রোমান্টিকতার হাহাকার জীবন হতে পারে না
শহীদ কাদরী [Shahid Qadri]
ভূমিকা
শহীদ কাদরী বাংলা ভাষার একজন গুরুত্বপূর্ণ কবি। ১৯৭৮ সালের পর থেকেই তিনি বাংলাদেশের বাইরে ছিলেন। জার্মানি, ইংল্যান্ড হয়ে তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমেরিকায় পাকাপাকিভাবে বসবাস করেছেন। পঞ্চাশোত্তর বাংলা কবিতার আধুনিক মনন ও জীবনবোধ সৃষ্টিতে তাঁর কবিতা বিশেষ অবদান রেখেছে। শহীদ কাদরী মনেপ্রাণে এক বোহিমিয়ান কবি। চলনেবলনে সব জায়গায় রয়েছে বোহিমিয়ান জীবনের ছাপ। এমন কবির সঙ্গে আড্ডা বা আলাপচারী খুব সহজ কথা নয়! কারণ, তিনি কখনোই কোনো একটি বিষয়কে ধরে স্থির থাকতে পারতেন না। সাহিত্যের নানা জ্ঞানকাণ্ডে বিচরণ করা তাঁর স্বভাব। তাই তাঁর পেট থেকে কথা আদায় করাও এত সহজ ছিল না। শহীদ কাদরীর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে, নিউইয়র্কের এক সন্ধ্যায়। নিউইয়র্ক জ্যাকসন হাইটসের এক পড়ন্ত বিকেলে কবিকে ঘিরে এক জটলায় প্রথম তাঁকে আবিষ্কার করি। তখনই পরিচয় আর তখন থেকেই প্রতি সপ্তাহান্তে কবির জ্যামাইকা বাসভবনে এক ঐন্দ্রজালিক টানে হাজির হতাম। লোভ ছিল একটাই—কবি শহীদ কাদরীর সঙ্গে আড্ডা। আর কাদরীর সঙ্গে আড্ডা মানেই শিল্প-সাহিত্য তো বটেই, আড্ডার সেই জাল বিস্তৃত হতো বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, ধর্ম-দর্শন থেকে শুরু করে কবির বাংলাদেশের ফেলে আসা অস্পষ্ট আর ধূসর স্মৃতিতে ঘেরা শহরের অলিগলি পর্যন্ত। তখন কবির সঙ্গে আড্ডা মানেই বিকেলের নরম রোদ ফিকে হয়ে সেটি গভীর রাত অব্দি গড়িয়ে যাওয়া। তারপর কবির সঙ্গে আড্ডা হয়েছে নিউইয়র্ক লং আইল্যান্ড জুইস হাসপাতালের বিছানায়, যেখানে কবি দীর্ঘদিন অসুস্থ হয়ে অবস্থান করেছিলেন। কখনো আড্ডা হয়েছে স্রেফ জ্যাকসন হাইটসের কোনো বাঙালি রেস্তোরাঁয় শিঙাড়ায় কামড় বসাতে বসাতে। বিভিন্ন সময় গাঁথা কবি শহীদ কাদরীর সঙ্গে এই আলাপচারিতা তর্ক বাংলার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
নিউইয়র্কে শহীদ কাদরী: ছবি © আদনান সৈয়দ
আদনান সৈয়দ: আপনি তো হঠাৎ করেই কবিতা লেখা বন্ধ করে দিলেন। শপথ নিলেন আর কখনো কবিতা লিখবেন না। এর পেছনে কারণ কী ছিল?
শহীদ কাদরী: সে অনেক কথা! তখন সময়টাই ছিল পাগলাটে। দেশ, সমাজ, রাজনীতি—কোথাও কোনো শান্তি নেই। তখন মনে হয়েছিল শিল্প-সাহিত্য দিয়ে মানুষের মুক্তি সম্ভব নয়। তাই মার্ক্সবাদী চিন্তায় নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করেছিলাম। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬১ সাল, এই পাঁচ বছর একটা কবিতাও লিখিনি। আমার বন্ধু মোশারফ রসুল এর পেছনে কিছুটা ইন্ধন জুগিয়েছিল। তখন আমি কিছু বামপন্থী ভাবসম্পন্ন বন্ধুকে নিয়ে সারাক্ষণ আড্ডা দিয়ে বেড়াই। এক হাতে কবিতা লেখা বন্ধ করে দেই আর অন্য হাতে কার্ল মার্ক্সকে বুকে আঁকড়ে ধরি।
সৈয়দ: একটু ডিটেইলস বলবেন? যতদূর জানি, সেই ছেলেবেলা থেকেই আপনি অস্থিমজ্জায় একজন কবি। হঠাৎ করে এই কবিসত্তাকে ত্যাগ করতে কষ্ট হয়নি?
কাদরী: না, আদর্শের টানে মানুষ অনেক কিছুই ত্যাগ করতে পারে! আমরা তখন সব বন্ধুই একই আদর্শে বিশ্বাসী ছিলাম।
সৈয়দ: সেই বন্ধুদের নামগুলো একটু বলবেন?
কাদরী: তখন আমার বন্ধুদের মধ্যে শহীদুল হাসান জ্যোতি, সুকুমার মজুমদার, খালেদ চৌধুরীর নাম উল্লেখ করতে পারি। তাঁরা সবাই বামপন্থী ধারার রাজনীতি চর্চা করতেন। তখনই আমি ভাবতে শুরু করি, রোমান্টিকতার হাহাকার জীবন হতে পারে না।
সৈয়দ: তার মানে, তখন আপনি নতুন এক জগৎ নির্মাণে নিমগ্ন কারিগর!
কাদরী: এক্সাক্টলি। দেখো, আমি তো কান্ট না, হেগেলও না। তাহলে আমি কে? তখন এসব ভাবতাম আর খুব অসহায় বোধ করতাম। মনে হতো শিল্পকলা মূলত পুঁজিবাদীদের হাতিয়ার। এসব মিছিল বা স্লোগান ছাড়া আর কিছুই নয়।
সৈয়দ: তখন আপনি ভাবতেন, কবিতাকে বিদায় করে দিতে পারলেই মুক্তি? কিন্তু বিষয়টা কি এতই সহজ ছিল?
কাদরী: তখন আমার সেই ভাবনাটাই ছিল প্রধান। প্লেটো যেমন তাঁর রিপাবলিকে কবিদের নির্বাসিত করেছিলেন, আমিও তাই কবিতাকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলাম। কবিতাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে নানা স্বাদের বইয়ের ভেতর আশ্রয় নিয়েছিলাম তখন।
সৈয়দ: নানা স্বাদের বই! বইগুলোর নাম যদি একটু বলতেন!
কাদরী: সব বইয়ের নাম তো আর এখন মনে নেই। তবে কয়েকটার নাম বলতে পারি। যেমন ধরো অ্যাডভেঞ্চার অব আইডিয়াস, সায়েন্স অ্যান্ড দ্য মডার্ন ওয়ার্ল্ড, প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা, দ্যা শেপিং অব মডার্ন থট, ইমপেক্ট অব সায়েন্স অ্যান্ড সোসাইটি, হিস্টরি অব ওয়েস্টার্ন ফিলোসফির নাম এই মুহূর্তে মনে আসছে।
সৈয়দ: তখন আপনি মনে করতেন, বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তাই মানুষকে আলোর পথ দেখাতে পারে?
কাদরী: অ্যাবসলিউটলি! পোস্ট সায়েন্টিফিক আর পোস্টইন্ডাস্ট্রিয়ালের মোড়কে একটি সমাজের অস্তিত্ব মেনে নিতে আমি রাজি আছি। কারণ, আমরা সবাই গ্লোবাল ভিলেজের বাসিন্দা।
সৈয়দ: একটু ব্যাখ্যা করবেন?
কাদরী: এই ধরো, তুমি যদি মার্শাল ম্যাকলুহানের ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ গ্রন্থটা পড়ো, তাহলে কিন্তু অনেক বিষয় খুব সহজেই বুঝতে পারবে। একজন আধুনিক মানুষের চিন্তাভাবনা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই চিন্তা দিয়েই কিন্তু একটি সমাজ এগিয়ে যায়। আমার সব সময় মনে হয়েছে, সাহিত্যে একাকিত্বই বেশি প্রকাশ পায়, অন্যদিকে আধুনিক চিন্তা হলো ‘হোমলেস মাইন্ড’। সম্ভবত সে কারণেই মানুষের সংশয়ী মন জীবন সম্পর্কে ভিন্নধারা তৈরি করে, ভবিষ্যৎহীন জীবন আর ইহলৌকিক জীবনকেই তখন তারা বেশি প্রাধান্য দেয়। হাইজেনবার্গ-এর প্রিন্সিপাল অব আনসার্টেনিটি এই অস্তিত্ববাদ চিন্তাটি মানুষকে নতুন পথ দেখাতে বাধ্য করে।
সৈয়দ: সেই নতুন পথটি কী শহীদ ভাই?
কাদরী: সেই আগের কথাই আবার ফিরে আসছি। সেই নতুন পথটি হলো বিজ্ঞানভিত্তিক একটি সমাজ গড়া। যে সমাজ হবে মানুষের জন্য, মানবতার জন্য। শিল্প-সাহিত্য যদি মানবকল্যাণেই না আসে, তাহলে তাকে আঁকড়ে ধরে থেকে কী লাভ?
সৈয়দ: কিন্তু শেষ পর্যন্ত আবার সেই কবিতার কাছেই ফিরে এলেন?
কাদরী: ঠিক। আবার কবিতার কাছে ফিরে এলাম। অবশ্য সেটিও সম্ভব হয়েছিল শামসুর রাহমানের কারণেই। সে এক বিশাল গল্প!
সৈয়দ: গল্পটা যদি বলেন!
কাদরী: বলছি। সম্ভবত ১৯৬১ সাল! ঢাকার কসভা রেস্তোরাঁয় সৈয়দ শামসুল হকের কাব্যগ্রন্থ ‘একদা এক রাজ্যে’র প্রকাশনা উৎসব চলছে। আমি তখন কবিতা থেকে নিজেকে গুটিয়ে ফেলেছি। কোনো কবিতাই লিখি না। তাই স্বাভাবিকভাবেই সেই অনুষ্ঠান আমার জন্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। সেই কাব্যগ্রন্থটি আবার উৎসর্গ করা হয়েছিল কবি শামসুর রাহমানকে। কিন্তু অনেক চিন্তাভাবনা করে বা বলতে পারো মোহগ্রস্ত হয়েই আমি সেদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হই। আমাকে দেখেই শামসুর রাহমান জড়িয়ে ধরলেন। তারপর কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললেন, ‘আপনি যে রাস্তায় হাঁটার কথা ভাবছেন, সেই রাস্তাটি আপনার নয়। কবিতার পথই হলো আপনার একমাত্র পথ।’
সৈয়দ: তারপর?
কাদরী: তারপর আরকি? আবার কলম তুলে নিলাম।
শহীদ কাদরী: ছবি © নিহার সিদ্দিকী
সৈয়দ: যাক! আপনি তাহলে আবার কবিতার কাছেই ফিরে এলেন! কবি শামসুর রাহমানকে এর জন্য ধন্যবাদ দিতে হয়। তিনিই আপনাকে আবার কবিতার পথে ফিরিয়ে নিয়ে এলেন!
কাদরী: তা তুমি বলতে পারো।
সৈয়দ: তারপর? দীর্ঘ পাঁচ বছর বিরতির পর প্রথম কোন কবিতাটি আপনি লিখলেন?
কাদরী: ‘বৃষ্টি বৃষ্টি’।
সৈয়দ: ‘বৃষ্টি বৃষ্টি’ লিখেছিলেন ১৯৬৩ সালে। তাই না?
কাদরী: তাই। এক বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় কবিতাটি লিখেছিলাম। লিখে তখন আমি নিজেই খুব আনন্দিত। অনেক দিন পর কবিতাটি লিখে নিজের ওপর যেন একটা আত্মবিশ্বাস জন্ম নিয়েছিল। তখন কবিতাটির কিছু ঘষামাজা করার কথা ভাবছিলাম। একদিন কবিতাটি আল মাহমুদকে পড়ে শোনাই। আল মাহমুদ তো আনন্দে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরল। তারপর কবিতার ওপর আর কলম ধরার সুযোগ না দিয়েই সে সমকালের সাহিত্য পাতায় ছেপে দিল।
সৈয়দ: এভাবেই আপনি আবার ফিরে এলেন কবিতার জগতে?
কাদরী: তারপর থেকেই আবার কবিতা লিখতে শুরু করি। তখন কবিতা লিখি শামসুর রাহমান আর ফজল শাহাবুদ্দীন সম্পাদিত ‘কবি কণ্ঠ’, সমকাল, মিল্লাত, সপ্তক, দৈনিক পূর্ব পাকিস্তান, সওগাত, কণ্ঠস্বরসহ অনেক পত্রিকায়।
সৈয়দ: এবার অন্য প্রসঙ্গ। অবশ্য কথাটি আপনার সঙ্গেই হয়তো বেশি মানায়। কবিতা নিয়ে আপনি যত না সিরিয়াস ছিলেন, তার চেয়ে বেশি সিরিয়াস ছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায়। বিশেষ করে আপনাদের বিউটি বোর্ডিংয়ের আড্ডা ছিল জগৎ বিখ্যাত। এই আড্ডায় কীভাবে এলেন?
কাদরী: কঠিন প্রশ্ন! একজন শিল্পী-সাহিত্যিক বা কবির অস্থিমজ্জায় আড্ডা সব সময় বসবাস করে। আমরা বাঙালিরা এমনিতেই আড্ডাপ্রিয়। বিউটি বোর্ডিংয়ে আড্ডার আমার প্রধান আকর্ষণ ছিল খালেদ চৌধুরী। তাঁর মতো আড্ডাবাজ খুব কম লোকই আছে। আমরা সবাই তাঁকে ‘প্রভু’ বলে সম্বোধন করতাম। অসম্ভব জ্ঞানী আর তুখোড় আড্ডাবাজ ছিলেন খালেদ। তাঁকে নিয়ে কত স্মৃতি! [হাসতে হাসতে]
সৈয়দ: দুই-একটা স্মৃতি যদি আপনি শোনান! কথাসাহিত্যিক মাহমুদুল হকের কাছ থেকে অবশ্য শুনেছিলাম, আপনি আর প্রভু দুজনে মিলে নাকি বিউটি বোর্ডিং মোটামুটি দখল করে রাখতেন!
কাদরী: ওই তো! আড্ডা হলে যা হয়! আমি আর প্রভু বসতাম মুখোমুখি। আড্ডায় অনেক গল্প আমরা রিপিট করতাম। আমিও করতাম, প্রভুও করত। তখন আমরা কোনো কথা না বলে আঙুল উঁচিয়ে একজন আরেকজনকে সতর্ক করে দিতাম। একবার রিপিট হলে একটি আঙুল দুইবার রিপিট হলে দুইটি আঙুল। এই আরকি!
সৈয়দ: আপনি তো সেই ফেলে আসা আড্ডা থেকে এখন অনেক দূরে? আড্ডাগুলোকে মিস করেন না?
কাদরী: সে আর বলতে? যদি সময়মতো বাংলাদেশে ফিরে যেতে পারতাম, তাহলে আবার আগের মতো বিউটি বোর্ডিং বা অন্য কোথাও আড্ডা বসাতাম। অবশ্য আড্ডার জন্য চাই মাধ্যাকর্ষণ শক্তি। সেই মাধ্যাকর্ষণ শক্তি চলে গেলে আড্ডা আর জমে না।
সৈয়দ: সেই বিউটি বোর্ডিং আছে, কিন্তু আপনার সেই প্রাণের মানুষগুলো আর নেই। আপনি যে জায়গাগুলোতে আড্ডা দিতেন, সেই জায়গাগুলোর চেহারাও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ধরেন, যদি আবার সুযোগ পেয়ে যান বাংলাদেশে গিয়ে আড্ডা দেবার, পারবেন কি আবার আড্ডা জমাতে?
কাদরী: আড্ডার কি কোনো বয়স আছে নাকি মিয়া? বন্ধুত্ব বয়সের সীমা মেনে চলে না। তবে এখনো মনে হয়, আবার যদি সেই পুরোনো বন্ধুদের সাথে ঠিক আগের মতোই আড্ডা দেওয়া যেত! এখন তো আমি শারীরিকভাবেই অসুস্থ। তারপরও মাঝে মাঝে মনে হয় কাপড়চোপড় পরে বাইরে কোথাও আড্ডা দিয়ে আসি।
সৈয়দ: শহীদ ভাই, এবার আপনার কবিতা নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।
কাদরী: আরে ধুর! বাদ দাও। আমার কবিতা নিয়ে কথা বলার কী আছে?
সৈয়দ: আচ্ছা, ঠিক আছে। আপনার কবিতা না। শিল্প-সাহিত্য নিয়ে কিছু বিষয় আপনার কাছ থেকে জানতে চাই।
কাদরী: ঠিক আছে। কী জানতে চাও বল।
সৈয়দ: এমন একটা ধারণা বা তর্ক প্রচলিত আছে যে একজন কবির কাছে তাঁর প্রথম দিকের কবিতাগুলো পুরোনো হয়ে যায় আর শুধু সাম্প্রতিক কবিতাগুলোই তাকে বেশি আকৃষ্ট করে। আপনার এই নিয়ে কোনো উপলব্ধি আছে কি?
কাদরী: না, আমার এই নিয়ে তেমন কোনো উপলব্ধি নেই। কবিতা তো আমি কোনো নিয়ম বেঁধে লিখিনি! তাই না? যখন কবিতা মাথায় চাপত, তখন সেটা লিখে ফেলতাম। সে কারণে কোনটা প্রথম দিকের কবিতা আর কোনটা শেষের দিকে কবিতা, এসব ভাবার সময় পাই নাই। তবে সব কবিরই তাদের নিজস্ব কিছু প্রিয় কবিতা থাকে। আবার আমার অনেক কবিতা আছে, যেগুলো একদিন জনপ্রিয় হয়ে যাবে তা ভাবিনি।
সৈয়দ: যেমন?
কাদরী: যেমন ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’। খুব সাধারণ একটা কবিতা! অথচ মানুষ এই কবিতাটাই লুফে নিল।
সৈয়দ: একটা প্রশ্ন সব সময়ই মনে ঘুরপাক খায়। পশ্চিমা সাহিত্যের রীতি বা ভাবের প্রতি আমাদের প্রচ্ছন্ন একটা দুর্বলতা সব সময়ই ছিল। এখনো আছে। আপনার কি মনে হয় সাহিত্যের আলাদা কোনো রীতি বা বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত? বিষয়টি নিয়ে আপনি কী ভাবেন?
কাদরী: দ্যাখো, আমাদের কবিতায় নিজস্ব একটা ঢং আছে। এই কথা তো অস্বীকার করা যাবে না! তাই না? আমরা বিলেতের কবিতা মুগ্ধ হয়ে পাঠ করেছি। ফরাসি কবিতার নির্যাস বুকে টেনে নিয়েছি, রবীন্দ্রনাথ থেকে ধীরে ধীরে বোদলেয়ারমুখী হয়েছি। সবই ঠিক আছে। তাতে করে কিন্তু আমরা নিজেরাই সমৃদ্ধ হয়েছি। আমাদের কবিতায় নিজস্ব একটা চেহারা ফুটে উঠেছে, একটা নিজস্ব পরিচয় আমরা তৈরি করতে পেরেছি। আর আমাদের কবিতা তো আমাদের মতোই। পশ্চিমা সাহিত্য পশ্চিমাদের মতো। এই তো স্বাভাবিক!
সৈয়দ: আপনি তো কবিতা লেখা বন্ধ করে দিলেন। বলছেন যে আমার যা বলার, যা লেখার লিখে ফিলেছি। আপনার কি মনে হয় একজন লেখকের লেখালেখির জগৎ থেকে এ রকম স্বেচ্ছানির্বাসন নেওয়া উচিত?
কাদরী: হ্যাঁ, তা আমি মনে করি। আমি শামসুর রাহমানকেও বলেছিলাম, কবিতার মান পড়ে যাওয়ার আগেই কবিতা লেখা বন্ধ করে দিতে। অবশ্য তিনি আমার কথার সাথে কোনোভাবেই একমত হননি; বরং এই নিয়ে তিনি আমার উপর একটু অভিমানও করেছিলেন। সমর সেন বলেছিলেন, আমার যা বলার তা বলা হয়ে গেছে। তিনি আর লিখেননি।
সৈয়দ: জানি, এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর ঝট করে দেওয়া যেকোনো লেখকের জন্য খুব কঠিন। তারপরও বলছি, বাংলাদেশের কাদের কবিতা আপনার ভালো লাগে?
কাদরী: অনেকের কবিতাই আমার ভালো লাগে। হয়তো এ মুহূর্তে এঁদের সবার নাম করতে পারছি না, তবে শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, সৈয়দ শামসুল হক, রফিক আজাদ, আবদুল মান্নান সৈয়দ, ফজল শাহাবুদ্দিন এঁদেরকে সব সময় আমার আধুনিক কবি বলে মনে হয়েছে। এখানে হয়তো আরও অনেকের নামই বলা যেত। কিন্তু কবিদের ক্ষেত্রে যা হয়। এঁদের কবিতার ব্যাপ্তিকে কোনোভাবেই কোনো কিছুর মাপকাঠি দিয়ে বিচার করা উচিত নয়। অডেনকে একদল মনে করত একজন খুব উঁচু দরের কবি, আবার কেউ তাতে ভিন্নমতও পোষণ করতেন।
সৈয়দ: একজন লেখকের পড়াশোনার ব্যাপ্তি শুধু বিষয়কেন্দ্রিক হবে, এটা কি আপনি বিশ্বাস করেন?
কাদরী: মোটেও না। প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে। একজন লেখক তার পড়াশোনার গণ্ডি কোনোভাবেই সীমিত করে রাখতে পারেন না। আইনস্টাইন যেমন পড়তে হবে পাশাপাশি ফ্রয়েড, কার্ল মার্ক্স, জেমস জয়েস, প্রুস্ত, রবীন্দ্রনাথ—সবই পড়তে হবে। এগুলো না পড়লে বোঝা যায় না যে মানুষের মেধা কত দূর এগোতে পারে। অর্থাৎ মূল কথা হলো, জ্ঞানের কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখা নাই। বুদ্ধদেব বসু বলেছিলেন, যা কিছু পড়ার মতো, তা আমি সবই পড়েছি। বুদ্ধদেব বসু প্রতিদিন ৭/৮ ঘণ্টা নিয়মিতভাবে পড়াশোনা করতেন। শামসুর রাহমানকে দেখেছি তিনি দুই-তিন দিন কবিতা না লিখতে পারলে অস্থির হয়ে যেতেন।
সৈয়দ: কবিতা অনেক ক্ষেত্রেই কল্পনানির্ভর আর বিজ্ঞান চলে যুক্তির ওপর ভর করে। তাহলে কি বলব, কবিতার সাথে বিজ্ঞানের একটা দ্বন্দ্ব লেগেই আছে?
কাদরী: একসময় কবিতার লিখিত কোনো আকার ছিল না। মানুষের মুখে মুখে কাব্যচর্চা হতো। পরবর্তীকালে মুদ্রণ এল। ইউরোপীয় রেনেসাঁ কবিতার ওপর প্রভাব বিস্তার করল। এদিকে বিজ্ঞান মোটামুটি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলেও টেকনোলজি বিজ্ঞানকে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে গেছে। ধীরে ধীরে মানুষ মধ্যযুগীয় ঈশ্বরচিন্তা থেকে বিজ্ঞানমনস্ক হয়েছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, কবিতা আর বিজ্ঞান পাশাপাশিই সহ-অবস্থানেই চলছে। আমি কোথাও দ্বন্দ্ব দেখছি না।
সৈয়দ: এখন কবিতা লেখা হচ্ছে বিভিন্ন স্টাইলে, বিভিন্ন ফর্মে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
কাদরী: তা ঠিক। দেখতে পাই কবিতা নিয়ে চিন্তা-ভাবনার অনেক নতুনত্ব এসেছে। কবিতার শব্দ নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, যখন নতুন কোনো বাড়ি হয়, দেখতে হবে সেই বাড়িতে বসবাস উপযোগী ভালো কোনো কামরা আছে কি না। কবিতার ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য।
সৈয়দ: ফরাসি কবিতার সাথে ইংরেজি কবিতার মূল পার্থক্যটা আপনারা কোথায় দেখেছিলেন?
কাদরী: ইংরেজি কবিতা মানেই ছিল রোমান্টিকতায় ভরা। কিন্তু ফরাসি কবিতার ব্যাপ্তিটা ছিল আরও বিশাল আরও গভীরে। ত্রিস্তা জাঁরা বলেছিলেন, কবিতা হলো একজন লোক কাঁধে একটা আয়না বয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো। সেই আয়নায় আকাশের নীল রং, রাস্তার আশপাশের দৃশ্য যেমন ধরা পড়বে, তেমনি রাস্তার খানাখন্দও ধরা পড়বে। আমরা তখন সবাই ফরাসি কবিতার নেশায় বুঁদ হয়ে আছি। বোদলেয়ারের কবিতা তখন আমাদের মুখে মুখে। প্রুস্তকে স্থান দিয়েছি আত্মায়, র্যাঁবো আমাদের মননে নিত্যই বাঁশি বাজায়। সে এক অসাধারণ সময় বটে!
শহীদ কাদরী ও নীরা কাদরী : ছবি © আকবর হায়দার কিরন
সৈয়দ: কবিতার ধর্ম কী? আপনি কি মনে করেন?
কাদরী: কবিতার কোনো বর্ণবাদ নেই। কবিতার ধার্মিকতা হলো আধ্যাত্মিকতা। ব্যক্তি আত্মার সাথে পরম আত্মার বিরহ মিল হলো কবিতার ধর্ম।
সৈয়দ: আপনার কি মনে হয় না যে বিজ্ঞান মানুষকে আগের থেকে অনেক বেশি সাহিত্যবিমুখ করেছে?
কাদরী: একটা সময় ছিল যখন ঘরে ঘরে টিভি রেডিও ছিল না, কম্পিউটার ছিল না। মানুষ তখন প্রচুর বই পড়ত। আমরা বই পড়েই বড় হয়েছি। এখন টিভি, রেডিও আর কম্পিউটারের যুগে মানুষ চায় সস্তা বিনোদন। এখন মনে হয় জন্মদিনে কেউ আর বই উপহার দেয় না। কী, দেয় নাকি? তোমার কী মনে হয়?
সৈয়দ: তাহলে আপনি বলছেন, কবিতার পাঠক এখন আগের চেয়ে কমে গেছে?
কাদরী: শোনো। একসময়ে পেশোয়ারে বাজার ছিল। নাম কিচ্ছাখানি বাজার। পাগড়ি পরা পাঠানরা চা নিয়ে জমিয়ে আড্ডা দিত এই কিচ্ছাখানি বাজারে। তাদের ঝুলিতে জমিয়ে রাখা যত রকম কিচ্ছাকাহিনি থাকত, তার সবই একজন আরেকজনকে শোনাত আর রাতভর কিচ্ছার আসর জমাত। এটা ছিল একধরনের বিনোদন। এখন ফুটবল খেলা যেমন বিনোদন, কবিতার বই পড়াও তেমন একটা বিনোদন। এত হাজার হাজার বিনোদনের মাঝেও মানুষ যে খুব কষ্ট করে কবিতার বইয়ে মগ্ন থাকবে, তা কিন্তু আমার মনে হয় না।
সৈয়দ: আপনাদের সময় কবিরা এত বৈষয়িক ছিলেন না, এখন যেমনটা দেখা যায়। কবিতাকে পেশা হিসেবে নেওয়াটা আপনি কীভাবে দেখেন?
কাদরী: বলো কী? কবিরা তো মানুষ! নাকি? তাঁদেরও সংসার আছে। জীবনানন্দ দাশ বা নজরুল কখনোই বৈষয়িক কবি ছিলেন না। আবার বুদ্ধদেব বসু কবিতা লিখেই অর্থাৎ লেখালেখি করেই সংসার চালাতেন। আমরা কেউ কেউ খণ্ডকালীন চাকরি-বাকরি করেছি, তবে টাকার জন্য কবিতা কেউ লিখেনি। অবশ্য আমাদের বড় একটা সুবিধা ছিল এই যে আমরা সবাই মোটামুটি সচ্ছল মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছিলাম। আর সে জন্য আমাদের টাকার জন্য খুব একটা চিন্তাও করতে হতো না।
সৈয়দ: যদি কবি না হতেন, তাহলে কী ধরনের পেশা বেছে নিতেন আপনি?
কাদরী: স্রেফ বাউণ্ডুলে হতাম। রাস্তাঘাটে আড্ডা দিতাম আর দাউ দাউ করে ঘুরে বেড়াতাম।
সৈয়দ: এবার আড্ডার প্রসঙ্গে ফিরে আসি। এমন কথাও শুনেছি, আপনি নাকি আড্ডা দিতে যেয়ে বাড়ি থেকে প্রায়ই উধাও হয়ে যেতেন?
কাদরী: একবার আড্ডা দিতে যেয়ে সাত দিন বাড়ি থেকে উধাও হয়েছিলাম। তখন সায়ীদ [আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ] ঢাকা কলেজে সদ্য জয়েন করেছে। আবার ব্যাচেলর। তখন তার বাসায় দিনের পর দিন আমাদের আড্ডা জমত। আড্ডা বসত বিউটি বোর্ডিং, রেক্সে, বন্ধু মোশাররফ রসুলের র্যাংকিন স্ট্রিট বাড়িতে, কবি সিকদার আমিনুল হকের এলিফ্যান্ট রোডের বাড়িতে, কণ্ঠস্বরে, সওগাত অফিসে অথবা কখনো কখনো স্রেফ রাস্তার পাশে রেস্টুরেন্টে, চা-শিঙাড়া হাতে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিয়েছি। একসময় গভীর রাতে রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যেত, তখন আমরা রাস্তায় হেঁটে আড্ডা দিতাম।
সৈয়দ: একজন সাধারণ মানুষের জীবনের সাথে একজন লেখক, শিল্পী বা সাহিত্যিকদের জীবনের পার্থক্যটা কোথায়?
কাদরী: আমি আগেও বলেছি যে শিল্পী-সাহিত্যিকদের রক্তে একটা অস্থিরতা সব সময় থাকে। এঁরা সব সময় একটা অস্থিরতা কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়ান। এঁদের জীবন সাধারণ মানুষের জীবনের থেকে একটু আলাদা হয়। একটা অতৃপ্তি নিয়ে তাদের বেঁচে থাকতে হয়।
সৈয়দ: অতৃপ্তিটা কিসের?
কাদরী: এই যে আমাদের জীবন, এটাই কি সত্যিকারের জীবন? মোটেও না। এর বাইরেও আলাদা একটা জীবনসত্তা আছে। সেই জীবনটাকে খোঁজার জন্যই এই অতৃপ্তি। সে জন্যই আমার সব সময় মনে হতো, বোহিমিয়ান জীবনটাই হলো বেটার লাইফ।
সৈয়দ: বাংলাদেশ থেকে কোনো লেখক-সাহিত্যিক এলেই আপনি তাঁদের সাথে কথা বলতে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। এই ব্যাকুলতার কারণ কী?
কাদরী: বাংলাদেশের খবর জানতে চাই। বাংলাদেশের নতুন লেখকদের লেখা, তাঁদের চিন্তা-ভাবনা, মনন—এসবের খবর নিতে চাই। এখন নতুন যাঁরা লিখছেন তাঁদের চিন্তাভাবনার সাথে নিজের চিন্তা-ভাবনার মিল অথবা অমিলগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করি।
সৈয়দ: শুনতে পাই আপনার নাকি এক ভবঘুরে হোমলেস আমেরিকান কবি-বন্ধু জুটেছিল। ঘটনাটা কি সত্যি?
কাদরী: আমি তখন থাকি বোস্টনে। তাঁর সাথে পরিচয় একটা কবিতার বইয়ের দোকানে। থাকতেন একটা হোমলেসদের শেল্টারে। প্রথম দেখে মনে হয়নি যে এই বাম [ভবঘুরে] হোমলেস একজন কবি হতে পারেন। আমার সাথে পরিচয় হতেই আমাকে বললেন যে, তিনি একজন কবি এবং ওখানকার নামকরা একটা সাহিত্য ম্যাগাজিনে নিয়মিত কবিতা লিখেন। তারপরের সপ্তাহেই দেখি সত্যি সত্যি তার চারটা কবিতা সাহিত্যপাতায় জ্বলজ্বল করছে। ব্যস, তাঁর সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যায়। একদিন তাঁর সাথে এক মজার অভিজ্ঞতা হয়। এই হোমলেস কবি তাঁর দুপুরের খাবারের জন্য প্রতিদিন চার্চ থেকে পাঁচ ডলারের কুপন পেতেন। একদিন কুপন দিয়ে তিনি খাবার কেনার পরও আবার খিদে পেয়ে যায়। কিন্তু সমস্যা হলো কুপন তো মাত্র একবারই পাওয়া যায়। তাই তিনি আমাকে অনুরোধ করলেন, আমি যেন এবার চার্চে যেয়ে একটা কুপন আনি। যদিও আমি হোমলেস ছিলাম না, তারপর আমিও হোমলেস হয়ে চার্চ থেকে কুপন পেয়ে গেলাম আর রেস্তোরাঁয় খাবারের অর্ডার দিলাম। ওঁর সাথে আমার অনেক দিন বন্ধুত্ব ছিল। একদিন সকালে দেখি, সে হাউমাউ করে কাঁদছে। জিজ্ঞেস করতেই বলল যে তাঁর গার্লফ্রেন্ড তাঁকে ছেড়ে চলে গেছে। তাই সে ঠিক করেছে, সেও বোস্টন ছেড়ে তাঁর নিজ বাড়ি সাউথ ক্যারোলাইনা চলে যাবে। তারপর থেকে তাঁকে আর দেখিনি।
সৈয়দ: দীর্ঘদিন হয়ে গেল, আপনি বাংলাদেশের বাইরে আছেন। দেশের জন্য কেমন লাগে?
কাদরী: যেদিন থেকে দেশ ছেড়েছি, সেদিন থেকেই দেশকে অনুভব করি। আমার একজন ভারতীয় ডাক্তার বন্ধু বলতেন, ‘টাকাপয়সা তো অনেক করেছি, কিন্তু রাত হলেই দেশের জন্য কেঁদে কেঁদে বালিশ ভিজাই।’ সত্যি, দেশে অভাব আছে, অনটন আছে তারপরও দেশ তো দেশই। নিজ দেশের চেয়ে আর কি কোনো ভালো দেশ হতে পারে? এই আমেরিকাতেও বাংলাদেশের মতো অবিরাম বর্ষা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের বর্ষার মতো এত সুন্দর বর্ষা পৃথিবীর আর কোথায় দেখতে পাব? বাংলাদেশে বৃষ্টি মানেই ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা কাগজের নৌকা পানিতে ভাসাচ্ছে, প্যান্ট গুটিয়ে মানুষজন রাস্তা পার হচ্ছে। এই দৃশ্যগুলোকে কল্পনা করলে আমার কাছে উৎসবের মতন মনে হয়। বাংলাদেশের আকাশ অনেক সুন্দর, বাংলাদেশের বৃষ্টিও অনেক বেশি সুন্দর। আমি স্বপ্ন দেখি কবে আবার সেই সবুজ দেশটাকে দেখব। দেখব তো?
না, কবি শহীদ কাদরীর আর কখনো দেশে ফেরা হয়নি। আর কখনো বাংলাদেশের বর্ষার জল ভালোবেসে ছুঁয়ে দেওয়ার সুযোগ তাঁর জীবনে ঘটেনি। ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট জন্ম নেওয়া এই অভিমানী আর ছন্নছাড়া কবির জীবনটা থেমে যায় ২০১৬ সালের ২৮ আগস্টের এক সন্ধ্যায় লং আইল্যান্ড জুইস হাসপাতালের আইসিইউতে। তখন নিউইয়র্কের আকাশ ছিল ঝকঝকে আশ্বিনের নীল আর সাদায় মেশানো আকাশ। যে আকাশ শহীদ কাদরী আজন্ম দেখতে চেয়েছিলেন। সে আকাশ তখন শহীদ কাদরীর কবিতায় ভেসে বেড়ায়।
শালিক নাচে টেলিগ্রাফের তারে,
কাঁঠালগাছের হাতের মাপের পাতা
পুকুর পাড়ে ঝোপের ওপর আলোর হেলাফেলা
এই এলো আশ্বিন,
আমার শূন্য হলো দিন
কেন শূন্য হল দিন?
[বোধ]
কবি শহীদ কাদরী আজীবন কবির জীবন যাপন করে গেছেন । আপাদমস্তক একজন কবি । শিল্প সাহিত্য যদি মানব কল্যানে না লাগে তবে তার চর্চা করে কি লাভ । অতি উত্তম চিন্তার প্রতিফলন । আগেও পড়েছি আবার পড়ে ও ভাল লাগলো । ধন্যবাদ আদনান সৈয়দ ।
সোনিয়া কাদির
সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২১ ১০:৩৩
আহা, কবির হৃদয় বলিয়া কখা!
জহির হাসান
সেপ্টেম্বর ০২, ২০২১ ১২:০৭
বেশ ভালো লাগলো। সাথে দুটি দুর্লভ ছবিও দেখলাম। সেই কবিতটা মনে পড়ে গেলো " বন্য শুকর খুঁজে পাবে প্রিয় কাদা মাছরাঙা পাবে অন্বেষণের মাছ কালো রাতগুলো বৃষ্টিতে হবে সাদা ঘন জঙ্গলে ময়ূর দেখাবে নাচ প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিকই শান্তি পাবে না, পাবে না "
মাজহারুল আলম তিতুমির
সেপ্টেম্বর ০২, ২০২১ ১৯:২১
চমৎকার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মি আদনান সৈয়দ। এর মধ্য দিয়ে তিনি পাঠকের কাছে কবি শহীদ কাদরীর অন্তর্জগৎ উন্মোচন করেছেন। একটানে পড়ে ফেললাম। বাংলাভাষার তিরিশ পরবর্তী একজন গুরুত্বপূর্ণ কবির এ অপূর্ব সাক্ষাৎকারটি প্রকাশের জন্য তর্কবাংলাকে সাধুবাদ দিতে হয়। জনাব আদনানকে জানাই ধন্যবাদ.অভিনন্দন।
আসাদ মান্নান
সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২১ ০৩:৩৬
আগেই জানা ছিল আদনান সৈয়দ কবি শহীদ কাদরীকে নিয়ে নিউইয়র্কে বেশ গভীরভাবে কিছু কাজ করেছেন এবং এখনো করছেন। এই সাক্ষাৎকারটিও অনেক ব্যতিক্রমধর্মী একটি সাক্ষাৎকার মনে হয়েছে। নিভৃতচারী এই কবির অন্তর্জগতের দরজায় খানিক কড়া নাড়ার জন্যে লেখক আদনান সৈয়দকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ তর্কবাংলাকেও অসাধারণ এই সাক্ষাৎকারটি আমাদের হাতে তুলে দেয়ার জন্যে। কবি শহীদ কাদরীকে আমার কাছে মিথের মতই মনে হয়। তাঁর কবিতায় সবসময় মেদহীন মনে হয় আমার কাছে। তাঁকে নিয়ে যদি আরো কিছু আয়োজন আপনারা করতে পারেন আমরা খুব উপকৃত হই।
তামান্না
সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২১ ০৮:৩৭