নিষিদ্ধ লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার!

 

লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার গ্রন্থটির সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল যখন কলেজে পড়ি। কলেজ ছুটি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঢাকার শাহবাগে কেন্দ্রীয় পাঠাগারে ঢুঁ দেওয়া ছিল আমার নিয়মিত অভ্যাস। সেখানে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি নানা স্বাদের বইয়ের খোঁজখবর নিতে সব সময় মুখিয়ে ছিলাম। একদিন অর্থনীতি বিষয়ের ওপর একটি রেফারেন্স বই খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করি খুব চিকন টাইপের একটা বই। নাম লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার। লেখক ডি এইচ লরেন্স। মনে মনে ভাবলাম, অর্থনীতি আর ব্যবসা-বাণিজ্যের বইপত্রে ঠাসা এই বইয়ের শেলফে তো লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার থাকার কথা নয়! তাহলে নিশ্চয়ই কেউ বইটিকে লুকিয়ে এখানে হয়তো রেখে দিয়েছে!

আমি গ্রন্থটি সম্পর্কে আগে থেকেই কিছু কানাঘুষা শুনেছি। একরকমের নিষিদ্ধ বই! আমার বন্ধুবান্ধবের অনেকেই নীলক্ষেত থেকে কিনে পড়ছে। বইটির ভেতরের মালমসলা সম্পর্কেও তখন অল্পবিস্তর জ্ঞান অর্জন করেছিলাম। তাই ভালো করেই জানা ছিল যে এই বই বাড়িতে নিয়ে পড়ার মতো কোনো বই নয়। বা সেই দুঃসাহসও আমার নেই। অতএব পাঠাগারে বসেই বইটি পড়ার মোক্ষম সুযোগটি হাতছাড়া করি কীভাবে? কিসের অর্থনীতি আর কিসের কী? কাঁপা কাঁপা হাতে পবিত্র মন নিয়ে বইটির পাতা ওল্টাতে শুরু করে দিলাম। পাতা খুলতেই দেখি সেখানে বিশেষ বিশেষ কিছু হলুদ কালির আন্ডারলাইন! কাজটি যে কোনো রসিক পাঠকের, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এভাবেই লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার-এর সঙ্গে আমার আনুষ্ঠানিক যাত্রা। আরেকটু বড় হয়ে যখন বইটি আবার পড়তে শুরু করি, তখন আসল মর্মার্থটি উদ্ধার করতে পারি। কারণ, তখন বুঝতে পারি, এই উপন্যাস শুধুই রগরগে কোনো উপন্যাস নয়! এই উপন্যাসের পেছনে রয়েছে সমাজের আরেক কঠিন চিত্র আর গল্প! উপন্যাসটির আসল সুর তখন আমার আত্মায় গেঁথে ছিল।

সন্দেহ নেই, ডি এইচ লরেন্স এই উপন্যাস দিয়ে সমাজে বড় একটি আলোড়ন তৈরি করেছিলেন। সেই আলোড়নের ঢেউ পশ্চিম থেকে আমাদের প্রাচ্যের ঘাটেও এসে বাড়ি খেয়েছে। লরেন্স মারা যাওয়ার একত্রিশ বছর পর ১৯৬১ সালে পেঙ্গুইন যখন বইটি প্রকাশ করল, তখন গোটা পৃথিবীতেই বইটি নিয়ে এক হুলুস্থুল কাণ্ড শুরু হয়ে গেল! দুঃখের বিষয়, ডি এইচ লরেন্স তাঁর জীবিতকালে এই কাণ্ড দেখে যেতে পারেননি। তৎকালীন সময়ের রক্ষণশীল সমাজের তোপের মুখে লরেন্স উপন্যাসটি প্রকাশ করতে পারেননি। ১৯২৮ সালে উপন্যাসটি খুব গোপনে ফ্লোরেন্সে প্রকাশিত হলেও সেই উপন্যাস আলোর মুখ দেখতে সময় লেগেছিল আরও ৩১ বছর!

প্রশ্ন আসতে পারে, উপন্যাসটি নিয়ে কেন এত হইচই? কেন উপন্যাসটি ইংল্যান্ডের মতো আধুনিক শিল্পসাহিত্য চর্চাকেন্দ্র বলে পরিচিত জায়গাতেই নিষিদ্ধ হয়েছিল! উপন্যাসটির পটভূমিকাই কি এর কারণ? শুধুই যৌনতা? নাকি অন্য কিছু? লক্ষ করুন, শিল্প-সাহিত্যে যৌনতার উপস্থিতি নতুন কোনো ঘটনা নয়। শিল্পের সেই আদিকাল থেকেই শিল্পীর তুলিতে যৌনতা স্থান পেয়েছে। আর যৌনতা তো জীবনেরই একটা অংশ! তাই নয় কি? কিন্তু লক্ষ করা গেছে, বিভিন্ন সময়ে সমাজের একটি রক্ষণশীল গোষ্ঠী এই যৌনতা মানেই অশ্লীলতা’—এই অজুহাত সামনে এনে শিল্পীর কণ্ঠ স্তব্ধ করে দিতে নানা রকম ছুতা ফেঁদেছে, শিল্পকলাকে হুমকি দিয়েছেসেই ইতিহাসও আমরা জানি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ইংল্যান্ডের সুধী সমাজ কেন মনে করল যে লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার যৌনতাপুষ্ট একটি উপন্যাস এবং এই উপন্যাস সমাজের জন্য ক্ষতিকারক। অতএব এর গলা টিপে হত্যা করা জরুরি! আর যৌনতার কথাও যদি ধরি, তাহলেও বলব, সমাজের চোখে যৌনতা মানেই অশ্লীলতা আর নিষিদ্ধ অন্ধকার জগৎ! না, যৌনতা নিয়ে সমাজে খোলামেলা কথা বলা বারণ আছে। যৌনতার সঙ্গে বসবাস করা যায়, কিন্তু কথা বলা যায় না। যৌন সম্পর্ক নিয়ে কথা বললে এই সমাজের রক্ষণশীলরা বাঁকা চোখে তাকান। তবে লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার উপন্যাসটি নিষিদ্ধ হওয়ার পেছনের কারণ অন্যটি। সে কারণ যৌনতার চেয়েও আরও বেশি ভয়াবহ! সেটি হলো একজন রক্ষণশীল উচ্চশ্রেণির নারীর সঙ্গে একজন সাধারণ নিচু শ্রেণির মানুষের প্রণয়। এই অসম প্রণয় রক্ষণশীল সমাজের গালে চটি মারার চেয়েও কোনো অংশে কম নয়! এর অন্তর্নিহিত কারণ খুঁজতে আমাদের সামনে দুটো বিষয় ধরা পড়ে। প্রথমত শ্রেণিবৈষম্য আর দ্বিতীয়ত হলো ক্ষমতা। সমাজে শ্রেণিবৈষম্য লালন করে নিজের দাপট, ক্ষমতা এবং বিত্তের ওপর পা দিয়ে সমাজকে যারা শাসন ও শোষণ করতে অভ্যস্ত, তাদের কাছে বইটি আদরণীয় কোনো শিল্প হওয়ার কথা নয়।

লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার শুধুই কি একটি উপন্যাস! শুধুই কি যৌন উদ্দীপক গল্প! প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইংল্যান্ডের ভূস্বামী, নাইট, ভাইসরয়সহ উচ্চশ্রেণি তথাকথিত আভিজাত্যের মোড়কে সমাজ যখন আবদ্ধ, ঠিক তখন এ ধরনের একটি উপন্যাস এই শ্রেণিশোষকদের জন্য বড় রকমের হুমকি হবে, এটাই স্বাভাবিক।

লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার শুধুই কি একটি উপন্যাস! শুধুই কি যৌন উদ্দীপক গল্প! প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইংল্যান্ডের ভূস্বামী, নাইট, ভাইসরয়সহ উচ্চশ্রেণি তথাকথিত আভিজাত্যের মোড়কে সমাজ যখন আবদ্ধ, ঠিক তখন এ ধরনের একটি উপন্যাস এই শ্রেণিশোষকদের জন্য বড় রকমের হুমকি হবে, এটাই স্বাভাবিক। ধারণা করি, লরেন্স সেই সমাজকে খুব কাছ থেকেই দেখে থাকবেন। তবে শুধু রক্ষণশীল শ্রেণিশোষকের কথাই-বা কীভাবে বলি! লরেন্সের সমসাময়িক অসংখ্য শিল্পী-সাহিত্যিক, বন্ধুবান্ধব উপন্যাসটি নিয়ে তির্যক সমালোচনা করতে পিছপা হলো না। কেউ কেউ উপন্যাসটি পর্নো ছাড়া আর কিছুই মনে করেননি। তাদের উদ্দেশে লরেন্সের মন্তব্য হলো, নরনারীর শারীরিক সম্পর্ক খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই সম্পর্ক লজ্জার নয় বরং ঐশ্বর্যের। উপন্যাসটিতে যখন আমি প্রবেশ করি, সেখানে সুন্দরকেই আমি খুঁজে পাই। আমার কাছে সেখানে সুন্দর আর নবীনতার ছোঁয়া ধরা পড়ে।

চলুন, ঝট করে এক চুমুকে উপন্যাসটিতে ঘুরে আসি। লেডি চ্যাটার্লি একজন উচ্চবিত্তে জন্ম নেওয়া নারী। তিনি বেশ বুদ্ধিমতী। বিয়ে করেছেন ইংল্যান্ডের অভিজাত ভূস্বামী এবং ধনকুবের স্যার ক্লিফর্ডকে। ক্লিফর্ড যুদ্ধফেরত ব্যবসায়ী। শিল্প-সাহিত্যেও তার ঝোঁক। শরীরে খান্দানের ঘ্রাণ মিশিয়ে তার চোখ সব সময় থাকে সমাজের উচ্চ আসনের দিকে। পরবর্তীকালে কয়লাখনির ব্যবসাতেও তিনি মন দেন। কিন্তু ক্লিফর্ড পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ক্লিফর্ডের সঙ্গে লেডি চ্যাটার্লির শারীরিক ও মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়। লেডি চ্যাটার্লির অন্তরঙ্গতা তৈরি হয় ক্লিফোর্ড এস্টেটের গেমকিপার অলিভার মেলর্সের সঙ্গে। উপন্যাসটিতে তখন শুরু হয় মনোজগৎ এবং অন্তর্জগতের দ্বন্দ্ব। ক্লিফর্ড বনেদি সম্ভ্রান্ত ঘরের মানুষ, সমাজের শ্রেণি বিভাজন করে তিনি তার রাজত্ব ধরে রাখতে চান, তিনি শিক্ষিত কিন্তু শারীরিকভাবে অক্ষম। অন্যদিকে তাঁর স্ত্রী লেডি চ্যাটার্লি সন্তানের জন্য লালায়িত, ভালোবাসার জন্য লালায়িত। কিন্তু ক্লিফোর্ডের পক্ষে তাকে কোনো কিছুই দেওয়া সম্ভব নয়। ক্লিফোর্ড শুধু শারীরিকভাবেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত নয়, মানসিকভাবেও। শেষ পর্যন্ত কনি ক্লিফর্ডকে ছেড়ে মেলর্সের সঙ্গে কানাডা পাড়ি দেন অজানা সুখের সন্ধানে। অসাধারণ রূপক ব্যবহার করে ডি এইচ লরেন্স তাঁর এই উপন্যাসে পক্ষান্তরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত সমাজটিকেই দেখাতে চেয়েছেন।

বলার অপেক্ষা রাখে না, গোটা বিশ্বে এই উপন্যাসের জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। সাধারণ পাঠক থেকে শুরু করে গুরুগম্ভীর পাঠকের হাতে তখন লেডি চ্যাটার্লিজ ঘুরে বেড়ায়। সন্দেহ নেই বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ইংল্যান্ডের রক্ষণশীল সমাজকে প্রবলভাবে এই উপন্যাস আঘাত করেছিল। অবশ্য কোনো কোনো সাহিত্য সমালোচক উপন্যাসটিকে সস্তা, চটুল এবং পর্নোগ্রাফিতে ঠাসা বলে আখ্যায়িত করেন। উপন্যাসটি সমাজের উচ্চ তথাকথিত এলিট শ্রেণির অহংকার এবং শ্রেণিবিভাজনকে ভেঙে চুরমার করে দেয়। সমাজে সুকৌশলে লালিত বৈষম্যকে এই উপন্যাস দিয়ে প্রবলভাবে নাড়া দিতে সক্ষম হয়। স্বাভাবিকভাবেই উপন্যাসটি নিয়ে গোটা পৃথিবীর রক্ষণশীল সমাজে প্রবল আপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং উপন্যাসটি প্রকাশ ও প্রচারে বাধাগ্রস্ত হয়। ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় উপন্যাসটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। গোটা ইংল্যান্ডে যখন উপন্যাসটি নিয়ে হইচই, যখন কোনো প্রকাশকই উপন্যাসটি ছাপতে রাজি হচ্ছিল না, তখন বিলেতের বেশ কয়েকটি নামকরা প্রকাশক লরেন্সের কাছে একটি প্রস্তাব নিয়ে এল। তারা উপন্যাসটি থেকে চার শব্দের আপত্তিজনক শব্দটি বাদ দিতে লরেন্সকে অনুরোধ জানায়। লরেন্স প্রকাশকদের সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে বললেন, আমি বরং কাঁচি দিয়ে আমার নিজের নাক কেটে ছেঁটে ফেলে দিতে পারি। কিন্তু উপন্যাসের কোনো শব্দ কাটা যাবে না। নিষিদ্ধ হোক, তাতেও কোনো আপত্তি নেই।

প্রথাগত বিশ্বাস এবং সমাজের কিছু ট্যাবু বা প্রবণতার শিকল থেকে আমরা কখনোই মুক্ত নই। স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে যৌনতা বিষয়ে কোনো শিক্ষা আমরা লাভ করি না। ছেলেবেলা থেকেই শিখিয়ে দেওয়া হয় যে যৌন চিন্তা মানেই পাপ চিন্তা! এই ধরনের বাণী আত্মস্থ করেই একটি শিশু বড় হতে থাকে। যে কারণে লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার আমাদের পড়তে হয় গোপনে, বাথরুমে বসে অথবা লাইব্রেরিতে একা একা চুপি চুপি।

আরেকটি বিষয় আলোচনা করা এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। সিগমুন্ড ফ্রয়েড যাকে বলেছেন মনোযৌন বিকাশ। এই বিষয়ে মানসিকভাবে আমরা কতটুকু বিকশিত হতে পেরেছি? আমাদের একটি শিশুমন যখন বেড়ে ওঠে, তখন সেই শিশুর আত্মা কী ধরনের বিশ্বাস নিয়ে বেড়ে ওঠে! ফ্রয়েড যেমন মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশে পাঁচটি যৌন স্তরের কথা উল্লেখ করেছেন, ঠিক একইভাবে প্রশ্ন উঠতে পারে, সেই স্তরগুলো একটি শিশু কোনো রকম সামাজিক বাধা ছাড়াই অতিক্রম করতে পারে কি? ফ্রয়েড বিশ্বাস করতেন, মানুষের যৌন বাসনাগুলো যদি অপূর্ণ থাকে, তাহলে সে মানুষটির ব্যক্তিত্বের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে বাধ্য। একজন মানুষ শুধু শারীরিকভাবে বড় হলে বড় হয় না, বরং তাকে মানসিকভাবেও বড় হতে হয়। কথা হলো আমরা মানসিকভাবে কতটুকু বড় হতে পেরেছি সেই নিয়ে। লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার উপন্যাসটি নিয়ে এত ফিসফাস হওয়ার কারণ কি তাহলে তাই? কেন আমরা এই উপন্যাস এখনো খোলামেলা পরিবেশে পড়তে ভয় পাই? আমাদের যথাযথ মনোযৌন বিকাশ হয়নি বলে?

প্রথাগত বিশ্বাস এবং সমাজের কিছু ট্যাবু বা প্রবণতার শিকল থেকে আমরা কখনোই মুক্ত নই। স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে যৌনতা বিষয়ে কোনো শিক্ষা আমরা লাভ করি না। ছেলেবেলা থেকেই শিখিয়ে দেওয়া হয় যে যৌন চিন্তা মানেই পাপ চিন্তা! এই ধরনের বাণী আত্মস্থ করেই একটি শিশু বড় হতে থাকে। যে কারণে লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার আমাদের পড়তে হয় গোপনে, বাথরুমে বসে অথবা লাইব্রেরিতে একা একা চুপি চুপি। আর ঠিক একই কারণে লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার পড়ে আমরা অবলীলায় বলে দেই যে এটি সস্তা চটুল যৌন সুড়সুড়ি দে‌ওয়া কোনো উপন্যাস। অথচ দুঃখজনক বিষয় হলো, আমরা কখনো চিন্তুাও করি না বা চিন্তা করার মতো সেই মানসিক শক্তিও আমরা ধারণ করি না যে লরেন্স এই যৌনতার আড়ালে সত্যিকারে কী বলতে চেয়েছেন। একটি শিল্পকে ব্যবচ্ছেদ করার ক্ষমতা আমাদের এখন যেমন নেই, ঠিক আজ থেকে ১০০ বছর আগে ইংল্যান্ডের রক্ষণশীল সমাজেও ছিল না। লরেন্স সমাজের এই অসুখ অত্যন্ত শিল্পিতভাবে তাঁর উপন্যাসে তুলে ধরতে পেরেছেন।

সত্য এই, লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার বইকে তৎকালীন সমাজ স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি। উপন্যাসটির প্রকাশক পেঙ্গুইনকে আদালতে পর্যন্ত দাঁড়াতে হয়েছে। আদালতের রায় ছিল, উপন্যাসটি ছাপার অযোগ্য। ১৯৬০ সালের আগ পর্যন্ত লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার ইংল্যান্ডে নিষিদ্ধ ছিল। ১৯৬১ সালে প্রথম বিলেতের মাটিতে গ্রন্থটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। জানা যায়, এ গ্রন্থের প্রথম সংস্করণের একটি কপি বিলাতের বিচারকের জিম্মায় ছিল। বিচারকাজ চলাকালীন তিনি গ্রন্থটি ব্যবহার করেছিলেন। সেই ঐতিহাসিক গ্রন্থটি কিছুদিন আগে ৫৬ হাজার ২৫০ পাউন্ডে অকশনে বিক্রি হয়। অবশ্য বইটির কপি যার সংগ্রহে ছিল, তিনি চেয়েছিলেন, ইংল্যান্ডের বাইরে বইটি বিক্রি করে দিতে। কিন্তু ইংল্যান্ডের বাইরে বইটি যেন কোথাও বিক্রি না হতে পারে, সে জন্য একটা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। এই হলো শিল্পের কঠির বাস্তবতা! যে গ্রন্থটি বিলেতের মাটিতে নিষিদ্ধ ছিল, সেই একই গ্রন্থ আবার অকশনে হাজার হাজার পাউন্ডে বিক্রি হয়ে যায়! এভাবেই হয়তো সময়ের সঙ্গে সমাজটাও বদলায়। তবে শত নেতিবাচক সমালোচনার পরেও লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার উপন্যাসটি লরেন্সকে রাতারাতি জনপ্রিয় করে দিয়েছিল। লরেন্সের সাহিত্যিক বন্ধু কথাসাহিত্যিক রিচার্ড এলডিংটন উপন্যাসটি সম্পর্কে বলেন, বিংশ শতাব্দীর টুপিতে এক অসামান্য পালক। সমালোচকদের তির্যক মন্তব্যের পাশাপাশি অনেকেই বলতে শুরু করেন, কথাসাহিত্যের ইতিহাসে জীবন বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তুলতে এমন উপন্যাস অন্যতম উদ্দীপক হিসেবে কাজ করবে।