শৃঙ্গারতিলক ও অন্যান্য কবিতা

 

শৃঙ্গারতিলক

নারীর শরীর যেন পুণ্যস্নাত স্নিগ্ধ সরোবর
প্রকৃতি, নির্মাণকৃতি প্রতি অঙ্গে চিরবিরাজিত

লাবণ্যের রতিরশ্মি ঢেউ খেলে কাকচক্ষুজলে
বাহু তার উচ্ছলিত, ঢলোঢলো মৃণালের ডাঁটা
পদ্মঠোঁটে হেসে থাকে শিশিরের মৃদু শিহরণ
শানবাঁধা ঘাট। ক্রমান্বয়ে নেমে আসা সিঁড়িদের মতো
নিতম্ব, জঘন, ঊরুদেশ, হাঁটু, গোড়ালির খাঁজ
ভ্রমরের কালো পাখা উড়ুউড়ু চোখের পাতায়
আষাঢ়ের কালো মেঘ হেসে থাকে চুলের আলোয়
স্তনের সাহস তার চক্রাবাকমিথুনের মতো

বাহুর বেষ্টনী নেই। রতিরাত্রি তুষের আগুন

কোকিলের মধুগীতি কানে ঢালে অতিতপ্ত বিষ
অমল জ্যোৎস্না নেই, স্থানে স্থানে করোটির স্তূপ


কপোলে বিস্তৃত ছিল কস্তুরীর শোভন প্রলেপ
তাম্বুলে রঞ্জিত ঠোঁট, স্তনতটে চন্দন-তিলক
সকলই অক্ষত আছে! সখী, সঙ্গমে হওনি রত?
পতি কি বালক মাত্র! অথবা কি কামশৈত্যলোক!


ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল, গন্ধশয্যা, নিবৃত্ত বসন
শৃঙ্গারের ঢেউ এসে ভাসিয়েছে তটতলদেশ
ঘোড়ার উন্মাদ হ্রেষা, নৌকার দোলনি ব্যাপক...

চূড়ান্ত শুরুর আগে হলো তার যবনিকাপাত।

এরপর রতিপ্রশ্নে আর কোনো কথা বাকি থাকে!

ও প্রিয়া! পদ্মফুলের সকল রূপমঞ্জরি দিয়ে
          সাজানো হয়েছে ব্রীড়ানত
            তোমার নয়নশোভা। সামান্য কটাক্ষে
                 পরাভব মানে বীরত্বের
                       শৈলচূড়াগাথা

দাঁত যেন কুন্দফুলবীথি
কমলার কোয়া

      কোমরে নদীর বাঁক, গিরিদারি শ্রোণি
             নতুন পাতার মতো অধরঝিলিক
                  স্তনবৃন্তে মধুমাছি, স্তূপাকার তুলো
                        গ্রীবাদেশে চাঁদ হেসে থাকে

এরপরও অনড়(!) পাথর কেন তোমার হৃদয়?
নির্দোষ সরল প্রশ্ন, কোনোদিন দাওনি জবাব!!


কারো যদি ভাগ্য হয় পদ্মদলে বসে থাকা খঞ্জনা দেখার
                             সোনার সঙ্গে সোহাগা মেলে

হাতি ঘোড়া রথ পদাতিক

চতুরঙ্গ সেনা পরিচালনায় সে আধিপত্য পায়

আমি, তোমার এ পদ্মমুখে
রোজ দুটো খঞ্জনাকে দেখি
                  চক্ষু হয়ে হেসে বসে আছে

অপেক্ষা আর অপেক্ষা শুধু

দেখি না, আমার ভাগ্য কোন শিকা ছিঁড়ে


 

কুমারসম্ভব

অন্দরে ঢোকার আগে দরোজায় দাঁড়ানোটা ভালো
অপেক্ষা। ভিতর থেকে খিল খুলে যার হাসিমুখ
দেখা হবে, তার জন্য শরীরের ঘুম ভেদ করে
জেগে থাকে সুধাশৈত্য কামরাঙা অনলের পাশে

হাতে যদি স্বর্ণপদ্ম, মেঘলায় মাছের সাঁতার


সহজ ইঙ্গিত তা-ই। আঁচলের স্থানচ্যুতি হবে
প্রকাশ্যে শিথিল হবে কাঁচুলির আঁট, বেড়ে যাবে
স্বেদবিন্দু, চুম্বনের স্রোতরেখা ঊরুসন্ধিস্থানে

সঙ্গমে সাফল্য এলে, রতিতৃষ্ণা আরও বেড়ে যায়
শরীরের পৃষ্ঠাগুলো পাঠে পাঠে পুণ্যপ্রেমময়

 

ঋতুসংহার

বিষণ্ণ পাতার মুখে রং ঢেলে হেমন্ত কি এলো!
তা-ই হবে! ঘনরাতে
শিশিরের শব্দ শোনা যায়
শরীর উষ্ণতা খোঁজে। কাজ নেই সূক্ষ্ম আবরণে
বাহুর বন্ধনে ওম, বৃদ্ধি ঘটে দক্ষ আলিঙ্গনে

পরিভুক্ত, রতিক্লান্ত। জলভরা করকোষে দেখো
ওষ্ঠ ও অধরস্থানে ছেয়ে আছে চুমুর চন্দন
স্তনযোগে নখচিহ্ন, চোলবস্ত্রে যদি ঢাকা যায়

সামান্য প্রচেষ্টা থাকে। আগুনের দাহিকাই শ্রেয়

শরীর সংগীতময়। মনাঞ্চলে পুনঃশিহরণ
ভেসে যেতে, ডুবে যেতে
আবশ্যক সাঁতারের জল
শানবাঁধা ঘাট, ক্রমান্বয়ে

মধু-অন্বেষণে-আসা ভ্রমরের মতো কালো চুলি

 

কবিতার উৎস : কালিদাস