সিরাতুল মুস্তাকিম ও অন্যান্য কবিতা
রাক্ষস
সবাই ছিল ঘুমে
খরদুপুরের দিকে
বসন্ত মরশুমে—
জন্মালো রাক্ষস
ফুলের গর্ভ থেকে
কুঞ্জে পাখি গায়
—নিজের জন্য ক্ষমা
ফুল ফোটেনি বনে
শরীর জাপটে ধরে
ফুটলো আদমবোমা
বনচড়ুইয়ের ডাকে
দুপুর ফেটে ফানা,
চারণভূমির ঘাসে
কাঁদছে আন্তিগোনে
ফুলের বা কী দোষ
জন্মালো রাক্ষস
আমার জন্ম সেই
ফুলের গর্ভ থেকে,
ফুল করে তা গোপন—
পাপড়ি দিয়ে ঢেকে।
ট্রাপিজ
বনঘুঘু ডেকে চলা দুপুরে
ভেঙে পড়ে বামিয়ান বুদ্ধ,
যুদ্ধের রেশ আজও কাটেনি
সামনেই নাকি আরও যুদ্ধ
সুর করে গান ধরে রাক্ষস
আঙটায় ঝোলে কাঁচা মাংস,
সমাপ্তিহীন এই নাটকের
এই শুরু, সবে খণ্ডাংশ
হেমন্ত শেষে শীত মৌসুম
আত্মসমীক্ষণপর্বে—
হলুদ পাতারা হবে খয়েরি
তারপর একে একে ঝরবে
মৃতের চোখের মতো নিশ্চল
আলো নিভে যাওয়া এক আয়নায়—
সহস্র মুখ চাপা পড়বে
বসন্তপর্বের বাগানে
ছুরি ছোড়া খেলা হবে ট্রাপিজে;
গোলাপের ঝাড়গুলো উঠবে
গোধূলির গাঢ়-রক্তে ভিজে
চোখে বেঁধে কালোরঙ ফেট্টি
অন্ধের ছুরিখেলা সন্ধ্যায়
নরমুণ্ডের মালা জড়িয়ে
নেমে আসে আস্ত চামুণ্ডা
তারপর হঠকারী জোকারের
যুগান্তকারী সেই ঠাট্টা
পাহাড়ের চূড়া থেকে চূড়াতে
দড়ি বেঁধে রাখা আছে টানটান
এইবার গান ধরে ত্রুবাদুর
হাসিমুখ জনতার সামনে
আর দড়ি ছিঁড়ে পড়ে বিদূষক
পাতালের পাথুরে অরণ্যে
রুদ্ধশ্বাস—ওই দৃশ্যে
যদি আমি হই দমবন্ধ,
ঘুম থেকে ডেকে নিস স্বপ্নে
আমি সেই জ্যান্ত কবন্ধ।
তক্ষক
একবার তক একবার খক
ডাকে জংলায় বুড়া তক্ষক
আহা জনগণ, যক্ষের ধন
মেলে ধরো আজ তোমার বক্ষ
আমি চিরতার, শূন্য মেধার
গুলি চালিয়েছি রাষ্ট্রপক্ষে
দুনিয়ার কোন্ নিরাপত্তার
আশ্বাসে এসেছিলে এইখানে,
কেন ছেড়েছিলে মাতৃজরায়ু?
চলো ঢুকে যাও গোরস্তানে,
নবীন জরায়ু হাঁ-মুখো কবর
বিস্মৃতি ঘেরা তৃণের বাগানে
যেই বিন্দুতে শুরু আর শেষ
নিখিল ধাঁধার আলো-আন্ধার
মিলনবিন্দু-মুখে চলে গুলি
রাষ্ট্রপক্ষ, ফায়ার ফায়ার
স্মৃতির বাইরে সেই বিন্দুতে
ফেরত পাঠাবো আবার তোমাকে
একবার তক একবার খক
ডাকে তক্ষক রাষ্ট্রপক্ষে।
বেথলেহাম
এখানে ওখানে
কসাই-দোকানে
ঝুলিয়ে রেখেছি
তোদের মাংস
সিনা আর হাড়
কচি কলিজার
টকটকা লাল
শ্রেষ্ঠ অংশ
সস্তায় বেচি
একদম দেশি
তাজা তাজা রান
মজ্জা মগজ,
কিনে নিয়ে যান
ভুনা করে খান
তা না হলে পরে
হবে আফসোস
এইখানে আসো
হালাল মাংস
আমরাই বেচি
গ্যারান্টি ভাই,
কসম কসম
এটা একদম
দুধ-দাঁত ছাড়া
আজকে জবাই
আসেন আসেন
কিনে নিয়ে যান,
প্রচারস্বার্থে-
বলা চলে প্রায়
বিনা পয়সার
মাংস দোকান
একটাই শাখা
একটাই নাম
নয়া জমানার
এ বেথলেহাম
শুধু করি যোগ
সীমিত সুযোগ,
সুযোগ হারালে
পস্তাতে হবে
এইবার খাওয়া
শস্তাতে হবে
জেনে রেখো ভাই
মরবার কালে
চেয়েও মেলে না
মকরের ধ্বজ
এতো কচি কচি
মজ্জা মগজ
আহা কচি কচি
মজ্জা মগজ
ওহো কচি কচি
মজ্জা মগজ।
রেখো মা দাসেরে মনে
লাগাতে দিয়েছি নুন
নিজেরই চামড়া ছিলে,
খুব জ্বলছিল খুব;
আর তুমি হাসছিলে
তবু তো তোমার সুখ,
দুপাটি দাঁতের মেধা—
হাসি হয়ে ঝরে পড়ে
সিনোরিটা সিনোরিটা
জীবন-মরণ লেনা—
দেনা যতো চুকাবার
এই রাতে মেরে দে না
চলুক ক্রসফায়ার
যদিবা আমারই কেনা
আমাকেই মারো তবু,
আমার মৃত্যু হলে
দাস, তুমি হবে প্রভু।
সিরাতুল মুস্তাকিম
ও গো সংগ্রাম, তুমি কার?
কেনো তুমি হেঁটে হেঁটে
আসো না কো দুয়ারে আমার।
এখন তো মাঝরাত, দুনিয়া আন্ধার
এই নাকি মিলনের শ্রেষ্ঠ সময়?
তবে কেন ভয়?
ওদিকে যেও না ওরা ডান
ওদিকে যেও না ওরা বাম
মাঝপথে আসো তুমি,
সরু আল ধরে আসো ছেড়ে দিয়ে গ্রাম
সিরাতুল মুস্তাকিমে ও গো, শ্রেণী সংগ্রাম
ফেলে দাও কোল থেকে দুধের সন্তান
না দোহানো গরুর মতন গোঙাতে গোঙাতে আসো,
জমে থাকা দুধের ব্যথায় ফাটুক ওলান
শহরে প্লাবন হোক, বান হোক বান
বিপ্লব দীর্ঘায়ু হোক,
সাবধানে দু'পা ফেলে মৃতের শহরে আসো
শীতাতপ শবাধার আমার মোকাম
লাশ পেটে বসে আছে— এ শহর, হিমঘর
শতাব্দীর ঝিকিমিকি স্যানাটোরিয়াম।