বিষয় লুইপার দুইটি গান

 

মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী কর্তৃক সম্পাদিত হাজার বছরের পুরাণা বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা পুস্তকে চারিখানি স্বতন্ত্র গ্রন্থ সংকলিত হইয়াছিল। তাহাদের মধ্যে চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়, সরোজবজ্রের দোহাকোষ, কাহ্নপাদের দোহাকোষডাকার্ণব (শাস্ত্রী ১৪১৩)। প্রথম স্বতন্ত্র গ্রন্থের চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয় নামটি হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর দান। সংস্কৃত ভাষায় লেখা ভাষ্যের লেখকযাহার নাম মুনিদত্ত বলিয়া পরে প্রবোধচন্দ্র বাগচী আবিষ্কার করিয়াছিলেনএই গ্রন্থের নাম রাখিয়াছিলেন আশ্চর্যচর্যাচয়। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এই বিকল্প নামটি পছন্দ করিয়াছিলেন। তিনি বৌদ্ধ ধর্মভাবের গান (বুড্ডিস্ট মিস্টিক সংগ্স্) নামে ইংরেজি ভাষায় ইহা তর্জমা করিয়াছিলেন (শহীদুল্লাহ ১৯৭৪)। চর্যাচর্যবিনিশ্চয় অথবা আশ্চর্যচর্যাচয় গ্রন্থটিতে শেষ পর্যন্ত ২২ জন কবির ৪৭টি গান পাওয়া গিয়াছে। তাহার মধ্যে ২৩ নম্বর গানটি মিলিয়াছে অসম্পূর্ণ অবস্থায়। উহাতে মাত্র তিনটি দোহা বা জোড়া পংক্তি আছে।

এই ক্ষুদ্র নিবন্ধে আমি চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয় গ্রন্থের অন্তর্গত ২২ জন কবির মধ্যে মাত্র একজনের দুইটি গান লইয়া আলোচনা করিব। কবির নাম লুই। সম্মানার্থে তাঁহাকে লোকভাষায় লুইপা’—আর সংস্কৃতঘেঁষা ভাষায় লুইপাদ’—বলা হইয়াছে। সুকুমার সেন আন্দাজ করিয়াছেন, লুই নামটি রোহিত হইতে আসিয়াছে। তিনি অধিক লিখিয়াছেন, ধর্মমঙ্গলের লুইয়া, লুইধর, লুইচন্দ্র এবং পরবর্তীকালের রুইদাস এই নামের সঙ্গে অভিন্ন (সেন ২০১৫: ২১)। অলকা চট্টোপাধ্যায় অনূদিত চুরাশি সিদ্ধর কাহিনী নামক তিব্বতী পুস্তকে এই বিষয়ে আরোও তথ্য আছে। তিব্বতী বইটিতে পড়া যায়, জেলেরা গঙ্গা থেকে মাছ ধরে তার নাড়িভুড়ি মাটিতে ফেলে দিলে তিনি সেগুলি নিয়ে খেতেন। এইভাবে বারো বছর সাধনা করলেন। মাছের অন্ত্র খেতেন বলে জেলেনীরা তাঁকে লুইপা বলে ডাকতে লাগলেন (চট্টোপাধ্যায় ২০১০: ৮৮)।

সুকুমার সেন ইহাদের মধ্যে কয়েকটি শব্দের পাঠ পরিবর্তন ঘটাইয়াছেন। পইঠা শব্দটি পড়িয়াছেন পইঠোদিঢ় করিয়াছেন দিট। তবে এহ বাহ্য। গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনযাহাতে অর্থ অনেকখানি বদলাইয়া যায়ঘটিয়াছে ৩ নম্বর দোহার প্রথম চরণে। সমাহিঅ শব্দটি তিনি লিখিয়াছেন সহিঅ রূপে।

মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ধারণা লুইয়ের বাড়ি ছিল পশ্চিমবঙ্গে। তাঁহার একটি ছাত্রের নাম দারিক। দারিকের লেখা একটি গানের মধ্যে (৩৪ নং) তাঁহার গুরু লুইয়ের নাম পাওয়া যায়। দারিকলুইয়ের ছাত্র হইবার আগেছিলেন রাজপুত্র। পরে এক দারিমোর (গণিকার) ঘরে বারো বছর ধরে পা ধোয়ানো, গা মালিশ করা ইত্যাদি কাজ করলেন (চট্টোপাধ্যায় ২০১০: ২১৫)। দারিমোর ভৃত্য ছিলেন বলিয়া তিনি দারিকপা নামে খ্যাত হইয়াছিলেন। রাহুল সাংকৃত্যায়ন বলিয়াছেন লুইপা জাতিতে কায়স্থ অর্থাৎ লেখাপড়া-ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি রাজা ধর্মপালেরযাঁহার রাজত্বকালের ব্যাপ্তি ৭৭০-৮১০ খ্রিস্টাব্দসভাসদও ছিলেন। তাঁহার লেখা দুইটি গানযথাক্রমে ১ আর ২৯ নম্বর—‘চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয় গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হইয়াছে। আমরা সেই দুইটি গানের দোহাই দিয়া কথা বলিব।

গান দুইটির যে পাঠ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ছাপাইয়াছিলেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এবং সুকুমার সেন সেই পাঠটা খানিক স্বতন্ত্রভাবে সম্পাদনা করিয়াছেন। তাঁহারা উভয়েই শাস্ত্রীর পাঠ অল্পসল্প সংশোধনের প্রয়াস পাইয়াছেন। সুকুমার সেনের পাঠও আবার কিছু কিছু পরিমার্জন করিয়াছেন তারাপদ মুখোপাধ্যায় আর অতীন্দ্র মজুমদার প্রমুখ পণ্ডিত (মুখোপাধ্যায় ১৯৬৩: মজুমদার ১৯৯৮)।

এখানে আমি প্রথমে মুহম্মদ শহীদুল্লাহর পাঠটি তুলিয়া দিতেছি। পরে ইহার সহিত সুকুমার সেনের ও অন্যদের পাঠের কিছু কিছু প্রভেদ দেখাইব। তাহার পর একটা আধুনিক বাংলা অনুবাদ দিয়া পরে নিজের মন্তব্য লিখিব। প্রথমে দেখিতেছি ১ নম্বর গানইহাতে পাইতেছি ৫টি দোহা।

১। কাআ তরুবর পাঞ্চ বি ডাল
     চঞ্চল চীএ পইঠা কাল ॥
২। দিঢ় করিঅ মহাসুহ পরিমাণ
     লুই ভণই গুরু পূছিঅ জাণ ॥
৩। সঅল সমাহিঅ কাহি করিঅই
     সুখ দুখেতে নিচিত মরিঅই ॥
৪। এড়িঅউ ছান্দ বান্ধ করণ কপটের আস
     সুনু পাখ ভিড়ি লাহু রে পাস ॥
৫। ভণই লূই আম্হে ঝাণে দীঠা
     ধমণ চবণ বেণী পিণ্ডি বইঠা ॥ 
    (শহীদুল্লাহ ১৯৭৪: ১)

সুকুমার সেন ইহাদের মধ্যে কয়েকটি শব্দের পাঠ পরিবর্তন ঘটাইয়াছেন। পইঠা শব্দটি পড়িয়াছেন পইঠোদিঢ় করিয়াছেন দিট। তবে এহ বাহ্য। গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনযাহাতে অর্থ অনেকখানি বদলাইয়া যায়ঘটিয়াছে ৩ নম্বর দোহার প্রথম চরণে। সমাহিঅ শব্দটি তিনি লিখিয়াছেন সহিঅ রূপে। ৪ নং দোহায় এড়িঅউ সুকুমার সেনের পাঠে দাঁড়াইয়াছে এড়ি এড়। পরের চরণে ভিড়ি হইয়াছে ভিতি। ৫ নং দোহায় ঝাণে হইয়াছে সাণে। শেষ চরণ হইয়াছে ধমণ চমণ বেণি পাত্তি বইণ (সেন ২০১৫৪: ৫৩)।

মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এই গানটির প্রথমে একটি আধুনিক বাংলা ও সঙ্গে সঙ্গে একটি ইংরেজি অনুবাদ সংযোজন করিয়াছেন। আমি তাহার একটা পরিমার্জিত নতুন বাংলা সারানুবাদ দিতেছি।

১। দেহ বেশ তরু বটে, তাহার পাঁচটি ডাল; এদিকে মন অস্থির—তাহাতে কাল ঢুকিয়া পড়িয়াছে।
২। মনকে শক্ত করিলে মহাসুখ লাভ করা যায়। লুই বলিতেছে—কিভাবে যায় তাহা গুরুকে জিজ্ঞাসা করিলে   জানিতে পারিবে।    
৩। গভীর ধ্যান বা সমাধির উদ্দেশ্য কি? সুখেই হোক আর দুঃখেই হোক সকলকেই মরিতে হইবে।
৪। বাঁধাছাঁদা ছাড়িয়া দাও, এইগুলি কপটতার প্রমাণ বৈ নহে; যে পাখায় কিছুই নাই তাহা গুটাইয়া লও ॥
৫। লুই বলিতেছে, এদিকে আমি শ্বাস আর নিঃশ্বাস দুই আসনেই বসিয়াছি আর ধ্যান করিয়া এতটুকু বুঝিয়াছি।

এক্ষণে লুইপার লেখা অপর গানটির২৯ নম্বরেরকথা বলিতেছি। ইহাও একটি রত্নবিশেষ।

১। ভাব ন হোই অভাব ণ জাই।
     অইস সংবোহেঁ কো পতিআই ॥
২। লুই ভণই বঢ় দুলক্খ বিণাণা।
     তিএ ধাএ বিলসই উহ লাগে ণা ॥
৩। জাহের বান চিহ্ন রূব ণ জাণী।
     সো কইসে আগম বেএঁ বখাণী ॥
৪। কাহেরে কিস ভণি মই দিবি পিরিচ্ছা।
     উদক চান্দ জমি সাচ ন মিচ্ছা ॥
৫। লুই ভণই মই ভাইব কীস।
     জা লই অচ্ছম তাহের উহ ণ দিস ॥
     (শহীদুল্লাহ ১৯৭৪: ৮১)

এই গানেও সুকুমার সেন কয়েকটি শব্দের পরিবর্তন প্রস্তাব করিয়াছেন। তিনি অইস শব্দের স্থলে লিখিয়াছেন আইসবঢ় শব্দের জায়গায় লিখিয়াছেন বট। গুরুতর পরিবর্তন হইয়াছে উহ লাগে ণা স্থলে উহ ন ঠাণা’—অতীন্দ্র মজুমদার ইহা পড়িয়াছেন উহ ন জানা আকারে (মজুমদার ১৯৯৮: ১৩০)। কীস স্থলে কিষ বা জমি স্থলে জিম সকলেরই চোখে পড়িবে। এক্ষণে গানটির একটি সারানুবাদ দিতেছি। আমি এই জায়গায় মূলত মুহম্মদ শহীদুল্লাহর পাঠই ধর্তব্য ধরিয়া লইয়াছি।

১। যাহা আছে তাহা নাই; আর যাহা নাই তাহা তো নাই-ই—এহেন ব্যাখ্যায় কে আস্থা রাখিবে!
২। লুই কহিতেছে, ওহে বেকুব, আসল জ্ঞান তো ধরাছোঁয়ার বাহিরে—যাহা প্রকাশিত তিন ধাতুতে তাহার ঠিকানা কোথায় জানি না।
৩। যে বস্তুর বর্ণ, চিহ্ন বা রূপ কি জানি না—আগমশাস্ত্রে কি বেদে তাহার ব্যাখ্যা  হইবে কি করিয়া?
৪। আমি কাহাকে কি বলিয়া ফতোয়া দিব, পানির মধ্যে যে চাঁদ দেখা যায় তাহা সত্য না মিথ্যা?
৫। লুই কহিতেছে, আমার ভাবিবার কি আছে যাহার মধ্যে বাস করি—না বুঝি তাহার উদ্দেশ্য না তাহার দিকচিহ্ন।

এই দুইটি গানের ভাষায় যাহা যাহা বলা হইয়াছে তাহা তো আমরা একটু আগেই দেখিয়াছি। পরের প্রশ্নইহার অর্থ কি? আগে ভাষা বুঝিতে হইবেতাহার পরেই মাত্র অর্থএকথা মানে না রাখিলে বড় বিপদ। ব্যবহৃত শব্দগুলির মধ্যে প্রধান হইতেছেকায়া, চিত্ত, কাল, মহাসুখ, সমাধি, সুখ-দুঃখ, মৃত্যু, আশা, ধ্যান, শ্বাস-প্রশ্বাস। ইহাদের তুলনা দেওয়া হইতেছে তরু, ডাল, বাঁধা-ছাঁদা, পিড়া প্রভৃতির সঙ্গে।

দ্বিতীয় গানের প্রধান প্রধান শব্দের মধ্যে: ভাব ও অভাব, বর্ণ, চিহ্ন, রূপ, প্রশ্ন বা সিদ্ধান্ত, সত্য ও মিথ্যা, উদ্দেশ্য ও দিকচিহ্ন। এখানে তুলনা দেওয়ার জন্য আছে আগমশাস্ত্র ও বেদ, চাঁদ ও পানি, ত্রিধাতু (কায়া-চিত্ত-বাক্), প্রত্যয়, সম্বোধি ও বিজ্ঞান প্রভৃতি।

প্রথম গান প্রসঙ্গে অতীন্দ্র মজুমদার মন্তব্য করিয়াছেন, কায়া-তরুর পাঁচটি ডাল বলার অর্থ আমাদের শরীর একটি বৃক্ষ এবং এর পঞ্চস্কন্ধ বা পঞ্চকর্মেন্দ্রিয় পাঁচটি শাখা। অধিক কি: আমাদের দেহ এবং পঞ্চ ইন্দ্রিয় নিয়ে এই আমরা, সাংসারিক বিষয়ের আকর্ষণে এবং প্রভাবে আমাদের চিত্ত চঞ্চল হয়, সেই জন্যই আমরা বিবিধ দুঃখ ভোগ করি এবং শেষে কালকবলিত হই। কিন্তু এই চঞ্চলতা দূর করে মহাসুখ বা নিত্যানন্দ লাভ করবার জন্যে আমাদের দৃঢ়চিত্ত হতে হবে। যোগ ধ্যান সমাধি এসব ক্ষণিক উপায়ের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে ভ্রান্তিবশতই আমরা জগতকে প্রত্যক্ষ করছি, এই বোধটাকে মনে দৃঢ় করে নিয়ে শূন্যতার সাধনা আমাদের করতে হবে (মজুমদার ১৯৯৮: ৪৭-৪৮)।

বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় এয়ুরোপ মহাদেশে একটি নতুন শাস্ত্র আবিষ্কৃত হইয়াছে। এই মনোবিশ্লেষণ শাস্ত্রের গোড়ার কথা অজ্ঞান, আবর্তন, বাসনা ও ভালোবাসা। ইহার আলোকে হাজার বছর আগের বাংলা ও অন্যান্য পূর্বাঞ্চলীয় ভাষায় রচিত সিদ্ধদের গান নতুন করিয়া বুঝিয়া লইবার অবকাশ আছে। লুইপার গানে উল্লেখ করা সহজানন্দ বা মহাসুখ বা নিত্যানন্দ পদার্থটাকে এয়ুরোপীয়রা বলেন জুয়িসঁস

দ্বিতীয় গান প্রসঙ্গে অতীন্দ্রবাবুর কৌতুহলোদ্দীপক মন্তব্যটি নিম্নরূপ:

কেউ কেউ মনে করেন, জগতের কোনোই অস্তিত্ব নেই এবং এই সম্যক্ বোধের দ্বারা তাঁরা বিশ্বাস করেন, জগতের অভাবেও কিছু লোপ পায় না। কিন্তু এই বোধের দ্বারা কি সহজানন্দের প্রত্যক্ষ উপলব্ধি জন্মাতে পারে। সহজানন্দের বিজ্ঞান আলাদা, তা ইন্দ্রিয়াতীত; তাই কায়-বাক্-চিত্তের সাহায্যে যাঁরা এই অতীন্দ্রিয় অনুভূতির ব্যাখ্যা করেন তাঁরা ঠিক জানেন না। যুক্তিবাদীরা হৃদয়ের অনুভূতির ধার দিয়েও যান না, সুতরাং যুক্তি দিয়ে যাঁরা পৃথিবীকে মিথ্যা বলেন, যুক্তির মাধ্যমেই যাঁরা সহজানন্দকে পেতে চানতাঁরা আনন্দের রহস্যময় অনুভূতি থেকে বঞ্চিত। যাঁর স্বরূপ সম্বন্ধে কিছুই জানা যায় না, যাঁর বর্ণ, চিহ্ন, রূপসবই বর্ণনার অতীত এবং আমাদের অজ্ঞাততাঁকে কি বেদ আগমশাস্ত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারা যায়! জলে প্রতিবিম্বিত চাঁদ যেমন সত্যও নয় মিথ্যাও নয়যোগীর হৃদয়ে জগৎ সম্বন্ধে ধারণাও তেমনি না সত্য, না মিথ্যা। আসলে যতক্ষণে যুক্তির প্রাধান্য ততক্ষণ সংশয়ের প্রাধান্য;চিত্তকে যদি অচিত্ততায় লীন করা যায়, যুক্তির চেয়ে অনুভূতিকে বড় করা হয়তবেই যোগী অতীন্দ্রিয় সহজানন্দে লীন হতে পারেন। লুইপাদ সেই অবস্থায় উপনীত হতে পেরেছেন বলেই তিনি দিশাহারা (মজুমদার ১৯৯৮: ১৩০)।

বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় এয়ুরোপ মহাদেশে একটি নতুন শাস্ত্র আবিষ্কৃত হইয়াছে। এই মনোবিশ্লেষণ শাস্ত্রের গোড়ার কথা অজ্ঞান, আবর্তন, বাসনা ও ভালোবাসা। ইহার আলোকে হাজার বছর আগের বাংলা ও অন্যান্য পূর্বাঞ্চলীয় ভাষায় রচিত সিদ্ধদের গান নতুন করিয়া বুঝিয়া লইবার অবকাশ আছে। লুইপার গানে উল্লেখ করা সহজানন্দ বা মহাসুখ বা নিত্যানন্দ পদার্থটাকে এয়ুরোপীয়রা বলেন জুয়িসঁস। একইভাবে কায়া, চিত্ত ও বাক্ প্রভৃতির নিকটতম তুলনা ফ্রয়েডের পরবর্তী মনোবিশ্লেষণশাস্ত্রী জাক লাকাঁর অভিধানেও পাওয়া যায়। সেই শব্দগুলি হইতেছে যথাক্রমে কায়া অর্থে রিয়েল বা নিরাকার, চিত্ত অর্থে ইমাজিনেয়র বা সাকার এবং বাক্ অর্থে সিম্বলিক বা আকার।

৯ নবেম্বর ২০২১

দোহাই
১.   অলকা চট্টোপাধ্যায়, চুরাশি সিদ্ধর কাহিনী, নতুন সংস্করণ (কলিকাতা: অনুষ্টুপ, ২০১০)।
২.   অতীন্দ্র মজুমদার, চর্যাপদ, ৭ম মুদ্রণ (কলিকাতা: নয়া প্রকাশ, ১৯৯৮)।
৩.   সুকুমার সেন, চর্যাগীতি পদাবলী: চর্যাচর্যটীকা সমেত, সপ্তম মুদ্রণ (কলিকাতা: আনন্দ পাবলিশার্স, ২০১৫)।
৪.   হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (সম্পাদিত), হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা: চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়, সরোজবজ্রের দোহাকোষ, কাহ্নপাদের দোহাকোষ ও ডাকার্ণব (কলকাতা: বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, ১৪১৩)।
৫.   
Tarapada Mukherji, The Old Bengali Language and Text (Calcutta: University of Calcutta, 1963).
৬.  Muhammad Shahidullah, Buddhist Mystic Songs: Oldest Bengali and other eastern vernaculars, reprint (Dhaka: Renaissance Printers, 1974).