নাপিত ও অন্যান্য কবিতা
ওয়ান স্টেপ ফরোয়ার্ড, ট্যু স্টেপ ব্যাকওয়ার্ড
কিছুদূর যাব
তারপর ফিরে আসব নিজের কাছে
প্রতিদিনের একই পথ ধরে হেঁটে
এক পা এগিয়ে, পিছিয়ে যাব দুই পা।
ভাববো, কোথায় বসবে চন্দ্রবিন্দু
বিসর্গের উচ্চারণ, কতদূর হয়েছে
হৃদয়ঙ্গম নাগলিঙ্গমের সুবাস।
এক পা এগোনো মানে দুই পা পেছানো
এক পায়ের সঙ্গে আরেকটি পা মেলানো।
সত্যমিথ্যে
মিথ্যেরও কিছু সত্য আছে
হেমন্তে যেমন ঝরে কুয়াশা
রাখালের গল্পে থাকে গরু
বাঘের নিত্য আনাগোনা।
প্রতিটি কথার থাকে কয়েকটি অর্থ
যেখানে কুমির সেই জলে মাছের বসবাস।
প্রতিটি ঈশ্বরের থাকে একজন পুত্র
গাছের যেমন থাকে ফল, বকুলের রয়েছে সুবাস
মানুষের চোখ থাকা সত্ত্বেও হয়েছে আয়নার আবিষ্কার।
তারপরও কেন বয়স বাড়ে তরুণীদের
কেন শিশুরা অভিনয় করে বড়দের ভূমিকায়!
যে তৃষ্ণায় বরফ গলে, পাথর হয় ভারী
তার সবকিছুর আজ পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখ্যা জরুরি।
আমি এক স্বপ্ন
কেননা আমি এক স্বপ্ন; বৃথা ভেঙে যায়
যার কাছে যাই সে সবকিছু হারায়
যার আছে সাঁকো; নিয়েছে সে ভার
সংক্ষুব্ধ ঝড়েও করেছে পারাপার।
পাড়ের কড়ি রইল পড়ে মূল্যহীনের দিনে
জীবনে এমন ব্যর্থ হওয়ার আছে শত মানে
বাঁচতে গিয়ে যে পরিল অপমানের মালা
তার সঙ্গে হাসে আজ কয়েকটা আরশোলা।
আমি এক স্বপ্ন; যদি ভেঙে যাই বৃথা
হাত-পা খুলে নিয়ো, কেটে দিয়ো মাথা।
প্রভু
প্রভু—প্রার্থনায় আর হবো না মশগুল
প্রভু—ভুলে যাবো তোমার সমস্ত স্তুতি
পূজা দেবো না; ক্ষুধায় কাতরাবে তুমি
মুখ থেকে মুছে যাবে চোরাগোপ্তা হাসি।
যন্ত্রণায় যদি খুলে চোখ—আসিও নেমে
তোমাকে নিয়ে যাবো মাঠে, ফলাব শস্য
অবসরে পারলে পড়িও নিজের বাণীগ্রন্থ
যা কিছু বলেছিলে শীতল ছায়াতলে বসে
প্রভু—তার কিছু কেটেকুটে ঠিক করে দিয়ো।
নাপিত
মাঝে মাঝে ক্ষুধাতুর কোনো পথশিশুর
ব্যথা নিয়ে ঘুরঘুর করি সেলুনের সামনে
নাপিতের কাঁচিতে ধার দেওয়া দেখি—
চুলের গন্ধে তার কেমন নেচে উঠে আঙুল
যেন হরিণ পেয়েছে সবচেয়ে সুমিষ্ট মহুয়া
আর যুবতী পেয়েছে সেলাইয়ের সুতো-সুচ।
আমিও কি খুঁজিনি একদিন মৃগনাভীর ঘ্রাণ?
শস্যময় বিকেলের ধারে বিগত হিরণ্ময় ধান?
ক্ষুর চালানোর ফাঁকে সকৌতুকে হাসে নাপিত
রেডিওতে বাজে 'বাজপান কি মহব্বত...'
সুরের তালে নাচে জং ধরা রোলিং চেয়ার
আঙুলের ফাঁকে কাঁচি।
তার ডাকের অপেক্ষা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি
যদি সে ইশারায় ডেকে বলে—
‘এসো ভাই, তোমার সোনালী দুঃখগুলো কাঁচি
ও ক্ষুরের আঘাতে বাগানের মতো সাজিয়ে দিই।’