আশ্রয় ও অন্যান্য কবিতা
বন্দনাগীত
বাঁচি, মরি, তোমার ওষ্ঠের
বাঁক ঘুরে, মহাসামুদ্রিক
ঢেউ ফুঁড়ে, আরক্ত ফেনিল;
চাঁদের আলোর, সুর বাজে
নীলান্ত পেরিয়ে, মিহি তানে,
চোখ খোলে, তোমার শরীরে
লয়ে উথলে ঐক্যকলতানে
প্রভাতিয়া, বয় কার বাণী,
দীর্ঘ পাড়ি, তোমাতে আমার;
এক বাঁও, মেলেনি, দু’বাঁও,
ভালোবাসিবারে, দাও ঠাঁই;
জাহাজ ডুবিতে, মাঙ্গলিক!
তবুও আনন্দি
কথায় বলে না, মুখে-মুখে;
ভোর-ভোর, নাও লাগে ঘাটে
শিশু জন্মে, বধুয়ার ঘরে
পাখ-পাখালির, টিউ টিউ
বাঁশবেড়া ফাঁকে, মেউলা আলো;
ঘুম-চটা, ছনের চালায়
বৃষ্টিনাচ, দূর শৈশবের
এত কাছে, উন্মত্ত স্রোতের
আবর্তে যৌবন, পানসি ডিঙি,
বলোশ্বর খাঁড়ি, উলটো স্রোতে
ভাঙনের দীর্ঘ বেড়ি, বেয়ে
অভিযাত্রা, বেতাল প্রেমিক,
রক্তে, চরণের, আসা-যাওয়া
মৃদু লয়ে, কে চেয়েছে ধন্য হতে,
শব্দ, তাল, নিস্তব্ধ সংকেত,
অনুরাগ, সহমরণের;
তবুও সাক্ষাৎ, কি মেলে নি
কোনো কালে, বিবাদী বীক্ষণে,
হয়তো-বা মিলেছে, না মিলুক
সেই ভালো, উতপ্ত সংরাগ,
ঘৃতগন্ধি সমিধ চিতায়
সমাধি শিয়রে, পোড়া মোম
আঁধার পেরিয়ে, গাঁওপথে
হাত ধরে এসে, ভেজা হওয়া,
কে ডাকে, অচেনা, চেনা স্বরে
পারাপার, পারানিয়া, ঘাটে
চলো, এসো পায়ে-পায়ে; সে কে
সে বোন রাবেয়া
মা ঋষি গৌতমি
অগ্নিশুদ্ধ, জলজ প্রার্থনা
বালুতীর্থে, দক্ষিণ বাংলার
লোনা ঢেউ, পেরিয়ে সাগর
সুয্যিমামা, দেয় হামা, গায়ে
কালো মেঘরং চটা লাল
টুকটুকে জামা; ইদানিং
তীরে, খেতে কাস্তে
বাজায় দোতরা
ডুবে-যাওয়া চাঁদে;
তবু, কেউ যেন শোনে
গদ্যপদ্য পদ্যগদ্য
মাত্র দু’পঙক্তিতে শেষ হোক,
ঠিকাদারি, বালুতে ফুলের,
যুদ্ধযাত্রা চাঁদে, মানুষের;
বর্জ্যস্তুপে, ইঁদুরের নাগ,
প্রলয় মুদ্রায়, নৃত্য তাল;
উজ্জীবন তন্ত্রে, অভিশাপ!
আশ্রয়
অবশেষে,
হয় তুমি বৃক্ষপোড়া ছাই,
নয়, মাটিধ’সা ধুলো, বালু;
নিষ্করুণ
অভিন্ন আশ্রয়ে, এক
বেভুল পথিক;
কে আসে, অচেনা কণ্ঠে, দ্বিধা
থরথর, বলে,
ডাকে; পথ হারিয়েছো, তুমি
গুল্মরাজ্যে রাজকন্যে
মাধবী, সে,
অস্তিত্ব, ছিল কি, কোনোকালে!
[শিল্পী রাজীব দত্তের আঁকা প্রচ্ছদের পোস্টার আসমা বীথির আলোকচিত্র অবলম্বনে। কপিরাইট © আসমা বীথি।]