তোতাগাছ ও অন্যান্য কবিতা

 

তোতাগাছ

লেজের মধ্যে বয়ে এনেছে ফলের ভার 
ছায়ার নিচে সবুজের বাড়াবাড়ি
ঠোঁটটাকে লাল করে আতাফলের 
জন্ম নিয়ে ভাবতে ভাবতে 
ডালসুদ্ধ মেঘের মধ্যে ঢুকে পড়লে 
আমরা সে বৃক্ষের নাম দিই তোতাগাছ 

খাঁচার বাইরে বৃক্ষটা ডানা ঝাপটে নিয়ে
তোতাকণ্ঠে সত্যি সত্যি কথা বলে! 

 

জিভ

জল হাওয়া বা রোদ্দুর কোনোটার‌ই পরিবর্তন হয়নি 
শুধু রূপান্তরের ছকে মাটি আজ ক্লান্ত
 রূপান্তরিত হচ্ছে কথা 
গায়ের চামড়া বদলে নিচ্ছে পোশাকে

সুভদ্র সামাজিক মানুষের গলিতে 
তাপহীন নিস্তরঙ্গ জীবনের দায় থেকে বেরিয়ে 
খনার বচনে শিল্পের ঢোল বাজিয়ে 
শ্রেণিকক্ষ থেকে দূরে দিগন্তের দিকে তাকালে 
কারা যেন এসে জিভ কেটে নিয়ে যায় অধ্যাপকের

ঠোঁট সেলাই মুখে 
রন্ধনশালার দহন নিয়ে সে জেগে আছে 
কেউ বুঝতে পারছে না বুকের ভেতর অক্ষরগুলো 
ধ্বনি কিংবা কণ্ঠ ছাড়াই 
ভার্চুয়াল দুনিয়ার পর্দায় ভেসে উঠছে
 
জন্মদিনের সন্ধ্যায় যখন সবাই তাকে
পরের দিনের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে 
তখন সে বুঝে যায় 
মানুষকে প্রতিহত করা গেলেও তার চিন্তাকে 
আটকে রাখা যায় না জিভ কেটে 

 

একা ও একাকী 

তার মাথা কাঁচাপাকা চুলে ইশারা আর সংকেতে
 ভরে ওঠার অনেক আগে
সে একা ও একাকী চিনে গেছে শঙ্খের ভেতর 
                          সমুদ্রের ধ্বনিকে 

প্রদীপ কী বিজলি বাতির যতটুকু আলো 
জ্ঞানী হয়ে ওঠে শিশুদের কোলাহলে 

যতটুকু গার্হস্থ্য গণিত কষে 
সংসারের উপযোগ রেখা টেনে তোলা যায়
                       অর্থনীতির পাতায় 

তার সবটুকু আয়োজন পূর্ণ করে 
অফুরন্ত বাদামি বিকেল 
চোখের লেন্সে লুকিয়ে নিয়ে 
সে একা ও একাকী শুধু নিঃসঙ্গ পাতা হয়ে উঠেছে 


লোকটা

জীবনের অনুবাদে নেই ক্লান্তি 
চোখের মধ্যে শান্ত দুপুর ছায়া হয়ে আছে
পোশাকি জীবন রং করতে গিয়ে 
হাতের টাকা অর্থকরী ফসলের মতো 
সার্কাসের ক্লাউন হয়ে উঠেছে 

এর মধ্যেই মৃত্যুচিন্তা দেয় হানা 
নাগরিক চিলের বিপন্ন বিস্ময়ে ভরা জীবনের কাছে 

তবুও লোকটা 
তাপহীন শীতল হাসির মতো সুভদ্র সামাজিক!

মানুষের চেতনার গ্রামে অন্ধকার আছে জেনেও
লোকটা ঘোর সন্ধ্যায় 
প্রতিদিন বিজলির কাছে যায়; 
বিজলিকে না পেলে মাঝে মাঝে 
আলোদের ঘরে গিয়ে ওঠে!