শাহিদ আনোয়ার সিরিজ

 

শাহিদ আনোয়ার

বেদনার শহরে এভাবেই বেড়ে উঠি
বন্ধুর আদলে কাঁটা
আর কাঁটার ভেতর থেকে ফুল হয়ে দেবতাদূত!

বাতাসে শংকাদানা! ঘুমোতে পারি না!
কে যেনো পাশ ফিরে শোয়!
রাইলস টিউব, ক্যাথেটার, বেডসোর, স্যালাইন ওষুধের কড়া গন্ধের ভেতর  
কোথাও কি হুইসেল বাজে!
জুতোজোড়া খুঁজে ফেরে পা?

নিস্তব্ধতা ভেদ করে কার কণ্ঠ ফিসফিস করে!
কার ঘুমগোঙানি বিবশ করে তোলে!
গঙ্গাফড়িং উড়ে গেলে নীলাভ সন্ধ্যায়
তোমাকে হারিয়ে ফেলি, তুমুল

তুমুল খুঁজতে থাকি যেমন মার্বেলবেলায়!

সারারাত ঘুমহীনতা। ঘুমের ধুলো ওড়ে বিছানায়, পাশ বালিশে!
মৃত্যুছটার ভেতর উন্মূল প্রাণে
মুখোশের প্রলেপ মাখি হাস্যকণায়
বাঁচি, নিজের জন্যেই কি বাঁচি!

এতো এতো রক্তদানায় চিত্রিত বিচিত্র হে
তোমার ক্ষরণের ভার নিয়েছে যে মাওলা
তার ভেদবুদ্ধি আমি কিছুই বুঝি না।

মগজের রক্তস্রাবে ভেসে যেতে যেতে
দু-একটি শব্দেও যদি দাও ইশারা
মৃত্যুপুচ্ছ ছুঁয়েকাকভোর হবে
আকাশ তোমার নামে সুষমা ছড়াবে!
নদীগুলো পায়ে এসে চুমকুড়ি খাবে!
আমাকে কবিতা করে আকাশে ওড়াবে!
কবে! কবে?

 

শাহিদ আনোয়ার

নিজেকে প্রবোধে বাঁধি, মৃত্যুর উজানে রাখি শ্বাস
এতো যে আকাশ, আলো, প্রেম তবু করে না বিশ্বাস!
কেবলি যাই যাই করে, গলা চিপে আলজিভ টেনে ধরে,
মৃত্যুর আগরকাঠি ছড়ায় ধূপ নিঃসঙ্গ এ চরাচরে।
যতো বলি
মানুষই উতরে ওঠে উত্তরণের জোরে
সে শুধু আকুলি চোখ, গোঙায় অন্ধকার ভোরে।
কী বলে বুঝি না তার নির্বাক মনোযাতনা
আমি তো শ্রাবণমেঘ, তুমি আজ বৃষ্টিবন্দনা।

প্রতিদিন সূর্যভোর পৃথিবীকে আলো করে হাসে
তুমি তো জাগো না আর আমারই স্বপ্নসকাশে
তবু আমি কথা বলি আমাদের দ্বৈতবিন্যাসে
কী কথায় কী বলো তুমি
তা আমার জানাই তো আছে!
বেদনাবালিশে রেখে মাথা, কথার ভেতরই ঘুমিয়ে পড়ি
হাতে রাখি বুক, দয়াল
যেন হৃদপিণ্ড না নেয় উপাড়ি
তবু আজ আকাশজুড়ে কেনো বাজে মৃত্যুমৃদঙ্গ
তোমাকে বাসনা করি, তুমিহীন করো না সঙ্গ।

 

শাহিদ আনোয়ার

ডালা খুলতেই শার্টের দেহমেদুর ঘ্রাণ আমাকে অসহায় ভঙ্গুর করে তুললো!
দেহকলস উপচে পড়া গন্ধমঞ্জরি দিয়ে
কী নির্মম খেলায় মেতেছো তুমি!
অথচ  ন
তলার এই সমুদ্রমুখী ঘরটিতে
কোথাও কিচ্ছু নেই।
কোনো প্রেম, আনন্দ, বেদনা, কোনো রক্তদানা, মারী ও মড়ক

কিচ্ছু না। কেউ নেই।
রুদ্রের সেই
একটি বিন্দুর মতো
আমি একা হয়ে আছি!

কোথায় ঘু ঘু! পাতামঞ্জরি! নিবে থাকা ছায়া!
তোমার প্রিয় নিসর্গ আর চিতই পিঠার মতো মেঘউপুড় আকাশ!  
সব নিয়ে গেছো তুমি।
আমাকে একাকিত্বের গহ্বরে রেখে তুমি
অনাদিকুমার

কী খেলায় মেতেছো নিঠুর!
সমস্ত লোকালয় সচল, করোনাহীন পৃথিবী এখন।

অথচ তোমার জন্যে অনুনয়ে ন্যুব্জ আমি
হাতজোড় মিনতিতে চিকিৎসার ঘরে ঘরে
করোনানিদান কালে তিলে তিলে
ভেঙেছি নিজেকে!
আজ বাইরের এই হুলুস্থুল পৃথিবীতে
কী আনন্দ!
হাসপাতালগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে অপেক্ষায়
টর্চ হাতে ডাক্তার রোগীর চোখে ঝুঁকে
দেখে নিচ্ছে মস্তিষ্কের কোষের শেষ কৌশল!

অথচ তোমার কোষগুলো যখন ঘুমিয়ে পড়ছিলো দিনের পর দিন
করোনাভীত চিকিৎসক আমাকে বার বার ফিরিয়ে দিয়েছে!
বড় সাধ হয় জেনে নিই
তোমার মস্তিষ্ক ঘুমিয়ে পড়বার আগে
কী স্মৃতি শেষবার খেলিয়ে নিয়েছো তুমি?
অনন্তযাতনা দিয়ে যাবার আগে কিছু কি বলার ছিলো না?
হ্যাঙ্গারের গন্ধমেদুর আস্তিন গোটানো শার্ট মৃত্যুমৃদঙ্গে বেজে ওঠে।
তোমার পাশেই রেখেছি আমার তিন হাত অনন্তঘর!
অনাদিকালের পাথরখণ্ডের মতো আজ
আমি তোমার আপন অথবা পর।