তুফান মেল
বৃষ্টিটা সন্ধ্যার পর থেকে আবার বেড়েছে। গ্রামের রাস্তাঘাট জল-কাদায় ভিজে একাকার। আজকাল অবশ্য সব গ্রামেই অনেক পাকা রাস্তা হয়েছে, বিদ্যুতের আলোও এসেছে ঘরে ঘরে। জয়নালের ঘরটি ভাঙাচোরা টিনের হলে কী হবে, সে ঘরেও এখন বিদ্যুতের আলো জ্বলে। কিন্তু আজ সন্ধ্যার পর থেকে চারদিকে ভীষণ অন্ধকার। এ রকম ঝড়-বৃষ্টি হলেই বিদ্যুতের আলো নিভে যায়। এরপর কখন যে আলো আসবে, কেউ জানে না। এ রকম আগেও হয়েছে অনেকবার। সকাল থেকেই আকাশটা আজ মেঘলা ছিল, থেকে থেকে ঝুম বৃষ্টিও ঝরছিল। সন্ধ্যার পর থেকে অন্ধকার ঘরে বৃষ্টির দাপট দেখে জয়নাল রীতিমতো ঘাবড়ে যায়। এমনিতেই ঘরের ভাঙাচোরা চাল বেয়ে বৃষ্টি গড়িয়ে পড়ে। ঘরের ভেতর বিভিন্ন জায়গায় থালা, ঘটি ইত্যাদি দিয়ে প্রতিবারের মতো এবারও বৃষ্টির হাত থেকে ঘর বাঁচানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে জয়নাল। কিন্তু আজ তার ঘরে বিছানার প্রায় অর্ধেকটাই ভিজে গেছে। আজকের দিনটা অন্য দিনের মতো হলে কোনো কথা ছিল না, কিন্তু সমস্যা ছেলে বাবলুকে নিয়ে। জয়নালের ছেলে বাবলুর এমনিতে একটু ঠাণ্ডা লাগলে জ্বর এসে যায়। ক-দিন থেকে জ্বরে ভুগছেও ছেলেটা। তারপর আজকের এই ধুম বৃষ্টিতে জ্বরটা মনে হয় আরও বেড়ে গেছে। বিছানার এক কোণে জয়নালের বউ রাবেয়া ছেলেকে কোলে নিয়ে বসে আছে। সকাল থেকে মুখে এতটি দানাও কাটেনি সে। অসুস্থ ছেলেকে একা রেখে কী করে খেতে বসে রাবেয়া। জয়নালেরও ওই একই অবস্থা। ঘরের বাইরে আশপাশে ঘোরাফেরা করে আর বারবার ঘরে এসে রাবেয়ার কাছে জানতে চায়, জ্বর কি একটু কম মনে হয়?
করোনাভাইরাসে প্রায় দু-মাস ধরে সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে। শহর-গ্রাম সবখানে একই অবস্থা। সাধারণ মানুষের আয় রোজগারের পথও সব দিক থেকে এখন বন্ধ। জয়নালের রোজগার বলতে মাত্র একখানা রিকশা-ভ্যান। জয়নালের কাছে এটি কেবল রিকশা-ভ্যান হলেও গ্রামের সাধারণ মানুষদের কাছে সেটি তুফান মেল। জয়নাল তার এই তুফান মেলে গ্রামের লোকজনকে রোজ উপজেলার বাজারে পৌঁছে দেয়। অনেকে খেত থেকে তাজা শাকসবজি তুলে পথের ধারে জয়নালের তুফান মেলের জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকে। তারা জয়নালের ভ্যানে করে তাদের কৃষিপণ্য বাজারে বেচতে নিয়ে যায়। ফিরতি পথে আবার গ্রামের স্কুল ছুটি হলে ছোট ছেলেমেয়েকে জয়নাল তার ভ্যানে করে বিনা ভাড়ায় বাড়িও পৌঁছে দেয়। জয়নালের তুফান মেল বাজার থেকে কখন গাঁয়ের দিকে ফিরবে, সেই আশায় স্কুলের ছেলেমেয়েরা দল বেঁধে পথের ধারে অপেক্ষা করে। দূর থেকে দেখা পেলেই ছেলেমেয়ের দল আনন্দে হাততালি দিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, তুফান মেল! স্কুলের ছেলেমেয়েদের নিজের ভ্যানে করে গাঁয়ের পথে নিয়ে যেতে যেতে জয়নাল বাবলুর কথা ভাবে। আর বছর দুই পরেই সে তার ছেলে বাবলুকেও স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবে। তারপর স্কুলের আর সব ছেলেমেয়ের সাথে বাবলুও জয়নালের তুফান মেলে বাড়ি ফিরবে।
কিন্তু প্রায় দু-মাস ধরে স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। স্কুলের ছেলেমেয়েরা এখন আর আগের মতো পথের ধারে জয়নালের তুফান মেলের জন্য অপেক্ষা করে না। আগে রাত ভোর হতে না হতেই রিকশা-ভ্যান নিয়ে জয়নাল ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু এখন আর তার কোনো তাড়া নেই। ভ্যানে সাধারণ যাত্রী পারাপারও এখন বন্ধ হয়ে গেছে। যারা জয়নালের ভ্যানে এত দিন শাকসবজি কিংবা দুধ-ছানা নিয়ে বাজারে বেচতে যেত, এখন কেবল তারাই ভরসা। তাদেরকেই এখন মালামালসহ জয়নাল তার তুফান মেলে বাজারে পৌঁছে দিয়ে আসে। আগের মতো এখন আর জয়নালের রোজগার নেই। তারপরও এখনকার রোজগারে তার ছেলে-বউকে নিয়ে কোনোভাবে সংসারটা চলে যায়। সংসার বেশ ভালোভাবেই চলছিল। হঠাৎ ছেলেটার যে কী হলো, এখন তাকে নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। বাবলুর এই সমস্যা অনেক আগে থেকেই। জন্মের পর থেকে অল্প ঠাণ্ডাতেই ওর জ্বর এসে যায়। প্রথম দিকে তেমন কিছু মনে হয়নি। আশপাশের অনেকে বলত, ছেলেমেয়ের নানা সমস্যা হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে। সেই আশাতেই রাবেয়া-জয়নাল বুক বেঁধেছিল। কিন্তু দিন চলে যায়, ছেলের ঠাণ্ডা লেগে জ্বর আসার সমস্যাটা কিছুতেই যায় না। এরপর রাস্তার মোড়ে আজিজ ডাক্তারের কাছে জয়নাল তার ছেলেকে কয়েকবার নিয়ে গেছে। কিন্তু আজিজ ডাক্তারের ওষুধেও বাবলুর অসুখ সারেনি। শেষ পর্যন্ত আজিজ ডাক্তার একদিন অনেকক্ষণ বাবলুর হাতের নাড়ি ধরে বসে রইলেন। তার মুখ-চোখও কেমন গম্ভীর। জয়নাল মনে মনে বেশ ভয় পেয়ে যায়। রাবেয়ার কোলে বাবলু, তাই আজিজ ডাক্তারের সামনে রাবেয়াকে কিছু বলতেও পারে না। এমন সময় আজিজ ডাক্তার নিজেই জয়নালকে বললেন, শোনো জয়নাল, তোমাকে একটা কথা বলি।
বলেন ডাক্তারসাব।
জয়নালের কণ্ঠে উদ্বেগ আরও বেড়ে যায়। আজিজ ডাক্তার তার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, ছেলেকে তুমি একবার উপজেলার হাসপাতালে নিয়ে যাও।
উপজেলার হাসপাতালে ক্যান ডাক্তারসাব, অবস্থা কি খুবই খারাপ?
জয়নালের প্রশ্নে তখন দারুণ উৎকণ্ঠা। বিষয়টা বুঝতে পেরে বয়স্ক আজিজ ডাক্তার এবার মৃদু হেসে বলেন, আরে না না, তেমন কিছু না।
তাইলে হাসপাতালের কথা কইলেন ক্যান ডাক্তারসাব?
বোঝো না কেন, হাসপাতালে বড় বড় ডাক্তার আছে।
আপনিও তো এই এলাকার অনেক বড় ডাক্তার।
আমি সে কথা বলিনি। হাসপাতালে শিশুরোগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আছে। সেই ডাক্তারের কাছে একবার তোমার ছেলেকে নিয়ে যাওয়া উচিত।
আর ওষুধপত্র?
হাসপাতালে বিনা মূল্যে ওষুধপত্রও পাওয়া যাবে। আমার মনে হয় তোমার হাসপাতালেই যাওয়া উচিত।
শেষ পর্যন্ত আজিজ ডাক্তারের পরামর্শে ছেলে আর বউকে সাথে নিয়ে জয়নাল একদিন হাসপাতালে গিয়ে হাজির হয়। হাসপাতালের ডাক্তাররা বাবলুকে পরীক্ষা করে ওষুধ দেন। তারা বলেন, বড় হওয়ার সাথে সাথেই অসুখটা সেরে যাবে। তবে আপাতত কয়েকটা বছর একটু সাবধানে থাকা ভালো।
হাসপাতালের কাগজপত্র দেখে বয়স্ক আজিজ ডাক্তার মাথা নেড়ে জয়নালকে বললেন, আমিও এমনটাই আশঙ্কা করেছিলাম।
রোগটা কি খুবই ভয়ানক ডাক্তারসাব?
আজিজ ডাক্তার এবার জয়নালকে আশ্বস্ত করে বলেন, আরে না না, তেমন কোনো ভয়ের কিছু নাই। এটা একধরনের নিউমোনিয়ার লক্ষণ। তবে—
তবে কী ডাক্তারসাব?
মানে এ ধরনের অসুখ সচরাচর দেখা যায় না।
তাইলে কী উপায়?
উপায় একটাই, ছেলেকে সাবধানে রাখতে হবে।
কী রকম সাবধান?
কোনোভাবেই ঠাণ্ডা লাগানো চলবে না।
সেই থেকে জয়নাল আর রাবেয়া ছেলেকে সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখে। জয়নাল সারা দিন পথে পথে ভ্যান চালায় ঠিকই কিন্তু তারও মন পড়ে থাকে নিজের ওই ভাঙাচোরা ছোট্ট ঘরখানার দিকে। সেখানে ছেলেটার হঠাৎ ঠাণ্ডা লেগে গেল কি না, পানিতে বেশি ভিজলো কি না। সারা দিন শুধু এসব চিন্তা। বাবলুর মুখে সবে আধো আধো কথা ফুটেছে, হাঁটতেও শিখেছে। সবার কাছ থেকে জয়নালের রিকশা-ভ্যানের নাম ‘তুফান মেল’ শুনে শুনে সে এখন নিজেও বলে ‘তুথান তেল’। ঘরের বাইরে তাই রিকশা-ভ্যানের আওয়াজ পেলেই ‘তুথান তেল, তুথান তেল’ বলে ঘর থেকে বাইরে ছুটে আসে। আর জয়নালও তখন রিকশা-ভ্যানটি ঘরের সামনে রেখে দু-হাত বাড়িয়ে ছেলেকে আদর করে কোলে তুলে নিতে যায়। মুহূর্তেই যেন সে তার সারা দিনের ক্লান্তি ভুলে যায়। কিন্তু ঠিক তখনই ঘর থেকে রাবেয়া ছুটে এসে বাবলুকে কোলে তুলে নেয়।
এইডা কী হইলো?
কী হইলো মানে?
আমার ছেলেরে কি আমি একবার কোলেও নিতে পারবো না?
জয়নালের অভিমান-ভরা কণ্ঠ শুনে মুচকি হাসে রাবেয়া। হেসে বলে, বাইরে থিকা আসছো। আগে হাত-মুখ ধোও, পরিষ্কার হও। তারপর ছেলেরে কোলে নাও।
ছেলের জন্য শখ করে জয়নাল একটি টিনের তিন চাকার খেলনা গাড়ি কিনে দিয়েছে। গাড়িটি নিয়ে বাবলু সারা দিন ‘তুথান তেল, তুথান তেল’ বলে খেলা করে। আশপাশের ঘর থেকেও ওর সমবয়সী ছেলেমেয়েরা এসে যোগ দেয় বাবলুর সাথে। দিনগুলো এভাবে বেশ ভালোই চলছিল। কিন্তু বলা নেই কওয়া নেই, হঠাৎ করে করোনা মহামারি এসে হাজির। সবার জীবন থেকে চির চেনা দিনগুলো যেন কোথায় হারিয়ে গেল। জয়নাল অল্পস্বল্প কাজ করলেও খেয়ে পরে কোনোমতে চলে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ছেলেটা জ্বরে পড়ায় এবার সে রীতিমতো দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। কারণ, আজকাল ডাক্তারও রোগী দেখা বাদ দিয়েছেন। এরই মধ্যে জয়নাল একদিন আজিজ ডাক্তারের কাছেও গিয়েছিল। যদিও আজিজ ডাক্তার যে ঘরে বসে এত দিন রোগী দেখতেন, এখন আর তিনি সেখানে বসেন না। তার ঘরের দরজা সব সময় বন্ধ থাকে। তবে চেনাজানা রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া মুশকিল। তাই করোনার অসুখ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তিনি ঘরের ভিতরে বসেই বাইরে দাঁড়ানো রোগীর অসুখের বিবরণ শুনে ওষুধের প্রেসক্রিপশন লিখে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেন। রোগীরাও ডাক্তারের ফির টাকা জানালা দিয়ে ঘরে ছুড়ে দেয়। এই রকম অবস্থার মধ্যে একদিন জয়নাল আসে ছেলে বাবলুর জ্বরের কথা বলতে। জয়নালের কথা শুনে ঘরের ভেতরে বসে বয়স্ক আজিজ ডাক্তারের কপালে এবার ভাঁজ পড়ে। চেয়ার ছেড়ে আজিজ ডাক্তার জানালার কাছে এসে মুখ বের করে বলেন, জয়নাল দিন সময় ভালো না। এবার এক কাজ করো।
কী কাজ ডাক্তারসাব?
ছেলেটাকে একবার করোনার পরীক্ষা করিয়ে নিয়ে এলে ভালো হয়।
কন কি ডাক্তারসাব, করোনার পরীক্ষা ক্যান?
আহা, বোঝো না কেন, বললামই তো এখন দিনসময় ভালো না।
কিন্তু ডাক্তারসাব, আমার ছেলের তো ঠাণ্ডা লাগলেই জ্বর আসে। এইডা আপনি নিজেও জানেন।
হ্যাঁ, সে আমি জানি। তারপরও কই, একবার পরীক্ষা করানো ভালো।
আজিজ ডাক্তারের পরামর্শে জয়নাল ছেলেকে নিয়ে উপজেলার হাসপাতালে করোনার পরীক্ষা করাতে যায়। সেখানে মানুষজনের অনেক ভিড়। তারপরও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে একবার নয়, পর পর দুবার পরীক্ষা করানো হয়। কিন্তু দুবারের রিপোর্টই ভালো আসে। অর্থাৎ ছেলের শরীরে করোনার কোনো রকম লক্ষণ নেই। কিছুটা হলেও জয়নালের মনে স্বস্তি ফিরে আসে। করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে জয়নাল আজিজ ডাক্তারের কাছে ছুটে যায়। আজিজ ডাক্তারও রিপোর্ট দেখে বলেন, যেমন ভেবেছিলাম তেমন কিছু হয়নি। তবে একটা কথা মনে রেখো।
কী কথা ডাক্তারসাব?
কোনোভাবেই যেন ঠাণ্ডা না লাগে।
এইডা আমরা খুবই খেয়াল রাখি।
হ্যাঁ, এই কথাটা ভালো করে মনে রেখো।
তার মানে ছেলেকে আরও সাবধানে রাখা দরকার। কথাটা রাবেয়াকে আরও ভালোভাবে বুঝিয়ে বলা দরকার। তাড়াতাড়ি রিকশা-ভ্যানটা নিয়ে দ্রুত ঘরের সামনে এসে জয়নাল রীতিমতো অবাক। কারা যেন তার ঘরের চালে একটি লাল পতাকা বেঁধে দিয়েছে। জয়নাল এই পতাকার মানে জানে। যে বাড়িতে করোনা রোগী আছে, আজকাল সেই বাড়িতেই লাল রঙের পতাকা লাগানো হয়। কিন্তু জয়নালের ঘরে তো কোনো করোনা রোগী নেই। আজিজ ডাক্তার সন্দেহ করে বাবলুর করোনা পরীক্ষা করাতে বলেছিলেন, জয়নাল সেই পরীক্ষা করিয়েছে। কিন্তু পরীক্ষায় বাবলুর করোনা ধরা পড়েনি। তাহলে জয়নালের ঘরের চালে এই লাল পতাকা কেন, কারা এই পতাকা লাগাল? আর এই পতাকা একবার যার ঘরে লাগানো হয়, তার ঘরের বাইরে বের হওয়া কিংবা কাজকর্ম করা—সব একেবারে বন্ধ। তবে কি জয়নালের রিকশা-ভ্যান নিয়ে বাইরে বের হওয়া আজ থেকে বন্ধ হয়ে গেল। যাক, এমন হলেও অসুবিধা নেই। বরং ভালোই হলো। রাবেয়াকে একা সারা দিন ছেলেকে সামলাতে হয়। কটা দিন জয়নাল ঘরে থাকলে সে ছেলের কাছেই থাকতে পারবে। এসব নিয়ে খারাপ কিছু ভাববার মতো সময় নেই তার। এখন ছেলেকে কীভাবে সুস্থ করে তোলা যায়, সেটাই আসল কথা।
বাবলুর জ্বরটাও আবার বেড়েছে। সকালের দিকে জ্বরটা বোধ হয় একটু কম ছিল কিন্তু বেলা বাড়ার সাথে সাথে জ্বরটাও বাড়তে থাকে। সকালের দিকে বৃষ্টিও কম ছিল। আজ সারা দিন ধরে কখনো বেশি বৃষ্টি আবার কখনো কম। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে আবার মুষলধারে বৃষ্টি নামে। সেই সাথে ঠাণ্ডা হাওয়াও বইতে শুরু করে। এবার আশঙ্কা আরও বাড়ে। জয়নালের ঘরে আজ সারা দিন চুলা জ্বলেনি। চুলা জ্বালাবেই বা কে, সকাল থেকে রাবেয়া বাবলুকে কাঁথা জড়িয়ে বুকের মধ্যে চেপে ধরে বসে আছে। ছেলেটা সকাল থেকে তেমন কিছু খায়ওনি। রাবেয়া দু-একবার ওর মুখে একটুখানি বিস্কুটের টুকরো ভেঙে তুলে দেবার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু খাবার পরপরই বমি করে ছেলেটা সব ফেলে দিয়েছে। তারপর আর কিছুই ওকে খাওয়ানো যায়নি। জয়নাল ঘর থেকে বার হয়ে পায়চারি করে আর একটু পরপরই এসে রাবেয়াকে জিজ্ঞেস করে, জ্বরটা কি একটু কম মনে হয়?
রাবেয়া নিজের গালের সাথে ছেলের কপাল ঠেকিয়ে জ্বরের তাপ অনুভব করার চেষ্টা করে। তারপর শুকনো মুখে বলে, বুঝি না।
ভোররাতের দিকে বৃষ্টি আবার একটু কমে আসে। বাবলুর শরীরের তাপও বোধ হয় কিছুটা কম মনে হয়। ছেলেটা জ্বরের ঘোরেই আধো আধো কণ্ঠে বলে, আমাল তুথান মেল কই, তুথান মেল!
জয়নাল ছুটে গিয়ে ঘরের কোণে পড়ে থাকা তিন চাকার খেলনা গাড়িটা অসুস্থ ছেলের হাতে তুলে দেয়। বাবলু ওর ছোট্ট দু-টি হাতে খেলনা গাড়িটা আঁকড়ে ধরে। জয়নাল নিজে এবার কাঁথা জড়ানো ছেলের কপাল স্পর্শ করে। তারপর বলে, জ্বরটা এইবার মনে হয় ছাড়ছে। রাবেয়া কিছু না বলে ছেলের কপালের সাথে নিজের গাল ঠেকিয়ে তাপ অনুভব করার চেষ্টা করে।
কাজীপাড়ার মসজিদ থেকে ফজরের আজান ভেসে আসে। বিছানার এক পাশে বসে জয়নালের চোখে সামান্য তন্দ্রার মতো এসেছিল। আজানের আওয়াজে জেগে ওঠে জয়নাল। রাতভর ক্লান্ত রাবেয়া আর জয়নালের ওপর থেকে রাতের অন্ধকার যেন সত্যিই এবার কেটে যায়। দরজা খুলে ঘরের বাইরে এসে দাঁড়ায় জয়নাল। হঠাৎ ভোরের দমকা হাওয়া এসে লাগে চোখে-মুখে। আর ঠিক তখনই ঘর থেকে চিৎকার করে ওঠে রাবেয়া, একবার জলদি আসো।
রাবেয়ার ডাক শুনে দ্রুত ঘরে ছুটে যায় জয়নাল, কী হইছে?
বাবুর শরীলডা এতো ঠাণ্ডা লাগে ক্যান?
মনে হয় ঘাম দিয়া জ্বর ছাড়তাছে তাই—
না না, সেই রকম কিছু না।
তাইলে কী রকম?
জয়নাল এবার নিজে ছেলের শরীরে হাত রাখার জন্য কাঁথাটা সরিয়ে দেয়। তখনো ছেলের দুই হাতের মুঠোয় ধরা ওর খেলনা তিন চাকার গাড়িটা। ছেলেটার শরীর বেশ ঠাণ্ডা। ঠোঁট দুটো বিড়বিড় করছে শুধু। রাবেয়া বলে, আমার বাবলু মনে হয় কিছু কইতে চায়?
কী কইতে চায় আমার বাবলু?
বাবলু কী বলতে চায় জানার জন্য ছেলের মুখের কাছে কান রেখে শোনার চেষ্টা করে জয়নাল। ছোট্ট ঠোঁট দুটো থেকে তখন একটা অস্ফুট শব্দই তখন বারবার শোনা যাচ্ছে, তুথান মেল।
জয়নাল রাবেয়াকে আশ্বস্ত করে বলে, বাবলু ওর তুফান মেলের কথা কয়।
কিন্তু রাবেয়ার কাছে বিষয়টা ভালো মনে হয় না। সে বলে, আমার কাছে কিন্তু ভালো ঠেকে না।
কী কও?
হ, ঠিকই কই।
তাইলে এখন কী উপায়?
একবার ডাক্তারসাবের কাছে গেলে হয় না?
ডাক্তারসাব!
হ, বাবলুরে একবার ডাক্তারসাবের কাছে নিতে পারলে মনে হয় ভালো হয়।
জয়নাল আপত্তি করে বলে, ডাক্তারসাব এখন কোনো রোগী দেখেন না। ঘরের ভিতর থিকা শুধু ওষুধ লেইখা দেন।
তারপরও চলো না একবার যাই। চেষ্টা করতে দোষ কী।
আচ্ছা, চলো।
রাবেয়ার কথায় জয়নাল শেষ পর্যন্ত তার রিকশা-ভ্যান তুফান মেল নিয়ে রওনা হয়। রাবেয়া বাবলুকে কাঁথা জড়িয়ে বুকের মধ্যে চেপে ধরে ভ্যানে বসে থাকে। রাতের অন্ধকার সরে গিয়ে তখন কেবল সকালের আলো ফুটতে শুরু করেছে। রাস্তায় কারও দেখা নেই। শেষ রাতের দিকে বৃষ্টি বন্ধ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু রাতভর বৃষ্টির ফলে রাস্তার এখানে সেখানে বেশ জল কাদা জমে গেছে। রাবেয়া বারবার ছেলের শরীরের উত্তাপ নেবার চেষ্টা করে আর বলে, তোমার তুফান মেল আরও জলদি চালাও।
জয়নালও দম বন্ধ করে দ্রুত থেকে আরও দ্রুত রিকশা-ভ্যানের প্যাডেল চালাতে থাকে। রাস্তার কাদা-জল পেরিয়ে ভোরের হালকা ঠান্ডা হাওয়ার ভিতর দিয়ে সাঁ সাঁ করে জয়নালের তুফান মেল ছুটে চলে।
আজিজ ডাক্তার সবেমাত্র ফজরের নামাজ সেরে ঘরের জানালা খুলেছেন। দূর থেকে হঠাৎ জয়নালকে তার রিকশা-ভ্যান নিয়ে ছুটে আসতে দেখে অবাক হন। এত সকালে তো জয়নাল কখনো আসে না। তবে কি ওর ছেলের অসুখটা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে গেছে। ভ্যানে রাবেয়াকে দেখেও চিনতে কষ্ট হয় না। রাবেয়ার কোলে কাঁথায় জড়ানো শিশু। জয়নাল ওর রিকশা-ভ্যান নিয়ে পৌঁছানোর আগেই আজিজ ডাক্তার স্টেথিস্কোপ হাতে ঘরের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসেন। জয়নাল ভ্যান থেকে নেমে বলে, ডাক্তারসাব, আপনে ঘরের ভিতর থিকাই কন, এখন কোন্ ওষুধ দরকার।
রাবেয়ার কোলে কাঁথায় জড়ানো বাবলুকে দেখে স্মিত হেসে আজিজ ডাক্তার বলেন, আগে তোমার ছেলেকে দেখতে দাও।
আপনি নিজে আমার ছেলেরে দেখবেন ডাক্তারসাব?
না দেখে উপায় কী?
কিন্তু এখন তো কোনো ডাক্তার রোগীর গায়ে হাত দিয়া দেখে না।
বয়স্ক আজিজ ডাক্তার আবারও হাসলেন। জয়নালের রিকশা-ভ্যানে বসা রাবেয়ার কোলে কাঁথা জড়ানো বাবলুকে দেখার জন্য এগিয়ে যেতে যেতে বলেন, কিন্তু আজ তোমার ছেলেকে দেখতে হবে। না দেখে এখন আর কোনো ওষুধ দেওয়া যাবে না।
আজিজ ডাক্তার এবার নিজেই বাবলুর গায়ে জড়ানো কাঁথা সরিয়ে প্রথমে ওর কপালে হাত রাখেন, তারপর বুকে। বেশ কিছুক্ষণ বাবলুর শরীরে হাত রেখে বোধ হয় কিছু বোঝার চেষ্টা করেন। তারপর স্টেথিস্কোপ কানে ঝুলিয়ে বাবলুর বুক পরীক্ষা করতে থাকেন, একবার নয়, বারবার চলতে থাকে সেই পরীক্ষা। ভোরের ঠাণ্ডা হাওয়াতেও বয়স্ক ডাক্তার আবদুল আজিজের কপালে এর মধ্যেই বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে ওঠে। জয়নাল অধৈর্য হয়ে প্রশ্ন করে, কেমন বুঝলেন ডাক্তারসাব?
রাবেয়া বোধ হয় আগেই কিছু একটা আন্দাজ করতে পারে। সে কিছু না বলে হঠাৎ চিৎকার করে ওঠে, ও আল্লাহ্ গো!
জয়নাল হঠাৎ নিজেও কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে। নিজের পা আর হাত দুটোকে তার অসম্ভব ভারী মনে হয়। তবু অনেক কষ্টে সামান্য এগিয়ে যায় জয়নাল। আজিজ ডাক্তার তখনো বারবার বাবলুর শরীর পরীক্ষা করছেন। চোখ থেকে তার চশমা ঝুলে পড়েছে। বোধ হয় তখনো তিনি ওই ছোট্ট শরীরের কোনো এক স্থান থেকে একটুখানি স্পন্দন খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলেন। জয়নালের কণ্ঠেও তখন প্রচণ্ড অস্থিরতা। সে যেন আর নিজেকে কিছুতেই ধরে রাখতে পারছে না। আজিজ ডাক্তারের সামনে এসে বলে, কেমন দেখলেন ডাক্তারসাব, এখনো আশা আছে তো?
জয়নালের কথা শুনে আজিজ ডাক্তার যেন সংবিৎ ফিরে পান। বাবলুর শরীর থেকে তিনি তার স্টেথিস্কোপ এবার সরিয়ে নেন। বয়স্ক মানুষটা মাথা নিচু করে জয়নালের কাঁধে পরম স্নেহে হাত রাখেন। কী বলবেন মনে মনে ভেবে নেন একবার। তারপর বলেন, আর কোনো আশা নেই জয়নাল।
এর মধ্যেই ভোরের অন্ধকার সরে গিয়ে সকালের আলো ফুটেছে। আকাশে এখন আর বৃষ্টির মেঘ নেই। মনে হচ্ছে অনেক দিন পর আজ চারদিকে সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই ঘর ছেড়ে পথে বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু জয়নালের ঘরের আশপাশে সবার ঘরের দরজা আজ কেন যেন বন্ধ। জয়নাল তার প্রতিবেশী প্রত্যেকের দরজায় গিয়ে কড়া নাড়ে। মিনতি করে বলে, আমার ছেলেটার দাফন দিতে হবে, আপনারা দয়া করে বাইরে আসেন।
কিন্তু কেউ দরজা খোলে না। অনেকে ঘরের ভেতর থেকেই বলে দেয়, করোনা রোগীর দাফনে যাওয়া সম্ভব না। জয়নাল হাতজোড় করে বলে, আল্লাহর কসম—আমার বাবলুর করোনা হয় নাই। অনেক দিন আগে থিকাই ছেলেটার আমার ঠাণ্ডার অসুখ। আপনাদের বিশ্বাস না হইলে আজিজ ডাক্তারের কাছে গিয়া জিগান।
কিন্তু ডাক্তারের কাছে গিয়ে জেনে আসার মতো কারও সময় নেই। তাই কেউ ঘর থেকে বের হয় না। রড-মিস্ত্রি নুরুল হক তো স্পষ্টই বলে দেয়, ছেলেমেয়ে নিয়া সংসার করি। তাই তোমার ছেলের দাফনে যাইতে পারব না, আমারে মাফ করো।
অথচ এই নুরুলের গর্ভবতী স্ত্রীকে সেবার প্রচণ্ড ঝড়-জলের রাতে জয়নাল তার তুফান মেলে উপজেলার হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছিল। কী করে মানুষ এত পাল্টে যায়?
রাস্তায় মুখে মাস্ক পরা ইসমাইল সাহেবকে দেখা যায়। উনি এলাকার মসজিদের ইমাম। বড়ই স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ। মসজিদে প্রতিদিনই তিনি মুসল্লিদেরকে মহামারির সংক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করার পরামর্শ দেন, সবার খোঁজখবর রাখেন। এলাকার সবাই তাঁকে মান্য করে। জয়নাল এবার ছুটে যায় তাঁর কাছে, হুজুর সালামালেকুম।
ইমাম সাহেব জয়নালকে হঠাৎ দেখে যেন ভূত দেখার মতো চমকে ওঠেন। নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে বলেন, ওয়ালাইকুম আসসালাম। শুনলাম তোমার ছেলেটার ভীষণ অসুখ।
হ, কঠিন অসুখ হইছিল। আল্লাহ্পাক আইজ তারে দুনিয়া থিকা তুইলা নিছেন।
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
হুজুর, ছেলেটার জানাজা পড়াইতে হবে—
জয়নালের কথা শেষ হওয়ার আগেই ইসমাইল সাহেব বলেন, এখন আর সেই দিন নাই। এই সব রোগীর জানাজা, দাফন-কাফন সব ব্যবস্থা তোমার নিজেরই করতে হবে। তবে তোমারে একখান পরামর্শ দেই, গোরস্থানে দাফন করা যাবে না।
তাইলে কই যাবো হুজুর?
নদীর ধারে গিয়া নিজেরাই দাফনের ব্যবস্থা করো।
ইমাম সাহেব আর দাঁড়ালেন না। জয়নালকে পাশ কাটিয়ে দ্রুত চলে গেলেন। জয়নাল অবাক হয়ে যায়, এত দিনের চেনা-জানা মানুষগুলা রাতারাতি কীভাবে সবাই অচেনা হয়ে গেল। মনে হয় কেউ কাউকে এখানে চেনে না। অথচ জয়নাল তো যখন-তখন যে কেউ ডাক দিলেই তার তুফান মেল নিয়ে হাজির হয়েছে সব সময়। রাবেয়া তখনো একইভাবে রিকশা-ভ্যানে শিশু বাবলুকে কাঁথায় জড়িয়ে বুকের মধ্যে চেপে বসে আছে। ঘর থেকে কোদাল বের করে রিকশা-ভ্যান তুফান মেল নিয়ে জয়নাল এবার নদীর ধারে এগিয়ে চলে। তারপর নিজেই কোদালে মাটি কেটে ছেলের জন্য কবর তৈরি করে জয়নাল। বৃষ্টিভেজা নরম মাটিতে কবর খুঁড়তে বেশি সময় লাগে না, তেমন পরিশ্রমও হয় না। তবে রাবেয়ার কোল থেকে নিষ্প্রাণ সন্তানকে তুলে নিতে গিয়ে হাঁপিয়ে ওঠে জয়নাল। কী অসম্ভব ভারী ওই ছোট্ট শরীরটা। মনে হয় কঠিন পাথরখণ্ডের চেয়েও বেশি ভারী। কই, আগে তো কখনো বাবলুকে কোলে নিতে এমন মনে হয়নি। তবে আজ কী হলো। রাবেয়া চুপচাপ বসে থাকে, কিছুই বলে না। সন্তানের ছোট্ট শরীরটাকে কবরে শুইয়ে দিয়ে মাটি চাপা দেবার পর এই প্রথম চিৎকার করে কেঁদে ওঠে জয়নাল, বাপ আমার, তোরে নিজের হাতে আমি আইজ গোর দিলাম!
সেদিনও সন্ধ্যার পর থেকে থেমে থেমে আবার বৃষ্টি শুরু হলো। সারা দিন জয়নাল ঘরের বারান্দায় বসে আছে চুপচাপ। রাবেয়াও যেন কেমন হয়ে গেছে। তার মুখেও কোনো কথা নেই। ছেলের তিন চাকার খেলনা গাড়িটি হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে আছে। দিনভর চুলাও জ্বলেনি তাদের ঘরে। পাশের ঘরের নুরুলের স্ত্রী তাদের জন্য কিছু খাবার পাঠিয়েছে। কিন্তু সে খাবার অমনি পড়ে আছে, জয়নাল বা রাবেয়া—কেউ ধরেও দেখেনি।
রাতে বৃষ্টির সাথে সাথে হঠাৎ মেঘের গর্জনও বেড়ে যায়। প্রচণ্ড বিদ্যুতের ঝলকানির পর আকাশ ভেঙে পড়ার মতো বিকট গর্জনে বজ্রপাত হয়। সারা দিন পরিশ্রমের পর জয়নাল গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে পড়েছিল। বজ্রপাতের শব্দেও তার ঘুম ভাঙেনি। কিন্তু রাবেয়া তাকে ঠেলা দিয়ে জাগিয়ে দেয়, জলদি ওঠো।
ঘুমের চোখেই বিছানায় উঠে বসে জয়নাল। হাই তুলে বলে, কী হইছে?
রাবেয়া ব্যস্ত কণ্ঠে বলে, দেখো না কেমন বিষ্টি শুরু হইছে!
হাই তুলে জয়নাল বলে, হ, বিষ্টিই তো।
তোমার তুফান মেল নিয়া জলদি চলো।
রাবেয়ার কথা শুনে রীতিমতো অবাক হয় জয়নাল। সে বলে, এই বিষ্টির মইধ্যে এতো রাইতে কই যাইবা বাবলুর মা?
আমার বাবলু যে একা অন্ধকারের মধ্যে বিষ্টিতে ভিজতাছে, তোমার সেই খেয়াল আছে?
বাবলুর মা, এই সব তুমি কী কও?
ঠিকই কই। জানো না, ছেলেটার আমার ঠাণ্ডার অসুখ। এই বিষ্টিতে ভিজলে ওর অসুখটা আরও বাইড়া যাবে। ডাক্তার কইছে না?
অ্যাঁ?
চলো, জলদি চলো।
প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও রাবেয়া ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। রাবেয়াকে থামাতে জয়নাল বিছানা থেকে নেমে দ্রুত বাইরে আসে। কিন্তু রাবেয়া ততক্ষণে বৃষ্টিতে ভিজে জয়নালের তুফান মেলে উঠে বসেছে। সে জানে, জয়নালের তুফান মেল বাতাসেরও আগে ছুটতে পারে। এখন যে তাড়াতাড়ি ওদের নদীর ধারে পৌঁছনো দরকার।