ভরসার নদী ও অন্যান্য কবিতা

 

জবানবায়ু

কথারা যদিও অফুরান তবু ফুরায় জবান
এই হলো জগতের ঝিলিমিলি বিষাদকাহিনি

ত্রাস খুব চাষ হচ্ছে আজ
আকাশে বাতাসে তার শন শন আওয়াজ শোনা যায়

এইদিকে বজ্রসহ বৃষ্টি হলে ওইদিকে বন্যার আগাম সংকেত
তদুপরি শঙ্কা থাকে পাহাড় ধসের

চুপচাপ থাকা এ কারণে প্রয়োজন মনে হয় আজ
যেখানে আমার জন্মাবধি চিত্তডর স্থায়ী হয়ে আছে

বলাবলিতে তোমার যে স্বতঃউদ্যম
তা নিয়ে আমার নেই কিচ্ছুটি বলবার
আমার জবানবায়ু শুধু জানি ফুরিয়ে গিয়েছে

 

ভরসার নদী

উত্থিত লিঙ্গের মতো প্রখর দুপুর
নির্বিঘ্নে পাপড়ি ঝরিয়ে চলেছে মনের মেঘের গাছে

সারি সারি ভিড়ছে জাহাজ 
দূর থেকে বয়ে আনা বালি ও কাঁকরসহ
কাছের প্রভূত তিতা আর দূর-ভার মিলেমিশে
বেজায় বিরূপা আজ এ অঞ্চল পরিপাশ

এর মাঝে ঢুকে গেলে তুমি প্রযুক্তির সিঁড়ি বেয়ে
হন্তদন্ত কোনো শীতল বাতাস
তাতে আমি হঠাৎবরফ হয়ে ঝরে পড়ে 
ভেঙে গিয়ে হয়ে যাই কুলুকুলু ভরসার নদী

 

চিন্তা

চিন্তাই সার সবকিছু ছেঁকে

চিন্তাহীন চুপচাপ থাকা অসম্ভব
বলা-লেখাও
তবে চিন্তার জাতপাত আছে
শৃঙ্খলাবৈচিত্র্য আছে
ছোটত্ব-বড়োত্ব আছে

অচিন্তা বিষয়ে চিন্তা আছে
কিন্তু চিন্তার অচিন্তা অসম্ভব

একটা মামুলি বস্তায় গোটা সংসার
গুটিয়ে ফেলানো যায় এমন সংসার আছে

এই সংসারও চিন্তাহীন না

 

ভিনপ্রহর

ঝড়ো বাতাস আসে সহসাই
জানালায় ধাক্কা মারে জোরে
মাত্রাবৃত্তে পর্দা কাঁপায়
উপপর্ব নেই কিন্তু অপূর্ণ পর্ব
মাঝে মধ্যে ঠাস ঠোস শব্দ করে
ঝাপটে চলে লাগাতার

কার যেন চোখের জলে ভিজে যাচ্ছে
জগতের সমস্ত দীর্ঘশ্বাস

বৈশাখ খিলাল করছে বুড়োদাঁত
যেন কোথাও কিছু হয় নি এরকম ভঙ্গিতে 
একেলা ছাদে বসে তাকিয়ে দেখছে চারপাশ

একটা অট্টহাসি ভেসে এল দূর থেকে 
আকাশের প্রান্ত কাঁপিয়ে সাথে আলো জ্বেলে
আতশবাজি খেলছে কোনো বুড়ো খোকা
এই দৃশ্য দেখে ভয়ে লাফিয়ে ঘরে ঢুকে গেল
বারান্দায় বসা কালো বিড়াল