রুশোর বিড়াল ও অন্যান্য কবিতা

 

বিস্মরণ

তুমি এখন অতীত, হয়তো তাই চেয়েছিলে,
আমিও ভেবেছিলাম রাখাল হবো।
অথচ দেখো—
ঘাসের ব্লেডেই কেটেছে পা।

এত রক্ত! একটা ট্রাক চলে গেছে।
চিত্রার কাছ থেকে কিছু পাওয়া যায়নি।
তবুও হলুদ দ্বীপে গোলাপি সূর্যরা
একের পর এক সময়মতো ডুবেছে।

আমি ডুবতেই চেয়েছি
কমলা সকাল যেমন ডোবে তোমার হাতে,
কালো ব্যালকনির ঠিক পেছনে।
আর উপর থেকে সবুজ ড্রাগনরা যেমন চমকে ওঠে—
ফয়েলের ঢেউয়ে নিজের ছায়া দেখে।

ছায়াটি তার গাল বেয়ে নৌকার মতো চলমান।
অনেক দূর যেতে হবে, আমি পাল তুলে দিয়েছি।
বাঁশিটি চিত্রাকে দিলাম।
সে ঠিকানা ভুলে গেছে।

আমরা অতীতে ফিরব।

 

রুশোর বিড়াল

রুশো, তোমার বিড়ালটা আমাকে দাও, খেলব।
হয়তো তোমার মনে নেই—সেটা আকাশ ছিল।
আমিও হলুদ চোখ নিয়ে কিছু স্বপ্ন দেখতে চাই,
সেই সোফাটাও দিয়ো।

রুশো, তুমি কি জানো তুমি কী ভীষণ বোকা?
যদিও আমাকেই বোকা ভেবেছ।
আমার কাপড় খুলে নিয়েছ,
আমাকে ঘুম পাড়িয়ে আমারই স্বপ্ন চুরি করেছ!

রুশো, আমি সমুদ্রের নিচে নই, ওগুলো পানি নয়,
ওগুলো খোলসভাঙা ঝিনুক,
আর ঐ যে মুক্তোগুলো—সেগুলোও স্বপ্ন নয়।
এইখানে ছুঁয়ে দেখো রক্ত, যেখানে আমি।

 

মেরুপ্রভা

পুতুলটি সমুদ্র ঘুরে এসেছে।
হাঁটতে হাঁটতে সমুদ্রের ধারেই আমি তাকে কুড়িয়ে পেয়েছি।

পুতুলটির পেটভর্তি কাদা, ভেজা বালি।
হাতে নিতেই মুখ গড়িয়ে বেরিয়ে এলো
একটি কেঁচো।

বালিগুলোই ডুবিয়েছে তাকে!
আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছি খালি করতে—
যেন সে আবারও হালকা হয়ে ভাসতে পারে।

নোনা জলে নিজেকে ভাসিয়ে 
কত সহজেই জমাট করি এইসব অর্থহীন বালি।
স্যাঁতস্যাঁতে, ভারী।

তবুও সমুদ্র, পাশে বালি, তার পাশে ঝিনুক।
কিছু অদ্রবণীয় সত্য আর হিংস্র সংঘর্ষ থেকে যায় চিরকাল
অস্থির অতীতের সাথে।

আর রয়ে যায় একটি নির্জন কক্ষ;
কিছু হিমায়িত দুর্দশা।

 

মন্দাক্রান্ত ইরাবতী

তোমার গোপন সত্যগুলোকে তুমি আমার মধ্যে কবর দিতে পারো, আমি অনুমতি দিলাম। পাপকে আমার ভেতরে রেখে সরলতা নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারো...এমনকি তোমার সব অপরাধ।

শ্বাসরুদ্ধ খাঁচার মতো মনে হয় এখন আমার—আমাকে ঘিরে থাকা বাতাসকে, আর ভালোবাসাকে ক্রোধের ছদ্মবেশ। তাই যদি ভালোবাসো, যেতে দাও। নয়তো পালিয়ে যাও, জানার আগেই। নয়তো গ্রহণ করে পাপকে করে দাও নক্ষত্র।

অন্ধকার আমাকে অন্ধ করেছে। আমার হৃদয় এখন অন্ধকার। বহন করার ক্ষমতা হারিয়েছি। শূন্যতাকে কি ধ্বংস করা যায়? যা নেই—তা কি কখনো ফুরায়? যার শুরু নেই, তার শেষ কোথায়?

আমাকে আমার ভাগ্যের কাছে তুলে দাও। একা থাকতে দাও, যেন ঘৃণা আমাকে স্পর্শ করতে না পারে। তোমাকে পাওয়ার যোগ্য আমি নই।

আমার যে হাসি আমি হারিয়েছি, যদি কখনো পরিবর্তিত হই, তবুও সেই হাসি ফিরে পেতে চাই কি না আমি জানি না।