধর্ম বইগুলার ভিত্রে বেহেশতগুলান লাফাইতেছে। বেহেশতগুলার ভিত্রে সেক্স হাসতেছে। বইয়ের ভিত্রে চোক্ষের সামনে বেহেশত কাঁপতেছে। অবাক হইতেছি। মোট কথা অবাক হইতে পারার ক্ষমতাই বেহেশত। বেহেশতগুলা সেক্স দিয়া পালিশ কইরা লুকায়া রাখা হইছে। ধৈর্য ধরো, মইরা নাই হয়া যাও। বেহেশতগুলা তোমার লাইগ্যা অপেক্ষা করতেছে। পৃষ্ঠা উল্টাও। পরের পাতায় কী আছে, পড়ো।

 

আফসোসের বাচ্চা হয়া জন্মাইছি

সোজাসাপটা বলতেছি। একটা মানুষ, কক্ষনোই একটা দেশ হইবার পারে না। একটা মানুষ হইবার পারে না একটা পতাকা। মানুষটা নির্দিষ্ট একখান ধর্ম হইতে পারে না। আমারে আল্লাখোদার দোহাই দিও না, দেশপ্রেমের ভয় দেখাইও না আর কথায় কথায় বইলো না দুইনার বুকে আমিই শ্রেষ্ঠ। সীমানাগুলা মুইছা ফালাও, দুইনার কানাঘুপচিতে ঢুকবার দাও, দুইনাটা দেখবার দাও। আমারে কোন পারমিশন দেওনের কাম নাই। ওইসব নীতিজ্ঞান পাপপুণ্য রাষ্ট্রনীতি আর বালফালাইন্না পড়ালেখার কাম নাই। আমারে ছাইড়া দাও, আমি দুইনাটা দেখবার চাই। আমি একটা আফসোসের বাচ্চা হয়া জন্মাইছি। আমি এক ঝলক নাবুঝ-নাদান, কিচ্ছু দেখতে না দেখতেই, কিচ্ছু বুঝতে না বুঝতেই মইরা যাইবার লাগছি। আমি দুইনার গোয়া থাইকা ছুইটা আসা একঝলক বেদরকারী বাতাস। বাতাসটারে ছাইড়া দাও, ছুইট্টা বেড়াইতে দাও।