নিরাভরণ কবিতার কণ্ঠস্বর আবুল হোসেন
কবিতাকে নাকি নিরাভরণ হতে হয়। সে আবার কেমন বিষয়? যেটা চল্লিশের উজ্জ্বলতম কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় পারেননি, পারেননি সুকান্তও। বলা যেতে পারে, তাঁরা সে পথে হাঁটেননি। হেঁটেছেন একজনই—কবি আবুল হোসেন। তাই তো এই দুজনের চেয়ে উনি আলাদা এবং একক। কিন্তু তিনি প্রাণিত ছিলেন কবি সমর সেন দ্বারা। তিনি কবিতাকে নিতে চেয়েছেন সাধারণ মানুষের কাছে, করেছেন তাদের বোধগম্য। একই সঙ্গে নির্মোহতা, পরিমিতিবোধ, বিদ্রূপ, প্রেম ও দার্শনিকতার সম্মিলন তাঁকে সমসাময়িক অনেক কবির থেকে আলাদা করে দেয়। এই আলাদা করে দেওয়াটা সচেতনভাবেই। অবচেতনে নয়। আধুনিকতার পাশাপাশি সমসাময়িক কবিদের চেয়ে তিনি এগিয়ে ছিলেন তাঁর কাব্য এবং রুচিতে।
প্রথম পাঠে আবুল হোসেনের সকল কবিতাকেই মনে হতে পারে সাধারণ মুখচলতি গদ্য। কিন্তু নিবিড় ও একনিষ্ঠ পাঠে ধরা পড়ে যে ওই গদ্যভাষ আর ওই সংলাপভাষণের ভেতরেই আমরা শুনে উঠছি এক মৌলিক কবিতা-কণ্ঠ। সাতচল্লিশের পর সীমান্তের এপারে তখন কেবল তিনজনকে এ জমিতে প্রতিনিয়ত পাওয়া যাচ্ছিল—ফররুখ আহমদ, আহসান হাবীব ও আবুল হোসেন। এঁদের মধ্যে আবুল হোসেনই—আমার মতে—বাংলাদেশের কবিতায় প্রথম আধুনিক।
সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো রবীন্দ্র-নজরুল-জীবনানন্দ দাশের সান্নিধ্য তিনি পেয়েছেন। জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ কাব্যের অন্যতম সমালোচক ছিলেন তিনি। সাহিত্যে তাঁর পরিশীলনের উৎসাহ পেয়েছিলেন আবু সায়ীদ আইয়ুবের কাছে। কারণ, পরিশীলন আধুনিকতা অর্জনের অন্যতম উপায়। তাই তিনিই আধুনিক কবি আমাদের। এই কারণে তাঁর কবিতায় বারে বারে পরিলক্ষিত হয়েছে বাকসংযম। উচ্ছ্বাস, আবেগ, কল্পনা কিংবা বর্ণালি—চিত্রকল্পের নিরাভরণ প্রকাশ। অর্থাৎ কবিতার আবেগহীন গদ্যময়তা কিংবা কবিতাকে নিরাভরণ করে দেওয়াতেই ছিল তাঁর বিশিষ্টতা। বলা যায়, খুব সাবলীলভাবে কবিতাকে কীভাবে আবেগ নয়, অভিজ্ঞতা দিয়ে নির্মাণ করতে হয়, তা কবি আবুল হোসেন রপ্ত করেছিলেন।
উল্লেখ্য, কবিতায় কবি কবিতার দাবি ও দরকার সম্পন্ন করতে পারেন, তা নিয়ে সংশয় থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। তবু কবিতাকে প্রতিনিয়ত বদলাতে হয়। প্রতিনিয়ত বদলে যাওয়াটাই তাকে বিশিষ্টতার দিকে, আধুনিকতার দিকে নিয়ে যায়। যদিও কবিতা সৃষ্টির শুরুর দিক থেকে আজ পর্যন্ত যেসব কবিতার জন্ম হয়েছে পৃথিবীব্যাপী, তার অনেক কবিতা ছাপার অক্ষরে টিকে থাকলেও মানুষের মন থেকে তার অনেকখানি মুছে গেছে। এ সময়ে এসেও অনেকেই হারিয়ে গেছেন, যাবেনও; সেটা মোটেই বিস্মিত হওয়ার মতো কিছুই নয়। এ ধারা আসছে অবিরত। একে তো আর অস্বীকার করা যায় না। যেমন অস্বীকার করা যায় না কবি আবুল হোসেনের প্রথম ও সার্থক গদ্য কবিতা ‘বাংলার মেয়ে’।
‘বাংলার মেয়ে’তে কবি আবুল হোসেন প্রথম লিখলেন সমিল গদ্যকবিতা। এখানে তিনি স্বতন্ত্র ও ব্যতিক্রম হয়ে ওঠেন।
আজকের দিনে রান্নাঘরে অন্ধকারের মাঝে
যে মেয়েরা বসে চীনে বাসন মাজে
মশলা পিষতে চোখ ভরে আসে জলে
তাদেরো অন্ধ জীবনের তলে
উঁকিঝুঁকি মারে রাজকুমার।
[বাংলার মেয়ে: নববসন্ত]
প্রথম সমিল ও সার্থক গদ্য কবিতা এ জন্য বলেছি যে, গদ্যকবিতা এর আগেও লেখা হয়েছে। কিন্তু সার্থকতার বিচারে কবিতার নিহিত অর্থের বিচার, ছন্দের বিচারে কিংবা মাত্রার বিচারে এটিই প্রথম সার্থক সমিল গদ্যকবিতা। ফলে তাঁর কবিতা স্বল্পভাষ্য এবং আবেগের সংযমের কথা মনে করিয়ে দেয়। যদিও এ ধরনের কবিতা লেখার জন্য তাঁকে কবি এজরা পাউন্ডের সাথে তুলনা করা হয়। অনেক সময় তাঁর কবিতার ভাব কিছুটা কবি এলিয়টের কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়। এ-ও বলা যায়, তিনি তাঁর সমসাময়িক সার্থক গদ্যকবি সমর সেনকে দেখে ও পাঠে রপ্ত করেছিলেন। এর মূল কারণ নিশ্চয় গদ্যগন্ধী শব্দের ভেতর কবিতার লাবণ্যকে ছড়িয়ে দেওয়া এবং প্রকৃত গদ্য ছন্দকে অনুসরণের মধ্য দিয়ে সমর সেন বাংলা কবিতার ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। থাকবেনও। এ কথা অনস্বীকার্য, তিরিশের প্রবল শক্তিমান পাঁচ মহৎ কবির পর বাংলা কবিতার যে বাঁকবদল এবং আবহমানতার সৃজনকর্ম সৃষ্টি হয়েছিল, সেখানে যেন নিঃসঙ্গ দ্বীপের মতো অবস্থান সমর সেনের। সে ক্ষেত্রে তাঁর অনুসারী কিংবা একই ঘরানার কেউ গড়ে না উঠলেও ইঙ্গিত ও বলার ধরনে আবুল হোসেন তাঁরই পথ ধরে হাঁটতে চেয়েছেন। কিন্তু সেই জার্নিটা ছিল মৌলিকতা অর্জনকারী তাৎপর্যপূর্ণ কণ্ঠস্বর। পথও বলা বলা যেতে পারে।
সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো রবীন্দ্র-নজরুল-জীবনানন্দ দাশের সান্নিধ্য তিনি পেয়েছেন। জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ কাব্যের অন্যতম সমালোচক ছিলেন তিনি। সাহিত্যে তাঁর পরিশীলনের উৎসাহ পেয়েছিলেন আবু সায়ীদ আইয়ুবের কাছে। কারণ, পরিশীলন আধুনিকতা অর্জনের অন্যতম উপায়। তাই তিনিই আধুনিক কবি আমাদের।
আমার বারবার মনে হয়েছে, আবুল হোসেনের মন ও মনন যেন অভিন্ন কবিসত্তা থেকে উৎসারিত। আবুল হোসেন গদ্যের ভেতর কাব্যসঞ্চারে যেমনি অবিচল ছিলেন, তেমনি পদ্যকেও আপন মহিমায় বুকে টেনে নিয়েছিলেন। তাঁর কবিতায় নানান বিষয়ের পাশাপাশি আত্মকেন্দ্রিকতা ও সমাজবাস্তবতার কথাও ধ্বনিত হয়েছে। তাই তাঁর কবিতায় প্রধানত আবেগের স্থানে এসেছে বুদ্ধি ও মননশীলতা। প্রথম জীবনে লেখা রোমান্টিক কবিতা ‘মেহেদীর জন্য’ লিখে জনপ্রিয়তা ও রোমান্টিকতাকে বর্জন করেছিলেন কবিতায়। তাই বারে বারে বলতে পারি, আবুল হোসেন রোমান্টিকতাকে স্বাগত জানিয়েও কবিতার মাটিতে কঠিন নিরেট মাটিতে দুই পা প্রোথিত করে ছিলেন। তিনি বস্তু ও ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা, সামাজিক উপকরণ, নতুনত্ব সন্ধানের মধ্য দিয়ে চলে গেছেন দার্শনিক গভীরতায় কখনো কখনো। আবেগবর্জিত সুরারোপ, মিতবাক ও মেদহীনতা তাঁর কবিতাকে পথ বাতলে দিতে সাহায্য করেছে।
তাঁর প্রথম দিককার কবিতায় রবীন্দ্রপ্রভাব কিছুটা থাকলেও মাত্র আঠারো বছর বয়সে কবিতার বই বের করার সাহসের পাশাপাশি, রবীন্দ্রনাথ এবং বিখ্যাত চিত্রশিল্পী রামকিঙ্কর বেইসকে পাওয়া বাঙালি মুসলিম কবির জন্য ছিল অতি দুর্লভ এবং আনন্দের বিষয়ও। প্রথম দিকের কবিতায় উচ্ছ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে বিষণ্নতার সৌন্দর্যও আবিষ্কার করা যাবে। সেখানে সত্য এবং নতুনত্বের সৌন্দর্য বর্তমান। সেই বর্তমানতার দিকটি হচ্ছে সত্য প্রকাশের জন্য, বিস্ময় প্রকাশের জন্য। ফলে যে শব্দের কারুকাজ তিনি করেছেন, তাতে নাগরিক জীবনের আধুনিক মানুষের প্রকাশভঙ্গি প্রকাশিত হতে থাকে। সেই শব্দ যেন প্রতীক। আস্ত এক পরিস্থিতির নবায়ন। অন্ধকার, স্তব্ধতা, উচ্ছ্বাস, নিঃসঙ্গতা, হাহাকার, বিস্ময়, গন্ধ ও রাত্রির ছবি আঁকতে আঁকতে জীবনেরই বিমূর্ত ইশারাগুলো মেলে ধরার চেষ্টা করেছেন কবি প্রতিনিয়ত।
এই প্রতিনিয়ত বয়ে চলাকে কবি আয়ত্ত করেছেন নিজস্ব ভাবনা ও ভাষাশৈলীর মাধ্যমে। তাই চল্লিশের কবিতায় আবুল হোসেন তুমুল জনপ্রিয় কবিসত্তা না হলেও আলাদা হয়ে যান অন্য সকল কবির তুলনায়।
আবুল হোসেন জন্মশতবর্ষে পড়লেন এ বছর [১৯২২—২০২২], এই সময়ে এসে তাঁর সাহিত্য আবার আরও বেশি করে পঠিত হবে। মানে তাঁর চলে যাওয়া মানে যাওয়া নয়, যেন প্রস্থান। সেই কথাই বারে বারে উত্থিত হচ্ছে মনের কোণে। জন্মশতবর্ষের প্রাক্কালে স্মরণ করতে গিয়েই কি তাঁর কবিতা পড়া হচ্ছে? আগে কি পঠিত হতো না?—এমন প্রশ্ন আসতেই পারে অনায়াসে। নিশ্চয় পঠিত হয়েছে তাঁর কবিতা। এখনো হচ্ছে, হয়তো আরও অনেক দিন পঠিত হবে। কিন্তু এটা বলা অমূলক নয়, কবিতাকে মুখের ভাষার কাছাকাছি করতে চাইলেও, গণমানুষের কাছাকাছি করতে চেয়েও কবি আবুল হোসেন সেটা সম্ভব করে তুলতে পারেননি, যেটা সেই সময়ে তাঁর অগ্রজ কবিমানস কাজী নজরুল ইসলাম পেরেছিলেন। কিন্তু নাগরিক কবি বলে আবুল হোসেনকে দাগিয়ে দিলে চলবে না। সমাজ ও ইতিহাস সচেতন এই কবির কাব্যভাষের রুচি ও পরিমিতিবোধ তাঁকে সৃজনের ক্ষমতার কাছাকাছি সচল রেখেছেন জীবনভর। বাঙালি কবির চিরাচরিত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ রুচি নিয়ে হেঁটেছেন তিনি। জাগ্রত রেখেছেন কলম। আবুল হোসেন যখন লিখেছিলেন তখন পাঠক, বলা ভালো কবিসমাজ তাঁকে সমীহ সাগ্রহে বরণ করে নেন। যদিও একটা উপলক্ষ কবির জন্য, তাঁর সৃষ্টির জন্য উৎসব শুরু করে, তবু পাঠ বা না পাঠের ভার পাঠক ও সাহিত্যবোদ্ধাদের ওপর বর্তায়।
কবি আবুল হোসেন সমর সেনকে আদর্শ মনে করতেন। তিনি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমি কবি সমর সেনকে খুব পছন্দ করতাম। সমর সেনের কবিতা থেকেই আমি আমার পথ খুঁজে পেয়েছিলাম। তিনি প্রকৃত গদ্যকবিতার পথিকৃৎ। রবীন্দ্রনাথও গদ্যকবিতা লিখেছিলেন, কিন্তু তা কাহিনিনির্ভর। সমর সেন সাম্যবাদী হলেও প্রকৃত রোমান্টিক গদ্যকবিতা লিখেছিলেন। আমি সমর সেনের কাছ থেকে এটুকু নিলাম যে, কবিতাকে গদ্যের কাছাকাছি নিয়ে আসতে হবে। আমিও চেয়েছিলাম কবিতার ভাষা মুখের ভাষার দিকে যাবে।’
কবি আবুল হোসেন সমর সেনকে আদর্শ মনে করতেন। তিনি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমি কবি সমর সেনকে খুব পছন্দ করতাম। সমর সেনের কবিতা থেকেই আমি আমার পথ খুঁজে পেয়েছিলাম। তিনি প্রকৃত গদ্যকবিতার পথিকৃৎ। রবীন্দ্রনাথও গদ্যকবিতা লিখেছিলেন, কিন্তু তা কাহিনিনির্ভর। সমর সেন সাম্যবাদী হলেও প্রকৃত রোমান্টিক গদ্যকবিতা লিখেছিলেন। আমি সমর সেনের কাছ থেকে এটুকু নিলাম যে, কবিতাকে গদ্যের কাছাকাছি নিয়ে আসতে হবে। আমিও চেয়েছিলাম কবিতার ভাষা মুখের ভাষার দিকে যাবে।’
কবিতার কলম যখন আবুল হোসেন সীমিত সময়ের জন্য তুলে নেন, তখনকার সময়ে ফিরে তাকালে দেখব, কবিতাকাশে রবীন্দ্রনাথের বিপুল ঐশ্বর্যের মুখোমুখি হয়েও পাঁচ সর্বাধুনিক কবির পদরেখা অঙ্কিত হয়ে ছিল। সেই সময়ে এসে ‘নববসন্ত’ মাত্র আবুল হোসেনের ১৮ বছর বয়সের কাব্যগ্রন্থ ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। তা তখনকার বাঙালি কবিতার সমাজে হইচই ফেলে দিলেন। তাঁর চল্লিশের দশকের কবিতাভাষ আধুনিক কবিতায় একধরনের অভিনবত্ব নিয়ে এসেছিল। তবে কবিতার যে মিষ্টিভাষ, সেই ভাষাকে বিদায় করতে গিয়ে রোমান্টিকতাকেও পুরোপুরি বিসর্জন দেননি।
গদ্যের যে দোলা থাকে, সেটা সমর সেনের পরে আবুল হোসেন দেখিয়েছেন। তাই বলতে চাইছি, মাপা বিশুদ্ধ ছন্দের প্রতিষ্ঠিত প্রাঙ্গণে গদ্যছন্দের যে মুক্তির স্বাদ আমরা বাংলাদেশের কবিতায় প্রথম আস্বাদন করি, তাঁর নাম আবুল হোসেন। আধুনিক কবিতায় নতুন স্বাদ এনে দেন তিনি। বাংলা কবিতায় তাই তাঁর স্মরণ অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
একদিকে এজরা পাউন্ডের মতন ছোট ছোট কবিতা, অন্যদিকে সমর সেনকে অনুধাবন—এই দুয়ের ভেতরে আবুল হোসেনকে ব্যতিক্রমভাবে দেখি। স্মরণ ও অনুধাবন করলেও নিজস্ব কণ্ঠ সৃষ্টিতে তাঁকে মোটেও বেগ পেতে হয়নি। যদিও তাঁর প্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ ও ডব্লিউ বি ইয়েটস। আসলে গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে পাঠকের সামনে সম্পূর্ণ বিপরীত ধারায়, অ-রোমান্টিকতাকে বরণ করার মধ্য দিয়ে আবুল হোসেন সমর সেন ও এজরা পাউন্ডের অনুগোত্রীয় কিংবা একই ধারার কবি বলে প্রতীয়মান হন। আবারও বলছি, বারবার বলি, কবিতাকে মানুষের ভাষার অনুবর্তী করে সাধারণ পথের দিকে হেঁটে গেছেন তিনি। মানে শব্দে, ছন্দে, উপমায় তিনি অবিরলভাবে প্রয়োগ করেছেন নিজস্ব সময়ের সমাজবাস্তবতা। এতে তিনি খুঁজে নিয়েছেন আধুনিকতা। ফলে এতে নিজস্ব জগতে প্রবেশের পাশাপাশি কবিতাভাষে আত্মভঙ্গি লালন করেন, লাভও করেন। কবিতা সৃষ্টিতে তিনি নিজেই নিজের প্রেরণা হয়ে ওঠেন।
কবিতাকে নিয়ত কবিতায় রূপ দিতে চেয়েছেন। চেয়েছেন সহজ করে বলতে। যে বলায় থাকবে কবিতা, অভিজ্ঞতা এবং স্মৃতির নির্যাস। সেই নির্যাস ও অভিজ্ঞতার পাঠ নানাভাবে নিয়েছি পাঠে, দেখায় এবং পরামর্শে। বিষয় ও ভাষাবৈচিত্র্যে তিনি ছিলেন তুলনারহিত।
বহুবার বহুভাবে কেবল কবিতার জন্য, বাংলা ভাষার ইতিহাস পাঠের জন্য তাঁর কাছে গিয়েছি। যাওয়ার ফলে নিবিষ্টভাবে তাঁকে দেখেছি, বুঝেছি, হয়েছি ঋণীও। আমাদের অনেক সাহিত্যিক এবং প্রধান অগ্রজেরাও ঋণী তাঁর কাছে। কারণ, তিনি মুখের ভাষা বা গদ্যের সঙ্গে কবিতার বাকভঙ্গিতে কোনো পার্থক্য করতে চাননি।
বাংলা কবিতার সমুদ্রের এক তরঙ্গ তিনি। এখনো আছড়ে পড়ছেন আমাদের কবিতায়, কল্পনায়। অঙ্কিত হচ্ছেন আলোকরেখায়। সেই রেখার নামই কবিতা। মহাকালের কি এমন সাধ্য, তাঁর কবিতা এবং কবিতাকৃতিকে ছেদন করতে পারে!