পরী ও পরীমনির মধ্যে মিল-অমিল এবং অন্যান্য কবিতা
পান্থশালা
তোমার মায়ার গন্ধ এখনো কি বাতাসে ছড়ায়
মাকড়ের জালে ঘেরা স্মৃতিভুক এ পান্থশালায়
বহু জনমের পর পর্যটনে কৌতূহল জাগে
আঙুলের দশ ছাপ আছে নাকি ভাতের থালায়?
দেয়ালে কী লেপ্টে আছে ফসিলের মিথ্যা অবয়বে
ভ্রান্ত পথিকের সাথে তারাদের করুণ সংলাপ,
ক্লান্তি, তৃষ্ণা, জল, স্বপ্ন, স্নেহজাদু, সুদূরের ঘোর,
লোকালয়হারা গান, কিছু মুখ, কিছু অনুতাপ?
তুমি কি ঘুমিয়ে আছো চাঁপাডাঙা ধূলির অতীতে
খসে পড়া পলেস্তারা ধরে রাখে নিঃশ্বাসের দাগ?
জন্মান্তর শেষে আমি খুঁজে ফিরি দুটি চোখ আর
মাটির গোপন গর্ভে অফুটন্ত ফুলের পরাগ।
দিনের গল্পের শেষে অতিথির ঘুমাবার পালা
পথের বিপুল বাঁকে জেগে থাক বন্ধ পান্থশালা।
পরী ও পরীমনির মধ্যে মিল-অমিল
পরী ও পরীমনির মিল ও অমিল নিয়ে
বহু কথা চলে আসে কবিতার ঘোরের ভেতর।
পরীমনি ডানাহীন
পৃথিবীর মাটিতে পা রেখে বহুবার হেঁটে যায়
নিঃশ্বাসের খুব কাছাকাছি।
অথচ পরীরা ডানা মেলে বিশ্বাসের শূন্যতায়।
ওদের পালকে লেখা থাকে আড়ালের মন্ত্রতন্ত্রগুলো।
ওরা তাই অদৃশ্যই থাকে।
সন্ধ্যার বাতাসে অচেনা দুঃখের মতো
লুকোচুরি খেলে ফুলের সুবাস।
তখন নিশ্চয়ই কেউ পরীদের স্পর্শ অনুভব করে।
পরীমনি এ রকম নয়- তাকে বুঝি ও বুঝি না
দেখি অনিদ্রায় কিংবা রুপালি পর্দায়।
জুঁই ফুলে অদৃশ্য মধুর মধ্যে
গোপনে লুকিয়ে থাকে তার হাসি।
পরীমনির তবুও দুঃখ আছে।
স্বপ্নের ভেতর সেতু ভেঙে জলের অতলে পড়ে যাওয়ার মতো কোনো দুঃখ।
আর পরীদের?
পরীদের দুঃখ আছে কি না জেনে নিতে
কোনোভাবে আইনের সমস্ত জটিল ফাঁক
বের করে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আনা যায় কি না
একবার ভেবে দেখা যায়।
প্রতারক আয়নার সামনে
চারপাশে সব আলো নিভে গেলে
তুমিও সবার মতো সরে যাবে
জানি এই প্রতিবিম্ব ছলনার
অন্ধকারে বুঝি প্রকৃত প্রস্তাবে।
ডানের সমস্ত দৃষ্টি বামে নিলে
বামকে শোনালে দক্ষিণের গান
অবয়ব দেখে কখনো পড়োনি
ভেতরে ঘুমন্ত সব উপাখ্যান।
তুমি ভ্রান্তি, অর্ধসত্য আর ভুল
তোমার সামনে কবে দাঁড়ালাম।
প্রতারক এই আয়নায় দেখো
কখন নিজেকে আমি হারালাম?
কালের পুরাণ
অকারণে সূর্যটা ডুবে গেল।
কত গান বাকি ছিল শিরিষের পাতায় পাতায়
কত গল্প নদীটির ঘুমঢাকা বাঁকের প্রবাহে
অন্ধকারে জেগে থাকা বাতিগুলো
জীবনের কিছুটা গুঞ্জন ধরে রাখে দাম্পত্য আনন্দ–বিষাদে।
তবু কোথাও সকাল হয়
মানুষের নিমীলিত চোখে তুষারপাতের মতো লেখা হয় কালের পুরাণ।