চেনাজানা ঢঙের গল্পকথন ‘আগুনের পরশমণি’

 

হুমায়ূনের গল্প বলার ঢং আমাদের পরিচিত। হুট করে গল্প শুরু করে দেওয়ার ক্ষমতা তাঁর প্রবল। এই ক্ষমতায় তিনি সর্বেসর্বা। নন্দিত নরকে [১৯৭২] থেকে এই ঢং সম্পর্কে আমাদের চেনাজানা। কিন্তু তাঁর চলচ্চিত্রে কি তিনি একইভাবে গল্প বলতেন? হুমায়ূন আহমেদের গল্প-উপন্যাস পড়া আর চলচ্চিত্র দেখার পর এই কথাটা বারবার মনে হয়েছে। তাঁর পরিচালিত চলচ্চিত্রের মধ্যে আগুনের পরশমণি [১৯৯৪], শ্রাবণ মেঘের দিন [১৯৯৯], দুই দুয়ারী [২০০০], চন্দ্রকথা [২০০৩], শ্যামল ছায়া [২০০৪], নয় নম্বর বিপদ সংকেত [২০০৬], আমার আছে জল [২০০৮], ঘেটু পুত্র কমলা [২০১২] উল্লেখযোগ্য।

আগুনের পরশমণি এবং শ্যামল ছায়া মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। দুটি চলচ্চিত্রের মধ্যে আগুনের পরশমণি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। চাষী নজরুল ইসলামের ওরা ১১ জন [১৯৭২] থেকে শুরু করে সর্বশেষ মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যেও আগুনের পরশমণি তাৎপর্যপূর্ণ।

দ্বিতীয়ত, মুক্তিযুদ্ধের সময় মধ্যবিত্ত সমাজব্যবস্থা কীভাবে দিন যাপন করেছে, তা আমাদের অজানা। সেই অজানা দৃশ্যপট জানা যায় এই চলচ্চিত্রের মধ্যে। আমাদের সাহিত্য, চলচ্চিত্র সব মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সময় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনব্যবস্থাকে দেখানো হয়েছে। তাদের কষ্ট, দুঃখ বর্ণনা করা হয়েছে। সেই জায়গা থেকে আগুনের পরশমণি চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধের মধ্যবিত্ত সমাজকে তুলে ধরেছে।

আপনি একজন মাঝি, একজন ঢুলীর জীবন জানছেন বা মুক্তিযুদ্ধে হিন্দু জনগোষ্ঠীর অবর্ণনীয় দুঃখের কথা জানছেন কিন্তু সেই সময়ের একটা সরকারি কর্মকর্তার ক্রাইসিস কী, তা জানছেন না। সরকারি কর্মকর্তা মতিন সাহেব অফিসে যুদ্ধের পক্ষে কলিগের সাথে বাহাস করে। কলিগ পাকিস্তানিদের পক্ষ নেওয়ায় তাকে স্টুপিড, গাধা, হারামজাদা বলতে শোনা যায় তার অবর্তমানে। সামনাসামনি বলতে না পারার কষ্ট তাকে কুরে খাচ্ছে।

আবার গুজরাটি বংশোদ্ভূত আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ছবি বাসায় টাঙিয়ে দিচ্ছে। এই ক্রাইসিস বা সংকট কেন? তা জানা যায় এই চলচ্চিত্রে।

আরও মজার বিষয় হলো, মতিন সাহেবের মেয়ে যখন তাকে বলছে, বাবা, তোমার লজ্জা করছে না? এর প্রত্যুত্তরে মতিন সাহেব ছিলেন নিশ্চুপ। কারণ, তার কাছে আসলে এর কোনো উত্তর নেই। এই সংকটকে দারুণভাবে তুলে ধরেছেন পরিচালক।

আবার এই মতিন সাহেবই যুদ্ধের সময় তার বাসায় একজন তরুণ মুক্তিযোদ্ধাকে থাকার জন্য জায়গা দেন। যে প্রশিক্ষিত গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ নিয়ে ঢাকায় আসে। তার থাকার জায়গা নেই তাই সে মতিন সাহেবের বাসায় ওঠে। এই বিষয় মতিন সাহেব তার স্ত্রীর সাথে স্বস্তি নিয়ে বলতে পারছেন না। দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছিলেন। মধ্যবিত্তের এই সংকটও প্রবল।

তৃতীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, ক্র্যাক প্লাটুন। মুক্তিযুদ্ধে ক্র্যাক প্লাটুন ছিল ত্রাসের অপর নাম। এরা হুট করে ঢুকে ধুমধাম হামলা চালিয়ে পালিয়ে যেত। মুক্তিযুদ্ধের ২নং সেক্টর এবং কে ফোর্সের প্রধান মেজর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে এই দল গড়ে ওঠে। এই গেরিলা দল অত্যন্ত দক্ষতার সাথে হিট অ্যান্ড রান পদ্ধতিতে অসংখ্য আক্রমণ পরিচালনা করে।

ক্র্যাক প্লাটুন সম্পর্কে আপনি যতই জানবেন ততই রোমাঞ্চিত হবেন। তারা এইভাবে যে পাকিস্তানিদের নাজেহাল করে যায় তা ক্র্যাক প্লাটুনের অপারেশন সম্পর্কে জানলে বোঝা যায়। হলিউড বা বলিউড এই ধরনের ইতিহাসকে যেভাবে সাহিত্য বা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরে, আমাদের এইখানে সেইভাবে তুলে ধরা হয়নি।

শহীদজননী জাহানারা ইমাম তাঁর একাত্তরের দিনগুলি গ্রন্থে ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্যের ঘটনাবহুল দিনগুলো সম্পর্কে লিখেছেন। আজাদ আর তার মাকে কেন্দ্র করে প্রখ্যাত সাহিত্যিক আনিসুল হক লিখেছেন হৃদয়স্পর্শী জনপ্রিয় উপন্যাস মা। সেখানেও ক্র্যাক প্লাটুনের অপারেশনের কথা উল্লেখ আছে। এশিয়াটিক সোসাইটির ঢাকায় গেরিলা যুদ্ধ ১৯৭১ গ্রন্থে এই গেরিলা বাহিনীর দুঃসাহসিক গল্পগুলোর উল্লেখ পাওয়া যায়। ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য হাবিবুল আলম বীর প্রতীকের লেখা ব্রেভ অব হার্ট বইটি ক্র্যাক প্লাটুনের আদ্যোপান্ত জানার প্রামাণ্য দলিল। আর শহীদ বদিউল আলম বদিকে নিয়ে প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ নির্মাণ করেছেন আগুনের পরশমণি

এর বাইরে ক্র্যাক প্লাটুন সম্পর্কে আর কোনো তথ্য নেই। মুক্তিযুদ্ধের এত বছর পরেও আগুনের পরশমণি ব্যতীত আর কোনো চলচ্চিত্রে ক্র্যাক প্লাটুন সম্পর্কে জানার মতো কোনো চলচ্চিত্র নেই।

আগুনের পরশমণি চলচ্চিত্রের মূল চরিত্র বদিউল আলম। একজন তরুণ মুক্তিযোদ্ধা যাকে কেন্দ্র করে গোটা চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রের শুরু পাকিস্তানিদের গাড়িবহর ঢাকা শহর ঘেরাও করেছে সেই দৃশ্যের মধ্য দিয়ে। তাতে ছড়িয়ে পড়ে আতংক। সেই আতংক সাধারণ মানুষকে যেমন তাড়িত করে, তেমনি সরকারি কর্মকর্তা মতিন সাহেবের পরিবারকে আতংকগ্রস্ত করে তোলে।

আগুনের পরশমণি চলচ্চিত্রের মূল চরিত্র বদিউল আলম। একজন তরুণ মুক্তিযোদ্ধা যাকে কেন্দ্র করে গোটা চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রের শুরু পাকিস্তানিদের গাড়িবহর ঢাকা শহর ঘেরাও করেছে সেই দৃশ্যের মধ্য দিয়ে। তাতে ছড়িয়ে পড়ে আতংক। সেই আতংক সাধারণ মানুষকে যেমন তাড়িত করে, তেমনি সরকারি কর্মকর্তা মতিন সাহেবের পরিবারকে আতংকগ্রস্ত করে তোলে।

মতিন সাহেবের দুই মেয়ে রাত্রি, অপলা, স্ত্রী সুরমা, বাড়ির পরিচারিকা বিন্তি সবার মধ্যেই ভয়। কখন পাকিস্তানিরা তাদের বাড়িতে আক্রমণ করে। এই ভয়ের কারণে তাদের চলাফেরার স্বাভাবিক গতি ছন্দহীন হয়ে পড়ে।

মতিন সাহেবের মেয়ে রাত্রি বাড়ির ছাদে যেতে চাইলেও তার মা যেতে দেয় না। কারণ যুবতী মেয়ে এই ঘরে আছে, তা যেন কেউ টের না পায়, এর জন্য এই সতর্কতা। এই সতর্কতা শেষ পর্যন্ত ছিল। শুধু তা-ই নয়, সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে তরুণদের ধরে ধরে ব্রাশফায়ার করে মেরে ফেলা হতো। সেই সংকটপূর্ণ সময়ে মতিন সাহেবের বাড়িতে আসে বদি।

বদি মূলত একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা। দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর বদি অপারেশন পরিচালনা করার জন্য ঢাকায় প্রবেশ করে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে বদিকে আশ্রয় দেওয়া বিপজ্জনক, তা জেনেও মতিন সাহেব তাকে আশ্রয় দেন।

বদিকে আশ্রয় দেওয়া নিয়ে মতিন সাহেবের স্ত্রী সুরমা খুব রাগারাগি করেন। খানিকটা অবহেলা, অবজ্ঞা, ক্ষোভ ছিল বদিকে আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে। সেই অবহেলাও যেন ধীরে ধীরে উবে যায়।

বদি প্রথম যেদিন অপারেশন করতে যায়, সেই দিন সুরমাসহ দুই মেয়ে সবাই উৎকণ্ঠায় ভুগতে থাকে। বদি যেন ফিরে আসে তা-ও তারা বারবার বলতে থাকে। এই যে বদির প্রতি মতিন সাহেবের পরিবারের ভালোবাসা জন্ম নেওয়া, তা দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। এইটাই মূলত মধ্যবিত্তের সংকট।

১৯৭১ সালে মানুষ স্বাধীনভাবে চলাফেরা করত, বাংলায় কথা বলতে পারত। মূল বিষয় হলো, স্বাধীন একটা জাতি হঠাৎ গৃহবন্দি হয়ে পড়ল, কেন এমন হলো, কারণ পাকিস্তানিরা জোর করে তাদের আচার, ব্যবহার, ভাষা, সংস্কৃতি, খাবার বাঙালিদের ওপর চাপিয়ে দেয়। এই চাপিয়ে দেওয়া থেকে মুক্তি পেতে হন্যে হয়ে পড়ছিল সবাই। কিন্তু মুক্তি মিলছিল না।

বাঙালি জাতি হিসেবে সাংস্কৃতিকভাবে জোটবদ্ধ হয়ে থাকতে পছন্দ করে। বাঙালিরা নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়তে চায়, এটা পাকিস্তানিদের ছিল অপছন্দ। তাই তারা নিজেদের সংস্কৃতি চাপাতে চেয়েছিল। এর দারুণ প্রতিবাদ ছিল আগুনের পরশমণি চলচ্চিত্রে। চলচ্চিত্রে মতিন সাহেবের মেয়ে রাত্রি যেভাবে কথায় কথায় গান গেয়ে উঠত, এইটাই মূলত এই দেশের সংস্কৃতি। গান বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। যে গান মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রেরণা দিয়েছে, সেই গানই বাঙালি সংস্কৃতির সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে।

আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে, চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে, উছলে পড়ে আলো বা নেশা লাগিলো রে বাঁকা দুই নয়নে নেশা লাগিলো রে বা আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে, এ জীবন পুণ্য করো দহন-দানে’—গানগুলো শুনলে বোঝা যায়, এই গানগুলোর সাথে আমাদের জীবনযাপন, আচার-ব্যবহার জড়িয়ে আছে। তা প্রকৃতি-প্রতিবেশেরই অংশ। বৃষ্টি বা জ্যোৎস্না দেখে আমরা আবেগতাড়িত হয়ে পড়ি, অনুভূতি জেগে ওঠে তার যথাযথ প্রতিফলন মেলে চলচ্চিত্রে। শুধু সাংস্কৃতিক প্রতিফলনই নয়, হুমায়ূন আহমেদ যেভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন, তার থেকে ব্যতিক্রম ছিল আগুনের পরশমণি

পাকিস্তানিদের সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে যখন গুলিবিদ্ধ হয়ে মতিন সাহেবের বাড়িতে ফেরে, তখন রক্তাক্ত অবস্থায় বদি সুরমাকে তার বোনের চিঠিটা পড়তে বলে। সেই আবেগঘন চিঠি দর্শককে আরও বেশি আবেগতাড়িত করে তোলে। সেই চিঠির রেশ থাকতে থাকতেই আগুনের পরশমণি গানটা শুরু হয়। মৃত্যুপথযাত্রী বদি নিজের দেহখানি যেন দেবালয়ে তুলে ধরেছে।

আগুনের পরশমণি হুমায়ূন আহমেদের প্রথম পরিচালিত চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্র তিনি যেভাবে নির্মাণ করেছেন, এরপর আর কোনো চলচ্চিত্র এই ফর্ম বা স্টাইলে নির্মাণ করেননি। এই চলচ্চিত্র একদম সিকুয়েন্স ধরে ধরে আগানো।

শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, শ্যামল ছায়া, নয় নম্বর বিপদ সংকেত, আমার আছে জল, ঘেটু পুত্র কমলা এই চলচ্চিত্রগুলোর গল্পে সিকুয়েন্সের ধারাবাহিকতা ভেঙে ফেলা হয়েছে। শুরুতেই এমনভাবেই দৃশ্যের অবতারণা করা হয়েছে যাতে দর্শক যেন পরের দৃশ্যে কী হচ্ছে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করে। সেই ধারাবাহিকতা আগুনের পরশমণি চলচ্চিত্রে ছিল না।

তবে আগুনের পরশমণিসহ হুমায়ূনের অন্যান্য চলচ্চিত্রে তার নিজস্ব কিছু স্বকীয়তা রয়েছে। যেমন চড় বা থাপ্পড় দেওয়ার পর চরিত্রগুলো যে অভিব্যক্তিহীন থাকে, তা হুমায়ূনের সাহিত্য, নাটক এবং চলচ্চিত্রে প্রবল।

চলচ্চিত্রের এক দৃশ্যে মতিন সাহেবের স্ত্রী সুরমা, অপলাকে চড় দিল। চড় দেওয়ার দৃশ্য এতটা স্বাভাবিক যে সুরমা অপলাকে কোনো অপরাধের কারণে যে চড় দিয়েছে তা মনেই হয়নি। এটা হুমায়ূনের সাহিত্য, নাটক, চলচ্চিত্র ছাড়া আর কোথাও দেখা মেলে না।

এ রকম আরও কিছু চরিত্র থাকে হুমায়ূনের চলচ্চিত্রে। যেমন বিন্তি পরিবারের সবাইকে নিজের বিয়ের সম্বন্ধের গল্প বলত। এই গল্প বলার ধরন এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হুমায়ূনের চলচ্চিত্র বা গল্প-উপন্যাসেই শুধু দেখা যায়। চলচ্চিত্রের একটা দৃশ্য ছিল এমন, বিন্তি মতিন সাহেবকে হুট করে প্রণাম করেছে। কারণ, তার বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে। এই যে হুট করে এই ধরনের কাজ করার বিষয়গুলো হুমায়ূনের চলচ্চিত্রে প্রবল। আরেকটা মজার চরিত্র হলো, বদির মামা। তিনি যেমন প্রচণ্ড রাগী আবার প্রচণ্ড আবেগী। এই ধরনের চরিত্রেরও প্রচুর দেখা মেলে। এরা সবাইকে কারণে অকারণে বকাঝকা করে। সবাই তাদের প্রতি বিরক্ত হয় আবার তাদের মান্যও করে। এই বিচিত্র চরিত্রগুলো হুমায়ূনের চলচ্চিত্রে প্রচুর।

হুমায়ূনের সাহিত্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো চিঠি। হুমায়ূনের উপন্যাসে কিছু ফর্মুলা থাকে। চিঠিও একটা বড় ফর্মুলা। সেই ফর্মুলা চলচ্চিত্রেও উপস্থিত ছিল।

বদি একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার ছন্নছাড়া জীবনের কথা তার মা, বোন জানে। মা আর বোনের সঙ্গে যখন বদি দেখা করতে গেল, তখন বোন একটা চিঠি লিখে দেয়। সেই চিঠি বদি আগলে রাখে।

পাকিস্তানিদের সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে যখন গুলিবিদ্ধ হয়ে মতিন সাহেবের বাড়িতে ফেরে, তখন রক্তাক্ত অবস্থায় বদি সুরমাকে তার বোনের চিঠিটা পড়তে বলে। সেই আবেগঘন চিঠি দর্শককে আরও বেশি আবেগতাড়িত করে তোলে। সেই চিঠির রেশ থাকতে থাকতেই আগুনের পরশমণি গানটা শুরু হয়। মৃত্যুপথযাত্রী বদি নিজের দেহখানি যেন দেবালয়ে তুলে ধরেছে। রবীন্দ্রনাথ যেমন বলেছেন

আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে।
এ জীবন পুণ্য করো দহন-দানে।।
আমার এই দেহখানি তুলে ধরো,
তোমার ওই দেবালয়ের প্রদীপ করো
নিশিদিন আলোক-শিখা জ্বলুক গানে।।

মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র হিসেবে আগুনের পরশমণি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সেই সময়ের সমাজ, প্রতিবেশ, সংস্কৃতি, ইতিহাসের জন্যও তা খুব তাৎপর্যপূর্ণ, যা এখনো দর্শকের মনে গেঁথে আছে।

বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে নির্মিত আগুনের পরশমণি [১৯৯৪] শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ আটটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। হুমায়ূন প্রথম চলচ্চিত্র দিয়েই নিজের অবস্থান প্রমাণ করে দেন, যে কারণে তাঁকে পাঠক-দর্শক আজীবন মনে রাখবেন।