ভুলে যেতে যেতে ও অন্যান্য কবিতা

 

গোপনীয়

হাতপাখাটার একটা কাহিনি আছে—
শ্রীমতী মানিনী একদিন ভোরবেলা
আমার বাসায় এসে হানা দিয়েছিল।
আমাদের ওটা ব্যাচেলর ঘর। তাই
কে কখন আসে তার কোনো ঠিক নেই।
বেরোবো তখন—নয়টার কিছু পরে, 
দরজা খুলব এমন সময় শুনি
দরজায় কেউ আঘাত করছে মৃদু।
সে আওয়াজ শুনে বুঝলাম এসেছে ও।
দরজার খিল আগে থেকে খোলা ছিল।
ইত্যবসরে সে এলো দরজা ঠেলে।
প্রথমে আমার কপালে ছোঁয়াল হাত। 
তারপর চুপ। তারপর এক চড়!
আমি ভাবলাম আমার অসুখ বুঝি!

তখন একটা মজার ঘটনা হলো—
কতদিন আগে, সব মনে নেই; আর
আপনাকে সব খুলে বলা যাবেও না;
ছাত্রবয়সে বহু কিছু গোপনীয়।


ওই ভোরে

মৌমাছির মতো স্বচ্ছ এই হৃদয়
একদিন এসেছিল ভোরের সহানুভূতি নিয়ে
তার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম শূন্য হাতে
ডান হাতে সে ধরে রেখেছিল আত্মমগ্ন দ্বিধা
অন্য হাতে বৃক্ষসারির মতো আলিঙ্গন-প্রয়াস
উন্মুক্ত আকাশ থেকে সে সময় পুষ্পবৃষ্টি ঝরেনি
চৈত্রের দাবদাহ তখনো আসেনি
পাখা মেলে ওড়েনি কোকিল
নিঃসঙ্গতা শুয়ে ছিল অবসন্ন শরীরে
কিন্তু হঠাৎ এক দমকা হাওয়া
আর কেউ নয়, ওই ভোর, বয়েসি শিরীষ, ওরা জানে
তার হাতে হাত রেখে বুঝে গেছি সে হাত অবশ

 

যাকে তুমি খুঁজে পেতে চেয়েছিলে

যাকে তুমি খুঁজে পেতে চেয়েছিলে
বইয়ের মলাট খুলে অজস্র অক্ষরের ফাঁকে
তোমাকে সে ধরা কি দিয়েছে?

শিরদাঁড়া বেয়ে আসা ঘামে
মধ্যরাতে লীন হয় দোদুল্যমান প্রেম
ভঙ্গুর প্রাসাদ ফুঁড়ে জন্ম নেওয়া এ কোন বৃক্ষ
গ্রাস করে তোমাকে আমাকে

আনন্দের আতিশয্যে এ কেমন ত্রাস
মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে এখানে ওখানে
দু হাতে শক্ত করে ছুঁয়েছি তোমার কাঁধ

আমার আনত মুখ তোমারও আনত মুখ

অনেক বৃষ্টি হলো অনেক উচ্ছ্বাস
এসব মামুলি কথা নিশ্বাসের ঘ্রাণ
কান পেতে শুনে শুনে ভোর হয়ে আসে


ভুলে যেতে যেতে

পার হয়ে গেছে
দিনের আঁধার
এ বেলা ও বেলা জুড়ে
হাওয়ায় হাওয়ায় ঘুরে
অজানা ক্লান্তির রেশ 
পদচিহ্নে নামে

রাতের আলোকরাশি
মিলিয়ে যেতে যেতে
হাতের মুঠোয় খোঁজে
মূল্যবান প্রেম
অজস্র বিভ্রমের পর
মানুষের ছায়াচিহ্ন 
হয়ে ওঠে শরীরের ঘাম

শরীরকে ভুলে থাকো
ভুলে যেতে যেতে
এখনই ঘুমিয়ে পড়ো