উত্তর আধুনিকতা সমগ্রকে ধরতে চায়
দিলীপ কুমার বসু
কবি, নাট্যকার ও উত্তর আধুনিক চিন্তক দিলীপ কুমার বসু ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে নারায়ণগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দিল্লির ইউনিয়ন অ্যাকাডেমিক স্কুল থেকে বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বিএ এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন। তিনি কৈলাসহরের রামকৃষ্ণ মহাবিদ্যালয়, দিল্লির রাজধানী কলেজ এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমআইএল অ্যান্ড এলএস বিভাগে অধ্যাপনা করেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রাত্রির নাটক [নাটক], ভালোবাসার কবিতা [কবিতা], কঙ্কণমালা [কাব্যোপন্যাস], ভাঙা ছন্দ পঙ্ক্তি পদ [কবিতা], কথানদীর বাঁকে বাঁকে [কাব্যোপন্যাস সংগ্রহ], যাওন-আসন [কবিতা], মুষ্টিভিক্ষা [কবিতা] উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া নাট্যকাল দলের সম্মিলিত প্রকাশনায় অনেক নাটক রচনা করেন। ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে কবি দিলীপ কুমার বসুকে নিয়ে স্মারক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। সে স্মারক গ্রন্থে ‘দার্জিলিং’ নামে একটি উপন্যাস ও পশ্চাদপসরণের সময় সক্রেটিস নামে দীর্ঘ একটি নাটক সংকলিত হয়। ৮ বছর বয়স থেকে তিনি মূলত নাটক ও কবিতার সাথে জড়িত ছিলেন। বিখ্যাত নাট্য পরিচালক রাজিন্দর নাথ পরিচালিত অনেক হিন্দি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। ইংরেজিতে সম্পাদনা করেছেন Rajinder Nath নামে একটি বই, যেটি মূলত Monograph। রাজিন্দর নাথের নাট্যদলের নাম অভিযান, যে দলটি ভারতের প্রাচীনতম টিকে থাকা দল, যারা শুধু হিন্দিতেই নাটক করছে। কবি দিলীপ কুমার বসু ২০১৪ সালে উত্তর আধুনিকতাবিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে চট্টগ্রাম আসেন। একদিন সন্ধ্যায় কবি অনুপম চৌধুরী ও আমি আড্ডা দেওয়ার জন্য রেস্টহাউসে গেলে আমাদের মধ্যে কথোপকথন হয়। সে কথোপকথন মোবাইলে ধারণ করেন কবি অনুপম চৌধুরী। সে কথোপকথনের অংশবিশেষ নিয়ে নিম্নের সাক্ষাৎকার।
—ভূমিকা: শেখর দেব
শেখর দেব: শুনেছি আপনার জন্ম নারায়ণগঞ্জ। শৈশবের কিছুকাল এখানে কাটিয়েছেন। অনেক দিন পর বাংলাদেশে এলেন। অনুভূতিটা বলুন।
দিলীপ কুমার বসু: জন্ম ১৯৪৩-এ অর্থাৎ ১৩৫০-এর দুর্ভিক্ষ। সারা জীবন ঠাট্টা শুনতে বাধ্য হয়েছি। সেই জন্য আমার স্বাস্থ্যের চেহারা এই [হাসি]। সেই বছর বোধ হয় ১২ সেপ্টেম্বর ছিল, ২৬ ভাদ্র। ইনসিডেন্টালি বিভূতিভূষণ-এরও জন্মদিন সেদিন। ৬৪ বছর পরে নারায়ণগঞ্জ এলাম, ইনফ্যাক্ট পদ্মার এ পাড়ে এলাম। আমি ছোটবেলায় যেভাবে বড় হয়েছি, তার দুটো জিনিস বলার অপেক্ষা রাখে, একটা অত্যন্ত অদ্ভুত, সেটা পরে বলছি। দ্বিতীয়টা হলো আমার মাঝে যদি ক্রিয়েটিভ কিছু থেকে থাকে, তাহলে ওই সাড়ে ছয় বছরের বাংলাদেশের প্রকৃতি, আজকে যাকে বাংলাদেশ বলি, যেটা আগে পূর্ব পাকিস্তান বলা হতো, ওখানকার প্রকৃতি এবং আমার ঠাকুরমা। আমার ছোটবেলাটা খুব অদ্ভুত এই অর্থে—আমি তো ঠাকুমার কাছে থাকতাম, বাবা-মার কাছে থাকতাম না, বাবা-মা দিল্লি থাকতেন। ওখানে আমার প্রথম পড়া বই, কীভাবে তা আমি ব্যাখ্যা করতে পারব না। প্রথম আমি যে বই পড়েছি সেটা কোনো বর্ণপরিচয়ের বই নয়, সেটা কৃত্তিবাসি রামায়ণ। ঠাকুরমা পড়ছেন আমি শুনছি, ঠাকুরমা পড়ছেন আমি শুনছি, আমি টেক ওভার [take over] করলাম, আমি পড়ছি ঠাকুরমা পড়ছে, পরে ফুল্লি টেক ওভার [take over] করলাম, আমি পড়ছি ঠাকুরমা শুনছে। কৃত্তিবাসি রামায়ণ, কাশিদাসি মহাভারত, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, চৈতন্য চরিতামৃত—কত লাইন যে পয়ার পড়েছি না! পাশাপাশি গদ্য পড়িনি, তা না। কী বই পড়েছি তা-ও মুখস্থ আছে, কী কী পড়েছি। বলব? পিরামিডের গুপ্তধন আর অ্যারিসিনিয়া ফ্রন্টে বলে দুইটা অ্যাডভেঞ্চারের বই। সাড়ে ছয় বছরের অবধি যাচ্ছি আরকি! পড়ছি নানা রকম গল্পের বই, কাজললতা। একটা সায়েন্সের বই ছিল সেখানে টর্পেডো সম্পর্কে, টর্পেডো ডেস্ট্রয়ার এসব সর্ম্পকে কথা ছিল। তিনিটি দস্যু মোহনের বই। দস্যু মোহন একসময় খুব পপুলার হয়েছিল। নেতা মোহন, নারী ত্রাতা মোহন, রমা-হারা মোহন—এই তিনটা বই পড়েছিলাম। এগুলোও পড়েছি ঠাকুরমার সঙ্গে শেয়ার করে করে। আর সব রকম ব্রত, পাঁচালি—এগুলো ঠাকুরমা সমানে কইতো আমরা শুনতাম। সেই ষষ্ঠী মূর্তি তৈরি, কলার ভেলা কেটে কেটে নৌকা তৈরি। বাড়িতে সমানে কার্তিকপূজা, মনসাপূজা ইত্যাদি। দুর্গাপূজা ছাড়া সব পূজা হতো। সেই সময় বানানো হতো গঙ্গাজলি। এক প্রকার সন্দেশ। এখন কেউ বানায় না। সাহিত্যে সেটা শুধু আমার জানামতে জীবনানন্দে পাবে। ‘গঙ্গাজল নাড়ুগুলো লয়ে দুয়ারে দাঁড়ায়ে রবে কিনা’। ছাঁচে ফেলে বানানো হতো।
শেখর: আপনার স্কুলজীবন কি এখান থেকে শুরু?
দিলীপ: না। আমাকে স্কুলে ভর্তি করাবে করাবে করে করাল না। তখন সাড়ে ছয় বছর বয়স। তার জন্যই আমি অদ্ভুত অদ্ভুত বই পড়তে পেরেছি। তা না হলে নিয়ম বাঁধা হয়ে যেত। পাঁচ বছর বয়সে যখন হাতেখড়ি হলো, তখন আমাকে আদর্শলিপি বলে একটা বই দেওয়া হলো, তার আগে আমার বর্ণপরিচয়ের বই ছিল না। কী করে যে প্রথমে ওখানেই ঢুকে গিয়েছিলাম কে জানে।
শেখর: কোন সালে দিল্লি যান আপনি?
দিলীপ: ওই তো, ১৯৫০।
শেখর: দেশভাগের তিন বছর পর।
দিলীপ: আসলে পঞ্চাশে একটা বড় দাঙ্গা হয়েছিল। এই বাংলাতে হয়েছিল প্রধানত, ওই বাংলায় নয়, তাতে হিন্দুরা মারা গেছে মুসলমানদের হাতে এ রকম একটা ব্যাপার। অন্য সময়ে দুই পক্ষ দুই পক্ষকে মেরেছে। মুসলমানরা হিন্দুদের মেরেছে, হিন্দুরা মুসলমানদের মেরেছে।
শেখর: সাম্প্রদায়িক যে দাঙ্গার কথা আমরা শুনেছি।
দিলীপ: সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, কিন্তু পাঞ্জাবের যে রকম পার্টিশানের সময় ট্রেন লোডস, পুরো ট্রেন আসছে পাকিস্তান থেকে, প্রত্যেকটা লোক মৃত। পুরো ট্রেন যাচ্ছে ইন্ডিয়া থেকে, প্রত্যেকটা লোক মৃত। এভাবে মুসলমান, শিখ এবং হিন্দু নিধন হয়েছে। বাংলায় লক্ষ লক্ষ লোক উদ্বাস্তু হয়েছে কিন্তু এ রকম খুনাখুনি হয়নি। তুলনায় কিচ্ছুই না, কিছুই না এক লক্ষের অ্যাগেইনস্টে দেড় শ, এ রকম। কিন্তু পঞ্চাশে তিন দিন চাঁদপুরে পর পর তিন শ করে তিন দিনে ধরো এক হাজার লোক মারা গিয়েছিল। তিনটা দিনের একটা দিনে আমি ইন্ডিয়া চলে যাই।
শেখর: দিল্লি যান।
দিলীপ: না, কলকাতায় যাই। কলকাতা এসে বাবা ১৫ দিনের মধ্যে দিল্লি নিয়ে গেলেন।
শেখর: ১৯৫২ সালে এখানে ভাষা আন্দোলন। তখন আপনার বয়স আট বছর। সে সময় এই আন্দোলন নিয়ে কিছু জেনেছিলেন?
দিলীপ: জানতামই না। তখন আমি দিল্লিতে। দিল্লিতে বসে এসব জানার কোনো উপায় ছিল না। পরবর্তীকালে জেনেছি। ন্যাশনালিজম নামে একটা বই আছে। সেখানে মুনীর চৌধুরীর কবর নাটক নিয়ে লেখাটা আমার। সেটা অনেক পরের কথা।
শেখর: দিল্লিতে আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে বলুন।
দিলীপ: দিল্লিতে স্কুলে একদম পড়াশোনা করতাম না। অঙ্কের ক্লাসে অঙ্ক করতাম আর বাকি সব ক্লাসে ডেস্কের ভেতর লুকিয়ে গল্পের বই পড়তাম। সব ক্লাসে। এখন আমায় দেখে বোঝা যাবে না ছোটবেলায় বুদ্ধি ছিল। তাই কোয়াটারলি, হাফ ইয়ারলি ও অ্যানুয়াল পরীক্ষায় আগের রাতে পড়ে ফার্স্ট-টাস্ট হওয়া যেত। কোনো প্রবলেম ছিল না।
শেখর: স্কুলের নাম?
দিলীপ: ইউনিয়ন একাডেমি। তারপর কলেজে গেলাম। আমার প্রথম প্রেম গণিতের সঙ্গে। গণিতে অনার্স নিই। ভাবলাম কম পড়ে ভালো রেজাল্ট করা যাবে, অনেক অনেক নাম্বার পাওয়া যাবে। ফার্স্ট ইয়ারে পূর্ব জ্ঞান ছিল বলে পাস করে গেলাম। সেকন্ড ইয়ারে ফেল করে বসলাম। এর পরও শিক্ষা হলো না। পরের বছর আবার পড়লাম না। আবার ফেল করলাম। পর পর দুবার ফেল। এর মধ্যে সাবসিডিয়ারি বাংলা ও অর্থনীতি পড়েছিলাম। এসবে ভালো নাম্বার পেয়ে পাস করেছি। আমাদের বাংলা পড়াতেন একজন খুব বিখ্যাত একজন রবীন্দ্র নর্তকী, অপরূপ সুন্দরী মঞ্জুশ্রী চাকি সরকার। শান্তিনিকেতন থেকে বাংলায় এমএ করা। মারা গেছেন। ওনার বাংলার ক্লাসগুলো খুব এনজয় করেছি। রামজস কলেজে পড়াতেন, যে কলেজে জীবনানন্দ একদা তিন মাস পড়িয়েছিলেন। তখন দিল্লি এত বড় ছিল না। বাঙালি কমিউনিটিও বেশি বড় ছিল না। আমার ফেলের খবর চারপাশে ছড়িয়ে পড়ল। এত জুনিয়রদের সাথে পড়া যায় নাকি? তাই কলকাতা চলে গেলাম। দিল্লিতে ১৯৫৯-এ আমি হায়ার সেকেন্ডারি পাস করি। ১৯৬১ তে রবীন্দ্র শতবর্ষ। দিল্লিতে তখন থিয়েটারের রমরমা অবস্থা। পুজোর সময় পুজো প্রাঙ্গণের থিয়েটারগুলোতে সিট পাওয়া মুশকিল ছিল। নিউ দিল্লি কালীবাড়িতে আমাদের মতো বাচ্চাদের নাটক করতে দিল। সেটা সাংঘাতিক ব্যাপার। দিল্লির তখনকার লোকেরা বিষয়টি জানে। আমাদের একটা দিন দিল, রিহার্সাল দেখে বলল তোমরা করতে পারো। ‘রক্তকরবী’ করলাম। উচ্চ প্রশংসিত হলাম। সারা রাত আনন্দ করলাম। পরের দিন পরীক্ষা। অঙ্ক পরীক্ষা। তার ওপর প্রিপারেশন নেই। পরীক্ষার হলেই ঘুমিয়ে পড়লাম। স্যার ধমক দিয়ে জাগিয়ে দিলেন। স্যার যতক্ষণ সামনে ছিল মনোযোগ দিয়ে লেখার ভান করলাম। যাহোক, কলকাতায় গিয়ে স্কটিশ চার্চ-এ গিয়ে ভর্তি হই। তখন কলকাতা আমি কিছু চিনি না। স্কটিশ-এর নাম শুনেছি। বিবেকানন্দ পড়তেন, সুভাস চন্দ্র বসু পড়তেন। সেখান থেকে ইংরেজিতে বিএ পাস করেছি। যাদবপুর গেলাম এমএ পড়তে। সেখানে ফ্যাকাল্টি খুব ভালো ছিল। সুবোধ সেন গুপ্ত আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ মাস্টার মশাই। উনি সেখানে পড়াতেন।
শেখর: কখন আপনার মাথায় লেখালেখি বা কবিতার বিষয় বা বিশ্ব-সাহিত্যের বিষয়গুলো এলো? কখন প্রথম ভাবলেন, আমি কবিতা লিখতে পারি।
দিলীপ: ১৯৫০-এ দিল্লি এলাম, ৫১-তে স্কুলে ভর্তি হলাম, ৫২-এর সামারে কলকাতার বাড়ি এলাম একগাদা কচি বাচ্চা মিলে। নারায়ণগঞ্জের বাড়ি বিক্রি করে এসে আমাদের কলকাতার বাড়ি হয়েছে। সে বাড়িতে দুপুর বেলা আমার কাকাতো ভাইরা মিলে ক্যাঁচ ক্যাঁচ করছিলাম। তাদেরকে শান্ত রাখার জন্যই হয়তো, বা যেকোনো উদ্দেশ্যেই হোক আমার ছোট কাকা বললেন, সবাইকে কবিতা লিখতে হবে। কেউ লেখেনি আমি ছাড়া।
শেখর: তখন কোন ক্লাসে আপনি?
দিলীপ: ক্লাস ফোর পাস করেছি। শুধু আমিই কবিতা লিখলাম। সেখানে বাঘ বা সিংহের বিষয় ছিল, ছন্দটা ঠিক ছিল। সেটা প্রশংসিত হলো। প্রশংসা আমার মধ্যে এমন উত্তেজনা তৈরি করল, দুদিনের মধ্যে আমি আরেকটা কবিতা লিখে ফেললাম। এটা প্রশংসিত না হয়ে উপায় ছিল না; কারণ, কবিতটা আদতে রবীন্দ্রনাথের লেখা। চুরি করলাম। স্বাভাবিকভাবেই সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সবাই গর্বিত হয়ে কাকাকে দেখাতে নিয়ে গেল কবিতা। কাকার এক বন্ধু পড়ে বলল, কবিতাটি আমি কোথায় পড়ছি! ভগবানকে ডেকে বলছি—হে ভগবান রক্ষা করো। ইতিমধ্যে স্কুলে হোমওয়ার্কের লিস্টটা হারিয়ে ফেলেছি। তখন তো এখনকার মতো ফোনের সময় ছিল না। দিল্লির স্কুল। বাবা তো ঠ্যাঙাবে। রোজ তো অঙ্ক আর ট্রান্সলেশন করতে হয়। তখন মনে মনে ভাবছি আমার এমন একটা অসুখ হোক, যাতে বাবা এ নিয়ে বকতে না পারে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ছোটবেলায় আমি যা ভাবতাম হয়ে যেতো। এমন অসুখ হলো, বিছানা থেকেই উঠতে পারলাম না বহুদিন। নভেম্বরের এক-দুই তারিখে সম্ভবত পুজোর নবমী ছিল, সেদিন বিছানা থেকে উঠে বাইরে গেলাম। সেখানে আমার শরীরের নানা ক্ষতি হয়ে গেল। যাক গে সেসব কথা।
শেখর: আপনি তো অধ্যাপনা করেন। এই পেশায় কীভাবে এলেন?
দিলীপ: পেশা হিসেবে মাস্টারি ছাড়া অন্য কিছু ভাবিনি। আমাদের সময়ের লোকেরা কত স্বপ্ন দেখাত, আইএএস-ফাইএএস পরীক্ষা দেবে, আমার এ ধরনের কোনো ইচ্ছেই ছিল না। একবার শুধু ডালহৌসি স্কয়ারে বিহারীলালের মিষ্টির দোকানে কী কাজ করতে গিয়ে লুচি আর ছোলার ডাল খেয়ে ভেবেছিলাম, ডালহৌসি স্কয়ারের কেরানি হবো। এ ছাড়া আর কোনো ইচ্ছে ছিল না।
শেখর: এবার একটু জানি, দিদিকে [নন্দিতা বসু] কীভাবে পেলেন? আপনাদের প্রথম পরিচয়টা সম্পর্কে জানতে চাই।
দিলীপ: দিদি আমার ছাত্রী। ৬৪-তে এমএ পাস করার কথা, তিন বছর ল্যাপস হবার ফলে ৬৭-তে এমএ পাস করে আমার চাকরি হয়। সেপ্টেম্বর রেজাল্ট বের হলো, নভেম্বর আমাকে সেধে চাকরি দেওয়া হলো। সেটা মূলত সিরিজ অব অ্যাকসিডেন্ট। এক বন্ধু বলল, ‘দাদা, চাকরি করবি? কলেজে পড়াতে হবে, ত্রিপুরায় যেতে হবে কিন্তু’। রাজি হয়ে গেলাম। ডিসেম্বরে চাকরিটা পেয়ে গেলাম। ৬৮-এর জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে চাকরিতে জয়েন করতে হবে। সেখানে গেলাম। ত্রিপুরাতে কৈলাসহর নামে একটা ছোট্ট শহর আছে। বাংলাদেশের বর্ডারে যেখানে সিলেটিরা বেশি আসে। যেমন আগরতলায় কুমিল্লার লোকেরা বেশি এসেছে। ত্রিপুরায় ৭০% বাঙালি। ত্রিপুরীরাই কম। যাহোক, সেখানে নন্দিতা পড়ত। রামকৃষ্ণ মহাবিদ্যালয়ে। সেখানে আমি জয়েন করার মাসখানেকের মধ্যে তিনজন শিক্ষকের চাকরি গেল। বিরাট এক ছাত্র আন্দোলন হলো। প্রিন্সিপালকে কলেছে ঢুকতেই দেওয়া হলো না। ভদ্রলোক কলেজে আর ঢুকতেই পারলেন না। কৈলাসহরের সর্বজনীন শ্রদ্ধেয় ছিলেন। কলেজের গভর্নিং বডি পড়ে গেল। জানুয়ারিতে আন্দোলন শুরু হলো। এপ্রিলে কলেজ ছুটি হয়ে গেল, আমি কলকাতা চলে এলাম। আমাদের মধ্যে স্রেফ ছাত্রী-শিক্ষক হিসেবে চিঠির আদান-প্রদান হয়। জানতে পারলাম, ওর কাছে আমার একটা বই রয়ে গেছে। বইটা ফেরত দিতে হবে। ওর বোনের কাছ থেকে বইটি নিতে হবে; কারণ, ও পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। ওদের অবস্থা ভালো ছিল না। ওরা অনেক ভাই-বোন। ৬২ সালে সিলেট থেকে চলে এসেছিল ওদের ফ্যামিলি।
শেখর: সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব?
দিলীপ: হ্যাঁ, নিতান্ত মায়া করে আরকি [হেসে]। বিয়ে ঠিক হলো। যেহেতু ওরা ব্রাহ্মণ। নন্দিতা ভট্টাচার্য। সেই সময় দারুণ কনজারভেটিভ। ব্রাহ্মণ সমাজের নেতা মহা ক্ষেপা। তাঁর নাতি আবার আমাদের কলেজে পড়ায়। পরে এই কলেজের প্রিন্সিপাল হয়েছিল। তাঁর চাকরি গিয়েছিল। সে তাঁর দাদাকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিল, দিলীপের যেন কিছু না হয়। এভাবে নানা নাটকীয়তায় বিয়েটা তিনবার হবার কথা হয়েও ভেঙে গেল। ওর মা-বাবা রাজি থাকলেও বাবা তাঁর দাদার মুখের ওপর বিয়ের কথা বলার সাহস পাননি। শেষ পর্যন্ত নন্দিতা চলে এলো আমার কাছে। নন্দিতাদের দূরসম্পর্কিত এক প্রবীণ পণ্ডিত মানুষ আমাকে না দেখেও বিয়ের ফেভারে ছিলেন। তিনি জানেন আমি অধ্যাপক। তিনি সায় দিয়েছিলেন বলে ওর আত্মীয়স্বজন আর তেমন কিছু করেননি।
এই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবার, রবীন্দ্রনাথের পরিবার আরও অনেকে ব্যবসা করতে গিয়ে সব জায়গায় ব্যর্থ, সাহেবদের সঙ্গে টক্কর দিতে গিয়ে। শুধু এক জামসেদজি টাটা লড়ে টাটা স্টিল বানিয়েছিল আর কিছু গুজরাটি পার্শি লোকেরা বম্বের গুজরাট বেল্টে কয়েকটা টেক্সটাইল করেছিল। আর কোথাও ভারতীয় কোনো শিল্পপতি আর তৈরি হয়নি। কারণ, ইংরেজরা নানা রকম আইন-ফাইন করে এসব করেই রেখেছিল, যাতে ইন্ডাস্ট্রি পুরো ওদের হাতে থাকে। ইন্ডাস্ট্রি ওদের হাতে থাকা মানে আমাদের সামন্ততান্ত্রিক সমাজ বজায় থাকা
শেখর: বিয়ে কখন হলো?
দিলীপ: বিয়ে হলো একাত্তর সালে। সে একলা চলে এলো কলকাতায় সবকিছু ছেড়ে। যেদিন যে মুহূর্তে সে প্লেন থেকে নামছে, সেদিন সে মুহূর্তে আমার ঠাকুরদা মারা গেছে বলে আমি শ্মশানের খাট খুঁজছি। আমার কাজিন ভাইরা ওকে নিয়ে আসতে গেল। আমার এক সহোদর ভাই। সে তখন আমেরিকায় আর আমি এই কাজে ব্যস্ত। আমি ভাবছিলাম, আবার না বিয়ে ভাঙে। কারণ, ঠাকুরদার মৃত্যু বলে কথা। আমার জ্যাঠা মশাই বললেন, করে ফেল, আর বিয়ে ভাঙিস না। বিয়েটা হয়ে গেল।
শেখর: দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে কখন জয়েন করলেন?
দিলীপ: ’৬৯-এ যখন বিয়েটা প্রথম ভেঙে গিয়েছিল। এমন একটা সময়ে দিল্লিতে একটা কলেজে বিজ্ঞাপন দেখে আমার ভাই আমার সই নকল করে আমার নামে অ্যাপ্লিকেশন করে দিল। কারণ, বাই-চান্স দিল্লিতে চাকরি হয়ে গেলে পড়াশোনার সুবিধা হবে। চাকরিটা হয়ে গেল। ত্রিপুরায় তখনো আন্দোলন চলছে। আমি কোনোরকমে রেজিগনেশন লেটার পাঠিয়ে দিই। তখন থেকেই ওখানে ইংরেজি পড়াচ্ছি।
শেখর: আপনার প্রকাশিত বই সম্পর্কে জানতে চাইব। কবিতা, প্রবন্ধ বা নাটক অর্থাৎ সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে বলুন।
দিলীপ: আমার গ্রন্থাকারে প্রকাশিত কোনো প্রবন্ধের বই নেই। নাটকের পাতলা একটা বই আছে রাত্রির নাটক নামে। আমার অনারে একটা বই বেরিয়েছিল দিলীপ কুমার বসুর নির্বাচিত: ও প্রসঙ্গ নামে। সেখানে আমার ওপর কিছু ভালো ভালো কথা কিছু লোক লিখেছিল। সেখানে আমার একটা নাটক, কয়েকটা প্রবন্ধ ও কবিতা ছাপা হয়। একটা কবিতার বই আছে ভালোবাসার কবিতা নামে। সেটা আমার প্রথম বই। গণেশ পাইনের করা প্রচ্ছদ। দার্জিলিং বলে আমার একমাত্র সমাপ্ত উপন্যাস আছে। সব কটি মিলিয়ে স্মারকগ্রন্থটি এক মলাটে প্রকাশিত হয়েছে মূলত।
শেখর: কখন সাহিত্যে উত্তর আধুনিক বিষয়টা নিয়ে চিন্তা শুরু করলেন।
দিলীপ: উত্তর আধুনিকতা নিয়ে কিছু কনফিউশন আছে। উত্তর আধুনিকতা নিয়ে কথা বলতে অঞ্জন [অঞ্জন সেন] বারবার এখানে আসে। আসলে বিষয়টা অমিতাভ গুপ্তর। অর্থাৎ কনসেপ্টটা অমিতাভ গুপ্তের চিন্তা। অঞ্জন কিছুদিন আগেও একটা ইন্টারভিউতে সেটা বলেছে। অবশ্য অঞ্জন প্রথম দিন থেকে সেটার সঙ্গে আছে। অঞ্জন উত্তর আধুনিক তত্ত্ব নিয়ে পরিমাণে কারও থেকে কম লেখেনি। অলক রঞ্জন দাশগুপ্তের সাথে অমিতাভের একটি তিক্ত বাক্যালাপ হয়েছিল এ বিষয়ে ছাপার অক্ষরে। কারণ, অলক রঞ্জন লিখেছিলেন, অমিতাভ কবি থেকে পুরোহিত হতে যাচ্ছেন। বীরেণ বাবু ও অঞ্জন অ্যাটাক করেছে সেখানে অলক রঞ্জনকে।
শেখর: আপনি কখন এ বিষয়টা নিয়ে ভাবতে লাগলেন।
দিলীপ: আমি অমিতাভের সারা জীবনের বন্ধু। অঞ্জনেরও বন্ধু। অমিতাভ আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ বন্ধু বলা যেতে পারে। আমি জানতাম, ওর মাথায় এসব কীভাবে কাজ করছে। আমাকে বলা হলো, এ বিষয়ে তুমি একটা বক্তৃতা দাও। একটা অনুষ্ঠান হলো, বক্তৃতা দিলাম। দুজন বক্তা আসেননি। আমি সেখানে অনেক সময় পেয়ে ভালো বক্তা হয়ে গেলাম। দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, দিলীপদা বলছেন পোস্টমডার্নিস্ট কালচার হচ্ছে কনজিউমার ক্যাপিটালিস্ট কালচার। অমিতাভ তার থেকে অন্য কথা বলছেন তাহলে।
শেখর: বাংলাদেশে কি তখন এই বিষয়টা চর্চা হচ্ছিল। আপনারা যখন এই বিষয়টা নিয়ে ভাবছেন, কোন সালের কথা?
দিলীপ: না, তখন এখানে সেটা চর্চা হচ্ছিল না। ৮৯-এ মূলত এসব নিয়ে ভাবছিলাম। অমিতাভ গুপ্তের সরমা পরমা বের হলো।
শেখর: আপনি উত্তর আধুনিকতা নিয়ে প্রথম প্রবন্ধ কখন লিখলেন?
দিলীপ: না, আমি বলেছি বেশি, লিখেছি কম। তপোধীর বরঞ্চ অনেক লিখেছে। আমি লিখেছি কম। অন্তত ৪/৫ বার কলকাতা গেছি এ বিষয়ে লেকচার দিতে। অমিতাভ ও অঞ্জনের জন্য এসব করা। আমি মূলত কোনো ট্যাগিংয়ের বিপক্ষে। এই উত্তর আধুনিক, দক্ষিণ আধুনিক। নব্বইয়ের মাঝামাঝিতে তপোধীরের লেখার সাথে পরিচয়। তারও পরে এজাজের লেখার সাথে পরিচয় হয়। এজাজ আমাকে লেখার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি লিখেছিল। তখন কম্পিউটার-টম্পিউটারের লাইন ছিল না। আমি বাংলাদেশে কীভাবে চিঠি পাঠাতে হয়, সেটাই সুরাহ করতে পারলাম না, কত পয়সার স্ট্যাম্প দিতে হয়, পোস্ট অফিসে জিজ্ঞেস করলাম, ওরাও বলতে পারছে না। এ রকম একটা অদ্ভুত ব্যাপার।
শেখর: এজাজ ভাই কত সালে লেখার জন্য রিকোয়েস্ট করল?
দিলীপ: মিড নাইনটিজে। এজাজরা মূলত ৯৩-এর পর এ বিষয়ে খুব ইন্টারেস্টেড হয়ে উঠেছিল।
শেখর: কবিতায় উত্তর আধুনিকতা বিষয়টি বা তত্ত্বটা আপনি কীভাবে দেখেন?
দিলীপ: প্রথম কথা হলো, অঞ্জন আর অমিতাভ—দুজনেই বলেছে, আধুনিক বা অবক্ষয়ী আধুনিক, ত্রিশের দশকের আধুনিক ও পরবর্তীকালে সুনীল, শক্তিদের অবক্ষয়ী আধুনিকেরা আরও নিকৃষ্ট গর্তে চলে গেছে, আরও খারাপ হয়ে গেছে, পচন ধরে গেছে অর্থাৎ নেতিবাচক পরিবর্তন ইত্যাদি অনেক কিছুই ওরা বলেছে। সেগুলো আমি বুঝেছি এবং আমারও আপত্তি ছিল। যেহেতু আমি বিভিন্ন ধরনের বই পড়ি, ইংরেজি বই প্রচুর পড়া হয় বলে অমিতাভ একদিন জিজ্ঞেস করছে, দিলীপদা পোস্টমডার্নিজম বিষয়টি কী? অমিতাভ অন্য রকম বই পড়তে ভালোবাসে। আমি প্রচুর বই পড়ি। এ বিষয়ে আমার প্রচুর পাঠ ছিল। আমি তখন ওকে জ্ঞান দিচ্ছি। মূল বিষয়টা হচ্ছে আধুনিকতাবাদী লোকদের আমাদের মনে হয়েছে তারা আত্মসর্বস্ব, সংকুচিত, তারা আবহমান মানুষ থেকে নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে, আবহমান বাংলা কবিতার ট্র্যাডিশন থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে।
শেখর: আধুনিকতার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক যোগ অর্থাৎ অর্থনৈতিকভাবে আধুনিক না হওয়ার বিষয়টি একটু বলুন।
দিলীপ: হ্যাঁ, উপনিবেশ। ইংরেজরা আইন-ফাইন করে জমি ছাড়া অন্য কোথায় লগ্নি করতে পারবে না পয়সা, এ অবস্থাটা তৈরি করে রেখেছিল তো। এই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবার, রবীন্দ্রনাথের পরিবার আরও অনেকে ব্যবসা করতে গিয়ে সব জায়গায় ব্যর্থ, সাহেবদের সঙ্গে টক্কর দিতে গিয়ে। শুধু এক জামসেদজি টাটা লড়ে টাটা স্টিল বানিয়েছিল আর কিছু গুজরাটি পার্শি লোকেরা বম্বের গুজরাট বেল্টে কয়েকটা টেক্সটাইল করেছিল। আর কোথাও ভারতীয় কোনো শিল্পপতি আর তৈরি হয়নি। কারণ, ইংরেজরা নানা রকম আইন-ফাইন করে এসব করেই রেখেছিল, যাতে ইন্ডাস্ট্রি পুরো ওদের হাতে থাকে। ইন্ডাস্ট্রি ওদের হাতে থাকা মানে আমাদের সামন্ততান্ত্রিক সমাজ বজায় থাকা। আমরা সামন্তবাদী সমাজের মাধ্যমে শোষণ করব আর ওরা অন্য শোষণটা চালিয়ে যাবে। এই অবস্থাটা ছিল। অর্থাৎ যেখানে অর্থনৈতিক অবস্থা সামন্ততান্ত্রিক সেখানে তারা হঠাৎ অ্যাডভান্সড ক্যাপিটালিজম, ওয়েস্টের মতো একটা আধুনিক ক্যাপিটালিজম কালের আন্দোলন করবে কী করে। যার জন্য যখন টি এস এলিয়ট কবিতা লেখেন, বিচ্ছিন্নতার কথা বলেন—ইন দ্য রুম, দি উইমেন কাম অ্যান্ড গো টকিং অফ। মাইকেল এঞ্জেলোর এক্সিট্রিম অবসাদ বা উনি যখন লেখেন—দেখো, আমরা এখানে প্রেম-টেম বলি না? ইভেন এখনো এই উপমহাদেশে প্রেম-টেম বলতে আমরা যা বোঝাই, ইউরোপে লাভ বলতে তা বোঝায় না। একটা এমন কন্টেন্ট আছে, যা আমরা ভারতবর্ষের লোক আজও, এখনো ৯৮% লোক এটা ফিলই করতে পারবে না। কারণ, আমরা কাকা, মামা ইত্যাদি সর্ম্পকের মধ্যে একদম পরিবেষ্টিত। এক্সট্রিম লোনলিনেস, ১৬ বছর বয়সে আর কেউ নেই, শুধু তুমি আছ। এই যে নির্জনতাটা বোঝানোর চেষ্টা। চরম একাকিত্বের একটা বোধ, হাইলি ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজড ওয়ার্ল্ডে, এই জিনিসটা কাটানোর জন্য এমন একটা মানুষ চাই যে আমার সব শেয়ার করবে। আমার কথা বুঝবে এবং সে মানুষ আর পাই না। এই যে অবস্থাটা না, ওটা ওদের প্রেমের একটা ব্যাপার। আমাদের উপন্যাসগুলো যদি দেখো। শ্রেষ্ঠ উপন্যাসগুলো। প্রত্যেকে একটা বড় জিনিসের প্রতিনিধিত্ব করছে। গোরা বলো। কিন্তু ওদের উপন্যাসের মূল বিষয় হচ্ছে লোনলিনেস। টি এস এলিয়টের সুন্দর লাইন আছে—
‘When Lovely woman stoops to folly and/Paces about her room again, alone,/She smoothes her hair with automatic hand/And put a record on the gramophone.’ পথে দেখা হয়েছে কারও সাথে, তার সাথে শুয়েছে, তারপর লোকটি তো চলে গেছে। চুল বিধ্বস্ত হয়ে গেছে, চুলে অটোমেটিক হ্যান্ড বিলি কাটছে, গ্রামোফোন ঘুরে যাচ্ছে জীবনের চাকার মতো। এসব বিষয়গুলো এখনো আমাদের এখানে হতে দেরি আছে। ইকোনমিক্যালি মডার্নাইজড দেশে মানুষের চেহারা এ রকম। আমাদের চেহারা এ রকম নয়। খুব বড় লোকদের বাড়িতে ভারতবর্ষে এখন হচ্ছে। অতএব বিষ্ণু দে যখন সেসব নকল করে কিছু লিখতে যান, তখন সেটা হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায়। ওরা হঠাৎ সবাই সাহেবদের ভলান্টিয়ার হয়ে গেল। রবীন্দ্রনাথকে বাদ দিলে আধুনিক হবে? রবীন্দ্রনাথের চেয়ে এক শ বছরের পুরোনো বায়রন, পঞ্চাশ বছরের পুরোনো বোদলেয়ারকে নকল করে আধুনিক হয়ে গেছে। কী করে হবে? তা যদিও হয়, তাহলে বায়রন এক শ বছর আর বোদলেয়ার পঞ্চাশ বছর আগের হলেও তাদের লেখার মধ্যে একটা কন্ডিশন আছে, মডার্নিশ কন্ডিশন। সেটা তোমার নেই। তাহলে কোন অর্থে তুমি রবীন্দ্রনাথকে বাদ দিয়ে। তুমি তো ভাষাই বুঝতে পারবে না। তুমি যখন লিখবে এসব তখন তুমি আর তোমার পাঠক কেউই সে ইংরেজির স্বাদটা পাবেই না। কারণ, ইংরেজ কবির সেই ভাষাটা সবাই বোঝে; কারণ, এটা তাদের অস্তিত্বের ভাষা। যাহোক, এসব আজেবাজে করে আমরা সেটাকে আধুনিকতা বলেছি। এই যে পোস্ট মডার্নিজমের কথাও যখন বলি। কিছু বই বের হয়েছে পোস্টমডার্নিজমের বিষয়ে, পোস্টমডার্নিস্ট কন্ডিশন নামে যে বই লিখেছে। আইটি রেভল্যুশন হয়নি, যেখানে মোবাইল ফোন আসছে বেশি দিন হচ্ছে না সেখানে পোস্টমডার্নিজমের কিছু তৈরিই হয়নি ভারতবর্ষে। অথচ আমরা পোস্টমডার্নিস্ট হয়ে গেলাম। কী করে যে হয়ে গেলাম কে জানে। পরে জানলাম যে, ১৯৩০-এই পোস্টমডার্নিজমের প্রতিভূ ছিলেন জীবনানন্দ দাশ। এই যে রূপসী বাংলা লিখল, পড়ে মনে হয় যেন তিনি নিজেকে ডিসিপ্লিন করছেন। বাংলার মানুষ, বাংলার মাঠ ঘাট, মাটি, ভাঁটফুল, কাশফুল, পোকামাকড়, হাঁস, প্যাঁচা—এ আমার বাংলা বলে নিজেকে যেভাবে ধরে রাখছেন। বিভূতি যেভাবে রাখছেন, জীবনানন্দ যেভাবে রাখছেন। সেভাবে কেউ চেষ্টাই করছেন না। আর যখনই ইতিহাস ও সমাজসচেতন হয়ে যাবে, তখনই বুদ্ধদেব বসুর মতো এত কবিতা ভালোবাসা লোক, এত নিঃস্বার্থ লোক। কালের পুতুলে যিনি দারুণ কথা বলেছেন, সমসাময়িকদের সম্পর্কে কেউ তেমন বলে না। নো বডি রিটার্নড হিম দ্য কমপ্লিমেন্ট। জীবনানন্দ সাতটি তারার তিমিরের কবিতাগুলো যখন লিখছেন, তখনো বই আকারে বের হয়নি। সঙ্গে সঙ্গে তিনি জীবনানন্দ সম্পর্কে চুপ হয়ে গেলেন। ম্যানিলার ‘রক্তিম গির্জার মুণ্ড’ এসব কথা আছে। ওসব করলে নাকি কবিতা হবে না। এ সমস্ত সমস্যা আছে বুদ্ধদেব বসুর।
শেখর: পোস্টমডার্নিজম আর আমাদের যে উত্তর আধুনিকতা—এই দুয়ের মধ্যে মিল ও অমিলটা একটু বলুন।
দিলীপ: মিলটা হলো দুটাই মডার্নিজমের বিপরীতে। পোস্টমডার্নিস্টরাও মডার্নিস্টের বিপরীতে এবং উত্তর আধুনিকতাও আধুনিকতার বিপরীতে। টি এস এলিয়টের হোক আর তার বাঙালি ভার্সন বুদ্ধদেব বসুই হোক। আরও পাঁচ রকম মিল বলা যেতে পারে। তবে এটাই প্রধান মিল। অমিল হচ্ছে ইতিহাস ঐতিহ্যকে সমস্ত পোস্টমডার্নিজ অস্বীকার করে। বদ্রিলার-এর যে বইটা আছে, সেখানে বলেছেন আসলে ইতিহাস বলে কিছু নেই। তিনি বলেছেন, কার্ল মার্কস নিজেই প্রথম পোস্টমডার্নিজ। ইতিহাসের বৈজ্ঞানিক গতি দেখেছেন। নেপোলিয়ন বোনাপার্টের সেকেন্ডের সময়ের যে বইটা আছে ‘এটিনথ্ ব্রুমিয়ার’ মার্কসের লেখা সেটা আলোচনা করতে গিয়ে হোয়াট ইজ রঙ উইথ পোস্টমডার্নিজম বলে ক্রিস্টোফার নবিসের একটা খুব ভালো বই আছে। তিনি এক জায়গায় বলছেন যে, কীভাবে হিস্ট্রি নিজেকে রিপিট করে, তার মানে কোনো হিস্ট্রি নেই। কথাটা অপ্রমাণিত। বদ্রিলার এটিনথ্ ব্রুমিয়ার বইয়ের শেষ দিকে পড়েননি, তাহলে মার্কস সম্পর্কে এমন ফতোয়া দিতেন না। পোস্টমডার্নিস্ট কন্ডিশন বই তার থেকেই পোস্টমডার্নিস্ট কথাটা আসছে। আইটি রেভল্যুশন, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি পরস্পরকে কীভাবে ভুলিয়ে দিচ্ছে—এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বাংলায় একজন কবি খুব রিয়েকশনারি হিসেবে পরিচিত। তো বাংলার তার চেয়ে বড় কবি কে আছে? সোনালী কাবিন-এর লেখক। আল মাহমুদ উত্তর আধুনিক নন তো কে উত্তর আধুনিক? ফান্ডামেন্টালিস্ট হয়ে গেছেন বলে সব প্রগতিশীল তাঁকে রিজেক্ট করছেন। কবিতা রিজেক্ট করার ক্ষমতা কার আছে?
শেখর: উত্তর আধুনিক কবিতার বিষয়-আশয় সম্পর্কে জানতে চাই অর্থাৎ উত্তর আধুনিকতা এ বিষয়কে ধারণ করবে বা এ বিষয়কে ধারণ করা যাবে না, এমন কোনো বিষয় আছে কি না।
দিলীপ: উত্তর আধুনিকতা সমগ্রকে ধরতে চায়। তার ইতিহাসের সমগ্রতায়, কালের সমগ্রতায় এবং দেশের সমগ্রতায়। একটা মেয়ের জন্ম হচ্ছে একটা নার্সিং হোমে। তিনটি ভিখিরি বৃষ্টিতে ভিজে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের লোম কুঁকড়ে উঠছে। রোমাঞ্চিত হবার বিষয়টা বোঝাতে তো অনেকভাবে বলা যায়। একটা ছবি তৈরি হচ্ছে। সেই ছবিটা কিন্তু থি ওয়াইজ মেন ও জিসাসের জন্মের গল্পের মতো। জিসাসের জন্ম ছিল খড়ের গাদায়, গোয়ালঘরে। আর সেই মেয়েটির জন্ম হচ্ছে দামি একটা হাসপাতালে। থি ওয়াইজ মেনের জায়গায় তিনজন বুড়ো ভিখিরি বসে আছে রাস্তায়, ভিজছে। এই যে শ্লেষটা। পাশে যদি আমি জিসুর জন্মটা না ভাবতে পারি, ভাবার সমস্ত ইঙ্গিতগুলো দেওয়া আছে বইয়ের মধ্যে। আমার কবিতায় লেখা উপন্যাস কঙ্কনমালা’য় আছে।
শেখর: কবিতায় লেখা উপন্যাস?
দিলীপ: হুম্। আমার তিনটা কবিতায় লেখা উপন্যাস কথা নদীর বাঁকে বাঁকে বইয়ে আছে। কঙ্কনমালা ১৯৭৫-এর ডিসেম্বরে লেখা।
শেখর: উত্তর আধুনিক কবিতা কবিতায় ছন্দকে কীভাবে দেখে?
দিলীপ: কতগুলো লক্ষণ, কোনো প্রেসক্রিপশন নয়। উত্তর আধুনিক কবিতায় কতগুলো লক্ষণের বিষয় আছে। যেমন: একসময় ধারণা ছিল যে, প্রথম লাইনেই কবিতা, প্রথম লাইন পড়েই বুঝে গেছি কবিতাটা কী। পুরো কবিতাটা যেন প্রথম লাইনের চারপাশে ঘোরা। এখানে এই করতে গিয়ে উত্তর আধুনিকতা চর্চা করতে গিয়ে একসময় প্রায় তাদের কথা বলার টোনটা প্রেসকিপশনাল হয়ে উঠেছিল, হুইজ ইজ রং। কবিতার দেহে চিন্তাটা ডেভেলপ করতে পারে, যে চিন্তা দিয়ে আমি কবিতা শুরু করছি, শেষটা জরুরি না আমি তারই সমর্থনে আছি। অর্থাৎ আমি বদলে গেছি কবিতায়। এই যে নাটকীয় একটা রূপান্তর হচ্ছে আমার চিন্তায়, অগ্রগমন বা যেকোনো গমন হচ্ছে বা বদলাচ্ছে বা গতায়াত যে হচ্ছে একটা সেইটাই দেখবার কথা। এর ফলে একই কবিতার মধ্যে, ছন্দের কাজগুলো বিষ্ণু দে, সুধীন দত্তরা করেছেন এসব অনেক। এমনকি একই কবিতার মধ্যে ছন্দের বদলও ঘটিয়েছেন। নানাভাবে করেছেন। কবিতাগুলো পাশে রেখে বললে বিষয়টা ভালো হতো। একই কবিতায় মাত্রাগত পরিবর্তন হচ্ছে, কখনো চার মাত্রা, কখনো ছয় মাত্রা লেখা হচ্ছে। সুকান্তের বোধন কবিতায় এ রকম ছিল। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যেটা বলা যায়, এজাজও আজ সেটা বললেন, আমি ও অমিতাভ দুজনে দাঁড়িয়ে মনে করি, মানুষ সমাজে দাঁড়িয়ে চারদিকে জড়িয়ে ধৃ মানে ধর্ম, মানুষের সাথে যোগাযোগ এবং পুরোনো কাব্য থেকে অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়। আমি একটা গদ্য থেকে উদাহরণ দিয়ে বলছি। দেবী চৌধুরানী পড়েছ নিশ্চয়। দেবী চৌধুরানীর শেষে প্রফুল্লকে বাসন মাজতে হচ্ছে, কারোর ভালো লাগেনি। দেবী চৌধুরানী ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে আমাদের খুব ভালো লেগেছে, অহং বোধ হয়েছে। শেষে এই পরিণতি। এতে কেউ খুশি হয়নি। ঘাটে বাসন মাজার আগে যেই সিনে দেবীকে দেখতে পাচ্ছি। বজরায় দেবী। এক পাশে দিবা বলে ওর বন্ধু, অন্য পাশে নিশা বলে ওর বন্ধু, পায়ের কাছে স্বামী। একদম অসুরের পজিশনে। দুর্গা সরস্বতী লক্ষ্মী। বিজয়া ভাসানের নৌকা। এই ছবি স্মৃতিতে কাজ করে। বাঙালি হিন্দুর মনে বিজয়ার পর বিষাদ ছাড়া আর কিছু থাকে না। বিরাট বিষাদ বিজয়ার পরে। এগুলো আমরা রিড করতে শিখিনি। ক্রিয়েট করতে হলে পরে না এগুলো রিড করতে হয়। ধরো, নীলদর্পণ নাটকে তোরাফ এসে যখন নীলকরের নাকে মারে রামায়ণের হনুমানের মতো। দেখো, কতবার রাম লক্ষ্মণ বলা হয়েছে মাধবদের। তোরাফ ঝাঁপিয়ে পড়ে লঙ্কায় রাবণকে যা করেছিল। এ রকম নানা বইয়ে দেখানো যায়। এই যে স্তরে স্তরে লুকিয়ে আছে টেক্সটের পেছনে টেক্সট, টেক্সটের পেছনে মূর্তি, টেক্সটের পেছনে ছবি, টেক্সটের পেছনে সিনেমা, এই যে পেছনে পেছনে থাকে, ভাষার মধ্যে নানা স্তরীয় একটা বিষয় থাকে বা আসে।
শেখর: অঞ্জন সেন বলেছিলেন, উত্তর আধুনিক কবিতায় ছন্দের বিপরীতে ‘কথন স্পন্দন’ থাকবে। ‘কথন স্পন্দন’ বিষয়টা নিয়ে একটু বলবেন?
দিলীপ: আমি বলছি ছন্দের ব্যাপারে, বিশেষ করে আমরা যখন কথা বলি, এই যে তুমি আমি কথা বলছি, আমরা নানা স্পিডে কথা বলি, না? আমি একটা উদাহরণ দিয়ে স্পষ্ট করার চেষ্টা করছি মোটামুটি ব্যাপারটা, নানা স্পিডে কথা বলি, এটা কথনের স্পন্দন কিন্তু। অর্থাৎ তুমি অঙ্কের হিসাবে মেপে, এটা ৬ মাত্রার মাত্রাবৃত্ত, এটা ৭ মাত্রার মাত্রাবৃত্ত না হয়ে হয়তো একটা মিসিং হয়ে ৫ মাত্রার মাত্রাবৃত্ত ঢুকিয়ে দিল ইচ্ছে করেই। অঙ্কের মতো করে তো কেউ কবিতা লেখে না। কোনো এক পর্বে ৬ এর পরিবর্তে ৫ মাত্রা করে দিলে একটা দীর্ঘশ্বাসের আওয়াজ পাওয়া যায়। এই যে কথা বলার ক্ষেত্রে, একটা বলব এক স্পিডে, আরেকটা কথা বলব হঠাৎ থেমে গিয়ে আরেক স্পিডে, এই সব বিষয় কবিতার দেহে তুলে আনলে পরে, রবীন্দ্রনাথের পুরস্কার কবিতাটা মনে আছে? সেদিন বরষা ঝরো ঝরো ঝরে...সেখানে এই স্পন্দন আছে।
শেখর: নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও আবুল হোসেন। এই দুজন কবি সব সময় বলতেন কথ্য ভাষায় কবিতা লেখার কথা। কথ্য ভাষা ও কথন স্পন্দন—এই দুয়ের মধ্যে কোনো যোগসূত্র কি পাওয়া যায়?
দিলীপ: না, নেই। কথ্য ভাষায় লেখা ভালো, কেন আমি আর্টিফিশিয়াল ভাষায় কবিতা লিখব কিন্তু কথ্য ভাষার স্পন্দনটা আনা অর্থাৎ গলার ওঠানামা, এটা উত্তেজিতভাবে বলা, এটা বিষণ্নভাবে বলা, এই জিনিসটা একেবারেই অন্য জিনিস। কথন স্পন্দন আমাদের ছন্দচর্চার ইতিহাসকে অনেক দূর এগিয়ে দেয়। আমরা যেদিন সাধু ভাষা থেকে চলতি ভাষায় এলাম, সেদিন মূলত কথ্য ভাষার দিকেই তো এলাম। এগুলোর মধ্যে খুব বড় কথা মনে হয় নেই। এরা দুজনেই ভালো লেখেন।
শেখর: এই সময়ে এসে যে কবিতা লেখা হচ্ছে, সে কবিতায় কি উত্তর আধুনিকতার প্রভাব পড়ছে? আপনার কী মনে হয়?
দিলীপ: কিচ্ছু প্রভাব পড়েনি। যারা প্রথম দিকে এক রকম লিখছিল, তারা এখন অন্য রকম লিখছে। যা ভাবছিল তার থেকে অন্য রকম ভাবছে। যারা বিষয়টা সহজভাবে ভেবেছে, তারা ওভাবে লিখেছে। তারা লিখে আরও দশজন, বিশজন কবি তৈরি করেছেন। এভাবে লিখছে, অর্থাৎ, একটা ঘরানা তৈরি হয়েছে এ রকম হয়নি। অন্তত পশ্চিমবঙ্গে হয়নি।
শেখর: উত্তর আধুনিক তত্ত্বটা আসার পর বাংলাদেশের কবিতা সম্পর্কে আপনার ধারণা কী রকম?
দিলীপ: ব্যাপার হচ্ছে, বাংলাদেশে প্রচুর লিটল ম্যাগাজিন বের হয়। তার ৩ পারসেন্ট আমি পাই। কীভাবে আমি ধারণা পাব?
শেখর: পশ্চিমবঙ্গে উত্তর আধুনিক তত্ত্বটি ব্যর্থ বলব?
দিলীপ: ব্যর্থ জীবনে কিছুই হয় না। আধুনিকতাকে ঘৃণাসহকারে বর্জন করার কিচ্ছু হয়নি।
শেখর: তার মানে, এটা লেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
দিলীপ: যাঁরা লিখছেন গদ্য তাঁরা এক রকম লোক, যারা লিখছেন না তারা আরেক রকম লোক।
শেখর: কবি এজাজ ইউসুফী সম্পর্কে অর্থাৎ ওনার কবিতা সম্পর্কে আপনার ধারণা কী? স্বপ্নাধ্য মাদুলি পড়েছেন নিশ্চয়। তত্ত্বের সাথে কবিতার যোগ।
দিলীপ: আমার কাছে মনে হয়—এজাজ যত ভালো গদ্যে ব্যাখ্যা করতে পারেন, এজাজ তত ভালো কবি নন। ভালো কবি, তবে তত বড় কবি নন। বাংলায় একজন কবি খুব রিয়েকশনারি হিসেবে পরিচিত। তো বাংলার তার চেয়ে বড় কবি কে আছে? সোনালী কাবিন-এর লেখক। আল মাহমুদ উত্তর আধুনিক নন তো কে উত্তর আধুনিক? ফান্ডামেন্টালিস্ট হয়ে গেছেন বলে সব প্রগতিশীল তাঁকে রিজেক্ট করছেন। কবিতা রিজেক্ট করার ক্ষমতা কার আছে?
শেখর: দুই বাংলার কবিতা তো পড়েন। দুই বাংলার কবিতার মধ্যে বিষয়গতভাবে ডিফারেন্স কী?
দিলীপ: ভালো বিষয় নিয়ে লেখা কবিতা ভালো না-ও হতে পারে। এভাবে ভাবা যায় না আসলে। ছন্দের বিষয়টা অনায়াস আসে অন্ত্যমিলে লিখছে শ্রীজাত, জয় গোস্বামী তো অবশ্যই। খুব প্রাণিত করে এ রকম পশ্চিমবঙ্গে উদয় হয়েছে গত পঁচিশ বছরে একজনকে মনে করতে পারছি না। অনুরাধা মহাপাত্র ছাড়া। একজন মেয়ে। অমিতাভ গুপ্ত খুব বড় কবি। আর এখানের কবিতা এত কম পড়া, আমার বলাই মুশকিল। আমি নিজে পড়ে আল মাহমুদকে আবিষ্কার করেছি, শহীদ কাদরীকে অনেকটা ভালো লেগেছে। শামসুর রাহমানকে পড়ার আগেই জানতাম, উনি বড় কবি। আল মাহমুদ পড়ার আগে কিছুই জানতাম না। পড়ে স্তম্ভিত হয়ে গেছি আরকি। যে রকম শক্তির কবিতা পড়ে এককালে হয়েছিলাম। সে রকম একজনের নামও আমার আসছে না গত ২৫ বছরে।
ইন্টারভিউ ভালো লেগেছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভাব, তথ্য বিনিময় হলো।
মানিক বৈরাগী
এপ্রিল ০২, ২০২২ ১৮:৫৮
গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পেলাম। সাক্ষাৎকারটি সংগ্রহে রাখলাম। 'তর্ক বাংলা' ও সাক্ষাৎকারগ্রহণকারীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
সবুজ তাপস
এপ্রিল ১৫, ২০২২ ১৬:৪৮
জানা হলো অনেক বিষয়। ধন্যবাদ।।
মিলন কিবরিয়া
এপ্রিল ২০, ২০২২ ২২:০২
ভাল লাগলো
শোয়ায়েব মুহামদ
এপ্রিল ০২, ২০২২ ১৫:৫৮