খামের বাইরে গিয়ে কাঠামো চিন্তা 

 

কবিতা কি কাঠামোর মধ্যে লেখা হয়, যেভাবে ইট তৈয়ার করার সময় মাটির দলা একটা ফ্রেমের মাঝে ফেলা হয়? ছোটবেলায় মনে হতো, কবিতা সম্ভবত অমোঘ হয়ে আসে। প্রতিটা শব্দ, বর্ণ, এমনকি যতিচিহ্নগুলাও আসে সে বিন্যাসের সতীত্বের সাক্ষী হয়ে। প্রায়ই তো শুনি কবিরা ‘কবিতা আসা’ ব্যাপারটা নিয়া বেশ গুরুগম্ভীর আওয়াজ তোলেন। শুনতে সেসব খুবই মধুর। আর বেশ ভারিক্কি তৈরি করে৷ একটা ঘেরাটোপও তৈরি হয়, যেন কবির চারপাশে ভেড়াটা বেশ দুরূহ হয়ে পড়ে। এইটা অবশ্য বেশ মজার ব্যাপার। কেননা জনতার মধ্যে একটা 'বিশেষ' তকমা পাওয়ার সুযোগ ঘটে। ইশকুলে কঠিন নিয়মে অঙ্ক করানো মহাশয়ের মতো, যাতে খ্যাতি ও অর্থের ভাগে কম না পড়ে। কিন্তু খোলাসা করে দিলে কী হবে? ছাত্ররা মানে ভক্তরা কেটে পড়বে মানে মানে।

কিন্তু সূত্রে ফেলে অঙ্কের সমাধান করা যায়। কবিতার দফা কি রফা হয়? উত্তরটা যদি না বলি, ছন্দবাদীরা খেপে উঠবেন হয়তো যে, কবিতা তারা খাপে পুরে লেখবেনই। আজকাল অবশ্য কবিরা চালাক হয়েছেন বটে। তারা আর ‘মাত্রা’ গুণে ছন্দের মোয়াক্কেলকে শান্ত করেন না, বরং ‘মিউজিক বা সুর’ রসে ভিজিয়ে কানকে শান্ত করার দাবি করেন। যদিও ব্যাপারটা অনেকখানি এমনই৷ নাদান পাঠক আর গাধান (গাধা প্রকৃতি) কবিরা না বুঝে মাত্রা গনাকেই কাব্যি বুঝে এসেছে।

ধরা যাক, বাহিরের নিয়ম থোড়াই কেয়ার করেই লেখা হলো কোনো কবিতা পদবাচ্য, তাহলে সেটা যে কবিতা হয়ে উঠবে তারই-বা গ্যারান্টি কী! বরং অন্ত্যমিলের টানে কিংবা নিয়মের মিউজিকে (ম্যাজিকে) দুই-একটা চরণ তো হয়ে উঠতে পারে পাতে তোলার মতো পাচ্যগুণসমৃদ্ধ। ফলে সে এক বিরাট ঝুঁকি খামের বাইরে গিয়ে চিঠিকে বাতাসে পোরার। 

কবিতা কি ঝুঁকিমুক্ত কর্ম? কলম ঘুরিয়েই মিলে যাবে কড়ি? সাধারণে এমন ধারণার অভাব নাই৷ অক্ষরে অক্ষর গাঁথা দেখলেই তিনি কবিতা বলে ভিরমি খেয়ে পড়েন। কিন্তু পেশাদার কবিরা হাঁটেন ঝুঁকির পথে। সমস্ত নিয়মকে তিনি ফাটিয়ে দেখেন, ভিতরে কিসের বীজ। তার জিয়ন সম্ভাবনাই-বা কতটুকু! এ কারণে তাদের কবিতা পড়ে প্রথমে বিষম খেতে হয়। পরে হয়তোবা রচিত হয় যোগাযোগ সেতু।

এ কারণে আমার ইচ্ছা হয়, কবির খেরোখাতা দেখার। কিংবা কবির মাথায় বসানো সে সম্পাদনা মেশিন, যা কেটে চলেছে বহু পঙ্ক্তি ও পদের বিন্যাস। একটা লতানো শাকের ডগা যেমন যেতে পারে, যেকোনো জিংলায়, যেকোনো দিককেই সে বেছে নিতে পারে, কবিতা সম্ভবত সে রকম লতানো মায়া, যা শব্দ ও বাক্যের সহজাত অভ্যাসকে বিপর্যস্ত করে দিতে পারে। সেই বিন্দুটিকে আমি আমলে নিতে চাই। যেখান থেকে কবিতার পথরেখা তৈরি হয়। কবিতার যত ফর্ম বা রূপ সমস্ত কিছুর আদি সম্ভবত এই বিন্দুটি। সেখানে দাঁড়িয়ে কবি সিদ্ধান্ত নেন কবিতাটির সম্ভাব্য গতিপথ সম্পর্কে।

ছোটবেলায় হলুদ খাম আমরা সে যুগের সকলেই দেখেছি৷ তার প্রমাণ সাইজে যে চিঠি লেখা হতো, লেখা হতো যে হৃদয়রাগিণী, তার অনেক বেশি গুঞ্জরিত হতো খামের বাইরে হাওয়ায়, হাওয়ায়৷ আজকের ‘ইনবক্স’ সেই খামের সীমাকে ঘুচে দিয়েছে। যদিও এ-ও এক কাঠামো৷ কিন্তু এর ব্যাপ্তি খামের চেয়ে ব্যাপক। তুলনাই চলে না বলা গেলে। যদিও সে হলুদ খাম! আহা! কী নরম, মহান।

ফলে সেই ছিটকে পড়া কথামালাকে কুড়াতে পরিবর্তন করতে হয়েছে মাধ্যমের। কবিও সেটাই করে চলেন যুগে যুগে৷ আমি প্রায়ই ভাবি, আমার সমস্ত কবিতা যদি আবার লেখা হতো, তাহলে কি একই চেহারা থেকে যেতো? কিংবা একটা কবিতাকে কত রকমভাবে লেখা যেতে পারে? কাঠামো কিংবা অর্থের দায়কে উড়িয়ে দেওয়া গেলে, সম্ভবত সে এক দারুণ নিরীক্ষা হতে পারে। ফলে নিজের লেখাকে ‘গোঁ’-এর বাইরে নেওয়া গেলে, সম্ভবত একই কবিতা লেখা যেতে পারে অসংখ্যবার। আর প্রতিবারই তার নতুন একটা রূপ দাঁড়িয়ে যেতে পারে। এমন অদ্ভুত ভাবনা আমি কেনই-বা ভাবছি, সেই প্রশ্নও হয়তো অনেকে করে ফেলতে চলেছেন মনে মনে। তাদের জিজ্ঞাসাকে আমলে নিয়ে পাশ ফিরতে চাই৷ আমি মূলত বাজিয়ে দেখতে চাই, একটা কবিতা সৃজনমুহূর্তে কতগুলো ‘অপশন ক্রিয়েট’ করতে পারে? কাঠামোবদ্ধ কবিতা তার কতটুকু পারে? কাঠামো কখনো কখনো হয়ে উঠতে পারে প্রবল বাধা। কারণ, গতিপথ আগেই অনেকটা নির্ধারিত হয়ে থাকে সেখানে। ফলে কবির ‘খামখেয়াল’ মার খেয়ে যেতে পারে। চোখ ফসকে যেতে পারে ভিন্ন পথের গলি। কাঠামোকে দাস বানাতে না পারলে কবির ধরাশায়ী হয়ে পড়াটা অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠতে পারে। পরে দেখা গেল, ফুলটাই পড়ে আছে কেবল, উবে গেছে ঘ্রাণ- রং গেছে মরে। 

ছোটবেলায় হলুদ খাম আমরা সে যুগের সকলেই দেখেছি৷ তার প্রমাণ সাইজে যে চিঠি লেখা হতো, লেখা হতো যে হৃদয়রাগিণী, তার অনেক বেশি গুঞ্জরিত হতো খামের বাইরে হাওয়ায়, হাওয়ায়৷ আজকের ‘ইনবক্স’ সেই খামের সীমাকে ঘুচে দিয়েছে। যদিও এ-ও এক কাঠামো৷ কিন্তু এর ব্যাপ্তি খামের চেয়ে ব্যাপক। তুলনাই চলে না বলা গেলে। যদিও সে হলুদ খাম! আহা! কী নরম, মহান।

অভিযোগবাদীরা হয়তো সন্দেহ করতে পারেন, আমি নৈরাজ্যকে ‘প্রমোট’ করতে চলেছি। যদিও আমি অত সাহসী নই, কিংবা এই আলাপের বন্দুক সেই দিকে তাক করা নাই। কিন্তু ভাষাকে বা বিষয়কে কিছুটা নড়িয়ে-চড়িয়ে কোনো কামাই করা যায় কি না সেটাই ভাবছি আমি। এ কারণে কাঠামোর বাইরে গিয়ে, কবির মনোবাহনের চলনকে আঁকিয়ে-বাঁকিয়ে কতটা কী করা যায়, কবিতায় সেটাই হতে পারে কাজের বিষয়৷ কেননা বহু কথা তো সেই আদ্যিকাল থেকে বলা হয়েছে বিচিত্র সব ভঙ্গিতে। সেই ভঙ্গিগুলো বাজিয়ে বাজিয়ে একটু এদিক-ওদিক করেটরেও রচিত হইতে পারে নতুন আরাম। আর ভঙ্গির সাথে প্রকৃতিতে-পরিবেশে বইতে থাকা বাঙ্ময়তা কতটা কীভাবে আনা যায়, সেটাও হইতে পারে দেখার জায়গা। কেবল বলতে চাওয়া নয়, দেখাতে চাওয়াও হতে পারে ভিন্ন কোনো অপশন। হয়তো সেই দৃশ্যচ্ছটার ভিতরে কেউ খুঁজে পায় নিজের সত্তার ছেড়ে আসা পুরাতন মায়া।

একদমই নতুন ভঙ্গি কি আসতে পারে কবিতায়? মানুষ কি আয়ত্ত করতে পারে পশুদের ভঙ্গি? ভাষাতাত্ত্বিকেরা তো বলেন, পাখির কিচিরমিচির, পশুর হুঙ্কার, পাতার খসখস, নদীর কুলুকুলু ধ্বনি থেকে ভাষার উৎপত্তি। এখনো ঘনজঙ্গলের মানুষেরা সেই ভাঙা ভাঙা শব্দ ও বাক্যে কথা বলেন। তাহলে কবি সেই আদি সম্পর্কসূত্রে খুঁজে নিতে পারেন বিকল্প কোনো ভঙ্গি। কাঠামোকে গুঁড়িয়ে দিয়ে, এলোমেলো করে দিয়ে কবি খুঁজে নিতে পারেন নতুন একটা অভিমুখ।

কিন্তু সেইখানে কবির মন নানা ধরনের টানের মধ্যে বান্ধা। সবচেয়ে বড় টান হইলো তার পড়া কবিতার প্রচলিত ধরন। সেইটাকে অতিক্রম করে যাওয়া অনেকেরই ঘটে না। প্রচল যত প্রতিষ্ঠিত ফর্ম বা ধরন আছে, সেটা তাকে আছর করতে থাকে কোনো রকমের অনুমতির তোয়াক্কা না করেই। শক্তিশালী কবিতার এইটাও একটা শক্তির জায়গা, সেটা বহু পাঠে জনগণের স্মৃতির অংশ হয়ে ওঠে৷ কবি যেহেতু সেই স্মৃতিরই সন্তান, ফলে তার মনের গোপন শাখা-প্রশাখায় লতিয়ে উঠতে চায় সেই সব কাব্যের অপভ্রংশ। সেগুলোকে অতিক্রম করে করে এগোলেই হয়তো পাওয়া যেতে পারে নিজ মোকাম।

অনেকে অবশ্য মৌলিকই হয়ে উঠতে চান না।(যদিও কোনো মৌলিকই প্রকৃত মৌলিক না।) সাহিত্য ‘ব্লেন্ডিং’ বলে একটা শব্দ শোনা যায়। অনেক কবিকেই পাওয়া যায়, পূর্বজ দু-তিনজন কবির কাব্যভঙ্গি ও ভাষা মিশিয়ে তৈরি করেন নতুন পথ। এটা অবশ্য দারুণ ব্যাপারই। একটা পরম্পরার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়া৷ যদিও সেখানে নতুন কোনো চিন্তা বাহিত করতে না পারলে, সমস্ত কৃতিত্ব পূর্বজ জনের ভান্ডারে গিয়েই জমা হতে পারে। যেভাবে ডিজিট ভুল হলে টাকা চলে যেতে পারে অন্য অ্যাকাউন্টে। সেভাবে নিজের জিনোম কোড কবিতায় চালান করতে না পারলে কেবলই বৃথা যায়।

আবার সময় কখনো কখনো হয়ে উঠতে পারে নির্ধারক। ভাষা যতই কেন্দ্রীভূত হোক গ্রন্থে, সংবাদপত্রে, সরকারি ভাষ্যে, বিপুল অজস্র মানুষ নানা কর্ম ও অপকর্মের সংঘাতে, সভ্যতা ও অসভ্যতার আলোড়নে প্রতিনিয়ত নতুন শব্দ-বাক্য-প্রবাদ-প্রবচন-বাগবিধি সৃষ্টি ও সঞ্চার করে চলেন। সেসব জনভাষ্য নতুন পাকা টমেটোর মতো একদমই টাটকা। তার মধ্যে থাকতে পারে ‘পোয়েটিক এসেন্স’। কিংবা কবি তার কবিতা সৃষ্টির প্রকৌশল দিয়ে সেসবকে করে নিতে পারেন কবিতা উপযোগী সম্পদে। সম্ভবত গ্রাম্য বা চারণ কবিরা এখানে বেশ সফল। নগরের কবিদের উচ্চম্মন্যতা সম্ভবত সেই সুরকে, শব্দের সেই বহুরূপতাকে বুঝে উঠতে পারঙ্গম নয়।   

নিজের কবিতা লেখার কথা বলতেছি আমি৷ ফলে আগে জানা দরকার ‘নিজ’ ব্যাপারটা কী! এইটা কবি স্বয়ং বার করে নিবেন। কেউ প্রেসক্রিপশন দিয়ে নিজকে চেনাতে পারবে না। তবে যদি অভিনিবেশ থাকে, তিনি সেটা বার করে ফেলবেনই। আর এটা তার একারই কাজ। কারণ, কবির মন এইখানে বড় একটা অংশ হিসাবে সক্রিয় থাকে। থাকে কবির পাঠ, সংঘ, টিকে থাকার লড়াই ও অভিজ্ঞতা।

এখানে হয়তো কারও মনে হতে পারে, আমি নগরের জনপরিসরকে সংস্কৃতির নতুন উৎপাদনের ক্ষেত্র মনে করছি না। এইটা একটা অভিনিবেশের জায়গা হতে পারে আমার এবং অন্য সকলের জন্য। আমাদের, বিশেষ করে বাংলা কবিতায় নগর সেইভাবে উচ্চকিত হয়ে উঠতে পারছে না কেন? আর গ্রাম কেন এখনো অপ্রতিরোধ্য কাব্যরস আমদানিতে? তাদের গীতিকাব্য আর তার সুর কেন মোহময় হয়ে উঠতে পারে? বহুদিন ভেবে মনে হইছে, কাঁঠাল পাকার জন্য যেমন জ্যৈষ্ঠের গরম লাগে, তেমনি শিল্পের জন্য ক্ষেত্র, উপাদান বা রচয়িতার সেই রকম অনুকূল তাপ ও চাপ। গ্রাম সভ্যতা হিসেবে বেশ পুরান। বলা চলে, আধুনিক সভ্যতার পাটাতনই হইলো গ্রাম। আর এখনো এখানে যারা কবিতা লিখতে আসে, তারা গ্রামেরই ভূমিপুত্র। ফলে নগর তারা ঐভাবে এস্তেমাল করতে পারেন না। নগর যত পুরান হবে, তার স্মৃতির সন্তানেরা যত বেশি শিল্প ফলাতে থাকবে, তত তার ফলন মধুকর হয়ে উঠবে। এই জায়গায় আইসা আমার মনে হয়, আমাদের আধুনিক কবিতার বড় একটা অংশ প্রবঞ্চনায় ঘেরা। আমাদের ভূমিপুত্রেরা নিজের কবিতা না লিখে যেন অপরের অভ্যাসের দাস হয়ে উঠতে চাইছে। এই কারণে অজ্ঞাতনামা ‘চারণকবি বা লোককবির’ সুর যেভাবে মানুষকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে ফেলতে পারে, বেহুঁশ করে ফেলতে পারে, নগরবাসী আধুনিকতার ধ্বজাধারী কবি সেইভাবে পারেন না। এই লুপটা যদি কেউ ধরে ফেলতে পারে, তাহলেও নতুন একটা কাজের এলাকা তৈরি হইতে পারে বলে আমার ধারণা।

নিজের কবিতা লেখার কথা বলতেছি আমি৷ ফলে আগে জানা দরকার ‘নিজ’ ব্যাপারটা কী! এইটা কবি স্বয়ং বার করে নিবেন। কেউ প্রেসক্রিপশন দিয়ে নিজকে চেনাতে পারবে না। তবে যদি অভিনিবেশ থাকে, তিনি সেটা বার করে ফেলবেনই। আর এটা তার একারই কাজ। কারণ, কবির মন এইখানে বড় একটা অংশ হিসাবে সক্রিয় থাকে। থাকে কবির পাঠ, সংঘ, টিকে থাকার লড়াই ও অভিজ্ঞতা। তবে স্মৃতি হযে উঠতে পারে সমস্ত নির্মিতির অধিকর্তা। খাদ্য যেভাবে শরীরের ভেতরে পাচ্যীকরণ হয়ে রক্ত কিংবা জিয়নশক্তিতে রূপ নেয়, মানুষের সমস্ত দেখা ও অদেখার সার যেন স্মৃতি। ফলে নানান ফর্মে সে উঁকি মারতে থাকে মানুষের সৃজনকলায়। যদিও তার কোনো সরল রূপ নাই। বহু রকম বাইনারি, বহু বিপর্যয়ে ঠাসা। যেন অজস্র ফাঁদ-কোমল চোরাবালি ঠেলে কবি পা ফেলেন তার মোক্ষ-দরিয়ায়।

এত বিপুল অপশন চারপাশে। সেখান থেকে বাছাই করে নেওয়া বেশ ঝক্কির কাজ। আর সে জায়গাটা বেশ রহস্যঘন। ধোঁয়া ধোঁয়া। বোঝা যায় না। ইনট্যুইশন বা সজ্ঞা দিয়ে কবি আন্দাজ করে নেন, কোন জিনিসটা তার দরকারি। মননের সেই আরম্ভ পর্যায়কে ধরার জন্যই সম্ভবত লোকে কবির শৈশব-কৈশোর তথা জীবনকে জানতে চায়। যদিও রবীন্দ্রনাথ ‘কবিকে পাবে না খুঁজে তার জীবন চরিতে’। কিন্তু এও কি সম্ভব জীবনের বাইরে থেকে লেখা? আর জীবন মানে কেবল খাওয়াপরার ব্যাপারই নয়। মননের বেড়ে ওঠার যে জীবন, যে পরিমণ্ডল তার গ্রহণ-বর্জনের ক্ষমতাকে গড়ে তোলে, বিকশিত করে, নষ্ট করে তার হদিস না নিয়ে কীভাবে বোঝা যাবে কবির কবিতার সাইকেল কোন টায়ারে ঘোরে? নিছক ‘নাজেল’ হওয়া টাইপ ভাবনা ছাড়া এই সংযোগ খুবই সাধারণ ঘটনাই। যে কারণে কবিতা আসমানি ঘটনা নয়, সে কারণে কবির সমকালের সংস্কৃতি ও চিন্তার কোনো না কোনো ধারার মাঝে কবিকে খুঁজে পেতে চাওয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে কবিরা কি নির্বাচিত জীবন যাপন করেন বা করবেন? আমার ধারণা, পুরা ব্যাপারটা এমন নিখুঁত ব্যাকরণসম্মত বা মেকানিক্যাল নয়; বরং কবি সমাজের দশটা মানুষের মতোই খাবেন-পরবেন-ঘুমাবেন৷ কিন্তু সেই সহজাত দশার ভিতর তার মধ্যে কাজ করতে থাকবে এক অন্তর্লীন সংগীত বা সুর। তার রাগিণী তিনি বইয়ে দেবেন নিজের সমগ্র সত্তায়। আর ভাবানুবাদ করতে থাকবেন একটা ‘নির্বাচিত’ ভঙ্গির ভাষায়।