রেখাচিত্রের পটুয়া কামরুল হাসান
আমার ইদানীং স্কেচ কেবল খসড়া, আঁকিবুঁকি নয়। খচখচ করে ভাঙা ভাঙা রেখার কাজ নয়। আমার একেকটি স্কেচ এখন একেকটি স্বয়ংসম্পূর্ণ চিত্রকলার মধ্যে গণ্য করি। কারণ, একটি বড় ক্যানভাস বা কাগজে যে মন এবং অনুভূতি নিয়ে ছবি আঁকি, আমার স্কেচগুলোও সেই মন এবং অনুভূতির প্রতিফলন নিয়ে প্রতিটি স্কেচের জন্ম।
আমার স্কেচগুলো যে কেবল স্কেচই নয়, এটা বুঝতে অন্যদের বহু সময় লাগবে। আমি জানি, পরিষ্কারভাবে উপলব্ধি করতে পারছি, আমার স্কেচগুলো একদিন প্রজাপতির মতো পাখা মেলে উড়ে বেড়াবে। তাদের রঙিন পাখার মেলায় আমারই আঁকা বৃহদাকারের ক্যানভাসে ঢাকা পড়ে যাবে।
মিজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকা, ঢাকা, প্রথম বর্ষ: ৩য় ৪র্থ সংখ্যায় কামরুল হাসান ‘আমার স্কেচ ও প্রেমের ভ্রমরা’ শিরোনামে নিজের স্কেচ বিষয়ে লিখেছিলেন ১৯৮৪ সালে। এখানে শিল্পী বয়ানের মধ্যে উল্লেখ করেছেন, তাঁর বড় ক্যানভাসের কাজকেও ছাপিয়ে যাবে এই স্কেচগুলো। কামরুলের এই বক্তব্যেই—শিল্প সম্পর্কে যে প্রচলিত ও প্রতিষ্ঠিত ধারণা, তা থেকে মুক্ত হয়ে আপন শিল্পধারণা বিযুক্ত হয়। অন্যদিকে ঔপনিবেশিক আমলে, বিশেষত কলকাতায় উদ্ভাবিত আত্মপরিচয়ের সংকট নিরসনে—ইবি হ্যাবেল, কুমার স্বামী ও অবনীন্দ্রনাথদের হাত ধরে যে ভারতীয় শিল্পের ধারাবাহিকতা, তা থেকেও এ এক ভিন্ন চিন্তা। আবার তা এ দেশের প্রথম প্রজন্ম থেকে ইউরোপীয় ‘আধুনিক’ শিল্পের যে প্রবণতা—যা মূলত ওই ঔপনিবেশিক আধুনিকতার পরম্পরা তা থেকেও মুক্ত হতে সচেষ্ট। আধুনিক শিল্পী ও শিল্পের যে উঁচু ভাব থাকে, কামরুল তার এই স্কেচধর্মী শিল্পকর্মকে সেই স্তরে নিতে চাননি, বরং শিল্পকে তিনি প্রাত্যহিক জীবনচর্চার অংশ করে তুলতে চেয়েছেন। এ দেশের শিল্পের আদি উৎস যেমন সাধারণ জীবনের দৈনন্দিন আচারের সঙ্গে যুক্ত, তিনি তাঁর ‘ফাইন আর্ট’ বা আধুনিক শিল্পচর্চাকেও সেই স্তরে নিয়ে যেতে চেয়েছেন। হাতের কাছে কাগজ-কলম যা পেয়েছেন, তাতেই এঁকেছেন। এ ক্ষেত্রে কামরুলের শিল্পচিন্তা বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য হয়ে আছে। তুচ্ছ, সাধারণ বা সহজে অপারের সন্ধান করতে চেয়েছেন তিনি। মার্গীয় ও উঁচু, দরবারি বা গ্যালারি আর্টের আয়োজনের বাইরে অনাড়ম্বর সস্তা ও সাধারণ উপকরণে তাৎক্ষণিক মুহূর্তকে ধরতে চেয়েছেন সামগ্রিক বোধ থেকে।
কামরুলের শিক্ষানবিশ থেকে শেষ পর্যায়ের সমস্ত শিল্পকর্মের দিকে নজর দিলে দেখতে পাই—প্রতিনিয়ত তিনি নিজেকে গড়েছেন, কোথাও থিতু হননি। যতগুলো পর্যায়ে বা ধারায় কাজ করেছেন, তিনি সমস্ত ক্ষেত্রেই অসামান্য দক্ষতা দেখিয়েছেন। কিন্তু শিল্পী নিজে কেন তাঁর অতীতের সমস্ত প্রচেষ্টার ঊর্ধ্বে ওঠাতে চেয়েছেন স্কেচ আর্টকে, জীবনের সায়াহ্নে—এর সদুত্তর সহসা বা নিশ্চিত করে বলা যায় না। শিল্পী নিজেও বলেননি। কিন্তু আমরা তাঁর বয়ানের মাঝেই কিছু ইঙ্গিত পাই যেমন, তেমনি এর আভা ও ইঙ্গিত পেতে থাকি যখন কৈশোর থেকে তাঁর তাবৎ কাজের ক্রমবর্ধমানতা লক্ষ করি। আমরা বুঝতে পারি, এ যেন সারা জীবনের সঞ্চয়ে নির্মিত, এক মাহেন্দ্রক্ষণে উপস্থিত, যে পথে হেঁটে এসেছেন তিনি, সেই পথে এ যেন অবধারিত গন্তব্য ছিল।
মাছের স্বপ্ন © কামরুল হাসান
এই অসংখ্য স্কেচের রূপ, বৈশিষ্ট্য ও ভাষা সম্বন্ধে আজ আমরা প্রায় অজ্ঞাত। কেননা এই স্কেচগুলোর প্রদর্শন ব্যবস্থা যেমন নেই, তেমনি অধিকাংশের আর হদিস পাওয়ার উপায়ও নেই। অকাতরে বিলিয়েছেন আশপাশের পরিচিত-অপরিচতজনের মধ্যে। ফলে যৎসামান্য যা নমুনা পাওয়া যায়, তার ওপরে ভিত্তি করেই আমাদের কামরুলের এই ভাষ্যের গুরুত্ব বুঝতে হবে। এতে সহায়তা করবে তাঁর হয়ে ওঠার পথে নানা পর্যায়ের কাজ। শিল্প-সমালোচক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এই স্কেচধর্মী কাজের শৈলীকে চিহ্নিত করেছেন ‘কামরুলের সৃষ্টিশীল বিবর্তনের স্বতঃসিদ্ধ রূপ হিসেবে’। শিল্পের এ যদি তাঁর অবধারিত পরিণতি হয়, তাহলে তাঁর রাজনৈতিক যে সক্রিয়তা, তাঁর সেই কৈশোর বয়স থেকেই চলে আসছিল জীবনভর, তারও কি কোনো চূড়ান্ত ফয়সালা হাজির হচ্ছে? কেননা তাঁর গুটিকয়েক চিত্র বাদে সরাসরি রাজনৈতিক বিষয় না এলেও তা তাঁর রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক অভীপ্সার মধ্যেই নির্মিত। তাঁর সক্রিয় রাজনৈতিক লড়াইয়ের যে-দেশ, সেই দেশ তাঁর মনোভূমেরও, সেই দেশ বাঙালি জাতীয়তাবাদের। সেখানে শিল্প, সুন্দর ও সেক্যুলার সংস্কৃতির দ্যুতি বিরাজমান। ফলে তাঁর স্কেচের ‘অনুবিশ্বের’ মাঝে যে-দেশ, সে কোন দেশ?
আঙ্গিক ও এর অন্তর্গত প্রেষণার সুলুক সন্ধানে আমাদের প্রয়োজন পড়বে তাঁর এই চিত্রভাষার নির্মাণ ইতিহাসের সার্বিক পর্যালোচনা। সে বিষয়ে যাবার আগে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের ভাষ্যে এই স্কেচের স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য বুঝে নিই।
তাঁর স্কেচগুলো দেখে মনে হয়, তাদের স্বতঃস্ফূর্ততাকে কোনোভাবে বিপন্ন না করেও একধরনের শৈল্পিক শাসন তিনি চালিয়েছেন তাদের রেখা অথবা ফর্মগত প্রকাশের ক্ষেত্রে। রেখা যত বলিষ্ঠ হয়, স্কেচে তত গতিশীলতা আসে, এ জন্য রেখাকে তিনি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখেন; কিন্তু মাঝে মাঝে রেখাগুলো পরস্পরসংলগ্ন হয়ে বিছিয়ে থাকে, তাদের আলাদা করা যায় না, মাঝে মাঝে তারা বহির্গামী হয়, অথবা ভেঙে যায় মাঝপথে। এই নিয়ন্ত্রণ ও রেখার স্বাধীন বিচরণ আসলে স্কেচচিত্রের একটি অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্যকেই তুলে ধরে, এবং তা হলো বৈপরীত্য অথবা কনট্রাস্ট। প্রথমে পরিসরের ক্ষুদ্রতা ও চিন্তার বিশালতা একটি কনট্রাস্ট তৈরি করে, তারপরও আছে সাদা-কালোর দ্বন্দ্ব, আয়োজনের সামান্যতা এবং অনুরণনের প্রকাণ্ডতার মধ্যবর্তী বিবাদ।
…কামরুলের স্কেচে দ্বিমাত্রিকতারই একটি বর্ধমান রূপ আছে। যে মুহূর্তে তিনি খুব হালকা রেখার একটি নারী মূর্তি আঁকেন এবং তাকে ওইখানে সীমাবদ্ধ রাখার প্রয়াস পান, দেখা যায় তাঁর নারী মূর্তিটি একটি পরিবেশ তৈরি করে ফেলে। তার একটি প্রেক্ষাপট, একটি ইতিহাস যেন আপনা থেকে দাঁড়িয়ে যেতে থাকে। ছোট্ট স্কেচেও কামরুল তাঁর অঙ্কনবিশিষ্টতা, তাঁর অবলোকনের গভীরতা, অথবা তাঁর লোকজ চিন্তার প্রতিফলন ঘটান। এটি তাঁর অনুবৈশ্বিক দর্শনের জন্য যে হয়, সেটি আমরা আগে বলেছি। কিন্তু এইভাবে যখন কামরুল একটি ফিগারে বা দৃশ্যে গভীরতা অর্পণ করেন—বলা যায় নিজ থেকেই তা যেন অর্জিত হয়ে যায়, তখন ত্রিমাত্রিকতার পূর্ণাঙ্গতার দিকে আমরা পৌঁছতে থাকি।
অর্থাৎ বাড়তে না দিলেও স্কেচের ভেতরের জীবন থেমে থাকে না, হয়তো এ কারণেই তাতে ত্রিমাত্রিক একটি বাস্তবতা, একটি তারল্য প্রধান হতে থাকে। একসময় স্কেচগুলোতে যে অনুজীবন মূর্ত হয়, তার চরিত্র, তার অপরাপর সব বৈশিষ্ট্য, একটি বোধকেই সক্রিয় করে তোলে তাদের অনিবার্যতায়। এই ‘অনিবার্যতা’র প্রসঙ্গটি কামরুলের শিল্পকর্ম সম্পর্কে সাধারণ একটি বিচার বলেও উল্লেখ করা যায়। কিন্তু আমরা যখন এই প্রশ্নের মুখোমুখি হই, ‘কেন কামরুল এতসংখ্যক স্কেচ এঁকেছিলেন’, তখন উত্তরটি হয় এ রকম যে, এদের প্রায় সকলেই অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। বৃহতে যে জীবনবোধ, যে অন্বেষণ, সে সমাধান দেওয়া সম্ভব, ক্ষুদ্রতেও তা সম্ভব; বৃহৎ আয়োজনে যে অনুধাবনটি বাক্সময় হয়, হয়তো গভীরভাবে, সেটি ক্ষুদ্র পরিসরেও সম্ভব। স্কেচগুলো কামরুলের এক বিশেষ শিল্পপ্রয়াস, এক বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তারা উদ্ভূত। এ জন্য তাদের আবির্ভাব ও তাদের নিজস্ব জীবন অনেকটা যেন স্বতঃসিদ্ধ ছিল কামরুল হাসানের সৃষ্টিশীলতার বিবর্তনে।
[শিল্প রূপ: নভেম্বর ৭, ২০১২]
লিনো কাট © কামরুল হাসান
খুব নিশ্চিতভাবেই আমরা জানতে পারি যে, তাঁর এই স্কেচ আর্টে লাইনের প্রাধান্য আছে, সাদা সারফেসে কালো রেখার স্বতঃস্ফূর্ত সক্রিয় গতি। বিষয় হিসাবে হাজির—কখনো নিছক নানা মটিফ, নারী মুখ আর কামরুলের নিজ উদ্ভাবিত এক দৃশ্য—যাকে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলছেন অনুবিশ্ব। রেখার সাথে তাঁর সহজাত বসবাস ও রেখার মধ্যেই কামরুল অবিচল, নিরন্তর ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে, স্বপ্ন/ভঙ্গ, দ্রোহ, ক্রোধ, প্রেম, লীলা, সমস্ত ব্যক্তিক ও নৈর্ব্যক্তিক অভিজ্ঞতার স্ফুরণ ঘটেছে তাঁর রেখায়। তাঁর নিজের স্বগতোক্তিতে—‘তুলি কলম আর কাগজ-কালি সামনে পড়লে আমার ওপর যেন আলৌকিক শক্তির প্রভাব পড়ে আমি তখন সব ভুলে যাই।’ [কামরুল হাসান জীবন ও কর্ম, ২০৫]
পশ্চিমের ধ্রুপদি এবং যুক্তিসঙ্গত বাস্তবতার শিল্প ব্যতীত সমস্ত অঞ্চলেই চিত্রকলার প্রাথমিক সব উপাদানের সমন্বয়েই চিত্র নির্মাণের চল সেই আদি থেকেই। অর্থাৎ রং, রেখা ও ফর্ম এই তিনের সমন্বয়েই তাবৎ অঞ্চলে চিত্রকলার চর্চা হয়েছে। বাংলা এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়, বরং বাংলার চিত্রকলার যে সমস্ত নিদর্শনই পাওয়া যায়, তাতে রেখাই প্রধান বিশেষত লোকজ উপাদানে রেখাই প্রধান। আর এই রেখাপ্রধান শিল্পের ও লোকজ প্রকরণের সঙ্গে তাঁর যুক্ততা কলকাতা গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে পড়তে পড়তেই অর্থাভাবে পুতুল তৈরির কারখানায় কাজের মধ্য দিয়ে। সেখানে তিনি স্লুলয়েডের ওপর পুতুলের চোখ আঁকতেন। পূর্বেই তিনি আরেকটি কাজ করতেন, বাবার চাকরির সুবাদে গোরস্তানের নাম ফলকের নকশা আঁকতেন। উপমহাদেশে নকশাধর্মী যেকোনো শিল্পজ উপাদান—তা সে হিন্দু বা মুসলিম সংস্কৃতিগতই হোক, তাতে রেখার প্রাধান্য থাকেই।
কিন্তু বাংলা অঞ্চলের পট ও লোকজ শিল্পের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে প্রধান ভূমিকা রেখেছিলেন তাঁর ওস্তাদ গুরু সদয় দত্ত। কামরুলের নিজ মুখে শোনা যাক এ বিষয়ে—আমি সে সময়ে কলকাতা আর্ট স্কুলের ছাত্র। পুরোপুরি ভিক্টোরিয়ান যুগের পদ্ধতি নিয়ে মশগুল বলা যেতে পারে। এমনি যখন মনোভাব আর মানসিকতা তখনি দৃষ্টি খুলে গিয়েছিল ব্রতচারী শিবিরে যোগদান করে। ১৯৪৬ সালে কলকাতা মুসলিম আর্ট একজিবিশনে আমি প্রথম এই পদ্ধতির ছবি দিয়েছি। [কামরুল হাসান জীবন ও কর্ম, ১৮৮]
কামরুল ছাত্র অবস্থা বা শিল্পী জীবন শুরুর আগেই ভারতের আধুনিক শিল্প তিনটি পথে বিচরণ করছিল। ভিক্টোরিয়ান বিদ্যারীতির মধ্য দিয়ে ভারতীয় সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার পুনরোপস্থাপন। এ ক্ষেত্রে রাজা রবি বর্মার ইউরোপীয় এই রেটিনাল বাস্তবতানির্ভর অংকন পদ্ধতিতে পৌরাণিক বিষয়ের কাজ তৎকালীন ভারতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
ভারত শিল্পের আধ্যাত্মিকতা ও আঞ্চলিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রাচ্যরীতির যে উন্মেষ ঘটেছিল, ইবি হ্যাবেল, আনন্দকুমার স্বামী ও অবনীন্দ্রনাথের হাত ধরে—যা প্রধানত সে সময়ে ভারতীয় জাতীয়তাবোধের সাথে সাথেই ধর্মভিত্তিক জাতীয়তারও পথ উন্মোচন করেছিল। তার ধারাবাহিকতায় দেখা যাবে এই প্রাচ্যরীতি—যা মূলত ওয়াস পদ্ধতিতে করা জলরঙের চর্চা। পরে তা মুসলিম শিল্পীদের জাতীয় পরিচয়ের ধারক হয়। অপরদিকে শান্তিনিকেতনে নন্দলাল ও যামিনী রায়ের হাত ধরে বিকশিত হয় এই অঞ্চলের লোকজধারা, যার সাথে যুক্ত থাকে বাঙালি জাতীয়তা। এ বাদেও তত দিনে কলকাতায় ও শান্তিনিকেতনে জার্মানের বাহাউস আর্ট একাডেমির প্রদর্শনী হয়ে গেছে। রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং নিজেও তার স্ব-উদ্ভাবিত শিল্পের চর্চা করছেন। ফলে ২০ শতকের ইউরোপীয় চূড়ান্ত আধুনিকতা কলকাতাতেও আছড়ে পড়ছিল জাতীয় পরিচয় নির্মাণকালেই।
রেখাচিত্র © কামরুল হাসান
শিল্পের এই নানা তৎপরতার মাঝেও কলকাতা আর্ট কলেজে ভিক্টোরিয়ান ধ্রুপদি পদ্ধতিতে কেবল চিত্র অনুশীলনই করতে হতো তা নয়, বরং বাস্তবতা ছিল এই মাধ্যমে দক্ষতার চূড়ান্তে না এলে তার শিল্পী হিসেবে কাজ করার সুযোগ থাকত না। কামরুল হাসানও এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নন। তাঁর এই ইউরোপীয় প্রথাগত বা যুক্তিসঙ্গত বাস্তবতার কাজের দক্ষতার সাক্ষ্য বহন করে ছাত্রাবস্থায় সর্ব ভারতীয় একাডেমি অব ফাইন আর্টসের প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত তাঁর ৩০টি কাজ [জলরং, পেন্সিল স্কেচ ও লাইন ড্রয়িং]।
শিল্পকলার কোনো শাখায়—বিশেষত ভালো অবস্থানে পৌঁছাতে দরকার পড়ে নিষ্ঠা ও একাগ্রতায় নিরলস কাজ করা। কলকাতা গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ ও এমনকি এর উত্তরসূরি ঢাকা আর্ট কলেজের শিক্ষার্থীদের বাস্তবতা এই যে জেনে বা না জেনে তাঁকে এমন এক শৈলী রপ্ত করতে হয়, যা তাঁর নিজের সংস্কৃতিগত নয়, অন্তত কামরুলের সময় তো নয়ই। এই বাস্তবতা, জয়নুল, কামরুল, সফিউদ্দিনসহ বাংলাদেশের এখন অব্দি প্রায় সমস্ত শিল্পীরই একই বাস্তবতা। ফলে কামরুলের প্রাথমিক ব্যুৎপত্তিতে ভিক্টোরিয়ান একাডেমিক বা রেটিনাল বাস্তবতানির্ভর অংকন আয়ত্তে এসে যায় এবং এই বিষয়ে তার পক্ষপাতিত্ব ও ভালো লাগা যেমন ছিল, তেমনি তিনি এ-ও মনে করতেন, শিক্ষার্থীদের এই চর্চা অংকনে দক্ষতা বৃদ্ধি করে। [দ্রষ্টব্য: কামরুল হাসান: জীবন ও কর্ম, ১৮১]। তাঁর এই বক্তব্য পরবর্তী সময়ে কামরুলের যেকোনো পর্যায়ের শিল্পশৈলীর স্বরূপ বুঝতে আমাদের সহায়তা করবে, এ ছাড়া আমরা ষাটের দশকেও তাঁকে কিছু কাজ করতে দেখি, যেখানে এই রেটিনাল বাস্তবতা মুখ্য।
রেখানির্ভর কাজের আরেক যোগ তার সাথে পত্রিকার কার্টুন, ইলাস্ট্রেশন ও পোস্টারে নিয়মিত কাজ করার মধ্য দিয়ে। ত্রিশ ও চল্লিশ দশকে কলকাতায় মুসলিম সমাজের যে উত্থান হয়েছিল, তাঁর আঁচ কামরুলকে কেবল উত্তাপই দেয়নি, সেখানেও তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। নানা প্রতিকূলতাসহ মুসলিম সমাজে চিত্রকলায় নেতিবাচক প্রভাব থাকা সত্ত্বেও চিত্রকলার চর্চা সে সময়ে শুরু হচ্ছিল, পত্রিকার ইলাস্ট্রেশন, ঈদসংখায় বিশেষ আয়োজনেও মুসলিম বিষয়াদির চিত্র প্রকাশ হতে শুরু করে ত্রিশের দশকেই। কামরুল আর্ট স্কুলে পাঠ্যাবস্থায় অলংকরণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজে যুক্ত হন। এ ক্ষেত্রে তাঁর আগ্রহ ও উদ্দীপনায় সে সময়ে যেমন মুসলিম বিদ্বৎ সমাজের সাথে ঘনিষ্ঠ হচ্ছিলেন, আর এই অভিজ্ঞতা তাঁকে পরে বাংলাদেশে আধুনিক ডিজাইনের পথিকৃৎ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে তুলেছিল।
১৯৪২ সালে কবি হবীবুর রহমানের [১৯২২-৭৬] সঙ্গে একত্রে আবীর নামে একটি হাতে আঁকা পত্রিকা বের করেছিলেন। সেখানে তিনি নবাব সিরাজউদ্দৌলার ছবি এঁকেছিলেন। সাপ্তাহিক মিল্লাতে নিয়মিত কার্টুন করতেন ভিমরুল নামে। ১৯৪৬ সালে বহুরূপী ফজলুল হক নামে এক রাজনৈতিক কার্টুন এঁকে সে সময়ে আলোচনায় আসেন। আলোড়ন ও কমরেড পত্রিকাতেও তিনি নিয়মিত কার্টুন করতেন। সে সময়ে ইসলামী কিছু চিত্র ও ইলাস্ট্রেশন করলেও তা নিয়ে পরবর্তিতে হীনমন্যতা তৈরী হয়েছিল তাঁর, বাংলাদেশ পর্বে। ফলে এই সংস্কৃতির ছাপ আমরা তাঁর কাজে আর দেখি না।
কলকাতায় চল্লিশের দশকেই কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাথে যুক্ততায় সেখানে কিছু পোস্টার আঁকেন, শিল্প সমালোচক শোভন সোমের মতে, তাঁর এই পোস্টারের অংকনশৈলী বিচারে না আনলে তাঁর কাজের রেখার বলিষ্ঠতার সম্পূর্ণ হদিস পাওয়া যাবে না। আর এ ক্ষেত্রে চীন ও রাশিয়ার কমিউনিস্ট আন্দোলনের রাজনৈতিক পোস্টারে যে ভাষা, সেই প্রতিধ্বনি ছিল তাঁর তরুণ বয়সের পোস্টারে। শিল্প শিক্ষার পাশাপাশি এই নানামুখী তৎপরতা একদিকে তাঁকে যেমন দক্ষ আঁকিয়ে হিসেবে গড়ে তুলছিল, তেমনি বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাথে ঘনিষ্ঠতা তাকে রাজনৈতিক সচেতন করে তোলে।
রেখাচিত্র © কামরুল হাসান
তবে লোকশিল্প তাঁর কাজে মূল হয়ে ওঠে ১৯৫১ পরবর্তী সময়ে জয়নুল আবেদিন যখন বিদেশ থেকে ফিরলেন। কামরুল হাসান তাঁর শিল্পকথায় জানাচ্ছেন, ‘শিল্পী জয়নুল আবেদিন যখন বিদেশ থেকে ফিরে বাংলার পটুয়া শিল্পীদের চিত্রকলার বিদেশে কী মর্যাদা এবং এটাই আমাদের চিত্রকলার আসল পরিচয় বলে আখ্যায়িত করলেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই আমি আমার ব্রতচারী শিবিরে লব্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে আবার নতুন করে আঁকড়ে ধরেছি।’
সরাসরি পট ও সরা চিত্রের আদলের রেখার ছান্দিক গতিময়তা তাঁর কাজের মূল অনুষঙ্গ হলেও পাশ্চাত্যের শিল্পশৈলীর দক্ষতা, স্পেস বণ্টন ও পিকাসোর কিউবিজমের প্রভাবিত চিত্রগুলোকেই সাধারণত তাঁর আইকনিক ইমেজ হিসেবে দেখার চল আছে। যেমন—তিন কন্যা, নাইওর।
কামরুল হাসানের শিল্পকর্মে আমরা কয়েকটি ভাগ ও পর্যায় দেখতে পাই। শিক্ষানবিশের শুরুতে দেখতে পাই পাশ্চাত্যরীতির অনুশীলননির্ভর চিত্রকর্ম, প্রাচ্যরীতির ওয়াস পদ্ধতির চিত্র, বাংলা অঞ্চলে লোকজ ধারার পট ও সরাচিত্রনির্ভর। আর লোকজ ধারার সাথে পিকাসোর কিউবিজমের সংমিশ্রণে উদ্ভাবিত নিজ শৈলীনির্ভরতায়, শেষতক তাঁর এই অসংখ্য স্কেচ। এই অঞ্চলের রাজনৈতিক পোস্টারেরও মাস্টার শিল্পী কামরুল হাসান। পত্রিকার ইলাস্ট্রেশন, প্রচ্ছদ, লোগো ডিজাইন—এ ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের আধুনিক ডিজাইনারের পথিকৃৎ তিনি, আর কর্মজীবনে বাংলাদেশের আর্ট কলেজের সূচনা থেকে যুক্ত থেকে পরে ডিজাইন হাউজের দায়িত্ব পালন করেছেন।
এই সবক্ষেত্রেই তাঁর শিল্পশৈলীর অনন্যতা ও ঐক্যতা খুঁজে পাওয়া যায়। আর কামরুল হাসানের এই শৈলীর অনন্যতা ও ঐক্যতা সম্ভব হয়েছে মূলত রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক তৎপরতায়। ফলে আপাতদৃশ্যমান তাঁর বহু অরাজনৈতিক বিষয়ের শিল্পকর্মও মূলত রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অভীপ্সার অন্তর্গত। আর তাঁর রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অভীপ্সায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও বাংলাদেশ। কলকাতায় চল্লিশের দশকে যার যাত্রা শুরু, তার জীবনের শেষ শিল্পকর্মটিও [দেশ আজ বিশ্ববেহায়ার খপ্পরে] ছিল আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মাঝেই, জাতীয় কবিতা পরিষদের মঞ্চে। কেবল ব্যক্তি শিল্পীই নয় বাংলাদেশের হয়ে ওঠার সাথে সম্পৃক্ত তাঁর তাবৎ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক তৎপরতা। তাঁর এই অবস্থানের পক্ষে বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের ভাষ্য—
বাংলার ইতিহাস থেকে তিনি সাম্প্রদায়িক বোধের সম্মুখীন হয়েছেন, আবার ধনতান্ত্রিক প্রতিযোগিতায় পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি ব্যক্তিত্ব তার কাছে অধস্তন বলে মনে হয়েছে। সে জন্য ধর্মজ, সাম্প্রদায়িক এবং অধস্তন বোধের বিরুদ্ধে তিনি বাংলার সেক্যুলার কম্যুনিটিবোধকে বাংলার সাংস্কৃতিক গঠনের মধ্যে খুঁজে বার করেছেন। এই বোধ বাঙালি সংস্কৃতির ভিন্নতা ধরা দিয়েছে। আবার তিনি শিল্পী বলে, তার কাজের কেন্দ্রীয় বিষয় দেহ কিংবা নারী বলে তিনি ইসলামের বিশুদ্ধ ধর্ম অভিজ্ঞতাকে বাংলার একমাত্র ইতিহাসের অভিজ্ঞতা বলে মেনে নিতে পারেননি। কিংবা ধর্মজ অভিজ্ঞতা তার কাজের বিরোধী বলে তিনি বাংলার ইতিহাসে সেক্যুলার বোধ এবং কম্যুনিটি বোধের দিকে বারবার ফিরে গেছেন।
রেখাচিত্র © কামরুল হাসান
বাংলাদেশ ভূখণ্ডে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা আধুনিক এক প্রকল্প। ইমানুয়েল কান্ট, মিশেল ফুকো ও অন্যান্য দার্শনিক আধুনিকতা বলতে—কোনো ভাবনাকে সার্বিক ও সর্বজনীন করে তোলার মনোভাবকে বুঝিয়েছেন। অন্যদিকে ইয়োরগুন হেবারমাস আধুনিকতাকে কেবল মনোভাব হিসেবে দেখেননি, দেখেছেন একটি প্রকল্প ও ঐকান্তিক সত্য বিস্তারের প্রকল্প হিসেবে। এবং এই [বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা] প্রকল্পের কাণ্ডারিদের মধ্যে কামরুল হাসান অন্যতম প্রধান। কিন্তু এখানে লক্ষণীয়, যেই অর্থে ইউরোপীয় আধুনিকতা প্রকল্প হিসেবে ঔপনিবেশিক অঞ্চলে বিস্তার করে সেই অর্থে কামরুলের বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও সেক্যুলার ধারণা এখানে ঔপনিবেশিক কোনো তৎপরতা নয়, বরং তা বাংলাদেশের ভেতর থেকে ইতিহাস চেতনা ও সংগ্রামের লড়াইয়ের অংশ হিসেবেই হাজির হয়েছিল এবং এখনো তা সক্রিয়। ফলে খুব দৃঢ়ভাবেই তিনি বাংলাদেশে ‘আধুনিক’। নিজেদের সংকট ও সমস্যা নিরসনে নিজের বিচার ক্ষমতা প্রয়োগ করে নিজেস্ব কর্মপন্থা স্থির করা আধুনিকতার লক্ষণ। আর এই ক্ষেত্রেই কামরুলের চিত্রজ পাঠ খুব সহজে সারার উপায় নেই। বাঙালি জাতীয়তাবাদের যে অপরমুখী সমালোচনা হাজির আছে এখন অব্দি এই বাংলাদেশে, সেই সমালোচনায় তাঁর কাজকে ১৯ শতকের বর্ণহিন্দুদের উদ্ভাবিত বাঙালি জাতীয়তাবাদের মোড়কেও বিচার করা চলে না। আবার কেবল জাতীয়তাবাদের আদলেই বিচার করার জো নেই। কেননা নিজেদের আত্মপরিচয় ও শিল্পের স্বরূপ নির্মাণে লোকজ শিল্প ভাষা থেকে শিল্পরীতির আয়ত্তগত যে ধারা নন্দলাল, যামিনী রায় থেকে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল, কামরুল হাসান সেই একই যাত্রা শুরু করলেও সেখানেই স্থির থাকেননি—বিশেষত তাঁর এই স্কেচ আর্টে। ষাটের দশকের বাংলাদেশের সাহিত্য ও শিল্পে যে কলকাতামুখীনতা কামরুল সেই আবহেও থিতু হন না, কেননা কামরুলের বিবিধ পর্যায়ের শিল্পের মধ্যেও আমরা খোঁজ পাব যে তিনি নিরন্তর এক সক্রিয় উদ্ভাবনীর মধ্য দিয়ে নিজেকে হাজির করছেন বারবার। নতুনের সন্ধানও সেখানে জারি থাকে। পুব ও পশ্চিম উভয় থেকেই তিনি চিত্রজ অনুষঙ্গ নিয়েছেন, এই ক্ষেত্রে তিনি দ্বৈত চিত্তের। কিন্তু এই দ্বৈত চিত্ত তাঁর কাজে অসামঞ্জস্য আনেনি, বৈরী ও দ্বৈরথ তৈরি করেনি, এমনকি তা হাইব্রিড কোনো ইমেজও হাজির করেনি। কেননা গড়নের মূল সুর ও ঐকতানে তিনি একই সঙ্গে দেশজ ও আত্মনির্ভর [শিল্পের নানা অভিজ্ঞতা]। ফলে তাঁর কাজ ঐতিহ্যবিচ্যুত নয়, এমনকি তা বৈশ্বিক বিচ্যুতও নয়। অন্যদিকে লোক শিল্প থেকে উপাদান নিলেও তার ভাব ও আদর্শ নেন না, ফলে তিনি লোকজ সমাজের নন। এটি সংকটের! এই সংকট আদর্শের এবং তা রাজনৈতিকও। শিল্পের লোকজ শৈলী আয়ত্তে আনতে নিম্নবর্গের ভান বা ক্যামফ্লেজ তৈরি করে। ফলে কামরুলের কাজ ‘আমাদের আধুনিকতার’ পাটাতনেই দেখতে হবে। আর এই সংকটে কামরুল কেবল একাই নন, বাংলাদেশের ষাটের দশকের প্রায় সমস্ত শিল্পী সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীই মুক্তি ও ব্যক্তি/স্বাধীনতার প্রশ্নে আলোকপ্রাপ্তির/আধুনিকতার সাথে ক্ষমতার সম্পর্ক নির্ণয়ে মনোযোগী ছিলেন না। ফলে স্বাধীনতার পর থেকেই কামরুলকে আবার নতুন সংগ্রামে নামতে হয়েছে।
’৭২ সাল থেকেই তাঁর স্কেচে প্রতীকী উপস্থাপন, ভয়াল দর্শন কিম্ভুতকিমাকার মুখ যেমন আছে, তেমনি আছে ধূর্ত শেয়াল, প্রখর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অপলক তাকিয়ে থাকা পেঁচা। কেননা এখন আর দ্রোহ ঔপনিবেশিক কোনো শাসকের বিরুদ্ধে নয়, ফলে প্রতীকে আশ্রয়ী হতে হয়েছে চেনা সমাজের অবক্ষয়ে বা স্বপ্নভঙ্গে। প্রতীকী ছবির শক্তি প্রায়শ সরাসরি ডকুমেন্টেশনের থেকেও শক্তিশালী। ইউএন অফিস থেকে গোয়ের্নিকা [টেপেস্ট্রি রেপ্লিকা] সরিয়ে ফেলেছিল কলিন পাওয়েল যখন ইরাক ওয়ার নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়েছিল। গোয়ের্নিকার সামনে দাঁড়িয়ে যুদ্ধবাজদের যুদ্ধ ঘোষণা করতে ভয় ছিল, লজ্জাও ছিল বৈকি।
কামরুল প্রতীকের এই শক্তির সম্ভাবনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন। প্রতীকে কালোত্তীর্ণ হওয়া যায়। রাজনীতির কাল সময়ের বন্ধনে আবদ্ধ, শিল্পে সময়কে ছাপিয়ে যাওয়া যায়। তাঁর বহু স্কেচে সেই শক্তি ও সময়কে ছাপিয়ে যাওয়া আগামীর চিত্রই বারবার জন্ম নিয়েছে। তারা নিজেরাই যেন জন্ম নিয়েছে পটুয়া কামরুলের পটে। কামরুলের কথা দিয়েই শেষ করা যাক—
আমার আঁকিবুঁকির কখনোই কোনো পূর্বপরিকল্পনা থাকে না, আবার থাকলেও কলম বা তুলি চালাতে আরম্ভ করলে কখন যে কোন দিকে মোড় নেবে, তাই কি আমি জানি?
এ যেমন দুরূহ তেমনি আনন্দদায়ক, তার চেয়েও বেশি উত্তেজক। এর মাঝে আধুনিকতা আছে, আছে পুরাতনের পুনরাবৃত্তির বা আছে অনাগত দিনের আঁকাবাঁকা রেখা। কখনো আবার সূক্ষ্ম, আবার কখনো স্থূল।
সকলেই আমার তুলিতে, কালিতে এবং কলমের সামনে এসে পথ রোধ করে দাঁড়ায়। বলে, আমাকে তোমার মধ্য দিয়ে প্রকাশ করো, আমিও নিরুপায় হয়ে তাদের নির্দেশমতো চলি।
সহায়িকা
১. কামরুল হাসান জীবন ও কর্ম: সৈয়দ আজিজুল হক, প্রথমা, ঢাকা
২. ইতিহাসের উত্তরাধিকার: পার্থ চট্টোপাধ্যায়, আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা
৩. ভারত শিল্পের উপনিবেশায়ন ও সুলতানের বিউনিবেশায়ন ভাবনা: সৈয়দ নিজার, চৈতন্য, সিল্টে
৪. কামরুল হাসানের চিত্রকলা: সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, শিল্পরূপ , সপ্তম বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা, ২০১৮
৫. কামরুল হাসানের চিত্রকল্প: রেখার শক্তি ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব: মোস্তফা জামান,শিল্পরূপ, সপ্তম বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা, ২০১৮।
Lekhata porlam. Kamruler sketch dekhar shouvaggo hoyni. Tobe aro kisu sketch er sobi thakle valo hoto. Dhonnobad Dhonnobad
RH
নভেম্বর ০৪, ২০২১ ১৭:২২