বাদুড়েরা সংসার চেনে ও অন্যান্য কবিতা
বাদুড়েরা সংসার চেনে
সঙ্গমকামী বাদুড়েরা পুজোর আরতি নিয়ে
নিজেকে কখনো করে না প্রকাশ।
মানুষেরাও বাদুড় জীবনে করেছে প্রবেশ বহুবার।
বাদুড়ের অমন সংসার চিনে নিলেও মানুষেরা
তাহাদের মতো পবিত্র সঙ্গম শেখেনি বিস্ময়ে!
দিবাস্বপ্নে বিভোর বাদুড়ের জীবন,
তবুও মানুষেরা আলিঙ্গন পেতে ভালোবাসে।
পুনর্জনমে চিতলের নেশা
গহিনতর অপেক্ষায় থেকেও তন্ন তন্ন করেও হদিস পাইনি নূপুরের সেতার!
বুকের ভেতর আকাশ বেহুঁশ হলেই সুনসান চারদিক।
তবুও আসোনি!
তারপর নেমে এল নিশুতি রাত অসাধারণ এক জাদুকরী কুয়াশায়।
ভাবলাম, এ কি ভুল পৃথিবী!
তবুও জেগেছি ঝুম এক পেয়ালা নেশায়।
সেলফোনের দহলিজে করেছি খোঁজ তোমার ডানার শব্দের,
খুব মৃদু, এলে কি!
তবুও তো আসোনি!
ছিলাম জেগে ঘুমের তলে মাছের মতো শুয়ে,
ঝলকানো চিতলের রুপোলি ডায়েরির খোঁজে
টের পাও যেন বালুকাবেলায় উষ্ণ আঁচড়।
জেনে যাও যেন খুব তপ্ত বালুতে মেলা কাটাকুটি প্রিয় সুখ আঁকবার!
টের পাও যেন একাই—শুধু একাই পৃথিবীর বুনো ওম
গাঢ় লিকারে মেশানো ভালোবাসা চিতলের পুনর্জনম নেশায়!
বলো তো তুমিও কি আমার মতোই পুনর্জনম বিশ্বাসী!
মুছে দাও শরণার্থী পরিচয়
ভূমিরও কি মন আছে? আছে কি হৃদয় তার বুকের তলে?
ভূমি কি কখনো কাঁদে দ্বিখণ্ডিত হতে হতে ক্রূর-কূট চালে?
ঘটে কি রক্তপ্রলয় ঘূর্ণিপাক ক্রোধে তার প্রাচীন জরায়ুতে?
ভূমিও কি ক্ষেপা হয়ে ওঠে তেতে, নিজেরে ভাবে শরণার্থী
আজন্ম চিৎকারে পাষাণ প্রাচীরের এপারে ওপারে হুঙ্কারে?
নাকি সে ভেতরে ভেতরে ভাঙে, কান্নায় অভিমানে পরাজয়ে
মধ্য বরাবর সীমান্তকরাত যখন নেশায় তাকে কাটে!
আমরা সব হতবাক মানব কাঁদি ধূর্তচরাচরে, কাঁদি অনুরোধে,
কোরো না দু’ফালা আমারে প্রতিবার নিজ আয়োজনে।
দু’বাহু জড়ায়ে আমার মাতৃদুগ্ধস্নানে রাঙা এ ভূমি,
পিতৃপরিচয় নিয়ে এ ভূমি আমার ঘোর সংসারী।
ভূমি কি বুঝে যায় ভালোবাসা, যা দিলাম চিরকাল?
জেনে কি যায় প্রতিশ্বাস, মনটন, কামেল অহংকার?
কখনো কি পুড়ে যেতে উদ্যত হয় হাহাকারে শোকে
পোড়ে যখন বসতভিটে, শিকড়বাকড় নগ্ন আগুনে?
বলো তো দেখি ভূমিহীন এ আমি আজ কারে
জড়ায়ে ধরি আমার আত্মার জনমভূমি বলে?
কার কাছে গিয়ে বলি আমি বিলাপে, চিৎকারে
সাড়ে তিন হাত অন্তত এ ভূমি দাও আমারে।
দূরে এক ছায়া তুমি
বৃক্ষের শরীর বেয়ে নেমে এক শিশিরকালের নদী ঘোর লেগে পড়ে আছে তোমার বাহুর ছায়ার ওপর।
ছায়ারা একসাথে বেহুলার বাসর ঘরে সুর তুলে এক অপরূপ সম্মোহনী পৃথিবীর কথার, মায়ার।
তারপর জোনাকির ছায়ার সাথে গাছের শিশুরাও আকাশে মেলে দেয় ডানা, কোটরে আর লাগে না ভালো।
উড়ে যেতে চঞ্চল মন নিয়ে আর বুঝি হবে না ওদের ফেরা কোটরবাসে, এই একই গৃহকোণে কার লাগে ভালো!
তবুও অমন বৃক্ষপুত্রদের জলমগ্ন জীবন দেখেনি কোনোদিন চতুর বজ্রপাতের আলোয়।
প্রাচীন বৃষ্টিতেও যদিও সকলে ডেকেছিল ইশারায় কতবার, তবু কুহেলিকা ভ্রম কাউকে ডাকেনি।
অযুত বৃষ্টির পর সে শুধু চিনেছিল অবুঝ বৃক্ষের হাত ধরে বেহুলার বাসরে নতুন তোমাকে।
তখন লখিন্দরের সাথে হিরণ্ময় স্রোত ধরে চলে গেছ তুমি বহুদূরে, তুমি দূরে এক ছায়া।