একক গল্পের বিপদ

 

চিমামান্দা নগোজি আদিচে

কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও নাট্যকার। নাইজেরিয়ার ইনুগু শহরে এক ইবু নৃগোষ্ঠী পরিবারে ১৯৭৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৭ সালে চিমামান্দা নগোজি আদিচে কিছু কবিতা প্রকাশ করেন এবং ১৯৯৮ সালে ফর লাভ অফ বিয়াফিরা নামের একটি নাটক রচনা করেন। ২০০২ সালে তার ছোটগল্প ‘ইউ ইন আমেরিকা’ কেইন প্রাইজ লাভ করে এবং ‘দ্যাট হারমাটন মরনিং’ যৌথভাবে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস শর্ট স্টোরি অ্যাওয়ার্ড লাভ করে। ২০০৩ সালে তিনি ও’হেনরি অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। বর্তমান আফ্রিকান সাহিত্যের উজ্জ্বল নাম চিমামান্দা নগোজি আদিচে। দ্যা টাইমস লিটারেরি সাপ্লিমেন্টের মতে, ‘সমালোচক দ্বারা বহুল প্রশংসিত তরুণ অ্যাংলোফোনিক সাহিত্যিক যারা নতুন প্রজন্মকে আফ্রিকান সাহিত্যের দিকে আকর্ষণ করছে, তাদের মধ্যে চিমামান্দা বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে।’ তার প্রথম উপন্যাস পার্পল হিবিস্কাস সমালোচকদের নজর কাড়ে এবং ‘বেস্ট ফার্স্ট বুক’ ক্যাটাগরিতে কমনওয়েলথ লেখক পুরস্কার লাভ করে। আদিচি পার্পল হিবিস্কাস [২০০৩], হাফ অব অ্যা ইয়েলো সান [২০০৬], আমেরিকানা [২০১৩] প্রভৃতি উপন্যাস এবং ছোটগল্পসংকলন দ্য থিং অ্যারাউন্ড ইওর নেক [২০০৯] ও নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ উই শুড অল বি ফেমিনিস্টস [২০১৪] লিখেছেন। তাঁর সাম্প্রতিক বই ডিয়ার ইজাওয়েলে অর অ্যা ফেমিনিস্ট ম্যানিফেস্টো ইন ফিফটিন সাজেশানস ২০১৭ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত হয়। ২০০৮ সালে তিনি ম্যাকআর্থার জিনিয়াস গ্রান্ট পুরস্কারে ভূষিত হন।

আমি একজন গল্পকথক। আর আমি আপনাদেরকে কিছু ব্যক্তিগত গল্প বলতে চাই, যেগুলোকে আমি একক গল্পের বিপদ নামে ডাকতে পছন্দ করি। আমি পূর্ব নাইজেরিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেড়ে উঠেছি। আমার মা বলেন, আমি দুই বছর বয়স থেকে পড়া শুরু করেছিলাম। যদিও আমার ধারণা, চার বছর বয়সটা হবে সত্যের বেশি কাছাকাছি। অর্থাৎ আমি ছিলাম একজন আর্লি রিডার। আর আমি সেই সময়টায় পড়তাম ব্রিটিশ ও আমেরিকান শিশুতোষ বই।

আমি একই সাথে একজন আর্লি রাইটার-ও ছিলাম। আর প্রায় সাত বছর বয়সে পেনসিল ব্যবহার করে রঙিন চিত্রায়ণসহ আমার সেই লেখাগুলো আমার বেচারি মাকে পড়তে বাধ্য করতাম। আমি যে রকম গল্পগুলো পড়তাম, ঠিক সে রকম গল্পই লিখতাম। আমার রচিত সকল চরিত্রই ছিল শ্বেতাঙ্গ ও নীল চোখের অধিকারী। তারা তুষারের মাঝে খেলা করত। তারা খেত আপেল। আর তারা অনেক কথা বলত আবহাওয়া নিয়ে; একটা সূর্যোজ্জ্বল দিন কতটা মনোরম! যদিও বাস করতাম নাইজেরিয়াতে। আর কখনো নাইজেরিয়ার বাইরেও যাইনি। আমাদের ওখানে তুষার ছিল না। আমরা খেতাম আম। আর আমরা কখনো আবহাওয়া নিয়েও কথা বলতাম না; কারণ, কখনো তার প্রয়োজন হতো না।

আমার রচিত চরিত্রগুলো প্রচুর পরিমাণে জিঞ্জার বিয়ার পান করত; কারণ, আমার পড়া ব্রিটিশ বইগুলোর চরিত্রগুলোও তা-ই করত। যদিও আমি নিজে আসলে জানতাম না এই জিঞ্জার বিয়ারটা কী! আর এরপর দীর্ঘ সময় পর্যন্ত জিঞ্জার বিয়ার পানের জন্য আমার ভেতর একটা দুর্দমনীয় ইচ্ছা কাজ করত। তবে সেটা একটা ভিন্ন গল্প।

আমার ধারণা, এসব বর্ণনার ভেতরে বুঝতে পারা যায় যে, বিশেষত একজন শিশু হিসেবে একটি গল্পের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমরা আসলে কতটা সহজে প্রভাবিত ও অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে যাই। যেহেতু আমি যেসব বই পড়েছিলাম, সেসব বইয়ের চরিত্রগুলো ছিল বিদেশি, তাই আমি ধরেই নিয়েছিলাম যে প্রকৃতিগতভাবেই বইয়ের ভেতরের চরিত্রগুলোকে বিদেশি। আমি যেসব বিষয়ের সাথে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত নই, সেসব বিষয়েই রচিত হতে হয়। তবে আফ্রিকান বইগুলো কাছে পাওয়ার পর বিষয়গুলো বদলে গিয়েছিল। এসব বই খুব বেশি পাওয়া যায় না। আর বিদেশি বইয়ের তুলনায় এই বইগুলো খুঁজে বের করাও কঠিন ছিল।

তবে চিনুয়া আচেবে ও কামারা লেয়ার মতো লেখকদের কারণে সাহিত্য বিষয়ে আমার ধারণা একধরনের মানসিক পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে গিয়েছিল। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমার মতো মানুষ অর্থাৎ বাদামি রঙের চামড়ার মেয়ে, যাদের মোচড়ানো চুলে পনিটেইল সম্ভব নয়, তারাও সাহিত্যজগতে বিরাজ করতে পারে। তখন আমি লিখতে শুরু করেছিলাম সেসব বিষয় নিয়েই, যা ছিল আমার কাছে পরিচিত।

ক্ষমতা নিয়ে কথা না বলা হলে একক গল্প নিয়ে কথা বলা আসলে অসম্ভব। পৃথিবীর ক্ষমতাকাঠামো নিয়ে ভাবার সময় আমি একটি ইগবো (আফ্রিকান ভাষা) শব্দ নিয়ে ভাবি। শব্দটি হলো এনকালি। এটি একটি বিশেষ্য যার অর্থ অনেকটা হতে পারে অন্যের চেয়ে বড় হওয়া। আমাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্বের মতো গল্পগুলোও এই এনকালির নীতি দিয়ে সংজ্ঞায়িত হয়। কীভাবে সেগুলো বলা হচ্ছে, কারা সেগুলো বলছে, কখন সেগুলো বলা হচ্ছে, কতগুলো গল্প বলা হচ্ছে তার সবই নির্ভর করে ক্ষমতার ওপর

আমি যেসব আমেরিকান ও ব্রিটিশ বই পড়েছিলাম, সেগুলো আমার খুব পছন্দের ছিল। সেগুলো আমার চিন্তাকে জাগিয়ে তুলেছিল। তারা আমার জন্য নতুন এক বিশ্বের দুয়ার খুলে দিয়েছিল। কিন্তু এগুলোর অ-উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ফলাফল এই ছিল যে আমি জানতাম না আমার মতো মানুষেরাও সাহিত্যজগতে স্থান করে নিতে পারে। তাই আফ্রিকান লেখকগণ আমার জন্য যা করেছিলেন তা হলো, বই আসলে কী, সে বিষয়ে একটি একক গল্প থেকে তাঁরা আমাকে রক্ষা করেছিলেন।

আমি একটি চিরাচরিত মধ্যবিত্ত নাইজেরিয়ান পরিবার থেকে এসেছি। আমার বাবা ছিলেন একজন অধ্যাপক। আর মা ছিলেন একজন প্রশাসক। আর তাই প্রথানুযায়ী আমাদের বাসায় ছিল কাজে সহায়তা করার স্থায়ী কর্মী, যারা সাধারণত আশপাশের গ্রামগুলো থেকে আসত। আর যখন আমার আট বছর পূর্ণ হলো, তখন আমাদের বাসায় এসেছিল এক নতুন হাউজ বয়। তার নাম ছিল ফিদে। তার ব্যাপারে আমার মা একমাত্র যা বলেছিলেন তা হলো, তার পরিবারটি খুবই দরিদ্র। আমার মা তার পরিবারের জন্য গেছো আলু (ইয়াম) ও চাল এবং আমাদের পুরোনো কাপড়চোপড় পাঠাতেন। আর খাওয়ার সময় যখন আমি পুরো খাবার শেষ করতে চাইতাম না তখন আমার মা বলতেন, তোমার খাবার শেষ করো! তুমি জানো না? ফিদের মতো মানুষদের পরিবারের কিছুই নেই। আর তাই আমি ফিদের পরিবারের জন্য প্রচণ্ড মায়া অনুভব করতাম।

এরপর এক শনিবারে আমরা ফিদের গ্রামে ঘুরতে গিয়েছিলাম। আর তার মা আমাদের একটি খুব সুন্দর ঝুড়ি দেখিয়েছিলেন। এটি ছিল রং করা রাফিয়া [আফ্রিকা ও মাদাগাস্কার এলাকার পামজাতীয় গাছ] দিয়ে তৈরি, যা তার ভাই তৈরি করেছিলেন। আমি বিস্ময়ে চমকে উঠেছিলাম। তার পরিবারের কেউ কিছু তৈরি করতে পারে, তা আমার চিন্তাতেই ছিল না। আমি তাদের দারিদ্র্য সম্পর্কেই শুধু শুনেছিলাম। আর তাই তাদেরকে দরিদ্র ছাড়া অন্য কোনো রূপে দেখা আমার জন্য এক অসম্ভবে পরিণত হয়েছিল। তাদের দারিদ্র্য ছিল ও ব্যাপারে আমার একক গল্প।

কয়েক বছর পর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে নাইজেরিয়া ছেড়ে যাওয়ার সময় আমি এ ব্যাপারে ভেবেছিলাম। তখন আমার বয়স ছিল ১৯। আমার আমেরিকান রুমমেট আমাকে নিয়ে চমকিত ছিল। সে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, আমি এত ভালো ইংরেজি বলা কোথায় শিখেছি। আর সে দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিল যখন আমি বলেছিলাম যে ইংরেজি নাইজেরিয়ার দাপ্তরিক ভাষা। সে আমার ট্রাইবাল মিউজিক সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল আর খুবই হতাশ হয়েছিল যখন আমি মারিয়া ক্যারের (আমেরিকান গায়িকা ও গীতিকার) গান শুনিয়েছিলাম। আর সে মনে করত, আমি জানি না একটি স্টোভ কীভাবে ব্যবহার করতে হয়।

আমাকে যা আঘাত করেছিল তা হলো, সে (রুমমেট) আমার জন্যে দুঃখ অনুভব করেছিল আমাকে দেখার আগে থেকেই। একজন আফ্রিকান হিসেবে আমার প্রতি তার প্রাথমিক অবস্থানই ছিল পৃষ্ঠপোষকতা, সদিচ্ছাশীল ও করুণাময়ীর মতো। আফ্রিকাকে নিয়ে আমার রুমমেটের ছিল একটি একক গল্প। বিপর্যয়ের এক একক গল্প। এই একক গল্পে একজন আফ্রিকানের কোনো দিক থেকেই তার মতো হওয়ার কোনো সম্ভাবনা ছিল না। কোনো সম্ভাবনা ছিল না করুণার চেয়ে জটিল কোনো অনুভূতির। সম্ভাবনা ছিল না একই ধরনের মানুষ হিসেবে কোনো সম্পর্কের।

আমাকে বলতেই হবে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে আমাকে কখনো সচেতনভাবে আফ্রিকান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখনই কোনো আলোচনায় আফ্রিকা আসত, সবাই আমার দিকে ঘুরে তাকাত। সে ক্ষেত্রে নামিবিয়ার মতো এলাকা বিষয়ে আমার কিছু জানা না থাকলেও! কিন্তু আমি এই নতুন পরিচিতিকে গ্রহণ করেছিলাম। আর এখন অনেক দিক থেকেই আমি আমাকে আফ্রিকান হিসেবে চিন্তা করি। যদিও এখনো যখনই আফ্রিকাকে একটি দেশ হিসেবে বর্ণনা করা হয়, তখনই আমি বিরক্ত হয়ে উঠি। আমার এ ধরনের সবচেয়ে নতুন অভিজ্ঞতাটি হয়েছে দুই দিন আগে লাগোস থেকে আসা আমার সুন্দর ফ্লাইটটিতে। সেখানে ভার্জিন ফ্লাইটে ভারত, আফ্রিকা ও অন্যান্য দেশে দাতব্য কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে একটি ঘোষণা দেওয়া হচ্ছিলো।

এভাবে আফ্রিকান হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক বছর কাটানোর পর আমি আমার প্রতি আমার রুমমেটের আচরণের কারণ বুঝতে শুরু করেছিলাম। আমি যদি নাইজেরিয়ায় বেড়ে না উঠতাম, আর আমিও যদি আফ্রিকা সম্পর্কে জানতে পারতাম জনপ্রিয় চিত্রায়ণ থেকে, তাহলে আমিও আফ্রিকাকে একটি সুন্দর ভূপ্রকৃতি ও সুন্দর জীবজন্তুতে ভরা জায়গা ভাবতাম, যেখানে রয়েছে বোধাতীত মানুষ যারা নির্বোধ যুদ্ধে লিপ্ত, দরিদ্রতায় ও এইডসে মৃত্যুরত; যারা নিজেদের জন্য কথা বলতে পারে না আর সাদা বিদেশিদের মতো কারও কাছে সাহায্যপ্রাপ্তির জন্য রয়েছে অপেক্ষমাণ। আমি হয়তো আফ্রিকানদের সেভাবেই দেখতাম, যেভাবে একজন শিশু হিসেবে আমি দেখেছিলাম ফিদের পরিবারকে।

আমার মনে হয় আফ্রিকার এই একক গল্প আসলে পশ্চিমা সাহিত্য থেকে উঠে আসে। এখানে আমি জন লক নামক লন্ডনের একজন বণিকের লেখা থেকে উদ্ধৃতি দিতে পারি, যিনি ১৫৬১ সালে পশ্চিম আফ্রিকার উদ্দেশে সমুদ্রযাত্রা করেছিলেন আর তার যাত্রার আকর্ষণীয় বর্ণনা লিখে রেখে গিয়েছেন। কালো আফ্রিকানদের বাড়িঘর না থাকা পশু হিসেবে চিহ্নিত করার পর তিনি লিখেছেন, তারা আসলে সেই মানুষও, যাদের মাথা নেই, যাদের মুখ ও চোখ গাঁথা তাদের বুকে।

আমি এটি যতবার পড়ি ততবারই হাসি। আর জন লকের চিন্তাশক্তির প্রশংসা করা উচিত। কিন্তু তার লেখার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই যে এটি পশ্চিমে আফ্রিকান গল্প বলার যে ঐতিহ্য তার শুরুর দিকের প্রতিনিধিত্ব করে। সাব-সাহারান আফ্রিকাকে নেতিবাচক, ভিন্ন রকম, অন্ধকার এক জায়গা ভাবার ঐতিহ্য, যাকে একজন দারুণ কবি রুডিয়ার্ড কিপলিং বলেছেন অর্ধেক শয়তান, অর্ধেক শিশু

আর এভাবেই আমি বুঝতে শুরু করেছিলাম যে আমার আমেরিকান রুমমেট আসলে নিশ্চিতভাবেই তার সারা জীবন ধরে এই একটি গল্পেরই বিভিন্ন ধরন বা রূপ দেখে ও শুনে এসেছে। ঠিক একজন অধ্যাপকের মতো, যিনি একদা আমাকে বলেছিলেন আমার লেখা উপন্যাস যথার্থভাবে আফ্রিকান নয়। আমাকে মেনে নিতেই হবে যে উপন্যাসটিতে কতিপয় বিষয় ছিল, যা আসলেই সঠিক ছিল না। কয়েকটি স্থানে এই উপন্যাস আসলে ব্যর্থও ছিল। কিন্তু আমি কখনোই এভাবে ভাবিনি যে উপন্যাসটিতে আফ্রিকান যথার্থতা জাতীয় কোনো কিছু অর্জন করতে আমি ব্যর্থ হয়েছি। তা ছাড়া আমি আসলে জানতামই না এই আফ্রিকান যথার্থতা আসলে কী। সেই অধ্যাপক আমাকে বলেছিলেন যে আমার উপন্যাসের চরিত্রগুলো অনেক বেশি তার মতোই, মানে একজন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত মানুষের মতো। আমার চরিত্রগুলো গাড়ি চালাত। তারা অনাহারে ছিল না। আর তাই তারা ছিল না যথার্থভাবে আফ্রিকান।

তবে আমাকে এ-ও বলতে হবে যে এই ধরনের একক গল্পের প্রশ্নে আমি নিজেও সমানভাবে দোষী। কয়েক বছর আগে আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে মেক্সিকোতে গিয়েছিলাম। সেই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিবেশ ছিল অনেকটাই থমথমে। আর সে সময় বিতর্ক চলছিল অভিবাসন প্রশ্নে। আর যেমনটা আসলে হয়ে থাকে, আমেরিকায় অভিবাসন শব্দটির প্রতিশব্দ হলো মেক্সিকান। আর তখন একের পর এক মেক্সিকান মানুষের গল্প সামনে আসছিলযারা নাকি স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিচ্ছে, সীমান্ত দিয়ে চোরের মতো ঢুকে পড়ছে, সীমান্তে গ্রেপ্তার হচ্ছেমানে এই জাতীয় সব কাহিনি।

আমি স্মরণ করতে পারি গুয়াদালাজারায় [মেক্সিকোর একটি শহর] প্রথম দিন আমার হেঁটে বেড়ানোর সময়টাকে। সে সময় আমি মানুষদের দেখছিলাম যারা কাজে যাচ্ছে, বাজার এলাকায় টরটিলা [মেক্সিকান খাবার] তৈরি করছে, ধূমপান করছে কিংবা হাসছে। আমার মনে আছে আমার প্রথম অনুভূতি ছিল একটু অবাক হওয়ার মতো। আর তারপরই আমি লজ্জায় অবনত হয়েছিলাম। আমি উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম যে মেক্সিকানদের নিয়ে গণমাধ্যমের প্রচারণা আমাকে এতটাই মগ্ন করেছিল যে তাদের ব্যাপারে আমার মাথায় একটা বিষয়ই ছিল, তারা হলো কাপুরুষ অভিবাসী। আমি মেক্সিকানদের নিয়ে একক গল্প দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলাম আর আমি নিজেকে নিয়ে এর চেয়ে বেশি লজ্জিত আর কখনো হতে পারতাম না। আর এভাবেই একটি একক গল্প তৈরি করতে হয়। মানুষকে বারংবার একটি বিষয় হিসেবে দেখানো, মাত্র একটি বিষয় বা দিক, আর তারপর তারা আসলে তাই হয়ে যায়।

ক্ষমতা নিয়ে কথা না বলা হলে একক গল্প নিয়ে কথা বলা আসলে অসম্ভব। পৃথিবীর ক্ষমতাকাঠামো নিয়ে ভাবার সময় আমি একটি ইগবো (আফ্রিকান ভাষা) শব্দ নিয়ে ভাবি। শব্দটি হলো এনকালি। এটি একটি বিশেষ্য যার অর্থ অনেকটা হতে পারে অন্যের চেয়ে বড় হওয়া। আমাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্বের মতো গল্পগুলোও এই এনকালির নীতি দিয়ে সংজ্ঞায়িত হয়। কীভাবে সেগুলো বলা হচ্ছে, কারা সেগুলো বলছে, কখন সেগুলো বলা হচ্ছে, কতগুলো গল্প বলা হচ্ছে তার সবই নির্ভর করে ক্ষমতার ওপর।

আমাকে বলতেই হবে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে আমাকে কখনো সচেতনভাবে আফ্রিকান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখনই কোনো আলোচনায় আফ্রিকা আসত, সবাই আমার দিকে ঘুরে তাকাত। সে ক্ষেত্রে নামিবিয়ার মতো এলাকা বিষয়ে আমার কিছু জানা না থাকলেও! কিন্তু আমি এই নতুন পরিচিতিকে গ্রহণ করেছিলাম। আর এখন অনেক দিক থেকেই আমি আমাকে আফ্রিকান হিসেবে চিন্তা করি। যদিও এখনো যখনই আফ্রিকাকে একটি দেশ হিসেবে বর্ণনা করা হয়, তখনই আমি বিরক্ত হয়ে উঠি

অন্য একজন মানুষের গল্প বলতে পারাটাই ক্ষমতা নয়; বরং ক্ষমতা হলো সেই গল্পটিকে ওই ব্যক্তির সংজ্ঞায়নকারী গল্পে পরিণত করা। ফিলিস্তিনির কবি মৌরিদ বারঘৌতি লিখেছেন যে যদি আপনি একজন মানুষকে অধিকারচ্যুত করতে চান, তাহলে তার সরলতম উপায় হলো তার গল্প বলা আর সেগুলো শুরু করা দ্বিতীয়ত শব্দটির মাধ্যমে। আপনি গল্পটি শুরু করুন ব্রিটিশদের এসে পৌঁছানোর বদলে স্থানীয় আমেরিকানদের তীর-ধনুক থেকে, আপনি পাবেন একটি একেবারে ভিন্ন রকম গল্প। গল্প শুরু করুন আফ্রিকান রাষ্ট্রগুলোর ঔপনিবেশিক সৃষ্টির বদলে আফ্রিকান রাষ্ট্রের ব্যর্থতা থেকে, তখনো আপনি পাবেন একেবারে পৃথক একটি গল্প।

সম্প্রতি আমি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করেছি, আর সেখানে একজন ছাত্র আমাকে বলেছেন নাইজেরিয়ান পুরুষদের শারীরিক নিপীড়নকারী (Abuser) হওয়াটা লজ্জাজনক, যা সে আমার উপন্যাসে থাকা একজন বাবার চরিত্রে দেখতে পেয়েছে। আমি তাকে বলেছিলাম যে আমি মাত্রই একটি উপন্যাস পড়েছি, যার নাম আমেরিকান সাইকো আর এটি খুবই লজ্জার যে আমেরিকার তরুণেরা হলো ধারাবাহিক বা সিরিয়াল খুনি। আর আসলে আমি এ কথা বলেছিলাম কিছুটা বিরক্তির সাথেই।

আমার পড়া একটি উপন্যাসের চরিত্রের সিরিয়াল কিলার হওয়াটা সকল আমেরিকানের প্রতিনিধিত্ব করে, আমি কখনোই এভাবে ভাবিনি। এখন আমি এটি বলছি, তার মানে এই নয় যে সেই ছাত্রের চেয়ে আমি একজন উত্তম মানুষ। আসলে আমেরিকার সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার কারণে আমার কাছে আমেরিকার অনেক গল্প রয়েছে। আমি টায়লার ও আপডাইক এবং স্টেইনব্যাক ও গেইটসক্যাল পড়েছি। আমার কাছে আমেরিকার কোনো একক গল্প নেই।

কয়েক বছর আগে যখন আমি জানতে পেরেছিলাম যে লেখকদের সফল হওয়ার জন্য খুবই অসুখী শৈশব থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ, আমি ভাবতে শুরু করেছিলাম কীভাবে বের করবো সেসব ভয়ানক বিষয়, যা আমার বাবা-মা আমার সাথে করেছিলেন। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, একটি শক্তিশালী বন্ধনে আবদ্ধ পরিবারে আমার ছিল হাসি-খুশি ও ভালোবাসাময় খুবই সুখী এক শৈশব।

কিন্তু একই সাথে আমার ছিল পিতামহরা যাঁরা মারা গিয়েছিলেন উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে। আমার এক তুতো ভাই পলে, মারা গিয়েছিল; কারণ, সে যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা পায়নি। আমার খুব ঘনিষ্ঠ একজন বন্ধু ওকোলোমা মারা গিয়েছিল বিমান দুর্ঘটনায়, কারণ আমাদের অগ্নিনির্বাপণ গাড়িগুলোতে পানি ছিল না। আমি বড় হয়েছি একটি দমনমূলক সামরিক সরকারের অধীনে, যারা শিক্ষাকে মূল্যায়ন করত না। আর তাই প্রায়ই আমার বাবা-মা বেতন পেতেন না। আর তাই শিশু হিসেবে আমি দেখেছি নাশতার টেবিল থেকে জ্যাম হারিয়ে গিয়েছে, তারপর অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল মার্গারিন (মাখনজাতীয় খাবার), এরপর রুটির দামের অত্যধিক বৃদ্ধি, আর তারপর দুধের ওপর এসেছিল রেশনিং। আর সবকিছুর ওপরে স্বাভাবিক হয়ে যাওয়া একধরনের রাজনৈতিক ভীতি আমাদের আক্রান্ত করেছিল।

এই সব গল্প মিলেই আমি তৈরি হয়েছি। তবে শুধু এই নেতিবাচক গল্পগুলোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া মানে হলো আমার অভিজ্ঞতাকে চেপে কমিয়ে ফেলা এবং আমার অন্যান্য গল্প, যা আমাকে তৈরি করেছে সেগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া। একক গল্প বাঁধাধরা নিয়ম তৈরি করে। আর বাঁধাধরা নিয়মের সমস্যা এটা নয় যে এগুলো অসত্য, সমস্যা হলো এটি যে এগুলো অসম্পূর্ণ। তারা একটি গল্পকে একমাত্র গল্পে পরিণত করে।

নিশ্চিতভাবেই আফ্রিকা বিপর্যয়ে পরিপূর্ণ এক মহাদেশ। এর ভেতর কিছু বিপর্যয় খুবই মারাত্মক; যেমন কঙ্গোর ভয়াবহ ধর্ষণগুলো। এবং কোনো কোনোটি খুবই হতাশাজনক; যেমন নাইজেরিয়ায় চাকরির একটি পদের বিপরীতে আবেদন করে পাঁচ হাজার মানুষ। কিন্তু সেখানে আরও গল্প আছে যেগুলোর বিষয় বিপর্যয় নয়। আর এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এগুলো নিয়ে কথা বলার মতোই গুরুত্বপূর্ণ।

আমি সব সময় অনুভব করেছি যে একটি স্থান বা একজন ব্যক্তির সকল গল্পের সাথে যুক্ত হতে না পারলে সেই স্থান বা ব্যক্তির সাথে সঠিকভাবে যুক্ত হতে পারা অসম্ভব। একক গল্পের ফলাফল হলো এগুলো মানুষের সম্মান কেড়ে নেয়। এটি আমাদের মানবতার সমতাবিধানকে করে তোলে কঠিন। এটি আমাদের ভেতরের মিলগুলোতে গুরুত্ব না দিয়ে গুরুত্ব দেয় আমাদের ভেতরে থাকা পার্থক্যগুলোতে।

কী হতো যদি আমি আমার মেক্সিকো ভ্রমণের আগে অভিবাসনসংক্রান্ত বিতর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো, উভয় পক্ষের বক্তব্যই জেনে নিতাম? কী হতো যদি আমার মা আমাকে বলতেন যে ফিদের পরিবার দরিদ্র এবং কঠোর পরিশ্রমী? কী হতো যদি আমাদের এমন একটি আফ্রিকান টেলিভিশন নেটওয়ার্ক থাকত যার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী আফ্রিকান বৈচিত্র্যময় গল্পগুলো সম্প্রচার করা যেত? এগুলোকে নাইজেরিয়ান লেখক চিনুয়া আচেবে বলেছেন গল্পসমূহের ভারসাম্য

কী হতো যদি আমার রুমমেট আমার বইয়ের প্রকাশক মুক্তা বাকারে সম্পর্কে জানতে পারত, যিনি তাঁর ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজের স্বপ্ন অনুসরণ করে একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শুরু করেছেন? প্রথাগত প্রজ্ঞানুযায়ী মনে করা হয় যে নাইজেরিয়ানরা সাহিত্য পড়ে না। কিন্তু তিনি এটি মানতে নারাজ ছিলেন। তিনি মনে করতেন যে যারা পড়তে পারে, তারা যদি হাতের কাছে ও সাধ্যের ভেতর সাহিত্য পায়, তাহলে তারা তা পড়বে।

আমার প্রথম উপন্যাস প্রকাশের অল্প কিছুদিন পর আমি লাগোসে একটি টেলিভিশন স্টেশনে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়েছিলাম। সেখানে বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করেন এমন এক নারী আমার কাছে এসে বলেছিলেন, আপনার উপন্যাস আমার সত্যিই ভালো লেগেছে। তবে (উপন্যাসের) শেষটা আমার ভালো লাগেনি। আপনাকে এখন এর পরের অংশ (সিক্যুয়াল) লিখতেই হবে, আর সেখানে এই এই হবে...। আর তিনি আমাকে বলে যেতে লাগলেন পরের পর্বে কী কী লিখতে হবে। এই ঘটনায় আমি শুধু মুগ্ধই হইনি, অভিভূতও হয়েছিলাম। নাইজেরিয়ার সাধারণ জনগণের একজন নারীকে কখনোই একজন পাঠক হিসেবে গণ্য করা হয় না। কিন্তু তিনি শুধু বইটা পড়েনইনি, তিনি একে ধারণ করেছেন এবং আমাকে পরের পর্বে কী লিখতে হবে, তা বলার মতো অবস্থানও নিজের ভেতর তৈরি করেছেন।

আমার রুমমেট আমার বান্ধবী ফুমি ওন্দা সম্পর্কে জানতে পারলে কী করবে, যে নারী লাগোসে একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে! আমরা যেসব গল্প ভুলে যেতে চাই, সেগুলোই সে আমাদেরকে বলতে বদ্ধপরিকর। গত সপ্তাহে লাগোসের হাসপাতালে হৃদরোগের চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে যে কাজ হয়েছে, তা জানার পর আমার রুমমেট কী করবে? সমসাময়িক নাইজেরিয়ান সঙ্গীত সম্পর্কে জানার পর সে কী করবে? প্রতিভাবানেরা গান গাচ্ছে ইংরেজি ও পিদগিন ও ইগবো ও ইয়োরুবা ও ইজো (এগুলো আফ্রিকান ভাষা) ভাষায় আর তাদের সঙ্গীতের অনুপ্রেরণা হলো জে-যি (আমেরিকান র‍্যাপার) থেকে ফেলা (নাইজেরিয়ান মাল্টি-ইনস্ট্রুমেন্টালিস্ট), বব মার্লে ও তাদের পিতামহরা পর্যন্ত। আমার রুমমেট এটি জানলে কী করবে যে একজন নারী আইনজীবী আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন একটি হাস্যকর আইনকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য; যেখানে বলা হয়েছে নারীদের পাসপোর্ট পুনর্নিবন্ধনের জন্য তাদের স্বামীদের অনুমতির প্রয়োজন হবে? আমার রুমমেট যখন নলিউড সম্পর্কে জানবে তখন কী হবে? একদল উদ্ভাবনী প্রতিভান মানুষ প্রযুক্তির নানা ধরনের সীমাবদ্ধতার ভেতর এখানে প্রতিনিয়ত চলচ্চিত্র নির্মাণ করছে। এসব চলচ্চিত্র এতটাই জনপ্রিয় যে এটি হলো নাইজেরিয়ানদের তাদেরই উৎপাদিত বস্তু ভোগ করার দারুণ এক উদাহরণ। আমার রুমমেট আমার সেই দারুণ উচ্চাশাসম্পন্ন চুল বিনুনিকারী সম্পর্কে জানলে কী করবে, যে পরচুলা বিক্রির ব্যবসা শুরু করেছে! অথবা সেই লাখো নাইজেরিয়ানের কথা শুনে যারা তাদের ব্যবসা শুরু করে কখনো কখনো ব্যর্থ হলেও নিজেদের আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিচর্যা চালিয়ে যাচ্ছে!

প্রতিবার যখন আমি বাসায় যাই তখন অধিকাংশ নাইজেরিয়ানের ভেতর বিরক্তি দেখতে পাই, যার উৎস আমাদের ব্যর্থ অবকাঠামো, ব্যর্থ সরকার। কিন্তু এমন ব্যর্থ সরকারের পরও, বরং তাদেরই জন্য আমি মানুষের সমৃদ্ধিশালী হয়ে ফিরে আসাও প্রত্যক্ষ করি। প্রতি গ্রীষ্মে আমি লাগোসে রাইটিং ওয়ার্কশপে শিক্ষা দিয়ে থাকি। আর আমি বিস্মিত হই আবেদনকারীর সংখ্যা দেখে। কত কত মানুষ লেখার জন্য আগ্রহী, তারা বলতে চায় তাদের গল্পগুলো।

আমার বইয়ের নাইজেরিয়ান প্রকাশক ও আমি সম্প্রতি ফারাফিনা ট্রাস্ট নামে একটি অলাভজনক ট্রাস্টের কাজ শুরু করেছি। আর আমাদের রয়েছে বড় বড় পাঠাগার নির্মাণ ও বর্তমান পাঠাগারগুলোকে ঘষেমেজে ঠিক করার একটি বড় স্বপ্ন। আমাদের আরও স্বপ্ন রয়েছে বিভিন্ন প্রদেশের যেসব বিদ্যালয়ের পাঠাগারে কিছুই নেই, তাদের জন্য বই সরবরাহ করার। আমরা আরও চাই পড়া ও লেখা বিষয়ে অনেক অনেক কর্মশালার আয়োজন করতে, সেসব মানুষের জন্য যারা অনেক গল্প বলতে চায়। গল্পগুলো গুরুত্বপূর্ণ। অনেক অনেকসংখ্যক গল্প গুরুত্বপূর্ণ। গল্প ব্যবহৃত হয়েছে অধিকারচ্যুত করতে ও কুৎসা রটাতে। কিন্তু ক্ষমতায়ন ও মানবিকীকরণের জন্যও গল্প ব্যবহার করা যায়। গল্পের মাধ্যমে মানুষের মর্যাদা নষ্ট করা যায়। কিন্তু গল্প দিয়ে এই নষ্ট মর্যাদা আবার ঠিকও করে তোলা যায়।

আমেরিকান লেখক অ্যালিস ওয়াকার এটি লিখেছিলেন তাঁর দক্ষিণের আত্মীয়দের জন্য, যারা চলে গিয়েছিলেন উত্তরে। তিনি তাদেরকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন একটি বইতে, যার বিষয় ছিল তাদের পেছনে ফেলে যাওয়া দক্ষিণাঞ্চলের জীবন। তারা একসাথে বসে, বই পড়তে থাকে, আমার বই পাঠ শুনতে থাকে, আর এভাবেই একধরনের স্বর্গ ফিরে আসে। আমি এই চিন্তার সাথেই শেষ করতে চাই। আর তা হলো আমরা যখন একক গল্পকে প্রত্যাখ্যান করবো, যখন আমরা বুঝতে পারব যে কোনো স্থান সম্পর্কেই কখনো মাত্র একটি গল্প ছিল না, তখন আমরা একধরনের স্বর্গ ফিরে পাব।

আপনাদের ধন্যবাদ!

অনুবাদ: শিবলী নোমান

 

নাইজেরিয়ান নারীবাদী লেখক ও ঔপন্যাসিক চিমামান্দা নগোজি আদিচে এই বক্তৃতা দিয়েছিলেন ২০০৯ সালে অক্সফোর্ডে TED Global 2009: The Substance of Things Not Seen শীর্ষক সম্মেলনে। মূল বক্তৃতার লিংক: https://www.ted.com/talk /chimamanda_ngozi_adichie_the_danger_of_a_single_story?language=en