মৈমনসিংহ গীতিকা: পূর্ববঙ্গের উপভাষার ব্যবহার
ময়মনসিংহ জেলার ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের সীমানায় প্রবাহিত পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব দিকে যে বিস্তীর্ণ হাওর-অঞ্চল রয়েছে, তার জলহাওয়াতেই রচিত হয়েছিল মৈমনসিংহ গীতিকার কাব্যগুলো। পূর্ব-ময়মনসিংহের নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, নান্দাইল, ঈশ্বরগঞ্জ প্রভৃতি এলাকার প্রান্তিক কৃষকদের মুখে মুখে জন্ম নিয়ে কালে কালে মহুয়া, মলুয়া, দস্যু কেনারামের পালা, কঙ্ক ও লীলা, কাজলরেখা, দেওয়ানা মদিনা ইত্যাদি নামের আখ্যানগীতিকাগুলো ছড়িয়ে পড়েছে এলাকাগুলোর গ্রামের ঘরে ঘরে। আনুষ্ঠানিক পড়াশোনার সাথে বিযুক্ত থাকলেও পূর্ব-ময়মনসিংহের সংস্কৃতবান গ্রামীণ কবিরা ভাষা ও অলংকারসমৃদ্ধ বাংলা সাহিত্যের বিপরীতে দাঁড়িয়েছিলেন; নিজেদের গ্রামীণ সহজ-সরল এবং ধর্মনিরপেক্ষ জীবনযাপনের অনুষঙ্গ ও তথাকথিত শাস্ত্রনির্ভর সামাজিকতার নিগড়বিরোধী পাত্রপাত্রীদেরকে নিয়ে তাঁরা রচনা করেছিলেন এসব আখ্যানগীতিকা। আবৃত্তি, পালাগান ও যাত্রাগান হিসেবে গীত হতে হতে আখ্যানগীতিকাগুলো একসময়ে পূর্ব-ময়মনসিংহের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের স্বাভাবিক সাহিত্যে পরিণত হয়েছে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, রামায়ণ ও মহাভারতের গল্প, রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা এবং শাক্তধর্মের অগ্রগণ্যতা-বিষয়ক মঙ্গলকাব্যের যেসব পদ তখন মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে, সেখানে মুখ্য ছিল পৌরাণিক পটভূমি ও পৌরাণিক চরিত্রসমূহ। কিন্তু পূর্ব-ময়মনসিংহের লোকজ সাহিত্যে কোনো পৌরাণিকতার নামলেশ-মাত্র নেই—আছে তখনকার বাংলাদেশের কৃষিনির্ভর সমাজের ঘনিষ্ঠ প্রতিচ্ছবি এবং সেই সমাজ থেকে উদ্ভূত সাধারণ নরনারীর মানবিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া। তাই পূর্ব-ময়মনসিংহের আখ্যানগীতিকাগুলোর ভাষা খুবই সহজ-সরল। তা ছাড়া, এই আখ্যানগীতিকাগুলোতে তৎসম শব্দের কোনো চিহ্নই মেলে না। এ ভাষা উত্তরে সুসং দুর্গাপুর এবং দক্ষিণে নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের মধ্যবর্তী গ্রামগুলোর খেটে খাওয়া মানুষের লোকজ ভাষা—সাহিত্যসৃষ্টির জন্য ভাষা-উদ্ভাবনের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি কোনো চিন্তাপ্রসূত সাহিত্যিক ভাষা নয়। বিভিন্ন স্বভাবকবিরা অক্ষরবৃত্তে কেবল স্বরাঘাতের ওপরে ভিত্তি করেই একের পর এক পঙ্ক্তি সাজিয়ে গেছেন। পঙ্ক্তিগুলোর ছন্দের বন্ধনও কখনো কখনো দৃঢ়সন্নিবদ্ধ নয়।
আমাদেরকে মানতেই হবে, দশক দশকজুড়ে মানুষের মুখে গীত হতে হতে মৈমনসিংহ গীতিকা-র আখ্যানগীতিকাগুলোর মূল সাহিত্যিক ভাষা আর অবিকৃত থাকেনি, তা শেষ পর্যন্ত আধুনিক বাংলা ভাষায় রূপ পরিগ্রহ করেছে। সেই সময়টিতে কাব্যগুলো লিপিবদ্ধ হয়নি বলেই এমন ঘটনা ঘটে থাকবে বলে আমরা মনে করি
আমরা জানি, লোকসাহিত্য মানুষের মুখের ভাষাতেই পয়লাতে তৈরি হয়ে থাকে এবং পরবর্তীকালে তা মানুষের মুখে ফিরতে ফিরতে দিগ্বিদিক ছড়িয়ে যায়। রচনার সময়ে লোকসাহিত্যের কোনো পুঁথি তৈরি হয় না বলে এসব সাহিত্যকর্মের রচনাকাল সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারাটা কঠিন। মৈমনসিংহ গীতিকা-র বিষয়ভিত্তিক অনুষঙ্গের ওপরে নির্ভর করে দীনেশচন্দ্র সেন মন্তব্য করেছেন, পূর্ব-ময়মনসিংহের পল্লীগীতিকাগুলো ১৪ শতকের দিকে রচিত হয়ে থাকতে পারে। তাঁর যুক্তি হলো, এই যে আনুমানিক ১৫ শতকে রচিত বৈষ্ণব পদাবলী-তে চণ্ডীদাস যে লোকজ জীবনের চিত্রণ ঘটিয়েছেন, তার সাথে মৈমনসিংহ গীতিকা-র গণমানুষের জীবনযাপনের সাদৃশ্য রয়েছে। অর্থাৎ এই যুক্তিতে মৈমনসিংহ গীতিকা-র ভাষা খুব আধুনিক হবার সম্ভাবনা কম। দ্বিতীয়ত, এই আখ্যানগীতিকাগুলোতে সংস্কৃতের কোনো ঘনঘটা নেই যে রেওয়াজটি কিনা চালু হয়েছিল শ্রীকৃষ্ণকীর্তন থেকে। অনুমান করে নেওয়া যায়, ১৪৮৬-তে শ্রীচৈতন্যদেবের আবির্ভাবের আগেই বড়ু চণ্ডীদাস শ্রীকৃষ্ণকীর্তন রচনা করেছিলেন। দীনেশচন্দ্র সেনের পর্যবেক্ষণ তাই বলছে, যেহেতু পূর্ব-ময়মনসিংহের এসব আখ্যানগীতিকায় তৎসম শব্দ একবারেই অনুপস্থিত, কাজেই ধরে নেওয়া যেতে পারে, এই সাহিত্য সংস্কৃতযুগের আগেই রচিত হয়েছিল। তিনি মন্তব্য করেছেন, খাঁটি বাংলা ভাষা যে প্রাকৃত-পর্যায় থেকে উৎসারিত অপভ্রংশের খুবই নিকটবর্তী এবং সংস্কৃত ভাষা থেকে যোজন যোজন দূরের, তা পূর্ব-ময়মনসিংহের এসব আখ্যানগীতিকার পুঁথি পাঠ করলেই বোঝা যায়। দীনেশচন্দ্র সেন আরও মন্তব্য করেছেন, বাংলা সাহিত্যের আদি যুগের অন্তর্ভুক্ত ১০ম থেকে ১২ শতকের দিকে রচিত ডাক ও খনার বচন, ব্রতকথা ইত্যাদি লৌকিক সাহিত্যের ভাষার সাথে মৈমনসিংহ গীতিকা-র ভাষারও নৈকট্য রয়েছে। এসব যুক্তিতে তিনি অনুমান করছেন, মৈমনসিংহ গীতিকা-র আখ্যানগীতিকাগুলোর ভাষা আধুনিক বাংলা ভাষার প্রতিতুলনায় প্রাচীনই হয়ে থাকবে।
এদিকে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, আশুতোষ ভট্টাচার্য এবং আশরাফ সিদ্দিকী পূর্ব-ময়মনসিংহের আখ্যানগীতিকাগুলোর পুঁথির ভাষায় প্রাচীনত্বের তেমন কোনো আলামত খুঁজে পাননি। মৈমনসিংহ গীতিকা-র আখ্যানগীতিকাগুলোর সম্ভাব্য রচনাকাল সম্পর্কে আশুতোষ ভট্টাচার্য আমাদেরকে জানাচ্ছেন, আনুমানিক ১৬ শতক থেকে ১৭ শতকে রচিত হয়েছিল এই আখ্যানগীতিকাগুলো। মৈমনসিংহ গীতিকা-র রচনাকাল আরও এগিয়ে দিয়েছেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্। তিনি বলছেন, আনুমানিক ১৮ শতকের লৌকিক সাহিত্যের নিদর্শন এগুলো—খুব একটা প্রাচীন কোনো সাহিত্যকর্ম নয়। একইভাবে আশরাফ সিদ্দিকীও মন্তব্য করেছেন, এই আখ্যানগীতিকাগুলোর গল্প মোটেই বাংলার প্রাচীন সমাজ থেকে সৃষ্ট হয়নি। বরং আমরা এই কাব্যে আধুনিক যুগের বাংলার আর্থসামাজিক বৈশিষ্ট্যই খুঁজে পাই। এ কারণে তিনি বলছেন, মৈমনসিংহ গীতিকা-র আখ্যানগুলো ১৬ থেকে ১৯ শতকে রচিত হয়ে থাকতে পারে। মৈমনসিংহ গীতিকা-র রচনাকাল নিয়ে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, আশুতোষ ভট্টাচার্য এবং আশরাফ সিদ্দিকীর এই মন্তব্যকে আধুনিক বাংলা ভাষার যুগবিবেচনায় খণ্ডন করা যাচ্ছে না।
তবে আমাদেরকে মানতেই হবে, দশক দশকজুড়ে মানুষের মুখে গীত হতে হতে মৈমনসিংহ গীতিকা-র আখ্যানগীতিকাগুলোর মূল সাহিত্যিক ভাষা আর অবিকৃত থাকেনি, তা শেষ পর্যন্ত আধুনিক বাংলা ভাষায় রূপ পরিগ্রহ করেছে। সেই সময়টিতে কাব্যগুলো লিপিবদ্ধ হয়নি বলেই এমন ঘটনা ঘটে থাকবে বলে আমরা মনে করি। মৌখিক পর্যায়ে সময়ের সাথে সাথে বিবর্তিত হয়ে যাওয়া বাংলা ভাষায় রচিত এসব আখ্যানগীতিকারই কিছু কিছু হয়তো ময়মনসিংহ জেলার অধিবাসী যুবক চন্দ্রকুমার দে সংগ্রহ করেছিলেন এবং তিনি তা দেখিয়েছিলেন দীনেশচন্দ্র সেনকে। পরে তা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়। এবাদে পূর্ণচন্দ্র ভট্টাচার্য বিদ্যাবিনোদ মৈমনসিংহ গীতিকা-র ভিন্ন একটি পাঠ সংগ্রহ করেছিলেন এবং তিনি তাঁর সংগ্রহের একটি নকল মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্কে প্রত্যর্পণ করেছিলেন। ধারণা করা হয়, সংগৃহীত এ দুটি পুঁথি ছাড়া বর্তমানে আমরা মৈমনসিংহ গীতিকা-র বটতলার সংস্করণের যেসব পুঁথি দেখতে পাচ্ছি, সেগুলোর ভাষা আদি রূপ থেকে বিচ্যুত হয়ে সরে অনেক দূরে সরে গেছে। প্রাপ্ত পুঁথিগুলোতে এমন ‘মার্জনা’-র কিছু নমুনা পেয়েছেন শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। কাজেই সাহিত্যিক ভাষার বিচ্যুতির সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে বটতলা থেকে পাওয়া মৈমনসিংহ গীতিকা-র আজকের সহজলভ্য পুঁথি পাঠ করে এই আখ্যানগীতিকার রচনাকাল নির্ধারণ করতে যাওয়াটা মোটেই সঠিক হবে না। এ ক্ষেত্রে কাব্যসংগ্রহের যেসব পুঁথি মিলেছে, সেসব পুঁথিতে ব্যবহৃত সাহিত্যিক ভাষার বৈশিষ্ট্য লক্ষ করেই এই আখ্যানগীতিকার রচনাকাল নির্ণয় করাটাই আমাদের কাছে পদ্ধতিগতভাবে সহী বলে মনে হয়। চন্দ্রকুমার দে এবং পূর্ণচন্দ্র ভট্টাচার্য বিদ্যাবিনোদ সংগৃহীত আখ্যানগীতিকাগুলোর ওপরে নির্ভর করে পৃথক পৃথক যে পুঁথি প্রণীত হয়েছে, সে দুটো পুঁথির সাহিত্যিক ভাষার ভেতরে আমরা কোনো পার্থক্যই খুঁজে পাই না।
বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে বাংলামুলুকের বিদ্বজ্জন মৃতপ্রায় সংস্কৃত ভাষাতে বা সংস্কৃত ভাষার আবহে কাব্য রচনা ও আস্বাদন করতে চেয়েছেন। শিক্ষিত উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তের মূলধারার সাহিত্যরুচিকে অনুসরণ না করেই বাংলামুলুকের প্রান্তিক কৃষকেরা তখন নিজেদের মৌখিক ভাষাতে বচন, শ্লোক, গীত ইত্যাদি রচনা করে গেছেন। সংস্কৃতবর্জিত এবং তৎকালীন মুখের ভাষার প্রত্যক্ষ ব্যবহারই এসব বচন, শ্লোক, গীত ইত্যাদি স্বাভাবিক ও অজ্ঞান সাহিত্যকর্মগুলোর ভাষার মূল বৈশিষ্ট্য বলে আমাদের জ্ঞান হয়। এই লোকজ ভাষাকেই আমরা মোটাদাগে সাহিত্যে প্রযুক্ত ‘সহজ-সরল ভাষা’ হিসেবে নামাঙ্কিত করে আসছি
আমরা মনে করি, দীনেশচন্দ্র সেনের মতামত অনুযায়ী ১৪ শতকে মৈমনসিংহ গীতিকা-র আখ্যানগীতিকাগুলো রচিত হবার সম্ভাবনা খুবই কম। বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ১৬ শতকে অথবা তার কাছাকাছি কোনো একটি সময় থেকে এই কাব্যগুলোর রচনা শুরু হয়েছিল বলেই ধারণা করা সঙ্গত। সংগৃহীত আখ্যানগীতিকাগুলোর দুটি ভিন্ন সংস্করণের লিখিত রূপ দেখে আমরা ধারণা করি, যে লোকজ ভাষায় এই সাহিত্যকর্মগুলো বিরচিত হয়েছিল, তার চেহারা ১৬ শতকে থিতু হয়ে পড়া নব্যভারতীয় আর্যভাষা প্রবাহের আধুনিক বাংলা ভাষার লোকজ অংশের চেহারারই অনুরূপ। আমরা জানি, মাগধী প্রাকৃত থেকে যাত্রা শুরু করে ৮ম থেকে ১২ শতকে যখন অপভ্রংশের জন্ম হয় এবং অপভ্রংশ-পর্যায়ের নানা বিবর্তন ঘটতে থাকে, সেটি ছিল বাংলা ভাষার আদি যুগ। সে যুগে অপভ্রংশনির্ভর সাহিত্যিক ভাষায় রচিত হয়েছিল চর্যাপদাবলী। এই ধারাতে বাংলা সাহিত্যের আদি যুগের শেষ মাইলফলক শ্রীকৃষ্ণকীর্তন রচিত হয়েছিল পূর্বভারতে প্রবহমান মিলিত অবহট্ট বা ভঙ্গুর বাংলা ভাষায়। তখনো বাংলা ভাষা তার বর্তমানের স্বকীয় বৈশিষ্ট্যতে দাঁড়ায়নি। আমরা দেখছি, ১৩০০ সালের দিকে পূর্বী-অবহট্ট থেকে ছিটকে গিয়ে স্থিত হয়েছে আধুনিক উড়িয়া ভাষা। এরপরে, ১৬০০ সালের দিকে, পূর্বী-অবহট্ট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জন্ম নিয়েছে আধুনিক বাংলা ও অসমীয় ভাষা। অর্থাৎ বলা যেতে পারে, ১৩০০ থেকে ১৬০০ সালের মধ্যে অপভ্রংশ-পর্যায় পার হয়ে অবহট্ট থেকে উৎসারিত নব্য ভারতীয় আর্য ভাষা প্রবাহের এই তিনটি আধুনিক ভাষাই স্বাধীন রূপে বিকশিত হতে শুরু করেছে। ভাষার বেলাতে যা ঘটে—বিবর্তনের ধাপে পয়লাতে একটি ভাষা মানুষের মুখে মুখে ফিরতে ফিরতে নির্দিষ্ট একটি লৌকিক রূপে সাময়িকভাবে স্থিত হয়ে যায় এবং পরবর্তীকালে থিতু হয়ে পড়া আধুনিক ভাষা থেকে বিভিন্ন উপভাষা বা আঞ্চলিক ভাষার উন্মেষ ঘটে থাকে। আধুনিক বাংলা ভাষার এই স্থিত রূপটির ভেতরে আঞ্চলিক বিভিন্নতার কিছু উপাদান আমরা প্রত্যক্ষ করি, যেমন, এই সময়টিতে গড়ে ওঠে রাঢ়ী উপভাষা, বরেন্দ্রী উপভাষা, পূর্ববঙ্গীয় উপভাষা প্রভৃতি। আমরা দেখেছি, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন ও শ্রীরামপাঁচালি-তে ব্যবহৃত হয়েছে বিবর্তমান বাংলা ভাষার অন্তর্গত তৎকালীন রাঢ় অঞ্চলের উপভাষারই বিভিন্ন রূপ। যে সময়কালের কথা হচ্ছে, তখন শাসনের কেন্দ্র এবং কেন্দ্র-সন্নিহিত গ্রাম ও শহরগুলো এই গৌড়ীয় অঞ্চলেরই অন্তর্ভুক্ত ছিল। মূলত রাজানুকূলে বিরচিত কাব্যে তাই আমরা তখনকার রাজভাষা অর্থাৎ রাঢ় অঞ্চলের উপভাষারই প্রাধান্য লক্ষ করি। ভৌগোলিক দুর্গমতার পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ব বাংলা তখন গৌড়ীয় শাসনের কেন্দ্রবিন্দু থেকে অনেক দূরের একটি অঞ্চল ছিল বলে সেখানে শাসকের ভাষার প্রভাব একেবারেই পড়েনি। এই বিস্তীর্ণ এলাকাটিতে গবেষকেরা লোকসাহিত্যের যে সামান্য কটি নিদর্শন আবিষ্কার করতে পেরেছেন, তার ভেতরে পূর্ববঙ্গের উপভাষা বা আঞ্চলিক ভাষার ওপরে নির্ভর করে রচিত মৈমনসিংহ গীতিকা ও পূর্ববঙ্গ গীতিকাই উজ্জ্বলতম সাহিত্যিক নিদর্শন হিসেবে আজও দাঁড়িয়ে আছে।
আনুমানিক ১২ শতকের পরে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ সূচিত হবার আগেই আমরা গোরক্ষবিজয়, শূন্যপূরাণ, মনসাদেবীর ভাসান, চণ্ডীমঙ্গলের আদি পদ, রূপকথা, ডাক ও খনার বচন, ব্রতকথা, মানিকচাঁদের গীত প্রভৃতি প্রাচীন লোকজ সাহিত্যের নমুনার সন্ধান পেয়েছি। দীনেশচন্দ্র সেন, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্সহ প্রখ্যাত সব গবেষকই আমাদেরকে ধারণা দিয়েছেন যে বাংলা সাহিত্যের আদি যুগের এসব প্রাচীন পুঁথির বাক্যবন্ধের ভাষা ছিল খুবই সহজ-সরল। বলা বাহুল্য, তখন নিরলঙ্কার লোকজ ভাষাতেই মৌখিক ভাবের বিনিময় করেছে তখনকার সামন্ততান্ত্রিক কাঠামোর প্রান্তিক অংশের গ্রামীণ জনসাধারণ এবং লোকজ ভাষার ওপরে ভিত্তি করেই তখন গড়ে উঠেছে বিভিন্ন সাহিত্যিক ভাষা। বাংলা সাহিত্যের আদি যুগে আর সব দেশের মানুষের মতোই বাংলার মানুষ মধ্যভারতীয় আর্য ভাষা পর্যায়ে নিজেদের মুখের গতিশীল ভাষাতে শ্লোক রচনা করেছে এবং আবৃত্তি করে বা পালাগান গেয়ে শুনিয়েছে আর দশজনকে; কেননা আমরা জানি, মানুষের মৌখিক ভাষারূপের ব্যবহারই লোকসাহিত্যের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। বাংলা সাহিত্যের আদি যুগের এসব প্রাচীন পুঁথির সহজ-সরল ভাষার ধারাবাহিকতাতেই মধ্যযুগে রচিত হয়েছিল মৈমনসিংহ গীতিকা। কিন্তু চন্দ্রকুমার দে এবং পূর্ণচন্দ্র ভট্টাচার্য বিদ্যাবিনোদের সংগ্রহের ওপরে নির্ভর করে তৈরি করা পুঁথির ভাষা বলে না যে মৈমনসিংহ গীতিকা-র সাহিত্যিক ভাষা বাংলা সাহিত্যের আদি যুগের লোকসাহিত্যের নিদর্শনগুলোর সাহিত্যিক ভাষার মতো অতটা প্রাচীন। বরং এই সাহিত্যিক ভাষার আদল ১৬ শতকে বিবর্তিত আধুনিক বাংলা ভাষার আদলেরই সমসাময়িক, যেখানে একাধারে দু’টো ঘটনা ঘটে গেছে: অবহট্ট-পর্যায় অতিক্রম করে তখন বাংলা ভাষা থিতু হয়েছে এবং সেই সাথে ভাষাটিতে যোগ হয়েছে আঞ্চলিক বিভিন্নতার মাত্রা।
মৈমনসিংহ গীতিকায় ব্যবহৃত সাহিত্যিক ভাষার স্বরূপ বুঝবার জন্য আমরা এখানে একটি উদাহরণ টানতে পারি। দ্বিজ কানাই প্রণীত জনপ্রিয় কাব্য ‘মহুয়া’-র একটি অংশ উদ্ধৃত করছি যেখানে নদীর ঘাটে মহুয়ার সাথে দেখা হচ্ছে নদ্যার ঠাকুরের:
এক দিন নদ্যার ঠাকুর পন্থে করে মেলা।
ঘরের কুনায় বাতি জ্বালে তিন সন্ধ্যা বেলা॥
তাম্সা কইরিয়া বাদ্যার ছেড়ী ফিরে নিজের বাড়ী।
নদ্যার ঠাকুর পথে পাইয়া কহে তড়াতড়ি॥
শুন শুন কইন্যা ওরে আমার কথা রাখ।
মনের কথা কইবাম আমি একটু কাছে থাক॥
সইন্ধ্যা বেলায় চান্নি উঠে সুরুয বইসে পাটে।
হেন কালেতে একলা তুমি যাইও জলের ঘাটে॥
...“জল ভর সুন্দরী কইন্যা জলে দিছ মন।
কাইল যে কইছিলাম কথা আছে নি স্মরণ॥”
“শুন শুন ভিন দেশী কুমার বলি তোমার ঠাই।
কাইল বা কি কইছলা কথা আমার মনে নাই॥”
“নবীন যইবন কইন্যা ভুলা তোমার মন।
এক রাতিরে এই কথাটা হইলে বিস্মরণ॥”
“তুমি তো ভিন দেশী পুরুষ আমি ভিন্ন নারী।
তোমার সঙ্গে কইতে কথা আমি লজ্জায় মরি।”
“জল ভর সুন্দরী কইন্যা জলে দিছ ঢেউ।
হাসি মুখে কওনা কথা সঙ্গে নাই মোর কেউ॥”
“কেবা তোমার মাতা কইন্যা কেবা তোমার পিতা।
এই দেশে আসিবার আগে পুর্ব্বে ছিলি কোথা॥”
[সূত্র: সেন, দীনেশচন্দ্র (১৯৫৮)]
ওপরে উদ্ধৃত চরণগুলোতে আমরা স্থিত বাংলা ভাষার পূর্ববঙ্গীয় উপভাষার নিদর্শনই দেখি। যেমন: নদ্যার<নদীর, মেলা<যাত্রা করা, কুনায়<কোণে, তাম্সা<তামাসা, বাদ্যার<বেদের, ছেড়ী<তরুণী, কইন্যা<কন্যা, কইবাম<কইব, সইন্ধ্যা<সন্ধ্যা, চান্নি<চাঁদিনি, সুরুয<সূর্য, যইবন<যৌবন ইত্যাদি। বাক্যস্থিত পদগুলো লক্ষ করলে বোঝা যায়, তত দিনে বাংলা ভাষা থিতু হয়েছে এবং শুরু হয়েছে ভাষার নতুন পর্যায়ের বিবর্তন। আঞ্চলিক স্তরের এই নবতর বিবর্তন অবহট্ট পার হয়ে ১৬ শতকে থিতু হয়ে পড়া আধুনিক বাংলা শব্দগুলোকে আবারও ভেঙে দিচ্ছে। এভাবে কাব্যের ভাষা রূপ পরিগ্রহ করেছে নিরালঙ্কার ভাষায় যে ভাষায় এখনো পূর্ব-ময়মনসিংহের মানুষজন কথা বলে থাকে।
আগেই আমরা লক্ষ করেছি, বাংলা সাহিত্যের আদি যুগে যখন চর্যাপদাবলী রচিত হয়, সেই সময়টিতে সাহিত্যে সংস্কৃত ভাষার ব্যবহার প্রবলভাবে চেপে বসেনি। সংস্কৃত ভাষাতে যে কাব্য রচনা করতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা সে যুগের রাজনৈতিক বাস্তবতা দাবি করেনি বলেই আমরা দেখতে পাই। তারপরে বাংলা সাহিত্যের আদি যুগের অন্তিম নিদর্শন শ্রীকৃষ্ণকীর্তন-এর কালে, সামান্য মাত্রায় হলেও, সাহিত্যকর্মে সংস্কৃত ভাষার প্রয়োগের সূচনা ঘটে যায় এবং মধ্যযুগের কিছু চরিতসাহিত্যে সংস্কৃত-আবহের প্রকাশ উত্তুঙ্গ হয়ে পড়ে। বাংলা ভাষার ইতিহাস বলছে, ১২ শতকের দিকেই অপভ্রংশ থেকে অবহট্ট বা খণ্ডিত অপভ্রংশের জন্ম হয়ে গেছে এবং গণমানুষের লোকজ ভাষা থেকে তা উৎসারিত বলেই সে ভাষা সাহিত্যকর্মে জনপ্রিয়ও হয়েছে। আধুনিক বাংলা ভাষার এই উন্মেষকালে বৈদিক ও সংস্কৃত থেকে যোজন যোজন দূরে চলে গেছে বাংলার মানুষের মুখের ভাষা। তবু বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে বাংলামুলুকের বিদ্বজ্জন মৃতপ্রায় সংস্কৃত ভাষাতে বা সংস্কৃত ভাষার আবহে কাব্য রচনা ও আস্বাদন করতে চেয়েছেন। শিক্ষিত উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তের মূলধারার সাহিত্যরুচিকে অনুসরণ না করেই বাংলামুলুকের প্রান্তিক কৃষকেরা তখন নিজেদের মৌখিক ভাষাতে বচন, শ্লোক, গীত ইত্যাদি রচনা করে গেছেন। সংস্কৃতবর্জিত এবং তৎকালীন মুখের ভাষার প্রত্যক্ষ ব্যবহারই এসব বচন, শ্লোক, গীত ইত্যাদি স্বাভাবিক ও অজ্ঞান সাহিত্যকর্মগুলোর ভাষার মূল বৈশিষ্ট্য বলে আমাদের জ্ঞান হয়। এই লোকজ ভাষাকেই আমরা মোটাদাগে সাহিত্যে প্রযুক্ত ‘সহজ-সরল ভাষা’ হিসেবে নামাঙ্কিত করে আসছি। বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে এমন সহজ-সরল ভাষাতে গতিময় লোকসাহিত্য যখন রচিত হয়েছে তখন এর কোনো পুঁথি তৈরি হয়নি—মানুষের শ্রুতি থেকে তা পঠিত হয়েছে; বিকৃত হতে হতে তা বিলীনও হয়ে পড়েছে কখনো কখনো। মানুষের সহজ-সরল মৌখিক ভাষায় মধ্যযুগে সাহিত্য রচনার নমুনা আমরা পেয়েছি শ্রীরামপাঁচালি-তে; আর পেলাম মৈমনসিংহ গীতিকা, পূর্ববঙ্গের গীতিকা ও নাথসাহিত্যের নমুনায়। মৈমনসিংহ গীতিকা-র আখ্যানগুলোর প্রকাশভঙ্গির এই ভাষা মোটেই অপভ্রংশ নয়, অবহট্ট নয় বা সংস্কৃত-প্রভাবিত নয় বা ব্রজবুলির মতো মিশ্র কোনো ভাষাও নয়—এ ভাষা একান্তই স্থিত খাঁটি বাংলা ভাষা—পূর্ব-মৈমনসিংহের ভূগোলের সাথে মিশে থাকা গণমানুষের মুখের ভাষা, প্রাণের ভাষা।
দীনেশচন্দ্র সেন বলছেন, মৈমনসিংহ গীতিকা-র ভাষায় কোনো তৎসম শব্দের উপস্থিতি না থাকলেও আখ্যানগীতিকাগুলোতে কিছু কিছু উর্দু শব্দের ব্যবহার লক্ষণীয়। এর কারণ হলো এই যে ১৭ শতকের পয়লা দিকে বাংলামুলুকে সরাসরিভাবে মোগল শাসন শুরু হলে এই অঞ্চলের প্রশাসনিক ভাষায় স্বাভাবিকভাবেই নবাবদের নিজস্ব উর্দু ভাষাই প্রাধান্য পেয়েছিল। উল্লেখ্য, তারও আগে, সুলতানি আমলে ঐতিহাসিক কারণে ফার্সিই ছিল প্রশাসনিক ভাষা। কাজেই এসব আখ্যানগীতিকায় আমরা সৌরশেনী অপভ্রংশজাত উর্দু শব্দের সামান্য কিছু প্রয়োগ দেখতে পাই।
১৬ শতক থেকে শুরু করে প্রায় ১৯ শতক অবধি পূর্ব-ময়মনসিংহের হাওরঘেরা দুর্গম এলাকার প্রান্তিক কৃষকেরা নিজেদের মুখের ভাষায় আখ্যানগীতিকা রচনা করেছিলেন। মৈমনসিংহ গীতিকায় ব্যবহৃত সহজ-সরল, স্বাভাবিক ভাষার মৌলিকত্বটি এখানেই নিহিত। এমন করেই মৈমনসিংহ গীতিকা-র আগে মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষের লোকজ ভাষায় একদা রচিত হয়েছিল চর্যাপদাবলী, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, শ্রীরামপাঁচালি প্রভৃতি সাহিত্যকর্ম। পূর্ব-ময়মনসিংহের লোকজ কবিরা নিশ্চয় নিজেদের অজান্তেই তাদের কাব্যে যুগবিবেচনায় নতুন এই সাহিত্যিক ভাষা প্রয়োগ করেছিলেন। বাংলা ভাষার বিবর্তনের ধাপের পরিপ্রেক্ষিতে, নতুন এই সাহিত্যিক ভাষা আধুনিক বাংলা ভাষা বৈ আর কিছুই নয়, যার আদল পূর্ববঙ্গের উপভাষার স্তরকে ঠিকঠাক অনুসরণ করেছে। এখানে আমরা বলতে চাই, ফোর্ট উইলিয়ামনির্ভর বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগের মূল ধারার সাহিত্যিক ভাষায় অভ্যস্ত বাংলামুলুকের শিষ্টজনেরা অবশ্য মৈমনসিংহ গীতিকা-র এই লোকজ ভাষার আধুনিকত্বকে স্বীকার করতে চাননি; এই ভাষাকে তাঁরা নিছক একটি ‘গ্রাম্য’ বা ‘লোকজ ভাষা’ হিসেবে অভিধা দিয়েই প্রশান্তি লাভে সচেষ্ট হয়েছিলেন।
আশুতোষ ভট্টাচার্য আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ১৬ শতকে বাংলামুলুকের চণ্ডীমণ্ডপের নাটমন্দিরগুলোতে গীত হয়েছে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের অন্যতম নিদর্শন—মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, রায়মঙ্গল ইত্যাদি; শিষ্টজনদের ঘরে ঘরে রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ আর কথকতার আসরও বসেছে। এসব আসরে কিন্তু পূর্ব বাংলার প্রান্তিক কৃষকদের কোনো প্রবেশাধিকার ছিল না। আশুতোষ ভট্টাচার্য বলছেন, এ কারণেই নিশ্চয় অচ্ছুত কৃষকেরা (যাঁরা প্রধানতই ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন) তাঁদের নিজেদের সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা, ফ্যান্টাসি ইত্যাদি নিজেদের নিরলঙ্কার ও স্বাভাবিক ভাষাতেই রচনা করেছেন; পরিবেশন করেছেন পালাগান ও যাত্রাগানের ঢঙে।
পরিশেষে আমরা বলতে চাই, মৈমনসিংহ গীতিকা-র এই আখ্যানগীতিকাগুলোর কাহিনিনির্ভর বর্ণনার ধরন এবং নিরাভরণ সাহিত্যিক ভাষার ভেতরে হয়তো লুকিয়েছিল বাংলা ভাষার কথাসাহিত্যের বীজ। এরও আগে চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে মুকুন্দরাম চক্রবর্তী ফুটিয়ে তুলেছিলেন বাংলার সাধারণ মানুষের জীবনালেখ্য, যা পরে কথাসাহিত্যকে প্রভাবিত করেছে বলে আমরা ধারণা করি।
গ্রন্থপঞ্জি
বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীকুমার (১৯৬৭): বাংলা সাহিত্যের বিকাশের ধারা, প্রথম খণ্ড, ওরিয়েন্ট বুক কোম্পানি, কলিকাতা, জুলাই ১৯৬৭।
ভট্টাচার্য, আশুতোষ (১৯৫৭): বাংলার লোক-সাহিত্য, ক্যালকাটা বুক হাউস, কলিকাতা, ১৯৫৭।
শহীদুল্লাহ্, মুহম্মদ (২০১৯): বাংলা সাহিত্যের কথা, প্রথম খণ্ড, মাওলা ব্রাদার্স, জুলাই ২০১৯।
শহীদুল্লাহ্, মুহম্মদ (২০১৪): বাংলা সাহিত্যের কথা, দ্বিতীয় খণ্ড, মাওলা ব্রাদার্স, সেপ্টেম্বর ২০১৪।
সিদ্দিকী, আশরাফ (১৯৯৫): লোক-সাহিত্য, দ্বিতীয় খণ্ড, গতিধারা, ঢাকা, জুলাই ১৯৯৫।
সেন, দীনেশচন্দ্র (১৮৯৬): বঙ্গভাষা ও সাহিত্য, প্রথম ভাগ, ভারতবর্ষ প্রিন্টিং ওয়ার্কস, কলিকাতা, ১৮৯৬।
সেন, দীনেশচন্দ্র (১৯৫৮): মৈমনসিংহ-গীতিকা, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, কলিকাতা, ১৯৫৮।