অঙ্ক বইয়ের গল্প ও অন্যান্য কবিতা
অঙ্ক বইয়ের গল্প
জিওগ্রাফিক চ্যানেলে অভিনয়ের অফার পেয়ে
অঙ্ক বইয়ের পঁচিশ পৃষ্ঠা থেকে
লাফিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে তৈলাক্ত বাঁশের বানর।
পানি মিশানো দুধওয়ালাও এখন শীতে চাদর জড়িয়ে ভোরে
বিক্রি করে তাল-খেজুরের রস।
.
জুলেখা বাদশার মেয়ে নয়; গনি মিঞার মেয়ে,
যে গনি মিয়ার নিজের জমি ছিলো না,
অন্যের জমি চাষ করতো
সে এখন আওয়ামী লীগ করে।
পাঠ্য পাট গণিত, বাংলা বই প্রথম পাঠ, পাঠশালা
খালি হয়ে যাচ্ছে।
দাবানল আর উজাড় করা বন দেখে ফিরে এলো বানর,
তখন গ্রন্থগুলো অন্ধ হয়ে গেছে!
জিরাফ, কচ্ছপ এবং শাদাফুল
তিনি তুলনা করছিলেন প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে সাবেক স্ত্রীর
মাপছিলেন, ভাবছিলেন।
দু’ জনেই শাদা।
একজন বকুল ফুল, একজন নেবু ফুল;
তাদের সৌরভে এখনো বিভোর শনিবার সন্ধ্যা
এবং রোববার রাত্রি!
প্রাক্তন দেখলে তিনি জিরাফ হয়ে উঠেন,
আর সাবেক দর্শনে মনে পড়ে কচ্ছপের কথা!
আলোচ্য পুষ্প প্রেমিককে আপনারা সবাই চেনেন,
ভাবছি, তাকে নিয়ে একটি চিত্রনাট্য তৈরি করবো।
অতিথি
একজন আরেক জনের অতিথি,
পরস্পরকে আপ্যায়ন করতে হয় যৌথ হাঁটায়, যৌনতায়।
তার সাথে ভাগাভাগি করতে হয়—রুটি, মাংস,
বিজ্ঞান, বেদনা, বিছানা, আনন্দ। তালাচাবি।
সম্মানিত অতিথি একটি ফুল বা ফুলের মতো,
সৌরভ সৌন্দর্য ছড়ায় এবং আংশিক অন্ধকার।
জীবনের অংশীদার গেস্টকে হোস্ট ভাবা সমীচীন নয়
যদিও সে অংশীদার।
দূরত্ব
পৃথিবীর প্রথম দিন থেকে পৃথিবী শেষ দিনের দূরত্বে
আদি-অন্ত দৈর্ঘ্য তৈরি করে
তুমি ভুলে গেলে মসলার বিবিধ ঘ্রাণ,
আমিও ভুলে গেলাম মেডিসিনের গন্ধ।
দূরত্ব এবং দৃশ্যের বাইরে
হু হু করে অনূদিত হাহাকার নামছে, শীত নামছে
কাঁপছে ঠাণ্ডা আগুন,
জমছে আগুনের বরফ!
একদিন আমরা
তালাচাবির ভূমিকায় সুইসুতার মতো গেঁথে ছিলাম
পরস্পরের দেহের উষ্ণতায়।
আমরা রচনা করতে পারিনি নক্সিকাঁথা।
ভুলে গিয়েছিলাম—নয়ের ঘরের নামতা।
এখন তুমি ছিটকে গেছো জন্মের আগে,
আমিও মৃত্যুর পরে।
আমাদের এই দীর্ঘ দূরত্ব—
নীল সাগর ও নীলাকাশ দূর দিগন্তে একাকার,
তবু একা। দেখা হবে না।
দূরত্বের মাঝখানে
মসলার ঘ্রাণ, মেডিসিনের গন্ধ, ঠান্ডা আগুন
দত্তক আর পালিত সন্তানের মতো এক-তৃতীয়াংশ অধিকার নিয়ে
সবুজ বেরিয়ে আসে জরায়ু থেকে।
স্বরেও
ক্লাসের রোলকল খাতা থেকে একদিন
নিখোঁজ হয়ে গেলো এক বালক,
মার্বেল পাথরের মতো গড়াতে গড়াতে লুপ্ত মাটিতে
নাটাই ছিঁড়া ঘুড়ি মিশে গেলো মেঘে-মেঘে
অথবা রোদ্দুরে।
তাকে খুঁজতে খুঁজতে সবাই নিরাশ
ছোটখালার কাছে নেই,
পুকুরেও নেই।
সে কি কাজলা দিদি পড়তে পড়তে; দিদির সন্ধানে?
তাকে খুঁজতে খুঁজতে আর ফিরে আসেনি ছোট মামা!
নাকি ভুলিয়ে-ভালিয়ে নিরুদ্দেশে নিয়ে গেছে—
কোন এক ছেলেধরা!
হাট-বাজারে পাড়ায় পাড়ায় মাইকে ঘোষণা হচ্ছে:
‘...বারো-তেরো বছরের একটি ছেলে
গতকাল স্কুল থেকে ফিরেনি। তার গায়ের রঙ শ্যামলা,
পরনে ইউনিফর্ম ছিলো। ছেলেটির সন্ধান পেলে’…
অবশেষে স্থানীয় দৈনিকেও প্রকাশ হলোঃ
হারানো বিজ্ঞপ্তি।
শেওড়াগাছে ঘুঘুর বাসায় ঘুঘুর বাচ্চা হয়ে ঘুমিয়ে গেছে,
সে মিশে গেছে বাতাসে অক্সিজেন হয়ে—
ধানফুলে।
খুঁজতে গেছে উজানে নদীর উৎসমুখ।
রফিক-সালামের মতন হারানো বালক
আমাদের বর্ণমালার প্রথম অক্ষরে মিশে গেছে; স্বরেও-তে।
সে এখন আমাদের প্রথম পাঠ।