সুফিয়া কামালের অপ্রকাশিত কবিতা
আপন গৌরবে
পিতাজি, আজি তব চাহে
আলোক ছায়ার তরীতে
তোমার স্পর্শ ভারে,
তরু তৃণলতা পুষ্প
আহ্লাদিত মর্মবাণী
রূপায়িত পরিধেয় আনি,
অন্ধকার গুহা হতে হিরণ্ময় জ্যোতি দীপ্ত প্রাণ
ফুল ফল ফসলের মৃত্তিকার ঘ্রাণ,
যাবে না বিলুপ্ত হয়ে যাহা কিছু প্রিয়
অতীতের সব চিত্র যাহা রমনীয়
কিংবা ক্ষুব্ধ সংগ্রামের সংঘাতের নিদারুণ দাহ
বিভক্ত বিশ্বের জনজীবন প্রবাহ,
ধারণ করেছো যে হৃদে মগ্ন
জানি অনির্বাণ,
তব প্রাণশক্তির ধূপ সুগন্ধ সৌন্দর্য
যত অনিচ্ছেয় ধরি
সুন্দরের সাধনায় জীবনের পাত্রখানি ভরি,
সুরসুধা কণ্ঠেতে কাব্যের অঙ্গনে
তব কি করুণ ছিল নম্র সঙ্গোপনে,
পুষ্পে অজানা থাকে তার ধৃত স্থান
কেমনে মোহিত করে মানব এ প্রাণ
এমনি তোমার দান।
প্রাণের সৌরভে
বিমোহিত করিবে আর আপন গৌরবে
শ্রদ্ধেয় করেছে তোমা
করিয়াছে প্রিয়
বরণীয় শতবর্ষ পূর্তি তব
রবে তুমি চিরস্মরণীয়।
৫ নভেম্বর ১৯৯৩
সম্পাদকীয় নোট
কিংবদন্তী ফটোগ্রাফার, গল্পকার ও লেখক গোলাম কাসেম ড্যাডির শততম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে কবি সুফিয়া কামালের এই কবিতা পাঠ করা হয়েছিল। কবিতাটি আগে কোথাও প্রকাশিত হয়নি। তর্ক বাংলার জন্য কবিতাটি দিয়েছেন গবেষক ও ফটোগ্রাফার সাহাদাত পারভেজ। সাহাদাত পারভেজ জানান, আলোকচিত্রী শফিকুল ইসলাম স্বপন ওই অনুষ্ঠানের ভিডিও চিত্র ধারণ করেন। ভিডিও খেকে কবিতাটি অনুলিখন করেন শান্তা শিরিন ও জাহরা জাহান পার্লিয়া। কবিতাটি হয়তো সমকালীন কাব্য ভাষার অতীত। তবে দুটো কারণে কবিতার গুরুত্ব বিদ্যমান। প্রথমত, এটা ঐতিহাসিক ঘটনা। সমসময়ে বেড়ে ওঠা ভিন্ন মাধ্যমের দুজন শিল্পীর পরস্পরের প্রতি সামাজিক দায়। দ্বিতীয়ত, কবিতাটি কবির সময়ের চিহ্নে জ্বাজল্যমান। কবি সুফিয়া কামাল, গবেষক ও ফটোগ্রাফার সাহাদাত পারভেজ, শফিকুল ইসলাম স্বপন, শান্তা শিরিন ও জাহরা জাহান পার্লিয়ার জন্য আমাদের ভালোবাসা। ২০ জুন কবি সুফিয়া কামালের ১১০তম জন্মদিন। কবির জন্মদিন উপলক্ষে তর্ক বাংলা কবিতাটি প্রকাশ করে সম্মানিত বোধ করছে। কবিতার শিরোনাম তর্ক বাংলার সম্পাদক কর্তৃক প্রদত্ত।