সাহিত্যিক এবং শিক্ষাবিদ নূরজাহান মুরশিদ। জন্ম ১৯২৫ সালের ২২ মে তারানগর, অবিভক্ত ভারতের মুরশিদাবাদে। তিনি ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশন, কলকাতা থেকে প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। নূরজাহান অল ইন্ডিয়া রেডিও-তে ঘোষিকা হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন ঐ প্রতিষ্ঠানে কাজ করা প্রথম মুসলিম মহিলা। দেশ ভাগের পর পাকিস্তান রেডিও-তে তার এই পেশা অব্যাহত থাকে। পরবর্তীতে তিনি বরিশালের সাইদুন্নেসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হন এবং ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন। নূরজাহান মুর্শিদ ১৯৫০-এর দশকের শুরুর দিকে রাজনীতিতে সংশ্লিষ্ট হন। ১৯৪৮ সালে খান সারোওয়ার মুর্শিদ-কে বিয়ে করেন। যুক্তফ্রন্টের মনোনয়ন নিয়ে তিনি ১৯৫৪-এর নির্বাচনে অংশ নেন। পূর্ব বাংলার আইন পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আইন পরিষদ সচিব [পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি] হিসেবে কাজ করেন। মুর্শিদ ছিলেন ১৯৫৪ সালের পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক সংসদ নির্বাচনে, যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে সরাসরি অংশ নিয়ে জয়ী হওয়া ২ জন নারীর একজন। তিনি মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ভারতীয় বিধানসভার উভয় কক্ষের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিয়ে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে ভারত সরকারের প্রতি আহবান জানান। ফলে তাঁর প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা তাকে নিরুদ্দেশ অবস্থাতেই ১৪ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে। স্বাধীন বাংলাদেশে, ১৯৭২ সালে তিনি মুজিব সরকারের স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তিনি ১৯৭৩ সালে দেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৮৫ সালে তিনি একাল নামে একটি বাংলা সাময়িকী প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হন। পরে এটির নাম বদলে রাখা হয় এদেশ একাল। তিনি বাংলাদেশ মহিলা সমিতির প্রথম সভাপতি ছিলেন। অসংখ্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন তিনি। ২০০৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।