
গোপনের গোপন ও অন্যান্য কবিতা
তাহাজ্জুদ
আসে না বন্ধু পাষাণ, তবু,
প্রেম তাহাজ্জুদে রাহী দিনমান।।
সুবেহ সাদিকের বেলা
সে করিলো অবহেলা
কামসাগর মন্থন খেলা
কেমনে সংস্থান।।
প্রভাত রবির রাগে
নব অনুরাগ জাগে
পূর্ণশশি দিবাভাগে
গ্রহণ আসমান।
সারং বাজে, ব্রিন্দাবনী
আমি সাজি বিন্দে ধনি
গোধূলি রঙ্গে অঙ্গ
রাঙ্গাও মেহেরবান!
প্রেম তাহাজ্জুদে রাহী দিনমান।।
গোপনের গোপন
গোপনের গোপন, মোর প্রাণধন,
এসো গুপ্ত বৃন্দাবনে।।
এসো রাঙ্গাই আলোআঁধারি, কি পুরুষ কিইবা নারী
জোর করা জোড় ভাঙ্গার খেলা খেলবো বঁধু সংগোপনে।।
আনো তোমার সঙ্গী যারা, মুখরাক এই বনরা
নব নব রসের ধারায় ভাসি মোরা এই ভুবনে।
কিসে ভাসি সাম্যরসে, সামান্যে কি সে বিশেষে
দেশ-দেশান্তর লোক-লোকেশে আছে সে ধন কোন ভূষণে।।
সে রসের উৎপত্তি যেথা, পাপপুণ্য আর নাইরে সেথা
গরলে অমৃত রাখা, ভক্তিহীন কি মর্ম জানে।
কি দিবো সেই বনের বিবরণ, স্বয়মপ্রকাশ, বলা বারণ
অরূপ রাহী কই হইলো তোর মতি গুরুর রাঙ্গা চরণে।।
নিরঞ্জন
যার ঈদ চাই—তার ঈদ হও, পূজা নাই যার—পূজা;
অন্নহীনের অন্ন হও গো, রোজা চায় যেবা—রোজা।
স্মৃতিভ্রষ্টর মনে স্মৃতি হও, নামাজ পিয়াসে নামাজ;
কলেমা পিয়াসে কলন্দরিয়া, কিতাব দিলের মাঝ।
ঘর নাই যার, ঘর হও তার, বস্ত্রহীনের কাপড়;
কালান্তরের ইনসানিয়াত, সত্য, ত্রেতা, কি দ্বাপর।
বন্ধনভাঙ্গা তন্ত্র-মন্ত্র, অসুর, ব্রাত্য, নাগ,
প্রাকৃত, কৃষ্ট, ডাক—পৈশাচ, তোমার প্রেমের ভাগ।
শক্তিহীনের শক্তি হইয়ো ভক্তি দিও গো মোরে
নব কলিকাল, বেশুমার লোকে ধর্মের মোহে মরে।
[তাই] ধর্মমুগ্ধে বোধি হও তুমি, যেন না জুলুম হয়
মুগ্ধের যত শ্রেষ্ঠত্বের ভ্রান্ত অহমিকায়।
জগতের জ্ঞান—জ্ঞানের জগৎ লয়-প্রলয়ের ধ্বনি
যেন কায়ে বাজে, নিরখি সহজে, পাই সে যুগাঞ্জনি।
যেন প্রীতি হয় জনে ও বিজনে, সেবি গো সর্বপদ
জীব-জড়তার অজ্ঞানতার করে দিও তুমি রদ।
কিন্তু কে তুমি? কার কথা বলি, কারে বলি—সব করো?
আমার ধিয়ানে জেগে ওঠো তুমি, আমার মরণে মরো?
চলো চন্ডালিনীর চন্ডতা, আসো, আসো মোর দেহে
মায়ামন্দির থির-অস্থির, এক যুতে তিন, গেহে।
থাইকো সেভাবে, হুহুহুঙ্কারে ডাক দিবে, রাহী, প্রিয়
আইসো তখনে, সকলার মনে, প্রেম জাগাইয়া দিও।।
ভোরবেলা
ভোরবেলা, শান্ত স্নিগ্ধ বাতাসে, আজানে,
আমারই বৃন্ত থিকা চলে আসছি চরণে তোমার,
সুবাসিত নামাজ, বকুল।
মাঝখানে যেটুক প্রহর, তোমা-আমা বিভাজিত, জানো,
তা মুলত মন্ত্রমুগ্ধতার
শেষে আসা অন্যথাখ্যাতি।
এই আমি, ভোরের বকুল। আমারে করহো গ্রহণ, আমিময়, পরাৎপর।
তারপর চলো তো দেখি, কারা কেন সীমান্ত বানাইছে!