মুসলমানের ছেলে

 

ধর্ম ও অধর্মের থেকে দূরে
যেখানে একটা গাছ 

পাখিদের স্যানাটোরিয়ামে ফুল ফুটছে 
শূন্য মাঠে একজন বৃদ্ধ 

নিজের স্থবিরতার দিকে তাকিয়ে ভাবছে—
ধর্ম ও অধর্মের থেকে দূরে একটা শিমুল গাছ

কী গভীর ফুটে আছে লাল হয়ে

 


তোমার চলে যাওয়া
সুরা বাকারার মতো
দীর্ঘ



কোথাও, একটা পাখি মরে গেল
আমি টুকে টুকে লিখে রাখি সেসব—

রোজ রাতে 
কারা যেন ট্রেন থেকে নামে 
কড়ুয়ের পাতা দিয়ে 
জীবনের চারপাশে আগুন জ্বালায় 

মানুষ এমন—
একদিন অরণ্যের পাশ দিয়ে যেতে যেতে 
নিজেকেই ভাবে বন— 

 


হঠাৎ ছোঁয়ার পরে মনে হলো
তোমার তো আছে স্বামী, সংসার
আমি সামান্য কেরানির চিঠি
হাতে হাতে বিলি হই বহুবার—

দুপুরের পাশে নীল সাইকেল
ঝাঁকে ঝাঁকে থেমে আছে কত সালে! 
‘যদি কেউ দেখে ফেলে’, কাঁদতেছ 
টের পাও কথোপকথনকালে—

তোমার শাঁখার ঘ্রাণে ভাঙে রাত
হরিণেরা নৈঃশব্দ্যে নামে 
এ হাওয়া কাদের ছিল আগে আর 
বেজেছে সরোদ বন-বিশ্রামে—

 


রাস্তা পার হতে গিয়ে 
তুমি পেছন ফিরে তাকালে
সমস্ত বিকাল ঢলে পড়ল কৃষ্ণচূড়ায়—

তারপর 
আর কিছু নাই

খালি সবুর—

হেফজোখানার বাচ্চারা 
যেভাবে শুক্রবারের জন্য বসে থাকে—



ছোট ছোট পাখির মতো
বাতাস বইছে—

আজ আর কোথাও কেউ নাই
তোমাকে বলি নি 

এইসব চলে যাওয়া দুপুর 
কালভার্টের মতো বাঁকা—

তোমার ফিরে আসা 
বোখারির শেষ হাদিসের মতো সুন্দর—

 


তুমি চলে গেলে
নিজেকে সেই বাচ্চাটার মতো মনে হয়

যার মা
হেফজোখানায় এসে 
দেখা করে ফিরে গেল বাড়ি

 


তোমাকে দেখেছি রোদে সান্দ্র কুচযুগ, মাশআল্লা 
দুপুরে কোথাও কাঁপে লুলিত কুন্তল, মাশআল্লা
পানিতে ভাসছে ধীরে, অর্ধডুব-স্তন, মাশআল্লা
তোমার গোসলে ভেজে সমস্ত নদীটা, মাশআল্লা
কাজলি নদীর পাশে কতদিন চলে গেছে হাওয়া
কোথায় সেসব ছায়া, চলে গেছে দূরে কত সাল
তোমাকে লেখার কথা পুড়ে গেছে বিষণ্ন কাগজে
যেইভাবে পোড়ে ভাত চুলায় অধিক দিলে জ্বাল—

নয়ানে নয়ান পোড়ে চন্দ্রশোভাকোটি, মাশআল্লা
এসিড রেইনে ভেজে বেপথু করবী, মাশআল্লা
বিজুরি চমকে টোলে চিবুকে উন্মন, মাশআল্লা
আঙুলে কাঁপছে হাওয়া মোহিনী চঞ্চল, মাশআল্লা

সে নদী কেমন বলো যার জলে ঢেউ উঠে নাই
আমার বেহেশত তুমি আজীবন নামাজ ছাড়াই