নদী ফিরে যায় ও অন্যান্য কবিতা
মায়া-মীন
তুমি এক মায়া-পাখি শঙ্খ-নিদ্রা ছলে
হরিণ দেখার যতো গাঢ় কৌতূহলে
সমুদ্রের ঢেউ গুনি। মাছরাঙা জলে
উড়ে গিয়ে ঘুরে দেখে ঘুঙুরের আয়ু।
ফেলে আসা লালপদ্মে ভাসে কার ছায়া
কোথায় সে মায়া-মীন নিপুণ শিকারী
মায়া-বৃক্ষ মায়া-নদী যে-ই নামে ধরি
একই রূপে চিনি তুমি দুর্বোধ্য নগরী!
নদী ফিরে যায়
তথাপি ভাদ্রের দিন তুমি শোনো সুর
ঘুঘু দুপুরের। ফাঁদ থেকে কি কৌশলে
পাখি ছুটে যায় দূরে ততোদূরে নয়
যতোদূর ফাঁকি দেবে নিপুণ শিকার
ছায়া পড়ে অবিকল সোমেশ্বরী জলে
জল তবু ছল জানে ততোধিক মায়া...
একবার ফিরে দেখো জলের শরীর
তোমাকে কম্পিত রেখে নদী ফিরে যায়
ছায়া-বৃক্ষ
লাল শাপলার বিলে উড়ে যাওয়া ফড়িঙের মোহ
তুমি ধরে রাখো শুধু আমি তবু ভুলে যাই ছায়া
বহুদিন পার হলো নিরিবিলি জলের মায়ায়
ঢিল ছোড়া হয়ে গেছে এইবার ঢেউ গোনো তবে
যে কোনো দূরত্ব থেকে পথ এক সর্পিল উপমা
তুমি যেতে পারো কিংবা থেকে যাও মনে লয় যদি
প্রতীক্ষায় থাকো যদি মুখ দেখো হাওয়ার আর্শীতে
ফুলহীন ছায়া-বৃক্ষ পাতা তার ঝরে গেছে শীতে
মায়া-সন্তরণ
বিমর্ষ ম্যামথের ছায়া পড়ে জলে। শীতকুয়াশার আগে যে ফুল ঝরে যায় তার কাছে সাপ ও ভ্রমরের কোনো প্রভেদ থাকে না। কার্তিকের মেঘে ভিজে যাওয়া হাওয়ার উল্কি নিয়ে হলুদ ফিঙের চোখ ভাবে—আরো কিছু বৃষ্টি হবে বুঝি
পাতা পড়বার শব্দে সরে যায় ব্যাঙ—সে তো জানে না এ কেবলি জল থেকে জলে বিচরণ—এ তো কেবলি—মায়া-সন্তরণ
নীল ভাঁটফুল
যশোর শহর খুব ছোট
শৈশবের গ্রাম
কখনো সমুদ্র তৃষ্ণা হলে অনায়াসে
ব্রহ্মপুত্র পাড়ে চলে যেতে পারি
দূরে ভাসমান মেঘ থেমে থেমে
বরই গাছের মতো নীল হয়ে গেলে
মনে হয়
আজ দিনটা সম্ভবত রোববার হবে
না হলেও ক্ষতি নেই
কোথাও যেতে হলে রেবেকার কথা মনে পড়ে
তার চোখেও এখন হলুদ সন্ধ্যা
তার চোখেও এখন ব্রহ্মপুত্রের গোপন ঢেউ
বিকেলের ম্লান মেঘ থেকে
যতটুকু জল সরে যায়
জানি গোপনে তা জমা হয় রেবেকার চোখে
পৃথিবীর সব ভাঁটফুল
রেবেকার রঙে নীল হয়ে আছে
খুব ভালো লাগলো চমৎকার রঙের লিখা
Monzurul Alam
নভেম্বর ১৪, ২০২২ ০৯:৫৬