দাদন আলীর চুরিবিদ্যা ও জীবনের কলকবজা
ও পদধাইন্যা সাব, ঘরে আছেন নি?
বাসুনি ডাকছ?
হ পদধাইন্যা।
আইজ্জা বাজারে যাইবেন না?
বুঝত্যাছি না। আসমানের মোন বালা না, মেঘ আইতে পারে। ইদানীং শরীলডাও বালা যাইত্যাছে না। বাইর অইতেও মোন চায় না। তয় তোমার কতা কও। মেঘ-বিষ্টি দিয়া আইলা, কোনো সমস্যা অইছে নি আবার?
পদধাইন্যা সাব, সমস্যা আর কী, হয়তো হুনছেনই, গ্যাছে কাইলক্যা রাইত আমার মুরকার খোয়ারসহ চুরি অইয়া গ্যাছে।
চোর ধরছস নি?
পারলাম না তো।
তইলে ক্যামনে অইব? দ্যাশটাত যে কী আরম্ভ অইছে! পোলাপাইন এত বাড়া বাড়ছে। গিরস্থ সুখে থাকব ক্যামনে?
চোর পাইলে তো হাইল্লাইয়া হালাইতাম। তহন কী আর বিচার চাইতাম? আম্নেরা বিচার করনের লই আইয়্যা পততেন।
বাসু, তুই ত চোর ধততে পারছ না। তইলে আন্তাইজ্যা কারে ধইরা বিচার করুম। অহন ঠাণ্ডা থাক। মফিজের পোলাপাইনগরে জিগামু। শালমের পোলারা ইদানীং উতরাইয়া গ্যাছে। হুনছি চুরিচোট্টামি করে। কাগোরে সন্দেহ অয়নি তোর?
অনেকরে অয়। কাক্কনের পোলা মন্টু কামডা করছে। আমার ছোডো মাইয়্যাডারেও স্কুলে যাওন-আওনের পোথো ডিসটাব করে। সোহেলের ভাইয়েও কত্তে পারে।
[দাদন আলী মাথা নেড়ে নেড়ে সায় দেয়] এইগুলো সব অজাত। জাতে উঠব না আর। তুই কোনো কতা কইছ না। অহন কই যাবি যা। আমি জিগগামু।
পদধাইন্যা সাব, বিচার দিয়া গ্যালাম। বিচারডা বালা বালা যেন পাই। নাইলে কিন্তু খুনখারাবি অইয়া যাইব কইলাম।
যা যা। কইলাম তো জিগগামু।
ছাতা মাথায় বাজারের দিকে যায় বাসু। দাদন আলী জানালার কাছে বসে। দাদনের স্ত্রী আয়াতুননেছা ছনের পাতলা মাথায় দিয়ে দক্ষিণের ঘরের উত্তরের দরজার সামনে দাঁড়ায়। ডাক দেয়, ও আজগরের বাপ, আজগর মোবাইল করছিল, দুই-এক দিনের মইধ্যে তিন আজার টেআ পাডাইতে অইব। আগামী সাপ্তায় পোলার ছেমিস্টার পরীক্ষা চালু।
আজগর কোন সোমায় ফোন দিছিলম আয়াতু? [দাদন আলী স্ত্রী আয়াতুননেছাকে ভালোবেসে ‘আয়াতু’ বলে ডাকে।]
মেঘের সোমায়। হেই লইগ্যা কথা বুঝি না। কইছে আম্নেরে মোবাইল করব।
আইচ্ছা, কতা কমুনি। আমারে মোবাইলডা দিছ।
মোবাইল হারা দিনই দেওন যাইব। কতাও কইতেন পারবেন। টেআ রেডি কইরা রাইখ্যেন।
দাদন আলীর ছেলেমেয়ে লেখাপড়ায় ভালো। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে স্কলারশিপ পেয়েছে। দশ গ্রামেও এমন ভালো ছাত্রছাত্রী নেই। এলাকার মানুষ বলাবলি করে। বড় দুজন এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন-এ-প্লাস পেয়েছে। পরের দুজনও ভালো করবে। সন্তানের খারাপ ফল বাবা-মাকে যেমন চিন্তায় রাখে, ভালো ফলও চিন্তায় রাখে। তখন ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়াতে হয়। বেশি টাকা খরচ করতে হয়। আগামী মাসে ছোট মেয়ে নাজেয়ার এসএসসি পরীক্ষা শুরু। দুই মাস পর লায়লার আইএ। নাঈমার খরচ পাঠানো হয়নি। শত চিন্তা মাথায় করে ভাত খেতে বসে দাদন। খাবার শেষে লণ্ঠন হাতে যায় জোড়পুল বাজারে দিকে। দেখা হয় ভীমরাজের ছেলে মন্তাজের সঙ্গে। চাচা, কই যান?
মন্তাজ নিরে?
হ চাচা।
তুই যাস কই?
বাবুলের দোহানের এক কাপ রং চা খামু।
দিনকাল কেম্নে কাটত্যাছে তোর? কামকাইজের খবর আছে নি?
বৃষ্টির দিন কামকাইজ থাহে না। চলতে কষ্ট অয়, মাতব্বর।
আমগ জীবনডা খুব কষ্টের রে মন্তাজ। কোনো কিচ্চুই অয় না।
আম্নেরা বড় লোক, কিয়ের কষ্ট?
[দাদন আলী দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে!] হ রে মন্তাজ, আমরা কোনো রহম চলতে পারি। চিন্তাডা তোগোরে লইয়া।
পদধাইন্যা সাব, কামকাইজের ব্যবস্থা কইরা দ্যান। পোলাপাইনগোরে য্যান বাঁচাইত্যাম পারি।
আইচ্ছা, আইজগ্যা রাইত হারিসুলের লগে গতর খাটতে পারবি নি? টেআপয়সা কাম অওনের পর পাবি।
এইডা আবার ক্যামইনা কাম?
দরকার নগদ টেআ।
বইয়্যা না থাইক্কা সময়ডা হারিসুলের লগে দে। কামে লাগব। দুইডা পইসাও আইব। বাহি থাকলে খোঁজতেও পারবি।
সোময় দিলাম। কিন্তু কামডা কী?
এত কতা অহন কওন যাইব না। যাওনের পর দেখবি। মানুষ মারনের কাম দিমু না।
২
মধ্যরাত। সুনসান। বদরপুর ও কাশিমপুর নামক গ্রাম দুটি অন্ধকারে ঘুমিয়ে আছে। পশুপাখির কু কা নেই। জোড়পুল বাজারের দোকানিরা ঘুমে আচ্ছন্ন। কর্মপাগলেরা নতুন দিন শুরুর অপেক্ষায়। হারিসুল ও মন্তাজ পূরণ গ্রামের রাস্তার মাটি কাটছে। বৃষ্টিও নামছে অন্ধকার ভেদ করে। দাদন আলী ছাতা মাথায় বসে আছে। জানতে চায়, ও হারিসুল, কোনো খবর টবর অইলনি?
পাইত্যাছি না। কূলকিনার নাই। মেঘ-বৃষ্টি দিয়া কাম করতে ম্যালা কষ্ট। মালডা পাইয়া গ্যালে কষ্ট লাগত না।
মন্তাজে কই?
আছি।
আছে নি কিচ্ছু?
পদধাইন্যা, বুঝতাম পারছি না। আরোকটু চেষ্টা কইরা দ্যাহন যায়। মনে লইত্যাছে কিচ্ছু নাই। হুদাই কষ্ট করত্যাছি।
ও হারিসুল, মন্তাজে কয়ডা কী?
মাতব্বর, কতা মনে হয় মিছা না। নামগোন্ধও নাই।
পাবি পাবি। আরোকটু কষ্ট কর। পাইলে কপাল খুলব। সাতপুরুষ বইয়্যা খাইবি। ধর ধর সিগ্রেট টান।
দাদন আলী টর্চের আলোতে দুজনের দিকে সিগারেট বাড়িয়ে দিলে, অবিশ্বাস নিয়ে হাত বাড়ায় মন্তাজ। আবার পিছিয়ে নেয়। আবার সামনে ঠেলে দেয়। অন্ধকারে কিছুই বুঝতে পারছে না দাদন আলী। মন্তাজ ভাবছে, অন্ধকারে প্রকৃত দাদনকে চেনা যায় না। এই দাদন নিশ্চিত মাতব্বর দাদন আলী নয়।
মন্তাজ, সিগ্রেট টানলে শরীলডা গরম অইব।
তবু অন্ধকারে লুকোচুরির ভঙ্গিতে ভেজা সিগারেট জোরে টান দেয় মন্তাজ।
হারিসুল টানতে টানতে বলে, পদধাইন্যা সাব, আইজ আমার কিচ্ছু টেআ লাগব।
কত?
কম কইরা অইলেও পাশ শ।
অন্ধকারে মাথা নাড়ে দাদন। টেআর লইগ্যাই কষ্ট করত্যাছি। কষ্ট করলে কেষ্ট মিলে। বুঝছ হারিসুল?
আগে তো বাঁচন লাগব। না বাঁচলে কষ্ট করুম ক্যামনে?
বাঁচবি বাঁচবি। পিলারডা পাইলে অনেক টেআ বেচন যাইব। অনেক টেআ ভাগে পাইবি। দুঃখ দূর অইয়া যাইব। আরোক টিপ দম দে। এরপর দেহা না পাইলে যামুগা, কাইল আবার আমু।
হারিসুল ও মন্তাজ পুনরায় কাজে মন দেয়। তাদের ধারণা, বৃষ্টির কারণে অর্ধেক কাজ কম হয়েছে। তার ওপর কোনো সুখবর নেই। দাদন আলী চিন্তা অন্যদিকে নিতে চায়। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করতে হবে। ছেলের টাকা পাঠাতে না পারলে বউ ঝগড়া করবে। ঘরের বিবি পকেট দেখে না, পেটের দিকে তাকায় না। দেখে ঘরে খাবার আছে কি না। অন্যথায় বলে, সংসারের খরচ বহন করতে না পারলে বিয়ে করছো কেন? পোলাপান আনতে গেলে কেন? ভাবতেই চায় না, সংসার দুজনের। সন্তান দুজনের। পুরুষের চেয়ে নারীই সংসার উপভোগ বেশি করে। যা-ই হোক, টাকা দিতে না পারলে আটকে যাবে ছেলের পরীক্ষা। এই সেমিস্টারটা দিতে না পারলে লেখাপড়া শেষ। ছেলেমেয়েরাও জীবনে অনেক কষ্ট করেছে। এমনটা ভাবতে গিয়ে দাদন আলীর চোখ ছলছল করে। দেখতে পায় না মন্তাজ ও হারিসুল। মাতব্বরের চোখে পানি, এমনটা করা যাবে না। দাদন দ্রুতই মুছে ফেলে পানি।
মন্তাজ মাটি সরাতে সরাতে বলে, হারিসুল, আইজ্যা আর পারুম না। কাইল বাকি কাজ করুম। জীবনে এত কষ্ট করি ক্যাবল পোলাপাইনগো মুহে কয়ডা খাওন দ্যাওন লাগব বইল্যা। নাইলে বালের কষ্ট করনের মানুষ মন্তাজ না।
হারিসুলের মন খারাপ। দাদন আলী মাতব্বর মন খারাপের ভেতরেও মৃদু হাসার চেষ্টা করে। সারা জীবন বুকের কান্না লুকিয়ে মুখে হাসে।
মন্তাজ বলে, ঘরে চাইল নাই। বউ পোলাপাইনের মুখে কী দিমু?
দাদন আলী বলল, বিষ তো আর দিতে পারবি না, তয় মুখে ভাত দিবি।
কই থেইক্কা দিমু?
এত কান্দাকাডি করছ ক্যান। ভাতের ব্যবস্থা অইব। অহন কোনাইচ্চা পোথ দিয়া আয়। গরিবের লগে যেই কাম কত্তে যাই আগে টেআর কতা কয়! বিপদের লগে বিপদ।
পদধাইন্যা, বিলে প্যাক পানি। আডন যাইব না।
যাইব, পাও মাথাত লইয়া আয়, মিজি বাইড় উপ্রে দিয়া যামু।
হারিসুল জানতে চায়, এত রাইত কিল্লাই যামু?
তোগো টেআ লাগব না?
লাগব। মিজি বাইত টেআর খনি আছে?
তইলে লন। যামু।
৩
আমার সর্বনাশ অইয়া গ্যালো রে। সর্বনাশ অইয়া গ্যালো। মালেক মিজি চিৎকার করছে। বাড়ির উঠানে দাদন আলী মাতব্বর। উঠান ঝাড়ু দেয় দাদনের স্ত্রী। মেয়ে লায়লা ও নাজিয়া পড়ার টেবিলে। মালেকের কান্না শুনে উঠে আসে। ও মালেক চাচা, কী অইছে?
আর কইয়েন না, আমার বড় গরু দুইডা আইজ রাইত চোরে লইয়া গ্যাছে। অহন কী করুম! বাঁচুম ক্যামনে? দাদন চাচায় কই? চাচায় এলাকার মাতব্বর, গরু দুইডার খোঁজ লইত পারেনি, কন। আর না অইলে আমি পোলাপাইন লইয়া বাঁচুম ক্যামনে? মরণ ছাড়া উপায় নাই। পথে বইয়া ভিক্ষা করন লাগব। চাচার কতা দশ গ্যারামের মাইনষে হুনে, চোরেরা হুনব না ক্যান?
মালেক মিজির চেঁচামেচিতে মানুষের জটলা তৈরি হয়।
দাদন মাতব্বরের ঘুম ভাঙে। ভিড় ঠেলে কাছে আসে চোখ ঘষতে ঘষতে। কী অইছে রে মালেক?
আমার গরু দুইডা চুরি অইয়া গ্যাছে, মাতব্বর।
গরু রাইখ্যা, আত-পাও ছাইড়া মরণের মতন ঘুমাইয়া থাহছ ক্যান? এতবার বলনের পরেও তোরা সোজা অইলি না। কাইল বাসুর মুরকা চুরি, পরশু ছাদেক বওয়ালের ছাগল চুরি, আইজ তোর বলদ চুরি। পরের দিন আমার ঘরে হিন দিয়া মাইয়াগোরে চুরি করব। ছ্যারাব্যারা থাকলে চুরি তো বাড়বই। অহন থেইক্কা হগলে মিল্লা রুইক্কা খাড়নের দরকার। কিন্তু তোরা করবি না। মিইল্যা-মিইশ্যা থাকবি না। অহন বাইত যা। যাইয়া রেডি অ। আইজ রইবার, নারাণপুর বাজার বইব। আমিও আইতাম পারি। দেহি তোর গরু কেউ বাজারে উডায় নি। বাজারে গ্যালে পাওনের সোম্বাবনা আছে। এরপর সন্ধ্যায় জোড়পুল বাজারে সব্বাই মিইল্যা বমু। এইডার একটা বিহিত করণ লাগবই। অ নাঈমার মা, চোক বড় কইরা চাইয়া আছো ক্যা? নাস্তা-টাস্তা আছে নি কিছু? মালেক রে দ্যাও।
রুডি আছে চাইরডা।
দুইডা মালেক রে দ্যাও। দুইডা আমারে।
আমি অহন কিচ্ছু খামু না, পদধাইন্যা। মরইন্যা মাইনষ্যে কিচ্ছু খায় না। আমি মইরা গ্যাছি। আন্নেগো লগে কথা কয় আমার রু। খাওন আমনেই খান। এরপর উত্তর দিকে হাঁটতে থাকে মালেক মিজি। বাড়ির দিকে যাবে। হাঁটছে অনেকটা আলাভোলা। হাঁটার দৃশ্য দেখছে দাদন মাতব্বর। মালেকের জন্য কষ্ট হয়। ভেতরটা হু হু করে কেঁদে ওঠে, সংসার চালাবে কী দিয়ে? কে তাকে সহযোগিতা করবে? গরু দুটি হারিয়ে পাগল হয়ে যেতে পারে মালেক।
দাদন আলীর সামনে নাস্তা দেয় লায়লা। বেলা কয়ডা বাজছে? অহন রুটি খামু? ভাত অইলে ভালা অইত না?
আব্বা, তরকারি নাই। নাস্তা কইরা বাজারে যান, তরকারি পাডান।
এত বেলা পরে তরকারি পামু? আমারে আগে ঘুম থেইক্যা জাগাইলি না ক্যান? কথাগুলো বলতে বলতে দাদন রুটি খায়। খাওয়া শেষে লায়লাকে ডাকে। তোর মা কই?
মায় ঘাটকুলের ধারে গ্যাছে মোনে অয়।
কাঁচাবাজার কী লাগব?
আন্নে কই যাইবেন?
নারাণপুর বাজার। আওনের সোময় বাজার কইরা আমু।
আব্বা, নারাণপুর বাজারে কী কাম? জোড়পুল বাজারেই সব পাওন যাইব।
বেশি কথা কইছ না। বাজারের ব্যাগডা দে। তোগো কতাবার্তা ভাল্লাগে না।
ব্যাগ আমার লগে নাই। মায় আইয়ুক। এরপর যাইয়েন।
তইলে থাক, কাইল বেহানে জোড়পুল থেইক্কা বাজার করুম। তোর মারে কইছ, আজগরের টেআ পাডানোর ব্যবস্থা করুম। তোগো টেআপয়সারও মিল করুম। তোরা মোনোযোগ দিয়া পড়। পড়া শ্যাষ কইরা চাকরি শুরু করলে সংসারো আর অভাব থাকব না। তহন তোরা টেআ দিবি আমি বালা বালা বাজার করুম। টেআ না থাকলে সম্মান থাহে না রে মা। অহনকার দিন টেআপয়সা লাগে। টেআপয়সার লগে মান-সম্মান জড়াইয়্যা গ্যাছে। আমার সম্মান আছে টেআ নাই। হুন, মান-সম্মানের লগে চলার মতো কিছু টেআ লাগে।
আব্বা, আন্নে দোয়া কইরেন।
সব দোয়া তোগো লইগ্যাই করি। আইচ্চা তোরা লেহাপড়া করছ, কতাবার্তা অট্টু শুদ্ধ কইরা ক।
শুদ্ধ কইরা কইলে ত বুজবেন না, আব্বা। তহন কী অইব?
চেষ্টা করুম। চেষ্টা করতে করতে এক সোময় ঠিকই বুঝুম।
আইচ্চা, অহন থেইক্যা শুদ্ধ কওনের চেষ্টা করুম। হি হি হি...
বাজারে মালেকের গরুর সন্ধান মেলে না। মালেকের ইচ্ছে হয় জোরে চিৎকার করে কাঁদতে। পারে না। কান্নাকাটি করলে মানুষ কী ভাববে? বলদ দুটি পাওয়া গেল না। হারানো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মাইকিংও হয়েছে। তা-ও খোঁজ মেলে না। বাড়িতে বউ-মেয়েদেরও মন খারাপ। গলায় ফাঁসের রশি কেনার কথা ভাবছে মালেক। পোলাপানের মুখে খাওন না দিতে পাল্লে মরণ বালা। মইরা যামু। বাঁচনের আর শখ নাই। ভাই, গলায় ফাঁস দ্যাওনের কোন দড়িডা বালা অইব?
দোকানি হাসে। হাসতে হাসতে বলে, যেইগুলো দিয়া ফাঁস দিলে আম্নে কষ্ট পাইবেন না, তাড়াতাড়ি মরবেন। এই রহম দড়িও আছে। কয় টেআর মইদ্যে দড়ি নিবেন?
ভাই রে, দড়ি একটা ব্যাছনের লইগ্যা এত্ত কথা কন ক্যা?
চাচা, ও চাচা, আম্নের কী কোনো সমস্যা অইছে?
আম্নেরে ভাই কই আম্নে আমারে চাচা কন, এইডাই মেইন সমস্যা!
চাচা, আম্নের মেজাজ গরম ক্যা হেইডা কন?
আমার দুইডা গরু চুরি অইয়া গ্যাছে। অহন মরা ছাড়া উপায় নাই।
অ্যাঁ। মরার আগে কী খাইবেন কন তো?
আগে তোরে খামু। পাগলের মতো প্রলাপ বকতে শুরু করে মালেক। শুক্রবার ডাকের বাজার। অনেক লোকের সমাগম। মালেক মিজি লুঙ্গি খুলে বাজারে হাঁটে। গালাগালি করে। ছোট ছেলেমেয়েদের মারতে যায়। কামড় দেয়। এ নিয়ে বাজারে মারামারিও লেগে যায়। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। বাড়ি ফেরে না মালেক। মালেকের ফেরার অপেক্ষায় থাকে তার পরিবার।
৪
কয় দিন ধরে দাদন আলীর শরীর আগের মতো সায় দেয় না। বয়স বাড়লে যা হয়। সন্ধ্যার পরপর বাড়ি চলে আসে। স্ত্রী আয়াতুননেছাকে ডেকে হাতে পাঁচ শ টাকার বান্ডিল দেয়। টাকা দেখে অবাক! এত টেআ! কই পাইছেন, আজগরের বাপ?
একজোনের কাম কইরা দিছিলাম। হ্যায় দিছে। পোলামাইয়াগো লাগব। খুব বিপদের সোময় টেআডা পাইচি। উপকার লাগব। ভুল বুইজ্যো না, বউ।
ভুল বুজুম ক্যা? কত দিন পর এত ট্যাহা দেখলাম। আইচ্ছা, আম্নের চেয়ারা এত কালা অইছে ক্যান?
কয় দিন কম ঘুম অইছে। ঠিক অইয়া যাইব!
আজগরের বাপ, চিন্তা বেশি করেন?
সংসারডা তুমি চালাও। তহন চিন্তা করুম না। মুখটাও কালা থাকব না। অহন যাও, অকটু ঘুমাই।
দাদান আলী আয়নার সামনে দাঁড়ায়। অথচ নিজেকে দেখতে পায় না। ভয় পেয়ে যায়! নিজের সঙ্গে কথা বলে, তুই কই দাদন? তোকে দেখা যায় না ক্যান?
আয়নার ওই পাশ থেকে কেউ একজন বলে, চরিত্র নষ্ট হলে আসল মানুষে ঢাকা পড়ে, দাদন।
সব দোষ টেআর, এই টেআ আমার জীবনডায় অধঃপতন নামাইচে।
প্রথম জীবনটা অবহেলায় ব্যয় না করলে এখন ভালো থাকতে পারতে। সুযোগের অবহেলা না করলে ভালো থাকতে পারতে, দাদন।
অতীত লইয়া অহন ভাবি না। যা আমারে পোড়াইয়া ক্ষত বাড়ায়। পুরান কতা সামনে আনতে চাই না। অহন আমি বেথ্য। বেথ্য এক বাপ। জানেন, বেথ্য মানুষ অওন বালা। বাপ হওন বালা না। আমার বেথ্যতা ছেলেমেয়েরে ছোডো কইরা দিছে। নাইলে ছেলেমেয়েগো মেধা আরো দূরে য্যাইতে পারত।
তাই বলে মালেকের মতো গরিব মানুষকে খুন করতে হবে?
ধনীগো থেইক্যা উশুল করন যায় না কিচ্ছু। আমার পক্ষে সোম্ভবও না। এই জন্য মালেকেরডা নিছি। শকে চুরি করি না।
এসব কত দিন চলবে, দাদন?
এসব কত্তে চাই না। করলে আত কাঁপে। চোহে আন্ধার দেহি। পাওডায় জোর পাই না। মগজে ঘুত্তে থাহে।
কথাগুলো বলতে গিয়ে দাদন আলীর চোখে পানি আসে। বাঁ হাতে সেই পানি মোছে। কিছুক্ষণের জন্য বুজে থাকে চোখ।
বিহাইন্ড দ্য স্কিনে ঘুমাচ্ছে মন্তাজ ও হারিসুল। দিনের বেশির ভাগ ঘুমিয়ে কাটে তাদের। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে জীবন ও জীবিকার সামান্য পরিবর্তন। বদলে যায় নিজেদের অবস্থান। ঠিকঠাক তিন বেলা খেতে পারছে। ছেলেমেয়েরাও কান্নাকাটি করছে না।
মাইনষের অসহায় ছবি দেইখে আমরা অসহায় হইয়া পচ্ছি। গ্যারামে গ্যারামে যেই হারে চোর বাচ্ছে, বাঁচনডাই মুশকিল অইয়া পচ্ছে! কে কার ডিম তাও দেয়? অহন এইডা বুইজ্যা উঠোনও কষ্টের। চোরে এদদিন হাঁস, মুরগি নিত। অহন নেয় গরু-ছাগল। কয় দিন পর হেজেক লাইট জ্বালাইয়া ডাহাতি করব। তহন কী অইব আমগো? চুরি অইত্যাছে চোর ধরা খাইত্যাছে না। কতা অইল! আক্ষেপ করে বলেন মেম্বার মমিন শেখ।
দাদন আলী বলে, অহনকার চোরেরাও বালা রহমের কৌশল হিক্কা গ্যাছে, মেম্বর সাব। আপনেরা তো জানেন কয় বচ্ছর পুলিশে চাকরি কচ্ছিলাম আমি। ঝামেলার কারণেই চাকরি অইতে চইলা আইলাম। টেনিংয়ে হুনছি ছ্যাঁচড়া চোররা মুরগির সামনে পেইজ কাইট্যা দ্যায়। তহন মুরগি আর ডাহে না। ছাগলের মুহে নুন লাগাইলে ছাগলও ডাহে না। আর গরু তো গরুই। যেমিক্কা টানবেন হেইমিক্কা যাইব। মেম্বর সাব, তহন চোরের চুরি করনডা সহজ অইয়া যায়।
দাদন আলী, আম্নের কতা ঠিক আছে। দেরি করণ আর ঠিক অইব না। আমাগো আতে সোময় নাই। আরোকডা কতা হুইন্যা রাহেন, খেল রাইখেন, গ্যারামের কেউ এমন কামে না জড়ায় য্যান। সাবধান কইরা দিলাম, হেইলে তার বিচার অইব ডবল। গ্যারামের লইগ্যা প্রতিরক্ষা বাহিনী বানামু। এইডার দায়িত্ব দাদন আলী মাতব্বরে দেওন অইল।
মেম্বর, এই দায়িত্ব জোয়ান পোলাপাইনগোরে দ্যান। বালা পারব। আমার বয়স বাড়ছে। পারুম না।
দাদন মাতব্বর, প্রত্থমবার আম্নেই পালন করেন। পরে জোয়ানগোরেই দিমু। জোয়ানগোও একদিন দায়িত্ব পালন করন লাগব। দাদন মাতব্বর অইব, মমিন শেখ অইব। আগে আমগ থেইক্কা শিখুক।
আম্নে কইছেন আর কী করার আছে। নিলাম দায়িত্ব। তয়, লোকজন পিছনে থাহন লাগব কইলাম। মাগার গ্যারামে চুরি অয় কেম্নে চাইয়া ছাড়ুম। শরীলের সবডা দিয়া চেষ্টা করুম। আম্নেরা থাকবেন তো?
উপস্থিত সবাই সায় দেয়। মন্তাজ আর হারিসুল সায় দেয়। ডাক দিলেই বেরিয়ে পড়বে।
৫
মালেক মিজিকে রূপগঞ্জের মাজার মসজিদের সামনে থেকে ধরে নিয়ে আসে শহীদুল্লা মিস্ত্রী। দুর্বল হয়ে পড়েছে। পরিচিত-অপরিচিত যাকে দেখে, গরু চোর বলে মারতে উদ্যত হয়। মালেকের স্ত্রীকে শিকল দিয়ে ঘরে বেঁধে রাখতে হয়। তারও মানসিক সমস্যা হয়েছে। এলাকার মানুষ দেখতে আসে। এমন করুণ কাহিনি দেখে চোখের পানি আটকাতে পারে না। মালেকের স্ত্রী চিৎকার করে বলে, সার্কাস দেখতে আইছেন? সার্কাস! আমি সার্কাস। মালেক সার্কাস। আর তোরা সব্বে গরু চোর।
কিছুদিন হয় এলাকায় চোরের উৎপাত কম। চুরিও কমে এসেছে। শান্তি বিরাজ করছে সবার ঘরে। সবাই কৃতিত্ব দিল দাদন আলীকে। এলাকার মানুষ খুশি দাদন মাতব্বরের ওপর। মাতব্বর বলে, মাইনষের জন্য কিচ্ছু কত্তে পাচ্ছি, এইডা আমার বালা লাগছে। সবে বালা থাকলে নিজেও বালা থাহি। আমগো গ্যারামে আর কোনো চুরি অইব না। লাগে আরো গাড নিয়োগ দিমু। চোর আইতে পারব না। আমি দাদন আলী আছি, সব্বে ঘরের দুয়ার খুইলা ঘুমাইবেন।
দাদনের বড় ছেলে পরীক্ষায় ভালো ফল করেছে। উচ্চশিক্ষা নিতে দেশের বাইরে যেতে চায়। প্রথম প্রথম দাদনের অমত ছিল। স্ত্রী চায় ছেলে বিদেশে লেখাপড়া করবে। দশ গ্রামের মানুষ জানবে। তা ছাড়া এই দেশে চোর-বাটপার ভরা। ভদ্র মানুষের কাজের পরিবেশ নেই। বাবাও ভরসা দেয়। আজগর জানে খরচ মেটাতে অক্ষম তার বাবা। ছেলেমেয়েদের ফল ভালো হওয়ার কারণে আশপাশের গ্রামের মানুষ দাদন আলীকে চেনে। অর্থকষ্টের কথা কেউ জানে না। মর্যাদাবোধের কারণে প্রতিবেশীর কাছে প্রকাশ করতে পারে না। মালেক মিজিকে দেখলে চোখ বেয়ে পানি আসে দাদন আলীর। আত্মভাবনায় ডুবলে আত্মমর্যাদার কথা সামনে আসে, তখনই আত্মহত্যাপ্রবণ হয় মন। পৃথিবীর প্রতি ঘৃণা বাড়ে। না পাওয়ার ঘৃণা। বেদনার ঘৃণা। হতাশার ঘৃণা। মানুষকে ঠকানোর অনুশোচনা। আবার সন্তানের কথা ভাবলে বাঁচতে ইচ্ছে হয়। তারা লেখাপড়া শেষে চাকরি নেবে। কেটে যাবে সংসারের অভাব-অনটন।
কিছুদিন ধরে হারিসুল আর মন্তাজের অর্থকষ্ট আগের মতো বেড়েছে। ধারদেনা করে সংসারের বোঝা টানে। কাজ ছাড়া সংসার চালানো কঠিন। অথচ কেউ কাজ দেয় না। দেশজুড়ে চলছে কাজের সংকট। কর্মহীন থাকলে অভাব বাড়ে। তখন মানুষ অন্যায় করতে দ্বিধা করে না। দুজনই আসে দাদন আলীর কাছে। আমরা অহন কী করুম কন? ঘরে খাওন নাই। পোলাপাইন কান্দাকাডি করত্যাছে।
আমি কী করুম, ক? তোরা তোগো ব্যবস্থা কর। আমারে জ্বালাইস না। না খাইয়া মইরা যামু আমিও। তোরা আইছ না আর। যাহ। হইরা যা। যেমনে পারছ হেমনে গিয়া বাঁইচা খা। সম্মান আর ডুবাইতে পারুম না। দশ গ্যারামের মাইনষে আমারে চিনে। পোলাপাইন বড় অইছে। মাইয়া বিয়া দেওন লাগব। ধরা খাইলে ইজ্জত সবডা যাইব। মালেকেরে দেইখ্যা খারাপ লাগে। মালেকের বউডারে দেইখ্যা চোহের পানি বাইন্ধা রাখতাম পারি না।
মাতব্বর, খুউবই বিপদে আছি। মালেকের থেইক্কা কম বিপদ না। পাগল অইয়া যাইতাম পারি যেকোনো সোময়। পাগলের মুখ বান্ধা থাহে না। তহন আম্নের কথা গোপন থাকব না, কইলাম।
৬
চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে খোদাইবিল হতে দুজন পত্রবাহক আসে। বাকিলার চেয়ারম্যানের অনুরোধ পত্রবাহকের সঙ্গে সেখানে যেতে হবে। নিজের বাড়িতে যাওয়ার অনুরোধ করেছে। পরামর্শ করে দুজন। মেম্বার বলেন, দাদন মাতব্বর এমন কাজ কত্তে পারে না। হেয় এলাকার আদর্শ।
দুই পত্রবাহক বলে, ফান্দে পড়লে অনেকে ভুল কইরা ফালায়।
চেয়ারম্যান বলেন, অইতে পারে।
আমাগো দেরি করনডা ঠিক অইব না। এলাকার মাইনষে জানার আগে যাইয়া মীমাংসা কইরা আই।
হ, দেরি করনডা ঠিক অইব না। অহনই চলেন।
দাদন আলীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। উঠোনে মন্তাজের লাশ পুরোনো চাদরে ঢাকা। আধমরা হারিসুলও গাছের সঙ্গে বাঁধা। মমিন শেখকে দেখে আধমরা দাদন আলী মাথা নিচু রাখে। কারও মুখে কথা নেই। দাদনের গালে, কপালে আঘাতে চিহ্ন। শার্ট ছেঁড়া ও রক্তাক্ত। চেয়ারম্যান দাদনের সামনে। দাদনের দিকে তাকালেও কথা বলতে পারেন না। দাদন একবারের জন্যও চেয়ারম্যানের দিকে তাকায় না।
দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার মমিন শেখ, পুলিশসহ আরও অনেকেই বসে মীমাংসার কথা বলছে। দাদনের কাছে বসেন মমিন শেখ। দাদন মাতব্বর, এলাকার মাইনষে আম্নেরে মানে। কতা হুনে। বিচার-আচারে ডাহে। বিপদ-আপদে পড়লে পরামশ্য চায়। পোলাপাইনগুলিরে মানুষ করত্যাছেন হেই জন্য চাইরপাশে আম্নের সুনাম-সম্মান আছে। আমাগো সমাজেও আম্নের অবদান কম না। এলাকার স্কুলডা আম্নের কারণে অইছে। চেরম্যানের লইগা দিনরাইত খাটছেন। হেয় চেরম্যান অইছে। আম্নে আমারে মেম্বর বানাইছেন। এল লইগ্যা দুই-চাইরজনে চিনে। একবার, কেবল একবার কন, আম্নেরা চুরি করেন না। এলাকাবাসী ষড়যন্ত্র কইরা চোর বানাইয়া বাইন্ধা রাখছে। যত টেআ লাগে আমি খরচ করুম। আইন-আদালতে যামু। খাটুম। আম্নের মান-সম্মান যাইতে দিমু না আর। মানহানির মামলা করুম। সবাই পলাইব তহন। সম্মানডা থাহুক।
মমিন শেখের দিকে তাকায় দাদন আলী। চোখ দুটি লাল। লাল সাগর সাঁতরে কয়েক ফোঁটা পানি আসে চোখের কোণে। পানি ঝরছে। মমিন শেখ, সাজা আমারে পাইতেই হইব। আমার লই মালেক, মালেকের বউ পাগল অইছে। গ্যারামে গরু, ছাগল চুরি অইছে। এইসব কিল্লই অইছে, জানেন? সম্মানের কারণে। সম্মান রক্ষা করতে যাইয়া সম্মান হারাইছি। এলাকার মাইনষে আমারে মাইন্যা সম্মান করছে। এল্লই কোনো কামও করতে পারি না। সালিস-দরবারই করতে অয়। সমাজে সোময় দিতে অয়। এইসবে কোনো রুজি নাই। আবার ঘুষও খাইতাম পারি না সম্মানের কারণে। মাইনষে কইব পদধাইন্যা সাব এমনড্যা কচ্ছে।
আম্নেরা চেয়ারম্যান, মেম্বর অইয়া কী দায়িত্বডা পালন কচ্ছেন? আমি চোর অইছি। মাইনষের হাতে মারা পড়ল মন্তাজ। হারিসুল মরণের লগে লড়ত্যাছে। আম্নেরা জনপ্রতিনিধি। জনগণের খবর রাখতে পাল্লেন না। পাল্লে এমনডা অইত না। আমি আমার দায়িত্ব পালন কচ্ছি, পোলাপাইনগোরে মানুষ করনের লইগ্যা এইসব কচ্ছি। তাগোরে মানুষ করনের দায়িত্ব আমার। এই যে দেখত্যাছেন, এইডা চুরি না। এইডা দায়িত্ব। হ্যাগো চোহে চুরি অইতেই পারে। হেরলই পিডাইয়্যা বাইন্ধা রাখছে। বান্ধা পড়ছি কেনো জানেন? চুরির কৌশলডা বালা জানা নাই বইল্যা। জানলে ধরা পত্তাম না, সাজা পাইতাম না। অহন ইজ্জতের কতা আইয়ে না। আইয়ে দক্ষ হওনের কতা। বুঝতে পাচ্ছি দক্ষ না অইলে ধরা পততে অইব। মাইরও খাইতে অইব। মততে অইব। অহন এইডা আমার চোহে চুরি না। পোলাপাইনগো খাওন আর লেহাপড়া করানোর লইগ্যা চাকরি। টেআর কাম। এইডা না করলে পোলাপানগো প্যাডে খাওন জুটব না। পোলাপাইনগোরে যহন পৃতিবীতে আনছি, তহন দায়িত্ব আছে। আমি সংসারের নেতা ও পিতা। দায়িত্ব অনেক। ঘরের মাইনষের সামনে ঠিকঠাক খাওন দেওয়া। আর পাপ কল্লে পাশ্চিত্ত করণ লাগবই। আগে করনই বালা।
চেয়ারম্যান ও মেম্বার নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইল! দাদন আলী কথা বলতে পারছে না। হারিসুলের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ দিয়ে পানি ছাড়ে সে।
পুলিশের সামনে হাত বাড়িয়ে দেয় চেয়ারম্যান। অন্যায় আসলে দাদন আলী করে না। করেছি আমি। নেতা জনগণকে যেভাবে রাখে, জনগণ সেভাবেই থাকে। আমি ব্যর্থ চেয়ারম্যান। এই চোরদের নেতা। আগে আমাকে গ্রেপ্তার করুন! ♦