জিব্রাইলের ডানার বাস্তবতা
শাহেদ আলীর গল্প জিব্রাইলের ডানা নিয়ে আমার একটা অন্য রকম ধারণা ছিল। সেটা এখন পুরোনো। ভেবেছিলাম, ফেরেশতা জিব্রাইলকে নিয়ে এটি একটি অলৌকিক গল্প। এটি যে বাংলাদেশের অত্যন্ত গরিব সংসারের মা ও ছেলের ধর্মজাত বিশ্বাসের স্বপ্নকল্পনা বা দ্রোহের বেদনাতাড়িত গল্প, তা একবারও মনে হয়নি। যখন গল্পটি পড়লাম, সেই ১৯৯৯ সাল কিংবা ২০০০ সালে, বুঝলাম কত সত্য-মিথ্যার মধ্যে আমাদের বসবাস, কতটা ধারণাজাত সত্য ও মিথ্যায় মেশানো আমাদের লোকজীবন, সাংস্কৃতিক সংসার। ক্ষুধাতাড়ানিয়া গণজীবনের যে সংগ্রাম ও নির্মমতা, তা আমরা প্রতিনিয়তই লক্ষ করে চলেছি, যা শাহেদ আলীর এই গল্পে উঠে এসেছে এক ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে, ভিন্নচিন্তার শৈলীতে। মানুষের মনের ভেতরে যে আশার বাস, তারই আরেক স্তরে থাকে তাদেরই স্বপ্নকল্পনা। আর সেই স্বপ্ন গজিয়ে ওঠে তাদের শোনা ও বিশ্বাসজাত ধর্মগল্পকেন্দ্রিক আবহকে কেন্দ্র করে।
এক গরিব মা হালিমা আর তার ১২ বছরের শিশুসন্তান নবীর স্বপ্নকল্পনা ও বিশ্বাসের গল্প জিব্রাইলের ডানা। আমাদেরই গ্রামীণ ও নগরজীবনের প্রান্তিকে বসবাসকারী মানবসমাজের এক বাস্তব সত্য গল্প, যা আমাদের ধর্মচেতনা ও সংস্কৃতির অনুবর্তী বিশ্বাসের গহনে লুকিয়ে আছে। অতিপ্রাকৃত বা পরাবাস্তব মিথিক্যাল চরিত্র ফেরেশতা জিব্রাইল। [মুসলমানদের কাছে তিনি আল্লাহর দূত এবং ৬শ ডানার অধিকারী, বিদ্যুচ্চমকের মতোই তার গতি। আলোর গতিই তার আসল গতি। তিনি আল্লাহর বাণী বহনকারী ফেরেশতা, আসতেন নিয়মিতই ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ [সা.]-এর কাছে ওহি নিয়ে, আল্লাহর নির্দেশে।] আর অবিশ্বাসী, বিধর্মী ও ধর্মহীন মানুষের কাছে জিব্রাইলের কোনো কল্প-কায়া আছে বলে আমি শুনিনি। যারা ইসলামের অনুসারী ও বিশ্বাসী, তারা ফেরেশতা জিব্রাইলকে বিশ্বাস করেন, যারা ভিন্ন-ধর্মী তাদের বিশ্বাস তাদের ধর্ম অনুসারে, যারা অবিশ্বাসী তাদের কাছে ওই নামটি একটি মিথ চরিত্র বা অতিপ্রাকৃত লোকগল্পের চরিত্র। এই তিন শ্রেণির মানুষের কাছে জিব্রাইল ধরা পড়েছেন বিশ্বাসের সেতু হিসেবে। এরা সবাই বিশ্বাস থেকেই তাদের ধারণাজাত সত্যের পক্ষে। মূলত ধর্ম সংস্কৃতির পাঠ-বিশ্বাস থেকেই এমন কিছু সৃষ্টি হয়েছে।
আমার ভেতরেও শাহেদ আলীর জিব্রাইলের ডানার ধারণাজাত সত্যই ছিল অটুট, যত দিন না পড়েছি ওই গল্প। আমি শতবর্ষের গল্প সংকলন সম্পাদনা করতে গিয়ে পড়েছি ওই বহুকথিত গল্প। যখন সত্যই প্রয়োজন হলো হাতে এলো শাহেদ আলীর গল্প সংকলন। এই সুযোগে তাঁর আরও কয়েকটি গল্প পাঠ করেছি। কিন্তু এই গল্পের সিগনিফিকেন্সি অন্য জায়গায়।
মানুষের ক্ষুধার কাছে অন্য সবকিছুই গৌণ বিষয়। লোকবুলি হচ্ছে পেটে [খাবার] খেলে পিঠে সয়। অন্ত্যমিলের কারণে লোকমুখের এই কথা কানে লেগে থাকে। খাদ্য শব্দটি ঊহ্য থাকার পরও লোকেরা বোঝে, কথক কী বলেছেন বা বলতে চাইছেন। নিয়মিত ভাতের জোগান দেওয়া কেউ যদি তাকে মারেও, [মূলত তিনি স্বামী, তাকে লক্ষ্য করেই রচিত ওই লোকবুলি] তাহলেও সে তা সহ্য করতে পারে।
এই গল্পের শিশুটির নাম নবী। তার মা হালিমা। নবীকে একটি বিড়ি বানানোর দোকানে বিনা বেতনে কাজে লাগিয়ে দিয়েছিল হালিমা। কাজ শিখতে পারলে ভবিষ্যতে কিছু একটা করে খেতে পারবে, এই তার ভরসা-বিশ্বাস। নবীর বাবা নেই। সে মরে গেছে। হালিমা বাসাবাড়িতে কাজ করে যা পায়, তা-ই খেয়ে মায়ে-পুতের চলে যায়। কিন্তু নবীর মন বসে না বিড়ি বাঁধার কাজে। প্রায়ই সে নানা ছল-ছুতায় দোকান থেকে বেরিয়ে যায়। নবীর ঘুড়ি ওড়ানোর শখ। বলা যায় ভীষণ রকম শখ। তাই সে দুপুরের পর নানা ছুতায় দোকান থেকে বেরিয়ে পড়ে। দোকানদার ভীষণ রকম বিরক্ত। সে নবীকে আর রাখবে না, জানিয়ে দিয়েছে আজ নবীর মা হালিমাকে।
সাধারণ গরিবি জীবনে আশা আর পাওয়ার এমন এক পরিপ্রেক্ষিত, যা গণমানুষের আসল চিন্তার রূপ। সামাজিক জীবনে ও ধর্মীয় আবহের পারিবারিক পরিস্থিতির সঙ্গে ধর্মীয় বিশ্বাসের, লোকাচার ও লোকবিশ্বাস মিলেমিশে হালিমার বংশপরম্পরা থেকে নবীর নবীন জীবন পর্যন্ত পরিবাহিত বিশ্বাস আমরা দেখতে পেলাম ওই বর্ণনাটুকুতে।
শবে বরাতের রাতে ফেরেশতারা পৃথিবীর মানুষের সামগ্রিক অবস্থা দেখে ফিরে গিয়ে রিপোর্ট করে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে, মানে রাব্বুল আলামিন আল্লাহর কাছে। সেই রিপোর্ট পাওয়ার পর আল্লাহ সকল মানুষের বরাতে ধন-দৌলত বিলিবণ্টন করেন।
ফিরিছতারে কিছু কইয়া দিছ মা?
নবীর এই জিজ্ঞাসায় হালিমা কিছু বুঝতে পারে না। সে তাই চুপ করে থাকে।
দুয়ারের কাছ দে গেল, আর তুমি কইয়া দিলা না!
অত্যন্ত করুণ হয়ে ওঠে নবীর কণ্ঠস্বর। ‘আমারে ডাকলা না ক্যান তুম?’
আরে পাগলা, হালিমা তার জ্বালা চেপে রাখতে পারে না—‘ফিরিছতা আমগো কতা হুনবো ক্যান? বড় লোক গো খোঁজ-খবর নিতে আইছিল। আমাগো বাড়ির কাছ দে তাগো বাড়িই হে গেছে।’
…না রে, হালিমা একরকম চিৎকার করে ওঠে এবার, আল্লা তো ঘুমাইয়া রইচে কাঁতা গায় দিয়া। ছুনা, রূপা দিয়া সেজদা করলেই হে চায়। গরিবের সোঁদা নামাজে তার মন ভেজে না।
গরিব মানুষের বিশ্বাস আর প্রত্যাশার সঙ্গে আল্লাহর নেয়ামত পাওয়া না পাওয়ার বিষয়টি চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন শাহেদ আলী। গরিব-দুঃখীর দিকে মন নেই আল্লাহর, তাঁর দৃষ্টি কেবল ধনীদের দিকে। সামাজিক জীবনে সাধারণ মানুষ ধনী-গরিবের মধ্যকার অর্থনৈতিক ব্যবধান দেখতে দেখতে তাদের সামাজিক চেতনায় এই সত্যই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সত্য জনজীবনের কাছে চরম সত্য, যা তার বাঁচা-মরার মতোই চির-সত্য। আল্লাহ যদি সত্যই ন্যায়বিচারক, ন্যায় ও কল্যাণের প্রতীক, তাহলে গরিবের সিজদা তিনি গ্রহণ করছেন না কেন? এই একান্ত ধর্মভীরু মানুষের ক্ষুব্ধ মনের প্রতিক্রিয়া।
আমার ভেতরেও শাহেদ আলীর জিব্রাইলের ডানার ধারণাজাত সত্যই ছিল অটুট, যত দিন না পড়েছি ওই গল্প। আমি শতবর্ষের গল্প সংকলন সম্পাদনা করতে গিয়ে পড়েছি ওই বহুকথিত গল্প। যখন সত্যই প্রয়োজন হলো হাতে এলো শাহেদ আলীর গল্প সংকলন। এই সুযোগে তাঁর আরও কয়েকটি গল্প পাঠ করেছি। কিন্তু এই গল্পের সিগনিফিকেন্সি অন্য জায়গায়
সামাজিক মানুষ তার প্রতিবেশের বাইরে কিছু চিন্তা করতে পারে না। আল্লাহর কাছে কিছু পাঠাতে হলে তাই ফেরেশতা লাগে। সেই খবর দুঃখেরই হোক বা সুখেরই হোক, সেটা জানতে তিনি ফেরেশতাদের পাঠান। তার মানে তাঁর দূত ছাড়া তিনি কিছু জানতে পারেন না। নবী ও হালিমার ধারণা এমনটাই। এবং বাংলার গরিব মানুষের সামাজিক ও ধর্মীয় বিশ্বাসে তাই ফেরেশতা এক অনিবার্য চরিত্র। এরাই আল্লাহর আদেশে তাঁর কাজগুলো করে দেয়। এই যে বিশ্বাস, এটা ধর্মীয় বিশ্বাস কি না জানি না, তবে দেশের প্রতিটি মসজিদের ইমাম, খতিব এবং নামাজি মানুষগণ আল্লাহতালার দূতদের নানান রকম ইতিবাচক প্রশংসা করে বয়ান দেন। যেমন জিব্রাইলের বর্ণনায় তাঁরা বলেন, তাঁর আছে খুবই সূক্ষ্ম পাখা, তার সংখ্যা ছয়শ। তিনি আগুনের তৈরি বিধায় তার পাখাও সেই উপাদানেরই। তিনি চলেন সেই পাখা চালিয়ে। ওই ছয়শ পাখার এক-একটির আকার এই পৃথিবীর মাটি থেকে আকাশ পর্যন্ত বিস্তৃত। ওই রকম ছয়শ পাখায় ভর করে জিব্রাইল যখন আসেন পৃথিবীতে, তার সময় লাগে এক মুহূর্ত। এক মুহূর্ত হচ্ছে চব্বিশ সেকেন্ড। সেই চব্বিশ সেকেন্ড সময় এতটাই কম যে তা মনে হবে চাওয়ামাত্রই তিনি হাজির। আর সেই পাখার রং ময়ূরের পাখার মতো বর্ণাঢ্য ও সূক্ষ্ম।[নবীর কল্পনায় মউরের পাখার মতো]। মানুষের চিন্তায় এর চেয়ে সুন্দর ও সূক্ষ্ম পাখা আর কী হতে পারে? সামাজিক মানুষের কল্পনা তার প্রতিবেশের ভেতরেই ঘুরপাক খায়। এটাই স্বাভাবিক। সেই স্বাভাবিকতাই আমরা এই গল্পে লক্ষ করি। গরিব-দুঃখী মানুষের দিকে যে ‘মহান আল্লাহ’ চোখ তুলে তাকান না—হালিমার দুঃখ-কষ্ট দেখেন না, তিড়িংবিড়িং করা নবীর কাজে মন বসানোর জন্য কোনো উপায় দেখান না—সংক্ষুব্ধ হালিমার কথায় তা প্রকাশ পেয়েছে। এ প্রত্যাশারই বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখতে পাই এ গল্পের শেষ দিকে।
‘বহুদিন পর সানকি ভরা ভাত-সালুন দেখে পেট জ্বালা করে ওঠে নবীর। সে সোজা গিয়ে বসে পড়ে হালিমার কাছে। খেতে খেতে মাকে বলে, এই ছব পাইল্যা কই আইজ।
আজও গায়ে জ্বর ছিল হালিমার। কিন্তু এই মুহূর্তে নবীর খাওয়া আর খুশি দেখে সে যেন সুস্থ হয়ে ওঠে হঠাৎ। ধীরে ধীরে বলে, কাহারটুলির জমিদারবাড়ির বউ মরছিল না। তারই ফাতিহা আইচে আইজ। বহুৎ কাপড়-চোপড় আর টাহা-পইছা দান খইরাত করছে তারা। দেখ না তর লাইগা একটা লুঙ্গি আনছি, চাইয়া।
হালিমা উঠে পড়ে এবং একটা ছোট নতুন লুঙ্গি এনে দেয় নবীর হাতে।
বিস্ময়ে অবাক হয়ে যায় নবী। আজ বুঝি সত্যি মুখ তুলে চেয়েছেন আল্লাহ—ঘুম তাইলে ভাঙছে তাঁর। আজ শুকরিয়ার বান ডেকে যায় তার বুকে। ছলো ছলো চোখে মায়ের দিকে চেয়ে বলে—কইছিলাম না মা, এ হাল আমাগো বেছি দিন থাকপো না।
নবীর একথায় সায় দিতে পারত না কোনো দিনই, কিন্তু এই মুহূর্তে সে সায় না দিয়ে পারে না।
বিশ্বাসের ডালপালা যে পল্লবিত হয়, থাকে মনের গহনে সুপ্তাবস্থায়, নবী ও হালিমার জীবনসংগ্রামে এইটুকুই তার প্রমাণ। কিন্তু এরাই দিনমান পরিশ্রম করে অন্ন জোগাড়ের জন্য। এরা নিয়তই বিশ্বাস করে রিজিকের মালিক আল্লাহ হলেও আমরা শুনতে পাই হালিমার কঠিন বাস্তববোধ—নিজের হাতে গড়তে হবে কপাল। আল্লাহর কাছে আরজি পেশ করলেই চলবে না।’
একদিকে পরমপ্রিয় মহান আল্লাহর কাছে নেয়ামত প্রার্থনা, অন্যদিকে ওই আরজি নয়, নিজের পেটের ক্ষুধা নিবারণের ভাত নিজেকেই জোগাড় করতে হবে। নিজের কপাল নিজেকেই গড়তে হবে। এই কঠিন বাস্তব সত্য গরিব মানুষেরা জানে, বোঝে। জানে বলেই তারা যতটা না ধর্মভীরু, যতটা না রিচুয়াল পালনে সংকল্পবদ্ধ, তার চেয়ে বেশি কর্মপাগল। কাজ না করলে যে পেটে ভাত যাবে না—এই সত্য তারা জানে। কিন্তু শিক্ষিত ধর্মভীরু রিচুয়ালে আবদ্ধ ধনাঢ্য অনেকেরই বিশ্বাস টলটলায়মান। তারা আল্লাহকে ভয় পায়, কিন্তু মানুষকে ঠকাতে আল্লাহর ভয় গায়ে মাখে না। নিজেরা আল্লাহ সম্পর্কে নসিহত করেন, কিন্তু নিজেকে সেই নসিহতের মধ্যে রাখে না। এই যে বৈচিত্র্য সামাজিক মানুষের, মানুষের সততা নিয়ে ব্যবসা, মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে নিয়তই ঠকিয়ে যাচ্ছে, তাদের প্রতি আমাদের নেই কোনো পরামর্শ। তাদের প্রতি সমাজনেতারা যেমন চুপ, তেমনি রাষ্ট্রনেতারাও। এভাবেই সামাজিক জীবনে নানামাত্রিক নৈতিক অবক্ষয়ের সূচনা হয়েছে, যা আজকে বাস্তব জীবনের প্রধান সংকট ও সমস্যা। মানুষের এই রকম বিচিত্র স্বভাব ও তাদের অবক্ষাক্রান্ত পরিবেশের মধ্যেই ধনবান ও নির্ধন মানুষের মধ্যে সামাজিকতা বিদ্যমান, ব্যবধান অনেকটাই, যাকে প্রজ্ঞানের কথায় আকাশ-পাতাল ব্যবধান রচিত হয়েছে। আজকে ক্ষুধার্ত মানুষ আর ধনবানের মধ্যে পার্থক্য, আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনের নগ্নতা, নিষ্ঠুরতা সৃষ্টি হয়েছে, তাকেই কি সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন সামাজিক বৈচিত্র্য ও সামাজিক বৈশিষ্ট্য?
হালিমা ও নবী, একই সমাজ-সংসার বাস্তবতার মধ্যে, এই গল্পের প্রায় দুই মেরুর চরিত্র। হালিমা ধর্মভীরু হলেও বাস্তব জীবনে রূঢ় রূপ সে বোঝে, জানে এবং তাই ভোগ করছে সে প্রতিদিন। কিন্তু নবী সেটা বোঝে না। না বোঝার কারণ সে চলমান বাস্তবতার রূঢ় জীবনের ঝাপটা খেলেও তার মনে এ নিয়ে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না। আসলে গ্রাম-নগরের মিশেলে চলা বাস্তব জীবনের মতো কঠিন সত্যের ঘাই খাওয়া হয়নি নবীর। সে রকম পরিস্থিতির শিকার সে হয়নি, এমন কি সেই নির্মমতার মুখোমুখিও সে হয়নি। সে মায়ের আঁচলের নিচে থেকেই জীবন দেখছে, জীবন কাটাচ্ছে। মায়ের ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে ছেলের ধর্মভিরুতার মিল ও অমিল দুটোই আছে। মিল হলো তারা দুজনেই আল্লাহ বিশ্বাসী। কিন্তু হালিমা জানে, পরিশ্রম না করলে আল্লাহ ভাত এনে দেবে না। কিন্তু নবী বিশ্বাস করে আল্লাহ যে—নানাভাবে আল্লাহ তাদের জন্য খাদ্যসামগ্রী পাঠান। আবার হালিমার তীব্র বক্রোক্তি শুনেও সে বিশ্বাস করেছে যে মহান আল্লাহ তার আরশে ঘুমিয়ে আছেন। ঘুমিয়ে আছেন, সে কারণেই তিনি নবীর দুঃখ-কষ্ট দেখতে পান না। নবীর ভাবনাবৃত্ত সে ও তার মা হালিমাকেন্দ্রিক। তাই সে ফেরেশতাকে নিয়ে এক ঘোরতর স্বপ্নে নিপতিত হয়। সে মনে মনে এই আশা করছে যে তার ওড়ানো ঘুড়ি একদিন ঠিকই আল্লাহর আরশের পায়ায় গিয়ে পৌঁছাবে এবং ঘুড়ির সুতার টানে সেই আরশ কাঁপিয়ে দিয়ে আল্লাহর ঘুম ভাঙাবে। কিন্তু তার তো ঘুড়ির সুতা কেনারই পয়সা নেই। মায়ের তুরঙ্গ বা পয়সা রাখার বাক্স থেকে যা ছিল, তা সে নিয়ে এসে সুতা কিনেছে। কিন্তু তাতেও ঘুড়ি আরশের কাছাকাছি যেতে পারছে না। তার আরও সুতা চাই। সে তাই টাকা রোজগার করে রেলস্টেশনে কুলির কাজ করে। আর সুতা কেনে, সেই সুতা জোড়া দিয়ে চলে। তার ঘুড়িকে তো পৌঁছাতে হবেই সাত আসমানের ওপরে—আল্লাহর আরশের কাছে।
‘আজ যেন টানাটানি পড়ে গেছে আসমান আর পৃথিবীর মধ্যে—কে হারে, কে জেতে—এবং তারই তীব্র আকর্ষণ নবীর মনে। হয়তো দৃষ্টির আড়াল থেকে কেউ টানছে সুতা ধরে। আর সেই টানে ফুলে ফুলে উঠছে নবীর শিরা-উপশিরা।...টের ক্ষুধা, মা আর সমস্ত সংসার,—সবকিছু ভুলে যায় নবী। সন্ধ্যার পরও অনেকক্ষণ দরজা ধরে দাঁড়িয়ে থাকে সে।
কই, কোথাও তো আটকে গেল না ঘুড়ি? একসময় সে সুতা গুটিয়ে নামিয়ে আনে নিচে এবং ঘুড়ি জমি ছোঁবার আগেই সে তাকে চেপে ধরে বুকের মাঝে, ঘাড় নিচু করে সে পরশ নেয় ঘুড়ির,—কেমন যেন একটা অদ্ভুত গন্ধ পায় নাকে, আর ঘুড়িটাকে মনে হয় ভেজা ভেজা। আহ্! নবীর বুকে খুশি আর সীমা পায় না যেন। বহুদিন পর খোদা আজ তার গরিব বান্দার দুঃখে কেঁদেছেন। আর তারই আঁসুতে সিক্ত হয়ে উঠেছে নবীর ঘুড়ি। আরশের পায়া ধরে টান দিতে হলো না আর—এর আগেই খোদা কেঁদে ফেলেছেন তাঁর বান্দার দুঃখে।
...বাড়ি ফিরে দেখে—হালিমা বিছানায় শুয়ে ককাচ্ছে। জ্বর এসেছে তার। জোহরের সময় চলে এসেছে ঘরে—আজ তাই কিছুই জোটেনি কপালে। মনটা খারাপ হয়ে যায় নবীর। খোদা যদি তাঁর বান্দার জন্য কাঁদবেন, তো তার মায়ের জ্বর হবে কেন আজ? তাদের ঘরে আজ ভাত জুটবে না কেন? এ তাহলে আল্লাহর আঁসু নয়—শয়তানের পেশাব! শয়তান চায় না যে মানুষের দিলের আরজু পৌঁছুক গিয়ে আসমানে।’
শেষ পর্যন্ত নবীর এই আকাঙ্ক্ষা স্বপ্ন হয়ে ধরা দেয়। নবী স্বপ্নে দেখে—‘জিব্রাইল তার ঘুড়ি নিয়ে মেঘের ফাঁকে ফাঁকে আসমানের দিকে ধাওয়া করছে।... তারপর একসময় খুলে গেল সপ্তম আকাশের দরোজায়। আর তার ফাঁক দিয়ে একটা তীব্র আলোকচ্ছটা এসে ঝলসে দিল নবীর চোখ দুটিকে।
বিশ্বাসের সঙ্গে শিশুমনের প্রত্যাশাকে এমনভাবে নির্মাণ করেছেন গল্পকার শাহেদ আলী যে চলমান জীবন-সত্য ও ধর্মজাত সত্য মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। মানুষের কল্পনার ডানা মেলে দেয় অজানা-অচেনা আকাশে, মহাকাশে, সাত আসমানের ওপারে, সেখানেই তো মহান আল্লাহর আরশ! এই যে বিশ্বাস, তা শত শত বছরের চর্চা আর চিন্তার ভেতর দিয়ে লোকসমাজের একান্ত আপন বিশ্বাসের শিকড় গেড়েছে—তা আজ বিশ্বাসের আকর। তিনি সর্বজ্ঞ, তাই সব মানুষের দুঃখ-বেদনা, আনন্দ-উন্মাদনা, পাপ-পুণ্য, ভালোবাসা, সমস্যা-সংকট দেখতে পান, জানতে পারেন। এই বিশ্বাসের পরও বাস্তব মানুষের ক্ষুধা, তার খাদ্য না পাওয়ার চেষ্টা কেন ব্যর্থ হয়? কেন কোটি কোটি মানুষ আধপেটা থাকে প্রতিদিন। কেন না খেয়ে ঘুমুতে যায় নবীদের মতো মানুষেরা? যাদের ঘরে উদ্বৃত্ত খাদ্যের সম্ভার জমে আছে, সেগুলো কেন মহান আল্লাহতালা বিলিবণ্টন করে দেন না? কেন একদিকে সম্পদের সম্ভার, আরেকদিকে খাদ্যের ঘাটতি, ক্ষুধার সাম্রাজ্য? যারা ক্ষুধার্ত তারা পেটের ক্ষুধা চেপে রেখে আল্লাহর ইবাদত করে এই আশায় যে তিনি তাদের নসিবে বেঁচে থাকার মতো খাদ্যের সংস্থান করে দেবেনই যেকোনো অসিলায়। কিন্তু মানুষের সেই বিশ্বাসের স্বপ্নটি ভেঙে গুঁড়িয়ে যায় প্রতিদিনই—হালিমা-নবীদের। সেই স্বপ্ন ভেঙে গেলেও তারা থেকে যায় অবুঝ, বিশ্বাসীর কাতারে। কেন মহান আল্লাহ গরিবের মুখে অন্ন দেন না? কেন সম্পদের এই অসম ব্যবধান তিনি সমান করেন না? এই প্রশ্ন এক জাগ্রত প্রশ্ন, সত্যসন্ধ প্রশ্ন।
তারপরও তারা বিশ্বাসী মানুষের কাতারে অটল, বিশ্বাসের দিগন্তে টিকে থাকে কোনো এক কামনায়। অর্থাৎ প্রবহমান সংস্কৃতির বীক্ষণ-স্রোতের বিরুদ্ধে দ্রোহ করতে মন সায় দেয় না তাদের, পাছে তাদের ভুল-বিদ্রোহের খেসারত দিতে হবে। তারা কেবল ঘুম ভাঙাতে চায় ঈশ্বরের, কিন্তু আল্লাহর আরশের পায়া তারা কখনোই খুঁজে পায় না।
আমি আগেই বলেছি, সামাজিক মানুষ তার মনের মধ্যে যতই ফুল্লময় কল্পনার জাল বুনুক না কেন, সে তার জীবনযাপনের বাস্তব প্রতিবেশের বাইরে যেতে পারে না। মহান রাব্বুল আলামিন, মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী ‘নিরাকার’। তাঁর কোনো বাস্তব আকার নেই। তিনি যদি নিরাকার সত্তা হন, তাহলে তাঁর অবস্থান কোথায়? বস্তুগত আকারহীন তিনি, তাই সর্বত্রই বিরাজমান, সকল সময়। তাহলে ধর্মভীরু ও ধর্মাক্রান্ত মানুষেরা কেন ভাবেন যে মহান রাব্বুল আলামিনের একটি আরশ আছে সাত আসমানের ওপরে। আরশ মানে তার বসার বা শোবার খাটের মতো কোনো আসন। এবং সেই আরশের আকার এতটাই বড় যে তাকে কোনো আসমানই ধারণ করতে পারে না। তাঁর রয়েছে অগণন ফেরেশতা, আগুনের তৈরি, তাঁরা আল্লাহর আদেশে তাঁদের কাজ করে থাকেন। সেই ফেরেশতাদের একজন জিব্রাইল, যিনি আল্লাহর বাণী বহন করে নিয়ে আসেন আল্লাহর রসুল/নবী মুহাম্মদ [সা.]-এর কাছে। এই আসমান ও জমিন যেমন তিনি সৃষ্টি করেছেন, তেমনি সৃষ্টি করেছেন শয়তানও। সেই শয়তানেরা বিশ্বাসী মানুষদের প্ররোচিত করে আল্লাহর পথ ছেড়ে শয়তানের পথে যেতে। এই দ্বন্দ্বই মূলত ভালো বা শাশ্বত সুন্দর ও মন্দ বা অসুন্দরের মধ্যে বিরোধ।
যিনি নিরাকার, তিনিই আবার আরশে আসীন। আবার সেই আরশের পা বা পায়া আছে। সেই পায়ায় নবী তার ঘুড়ির সুতা আটকে দিয়ে টান দেবে। আর তাতেই আল্লাহর ঘুম ভেঙে যাবে। এই যে ঘুম ভাঙানোর কল্পনা, তার কারণ আল্লাহ যেন ঘুম থেকে উঠে দেখতে পান নবী ও তার মা অভুক্ত আছে। তাদের দুঃখের সীমা নেই। যেন জেগে ওঠে তিনি সব দুঃখী-গরিব ও অনাহারী মানুষের জন্য সহায় সম্পদ দেবেন সমহারে বণ্টন করে। নবীর এই কল্পবাস্তব সাধারণ মানুষেরই প্রতীকী বাস্তব। সাধারণ মানুষ চায় আল্লাহর দুনিয়ায় সব মানুষ সমান, কোনো রকম ভেদাভেদ নেই। সুষম বণ্টনই তাঁর। কিন্তু বস্তুজগতের বিধিবণ্টন আর আল্লাহর জগতের বিধিবণ্টন ঠিক বিপরীত। যত সংকট এখানেই নিহিত। আল্লাহ যা চান, যে বিধান দিয়েছেন, তার প্রয়োগ নেই বাস্তব পৃথিবীতে।
এটা চমৎকারভাবে উপস্থিত হয়েছে হালিমা চরিত্রের মধ্যে। হালিমা বলে,
[ক] নিজের হাতে আজ গড়তে হবে কপাল, আল্লাহর কাছে আরজি পেশ করলেই চলবে না।
[খ] হালিমা একরকম চিৎকার করে ওঠে এবার—আল্লা তো ঘুমাইয়া রইছে কেঁতা গায় দিয়া। ছুনা রুপা দিয়া ছেজদা করলেই হে চায়। গরিবের সোঁদা নামাজে তাঁর মন ভরে না।
[গ] হালিমা কিলোতে কিলোতে বলে, ওরা দিবো আর আমরা খামু বইয়া বইয়া। ঝাঁটা মার জিব্রাইলের মুখে শতবার।
[ঘ] আমি [হালিমা] মরলে জিব্রাইল খাঞ্জা খাঞ্জা ভাত লইয়া আইবো তর লাইগা।
আল্লাহ ও ফেরেশতা যে বাস্তব সত্য নয়—হালিমার এই সংলাপগুলোই তা পরিষ্কার করেছে। দ্বিতীয়ত কল্পনার পরিবেশ-প্রতিবেশও গল্পের চরিত্রের সামাজিক অবস্থান অনুযায়ীই ভাষারূপ পেয়েছে। শাহেদ আলী সেটাই দেখিয়েছেন যে সামাজিক চরিত্র যে অবস্থানে থাকে, সে সেই অবস্থানের ভাষা যেমন ব্যবহার করে, তেমনি তার কল্পনার রূপায়ণও সেই লোকজ মাপেরই হয়ে থাকে।
কেঁতা গায় দিয়া আল্লাহর ঘুমিয়ে থাকা, ছুনা-রুপা দিয়া ছেজদা দিলেই আল্লাহ তাকায়, জিব্রাইলের মুখে ঝাঁটা মারার নির্দেশ আর খাঞ্জা খাঞ্জা ভাত—গরিব হালিমার চেতন-বৃত্তের সঙ্গে চমৎকারভাবে মিশেছে। তার প্রতিবেশের বাইরে হালিমার কল্পনা যেতে পারে না।
হালিমার মূল সমস্যা খাদ্যের। ছেলে নবীর জন্যও দিন গুজরান করার মতো কাজ শেখার তাগিদ সে অনুভব করে। সে নবীকে লেখাপড়া শেখাবার বা লেখাপড়া শিখিয়ে জজ-ব্যারিস্টার করার কোনো চিন্তা করে না। শুধু বেঁচে থাকবার মতো কাজ শেখানোর কথাই তার মনে আসে। তার চিন্তা তারই জীবনপ্রতিবেশের, তারই অভিজ্ঞতাজাত, যা সত্য বাস্তব ও সঙ্গতিপূর্ণ। মানুষের কল্পনা যে বস্তুবাস্তব ও প্রতিবেশ বাস্তবের পাশাপাশি কল্পবাস্তবেও সমান্তরাল ছবি আঁকে, এই গল্পে তার দেখা মেলে। আল্লাহ ঘুমান ও কেঁতা মুড়ি দিয়ে ঘুমান ইত্যাদি। আরশের পায়া আছে। এটা এসেছে সামাজিক জীবনে যাদের চৌকি, খাট পালঙ্ক আছে, তা থেকেই আরশের পা কল্পনা করা হয়েছে। হালিমার কাছে আল্লাহ আরশে বসে ঘুমান। মানুষের নিত্যবাস্তবকে সে এড়াবে কী করে? আল্লাহ যতই ক্ষমতাবান হোন না কেন, বাস্তব জীবনে মানুষের মতোই তাকে কল্পনা করা হয়েছে। ফেরেশতা জিব্রাইলকেও হালিমা প্রতিবেশী কোনো মানুষের মতো মনে করে তার মুখে ঝাঁটা মারার নির্দেশ করেছে।
এগুলোই হালিমা ও নবীর বাস্তব জীবনের উপাদান-উপকরণে সৃষ্টি, যা মূলত গল্পকার শাহেদ আলীর চিন্তারই প্রতিফলন। আমরা লোক গল্পসাহিত্যেও দেখতে পাই অলৌকিক চরিত্রের, যাদের শারীরিক বর্ণনা মানুষের। কেবল তারা আকারে বিশাল। দেও-দানো সেই রকম এক চরিত্র। তাদেরও দুই পা বা এক চোখ দুই হাত ইত্যাদি। কল্পবাস্তবেও মানুষই তার জ্ঞান ও চর্চার উৎস।
ফেরেশতা এক কল্পবাস্তব চরিত্র, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সেই ফেরেশতাও আকারে-প্রকারে মানুষেরই প্রতিরূপ। তবে যেহেতু তাদেরকে আগুনের তৈরি বলে কল্পনা করা হয়েছে, তাই গতি ও রূপ অভূতপূর্ব। তারা আলোকগতিসম্পন্ন। আবার তারা ‘ছুন্দর’ মানুষ। জিন বিশালাকার ও দৈত্যদের মতোই শক্তি ও হিংস্রতায়। সেখানেও আছে ভালো ও মন্দ জিন। পরীদের আকার ছোট ও সুন্দরী নারীর মতো। তাদেরও পাখা আছে। ফেরেশতাদেরও পাখা আছে। বিশেষ করে জিব্রাইরের আছে ৬শ পাখা। [মউরের] ময়ূরের মতো পাখা। পাখা না থাকলে ওই ফেরেশতা বা জিন বা পরীরা উড়তে পারত না। এই কল্পনাই মানুষকে বাস্তব মানুষের জায়গায় রেখে দিয়েছে। অর্থাৎ বাস্তবে স্থাপন করেছে। সামাজিক মানুষের সংস্কৃতিতে কিছু যুক্তি আছে, কিছু অযুক্তি বা কল্পনার দিগন্ত আছে। যুক্তবাদী মন পরীর পিঠে, ফেরেশতার পিঠে পাখা বসিয়ে দিয়েছে।
এই গল্পে যেমন, তেমনি সাধারণ মানুষও বিশ্বাস করে যে আল্লাহর বসবার একটি আরশ আছে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের গদ্যেও আল্লাহর আরশের কথা বলা হয়েছে। সেখানেও গরিব ও নির্যাতিত মানুষ যেন আল্লাহর আরশের পায়া ধরে আরজি জানায় তাদের। নিরাকার আল্লাহর আরশের এই কল্পনাকে আমি বলব সাধারণ মানুষের এক নিরালম্ব আশার প্রতীক। এই প্রতীক রচিত হয়েছে এই দুনিয়ার রাজা-বাদশাদের সিংহাসনের বাস্তবতা থেকে। আমরা মোগল বাদশাহদের ময়ূর সিংহাসনের কথা জানি। সেখানে হিরে-জহরতসহ অনেক দামি রত্নাদিতে সাজানো হয়েছিল। তার প্রধান রত্নটি ছিল বিশাল আকারের কহিনূর হিরক। সেই সিংহাসন ব্রিটিশরা নানা কৌশলে চুরি করে নিয়ে গেছে। আজও কহিনূর হিরাটি ফেরত দেয়নি।
লোকমানসের এই যে চিত্রকল্পময়তা, তা প্রজন্মের পর প্রজন্মে পরম্পরায় পরিবাহিত হয়েছে। কল্পরাজ্যের এই চেতনা বাংলাদেশের নারী-পুরুষের মধ্যে বেশ প্রবল বলেই মনে হয়। যখন কোনো প্রাকৃতিক বিপদ-আপদ আসে, কিংবা মনুষ্যসৃষ্ট বিপদ কায়েম হয়, তখনই গণমানুষ অভিসম্পাত দিতে থাকে সেই নিরাকারকে, তার ক্ষমতা ও একচ্ছত্র আধিপত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। হালিমা চরিত্রটি সেই গোত্রের। সে আল্লাহ বিশ্বাস যেমন করে, তেমনি আবার সমালোচনাও করতে ছাড়ে না। কাজ না করলে আল্লাহ খাবার দেবে না, দেয় না, এই নির্মম সত্যই এই গল্পের মূল।
চমৎকার আলোচনা।
অমিতরূপ চক্রবর্তী
সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২ ১০:১৮