• ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪

বাংলাদেশের প্রথম প্রজন্মের চিত্রশিল্পী চুনিলাল দেওয়ান। ব্রিটিশ উপনিবেশিক যুগের চিত্রশিল্পী তিনি। জন্ম পার্বত্য চট্টগ্রামের নানিয়ারচর উপজেলার বরাদাম গ্রামে, ১৯১১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি মাসে। তিনি একাধারে চিত্রশিল্পী, গায়ক, গীতিকার, সুরকার, কবি ও ভাস্কর ছিলেন। তিনি রাঙ্গামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোন করেন। গতানুগতিক লেখাপড়ার দিকে না গেলেও তিনি চিত্রাংকনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তিনি নবম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করার পর কলকাতা সরকারি আর্ট এ্যান্ড ক্রাফট কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৩৪ সালে কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। চুনিলাল দেওয়ান পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম একাডেমিক শিক্ষায় শিক্ষিত চিত্রশিল্পী। কলকাতা আর্ট কলেজে অধ্যয়ন করার পর চল্লিশ দশকে চুনিলাল রাঙ্গামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ২ বছর ড্রইং বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। চুনিলাল দেওয়ান স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে আয়োজিত একাধিক চিত্র প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৫ সালে ফরিদপুরে ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠিত ফরিদপুর এক্সিবিশন-এ অংশগ্রহণ করেন তিনি। একই বছর ঢাকায় পক্ষকালব্যাপী ফোক আর্টস এক্সিবেশন-এ অংশগ্রহণ করেন। প্রদর্শনীতে চুনিলাল দেওয়ান পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিনিধিত্ব করেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম স্টলে চুনিলাল তাঁর কয়েক দিস্তা কাগজের ওপর অংকিত আঁকি-বুকির নক্সাগুলো প্রদর্শন করেন। এসব নক্সা দেখে প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও কামরুল হাসান মুগ্ধ হয়ে যান। তাঁদের কাছে এই শৈল্পিক ধারাটি পরিচিত ছিল না। প্রদর্শনীর পর চুনিলালের সাথে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও কামরুল হাসানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সূত্র ধরে শিল্পাচার্য রাঙ্গামাটি বেড়াতে আসেন। এ সময় রাঙ্গামাটির ওপর বেশকিছু ছবি আঁকেন তিনি। মৃত্যুর দুবছর পর ১৯৫৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এগ্রিকালচারাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল হেলথ অ্যান্ড এডুকেশন-এর উদ্যোগে চুনিলাল দেওয়ানের শিল্পকর্ম নিয়ে একক প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। প্রদর্শনীতে শতাধিক ছবি প্রদর্শিত হয়। ১৯৯২ সালের ২০ এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত মোনগর শিশুসদন কর্তৃক আয়োজিত তিনদিনব্যাপী ফটোগ্রাফি, পেইনটিং এ্যান্ড ক্রাফটস প্রদর্শনীতে চুনিলালের অংকিত চিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। তাঁর সর্বশেষ ছবি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয় ১৯৯৭ সালে। ১৯৫৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যু বরণ করেন।